হে অপরাধী গুনাহগার (আমরা সকলেই গুনাহগার) তোমার পাপের কারণে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমার মতো কত পাপীকে রমযানের এ দিনগুলোতে কত মানুষকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাই তোমার রবের ব্যাপারে সুধারণা কর, তাঁর কাছে তাওবা কর। কেননা নিজেকে নিজে ধ্বংসকারী ব্যতীত অপর কাউকে আল্লাহ ধ্বংস করেন না। কবি বলেছেন:

برفع يَدٍ بالليل والليلُ مظلمُ

إذا أوجعتْك الذنوب فداوِها

قنوطك منها من ذنوبك أعظم

ولا تقنطن من رحمة الله، إنما

তুমি গুনাহের রোগে রোগাক্রান্ত হলে রাতের অন্ধকারে হাত তুলো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমার গুনাহের চেয়ে তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া অধিক মারাত্মক অপরাধ।

যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চায় তার উচিৎ জাহান্নাম থেকে নাজাতের যেসব উপায় আছে সেগুলো অনুসরণ করা। আবু কিলাবা রহ. জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশায় তার এক সুন্দরী দাসীকে রমযানের শেষ দিনে মুক্ত করে দেন।

...

সুতরাং রমযানে সায়িমকে ইফতার করানো, অধীনস্ত কর্মচারীর কাজ হালকা করে দেওয়া, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা এর সাক্ষ্য দেওয়া এবং ইসতিগফার পড়া জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।

তাওহীদের কালেমা গুনাহকে নিঃশেষ করে দেয়। তাওহীদের কালেমা উচ্চরণকারীর পূর্বের ও পরের গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। এ কালেমা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে। যে ব্যক্তি এ কালেমা সকাল সন্ধ্যা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। যে ব্যক্তি এ কালেমা ইখলাসের সাথে অন্তর থেকে বলবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।

ইসতিগফারের কালেমা ক্ষমা পাওয়ার অন্যতম উপায়। কেননা ইসতিগফার মানে ক্ষমার দো‘আ। সাওম অবস্থায় ও ইফতারের সময় সায়িমের দো‘আ আল্লাহ কবুল করেন। হাসান রহ. বলেন, তোমরা অধিক পরিমাণে ইসতিগফার করো। কেননা তোমরা জানো না কখন রহমত নাযিল হয়। লুকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বলেছেন: হে আমার প্রিয় সন্তান! তুমি তোমার যবানে ইসতিগফার চালু রাখো। কেননা আল্লাহর কাছে এমন কিছু সময় আছে যে সময় দো‘আকারীর দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। কোনো এক লোক বলেছেন: ইবলিশ শয়তান বলে, আমি গুনাহের দ্বারা মানুষকে ধ্বংস করেছি, আর তারা আমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও ইসতিগফার দ্বারা ধ্বংস করেছে। সব ভালো আমলের উত্তম পরিণাম হলো ইসতিগফার। ইসতিগফারের দ্বারাই সালাত, হজ, কিয়ামুল লাইল ও সব ধরণের মজলিশ শেষ কর। মজলিশ যদি আল্লাহর যিকিরের হয় তাহলে ইসতিগফার তাতে সীলমোহরের কাজ করবে, আর যদি মজলিশে কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে ইসতিগফারের দ্বারা তার কাফফারা হয়ে যাবে। এমনিভাবে ইসতিগফারের দ্বারাই রমযানের সাওম পালন সমাপ্তি করা উচিৎ।

উমার ইবন আব্দুল আযীয বিভিন্ন জায়গায় এ ফরমান জারি করেন যে, রমযান মাস, সদকা ও সদকা ফিতর ইসতিগফারের মাধ্যমে শেষ করা। কেননা সদকা ফিতর সায়িমের সাওমের ভুল-ত্রুটি ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে পবিত্রতা। আর ইসতিগফার সায়িমের অনর্থক ও অশ্লীল কাজের কাফফারাস্বরূপ।

উমার ইবন আব্দুল আযীয তার এক চিঠিতে লেখেন, তোমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম যেমন বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ٢٣﴾ [الاعراف: ٢٣]

“হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৩] আল্লাহর নবী নূহ আলাইহিস সালাম যেভাবে বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿وَإِلَّا تَغۡفِرۡ لِي وَتَرۡحَمۡنِيٓ أَكُن مِّنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ٤٧﴾ [هود: ٤٧]

“আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৭]

মূসা আলাইহিস সালাম যেভাবে বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي فَٱغۡفِرۡ لِي١٦﴾ [القصص: ١٦]

‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফসের প্রতি যুলুম করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ১৬]

যুন নূন যেভাবে বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ٨٧﴾ [الانبياء: ٨٧]

“আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭]

সাওম জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢালস্বরূপ। অনর্থক কথাবার্তা সে ঢালকে নষ্ট করে দেয় আর ইসতিগফার সে জ্বলন্ত ঢালকে রক্ষা করে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। সুতরাং মুমিন রমযানে সাওম ও কিয়ামুল লাইলে কঠোর পরিশ্রম করে। রমযান শেষ হওয়ার উপক্রম হলে এবং লাইলাতুল কদর আসলে সে শুধু আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করে, যেমনিভাবে অল্প আমলকারী অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়।

ইয়াহইয়া ইবন মু‘আয রহ. বলেন, সে ব্যক্তি প্রকৃত আল্লাহর পরিচয় লাভকারী (‘আরিফ) নয় যার একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর ক্ষমা চাওয়া হবে না। যে ব্যক্তি মুখে ইসতিগফার করল; কিন্তু তার অন্তর গুনাহের কাজ আবার করার দৃঢ় সংকল্প, সে রমযান শেষ হলেই আবার পাপে ফিরে যাবে তার সাওমও প্রত্যাখান করা হবে এবং তার সাওম কবুলের দরজাও বন্ধ হয়ে যাবে।

কা‘ব রহ. বলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করল আর সে মনে মনে ভাবল যে রমযান শেষ হলে তার রবের অবাধ্যতা করবে তাহলে তার সাওম প্রত্যাখান করা হবে। আর যে ব্যক্তি সাওম পালন অবস্থায় এ নিয়াত করল যে রমযান মাস শেষ হলে আর গুনাহ করবে না তাহলে তার সাওম কবুল করা হবে এবং সে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে।

জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এটা অন্যতম দো‘আ ছিল, তিনি বলেছিলেন,

«حَوْلَهَا نُدَنْدِنُ».

“আমিও জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্যই দো‘আ করি এবং সেটার আশেপাশেই ঘুরে থাকি”।[1] সুতরাং সাওম পালনকারী দো‘আ করার সময় তা কবুল হওয়ার আশা করবে এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দো‘আ করা ছেড়ে দিবে না। ... সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপহার পাবে সে সর্বদা সৌভাগ্যবানই হবে, এরপরে সে কখনও হতভাগা হবে না। দো‘আ কবুল হওয়ার সময় আল্লাহর সুবাস ছড়িয়ে দেয়। তখন ব্যক্তির জান্নাত চাওয়া উচিৎ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া উচিৎ। তার দো‘আ কবুল হলে সে আজীবনের জন্য সফলকাম হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَ١٨٥﴾ [ال عمران: ١٨٥]

“সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫]

কবি বলেছেন: যে ব্যক্তি দুনিয়া দ্বারা সৌভাগ্যবান সে প্রকৃত সৌভাগ্যবান নয়, বরং সে-ই আসল সৌভাগ্যবান যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

হে আল্লাহর বান্দা! রমযান মাস চলে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েক দিন বাকী। যারা রমযানের হক আদায় করছ তারা অবশিষ্ট দিনগুলোও ভালোভাবে পূরণ করো। আর যারা এতদিন সাওম পালন ছেড়ে দিয়েছ তারা ভালোর সাথে রমযানকে শেষ করো। শেষ পরিণতি হিসেবেই ব্যক্তির আমল ধর্তব্য। সুতরাং রমযানের বাকী দিনগুলোকে গনীমত হিসেবে গ্রহণ করো এবং তাকে সর্বোত্তম অভিবাদন দিয়ে গ্রহণ করো।কত হতভাগাকে নসীহত করা হয়, কিন্তু সে নসীহত গ্রহণ করে না। কত মানুষকে সংশোধনের দিকে আহ্বান করা হয়, কিন্তু সে সংশোধনের ডাকে সাড়া দেয় না। কত পথিক চলে গেছে, কিন্তু সে এখনও বসে আছে। যখন সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে, মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে তখন নিজের বাড়াবাড়ির জন্য অনুশোচনা ছাড়া কিছুই থাকবে না।... রমযান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের চোখের অশ্রু ঝড়ছে, রমযান চলে যাওয়ার বেদনায় তারা ব্যথিত। সম্ভবত রমযানের বিদায়ের ব্যাপারে একটু চিন্তা-ভাবনা জ্বলন্ত আগুন নিভে যাবে, সম্ভবত এটি তাওবার সময়, হয়ত সাওমের দ্বারা সব আগুন নিভে যাবে, হয়ত যে ব্যক্তি সৎকাফেলার দল থেকে বিচ্ছিন্ন তারা সে কাফেলায় যোগ দিবে, হয়ত যার ওপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

>
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৯২। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।