হাজী সাহেব কর্তৃক হজের প্রসিদ্ধ কাজগুলো শেষ হওয়া এবং ‘বায়তুল্লাহ আল-হারাম’-এ বিদায়ী তাওয়াফ করার মধ্য দিয়ে তার হজের কাজ শেষ হয়ে যায় এবং সে তার দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়; তারপর এ কাজগুলোর পরে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো ‘মাসজিদে নববী’ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে নবীর শহর ‘মদীনা’-তে যাওয়া, আর এটা তার জন্য মুস্তাহাব এবং সাথে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে:
প্রথমত: এমন আকীদা পোষণ করা যে, ‘মাসজিদে নববী’ যিয়ারত করাটা একটি মুস্তাহাব কাজ, হজের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
দ্বিতীয়ত: ‘হজ’-এর অধ্যায়ের পর ফকীহগণ কর্তৃক ‘মাসজিদে নববী’ যিয়ারত করার প্রসঙ্গটির উল্লেখ করাটা হলো আলোচনার ধারাবাহিকতা রক্ষার কারণে এবং হাজী সাহেবকে সেটার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য।
তৃতীয়ত: মাসজিদে নববী’ যিয়ারত করার বিষয়টি শুধু মাসজিদের সাথেই নির্দিষ্ট হওয়া; তারপর যদি সে তাতে প্রবেশ করে, তাহলে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করবে এবং তাঁর প্রাতি সালাম পেশ করবে, আর মক্কা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা এবং সে উদ্দেশ্যে সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ ও পরিকল্পনা করাটা তার উদ্দেশ্য না হওয়া।
চতুর্থত: তার উদ্দেশ্য হবে অন্য কোথাও ভ্রমণ না করে সরাসরি ‘মাসজিদে নববী’-তে গমন করা। সুতরাং শরী‘আতের দিক থেকে ‘সাওর গুহা’, ‘আবওয়ায় অবস্থিত আমেনার কবর’, ‘হিজরতের রাস্তা’ ইত্যাদি স্থানসমূহের মতো স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থানসমূহ যিয়ারত করার বিষয়টি হাজী সাহেবের নিকট শরী‘আত কখনও দাবি করে না, যেমনটি কোনো কোনো হাজী সাহেব সেসব স্থান ভ্রমণের ইচ্ছা করে থাকেন।
পঞ্চমত: ‘মাদীনায়ে নববী’-তে এমন কতগুলো স্থান রয়েছে, কোনো কোনো হাজী সাহেব সেগুলো ভ্রমণের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা করে থাকেন, যার সাথে হজের কর্মসূচীর কোনো সম্পর্ক নেই, আর হাজী সাহেব তা যিয়ারত করতে বাধ্যও নন, যেগুলোর অধিকাংশের ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে কোনো দলীল-প্রমাণ নেই।
এ অংশের মধ্যে এসব মাসয়ালা কেন্দ্রিক আমাদের আলোচনা চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
লক্ষণীয় যে, ফিকাহবিদগণ হজের বিধানাবলীর ওপর আলোচনা করার পর ‘মসজিদে নববী’ যিয়ারত করার ব্যাপারে আলোচনা করেন, আর ‘মসজিদে নববী’-এর ফযীলত ও মর্যাদার বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার। কেননা তা এমন এক মসজিদ, যা তাকওয়ার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত[1], আর তার ফযীলত প্রসঙ্গে যা বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি বর্ণনা হলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِي غَيْرِهِ [مِنْ الْمَسَاجِدِ]، إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ ».
“আমার এই মসজিদে একবার সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে এক হাজার বার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম।”[2]
এটা তার ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনা, আর অনুরূপভাবে তার যিয়ারত করাটাও শরী‘আতসম্মত কাজ, আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ : مَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى».
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মাসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে না: মসজিদে হারাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ এবং মসজিদে আকসা।”[3]
আর এটা জানা কথা যে, ‘মসজিদে নববী’ যিয়ারত করাটা মুস্তাহাব, হজের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই, আর যিয়ারতের বিষয়টি হজের কোনো রুকন বা ফরয নয় এবং তার কোনো সুন্নাতের অন্তর্ভুক্তও নয়, আর ফিকহের কিতাবসমূহের মধ্যে ‘হজ’-এর অধ্যায়ের পর ফকীহগণ কর্তৃক ‘মসজিদে নববী’ যিয়ারত করার প্রসঙ্গটির উল্লেখ করাটা হলো ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কারণে এবং তাদের পক্ষ থেকে হাজী সাহেবকে তা যিয়ারত করতে উৎসাহিত করার জন্য, যাতে তিনি একটু কষ্ট করে হলেও ‘হারামাইন’ তথা দুই মর্যাদা পূর্ণ জায়গা- মক্কা ও মদীনায় কিছু মুস্তাহাব ইবাদত না করে নিজ দেশে ফিরে না আসেন, আর তা এখন তার পক্ষে খুবই সহজ এবং তা পালনে তার তেমন কোনো কষ্টই হয় না।
তার ওপর ভিত্তি করে আবশ্যকীয় কাজ হলো: হাজী সাহেবের ‘মাসজিদে নববী’ যিয়ারত করার কাজটি নিছক মসজিদের সাথেই নির্দিষ্ট হওয়া, তারপর তিনি যদি তাতে প্রবেশ করেন, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করবেন এবং তাঁর প্রতি সালাম পেশ করবেন, অতঃপর তাঁর দুই সাহাবী আবূ বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কবর দু’টি যিয়ারত করবেন।
এ বিষয়টি শরী‘আতের ‘নস’ বা বক্তব্যসমুহের দ্বারা স্বীকৃত এবং তার উপর ভিত্তি করেই প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞ আলিম সমাজ কথা বলেছেন।[4]
কিন্তু আজকালকার কোনো কোনো হাজী সাহেবের সফরের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা।[5] আর এ কাজটি যারা করে, তারা দু’টি কারণে তা করে থাকে:
প্রথম কারণ: এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসমূহ।
দ্বিতীয় কারণ: কোনো কোনো ফকীহ রহ. এর কর্মকাণ্ড।
তন্মধ্যে তাদের প্রথম কারণ বা যুক্তি নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমরা এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলো উল্লেখ করব; বস্তুত এ হাদীসগুলো আবার দুই ভাগে বিভক্ত:
প্রথম প্রকার: এ প্রকারের হাদীসগুলো সাধারণ যিয়ারতের সাথে সুনির্দিষ্ট; আর এ শ্রেণির হাদীসের সংখ্যা কয়েকটি; তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়টি নিম্নরূপ:
১.
«مَنْ زَارَ قَبْرِى [فَقَدْ] وَجبتْ لهُ شَفاعتِي».
“যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে যাবে।”[6]
বস্তুত এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি[7]; তারপর বিশেষজ্ঞ আলিম সমাজ এ হাদীসের সাথে সম্পর্কিত সনদ ও মতনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন; তারপর অভিজ্ঞ প্রাজ্ঞ ইমামদের একজনও হাদীসটিকে সহীহ বলেন নি; তাঁদের মধ্যে এ হাদীসের ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি, যিনি তাকে দাঈফ (দুর্বল) বলেছেন; আর একদল আলিম হাদীসটিকে মাউদু‘ (বানোয়াট) বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন; তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন ইমাম শাওকানী[8] রহ.।
আর ইবন খুযাইমা রহ. বলেন, “যদি হাদীসটি প্রমাণিত হয় তাহলে তো, আমার মনে এ ব্যাপারে অস্বস্তি রয়েছে।”[9]
আর তিনি হাদীসটি তাঁর ‘আস-সহীহ’ নামক গ্রন্থে ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি বর্ণনার পরপরই বলেন, (আমি এ হাদীসের যিম্মাদারী থেকে মুক্ত, এ খবরটি আহমাসী’র বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত হওয়াটাই অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা আবদুল্লাহ ইবন উমার এ ধরণের ‘মুনকার’ হাদীস বর্ণনা করা থেকে অনেক বেশি উঁচু মানের ও সুরক্ষিত ব্যক্তিত্ব)।[10]
তাই ইবন খুযাইমার এ কথার দ্বারা ঐ ব্যক্তির কথা বাতিল হয়ে যায়, যিনি তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে দলীল করেন এই বলে যে, ইবন খুযাইমা রহ. হাদীসটি তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
এ জন্য হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “পূর্বে ইবন খুযাইমা রহ. এর যে ভাষ্যের বর্ণিত হয়েছে এবং এ হাদীসের তিনি যে ত্রুটি উন্মোচিত করেছেন, তাতে এমন কথা বললে সুন্দর হয় না যে, ‘ইবন খুযাইমা রহ. তার সহীহ গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, বরং সাথে সাথে এ হাদীসের প্রকৃত অবস্থা যা ইবন খুযাইমা বর্ণনা করেছেন তাও বর্ণনা করতে হবে”।[11]
আর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “দারাকুতনী রহ. হাদীসটি দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন, আর এ জন্য একাধিক মুহাদ্দিস হাদীসটিকে মাউদু‘ (বানোয়াট) হাদীসের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন; আর ‘সহীহ’, ‘সুনান’ ও ‘মুসনাদ’ এর মত নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহের সংকলকদের মধ্য থেকে একজন বর্ণনাকারীও তা বর্ণনা করেন নি”।[12]
আর তিনি অন্য ভাষায় বলেন, “পূর্ববর্তী সৎ মানুষ ও ইমামগণের মধ্য থেকে একজনও এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন নি; আর মুসলিম আলিম সমাজের সর্বসম্মতিক্রমে অনুরূপ হাদীস দ্বারা শরী‘আতের বিধান সাব্যস্ত করা বৈধ নয়; আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন”।[13]
আর ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. বলেন, “হাদিসটি বিশুদ্ধও নয় প্রমাণিতও নয়; বরং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ইমামগণের মতে তা ‘মুনকার হাদীস’, দুর্বল সনদে বর্ণিত, অনুরূপ হাদীস দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হয় না এবং এ শাস্ত্রে দুর্বল ব্যক্তিগণ ছাড়া দলীল-প্রমাণ পেশ করার সময় অনুরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা হয় না, আর এ শাস্ত্রের ইমাম, বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ, যাদের কথার ওপর নির্ভর করা হয় এবং যাদের কথা প্রাধান্য পায়- এমন ব্যক্তিবর্গ এ হাদীসের দুর্বলতা ও অখ্যাতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন... আর তা ‘দুর্বল হাদীস’, অপরিচিত ও দুর্বল সনদে বর্ণিত, অনুরূপ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা ঠিক নয় এবং হাদীসের প্রসিদ্ধ হাফেযগণের কেউ তাকে ‘সহীহ’ বলেন নি; আর প্রাজ্ঞ ইমামগণের একজনও তার ওপর নির্ভর করেন নি; বরং তা বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী রহ. এর মত ব্যক্তি, যিনি তার গ্রন্থের মধ্যে অদ্ভুত ও অপরিচিত হাদীসগুলো সংকলন করেছেন এবং যার মধ্যে অধিকাংশ বর্ণনা হলো দুর্বল (দ‘ঈফ), অপরিচিত (মুনকার), এমনকি মাউদু‘ (বানোয়াট) পর্যায়ের, আর তিনি তার গ্রন্থের কোনো কোনো জায়গায় হাদীসের দোষ-ত্রুটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবং হাদীসের দুর্বলতা ও অখ্যাতির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। অথবা তা বর্ণনা করেছেন আবূ জা‘ফর আল-‘উকাইলী ও আবূ আহমাদ ইবন ‘আদী’র মত ব্যক্তি তাঁদের ‘আদ-দু‘আফা’(الضعفاء) নামক গ্রন্থে এবং তারা সাথে সাথে তার দুর্বলতা ও অখ্যাতির কারণ ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। অথবা তা বর্ণনা করেছেন বায়হাকী রহ. এর মত ব্যক্তি তিনিও তার দুর্বলতা ও অখ্যাতির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন”।[14]
বস্তুত সমালোচিত এ হাদীসটি হচ্ছে এ অধ্যায়ে বর্ণিত সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হাদীস।[15] (তার অবস্থাই যদি এমন হয় অন্যগুলোর অবস্থা কেমন হবে তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না)।
২.
«مَنْ جاءنى زائرًا، [لاَ تُعمِلُه][16] حاجةٌ إلا زيارتِىْ، كان حقًّا علىَّ أن أكونَ له شفيعا يومَ القيامةِ».
“যে ব্যক্তি যিয়ারতকারী হিসেবে আমার নিকট আসলো, আমার যিয়ারতের উদ্দেশ্য ছাড়া আর অন্য কোনো প্রয়োজন তাকে এ কাজে নিয়োজিত করে নি, সে ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিনে সুপারিশ করাটা আমার ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হয়ে যায়।”[17]
ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. এ হাদীস ও তার দ্বারা দলীল পেশ করা প্রসঙ্গে বলেন, “এ হাদীসটি কবর যিয়ারতের আলোচনা প্রসঙ্গে নয় এবং মৃত্যুর পরে যিয়ারত করার আলোচনা প্রসঙ্গেও নয়; তাছাড়া তা এমন এক হাদীস, যার সনদ দুর্বল, মতন অপরিচিত ও অখ্যাত, তার দ্বারা দলীল পেশ করা শুদ্ধ নয়, আর অনুরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা বৈধ নয় এবং ছয়টি বিশেষ গ্রন্থের কোনো সংকলনকারী তা বর্ণনা করেন নি, আর ইমাম আহমাদ রহ.-ও তার ‘আল-মুসনাদ’ এর মধ্যে তা বর্ণনা করেন নি, আর যে সব ইমাম হাদীস বর্ণনা করে কোনো মন্তব্য না করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় এমন কোন ইমামও তা বর্ণনা করেন নি। যাদের বিশুদ্ধ বলা গ্রহণযোগ্য এমন নির্ভরযোগ্য কোনো ইমামও এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলেন নি। বরং এ শাইখই এককভাবে তা এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি ‘ইলম অর্জনে খুব পরিচিত নন, তা বহনে খ্যাতি লাভ করেন নি এবং তার অবস্থা সম্পর্কে এমন কিছু জানা যায় না, যা তার হাদীস গ্রহণ করার বিষয়টিকে আবশ্যক করে, আর তিনি হলেন: মাসলামাহ ইবন সালেম আল-জুহানী, যিনি এ ‘মুনকার হাদীস’ এবং অপর একটি ‘মাউদু‘ (বানোয়াট) হাদীস’ ছাড়া আর তেমন কোনো বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করতে পারেন নি।
আর যখন এ শাইখের মত কোনো ব্যক্তি এককভাবে হাদীস বর্ণনা করেন, যার অবস্থা অজানা, যিনি খুব কম হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন, এ দু’টি ‘মুনকার হাদীস’ বর্ণনা করেছেন, ‘উবায়দুল্লাহ ইবন উমার থেকে, যিনি তার যুগে উমার ইবনল খাত্তার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বংশের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ও অধিক স্মৃতিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেছেন নাফে‘ থেকে, নাফে‘ সালেম থেকে, সালেম তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। বর্ণনার এ ধারায় ‘উবায়দুল্লাহর সকল সঙ্গী-সাথী হলেন প্রসিদ্ধ, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। সুতরাং জানা গেল যে, তিনি এমন এক শাইখ, যার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা বৈধ হবে না এবং তার বর্ণনার ওপর নির্ভর করা জায়েয হবে না; এ সত্ত্বেও তার থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন, তিনি হলেন: আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ আল-‘উব্বাদী, তিনি ঐসব শাইখদের একজন, যাদের এককভাবে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করা যায় না...)।[18]
মোটকথা, এ প্রকারের হাদীসগুলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে সঠিক নয়; শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসের সব কয়টা হাদীস দুর্বল, দীনের ব্যাপারে তার কোনো একটির ওপরও নির্ভর করা যায় না, আর এ জন্য ‘সহীহ’ ও ‘সুনান’ গ্রন্থের সংকলনকারীগণ সেসব হাদীস থেকে কোনো কিছুই বর্ণনা করেন নি, আর এসব হাদীস শুধু তিনিই বর্ণনা করেন, যিনি দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। যেমন, দারাকুতনী, বাযযার ও অন্যান্যগণ”।[19]
দ্বিতীয় প্রকার: এ প্রকারের হাদীসগুলো সরাসরি হজের পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারতের সাথে সুনির্দিষ্ট; আর এ শ্রেণির হাদীসের সংখ্যা কয়েকটি। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়টি নিম্নরূপ:
১.
«مَنْ حجَّ البيتَ، ولَمْ يزُرْنِىْ ؛ فَقَدْ جَفَانِىْ».
“যে ব্যক্তি বায়তুল্লায় হজ করল, অথচ আমার (কবর) যিয়ারত করল না, সে ব্যক্তি আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করল।”[20]
আর এটা মাউদু‘ বা জাল হাদীস, যে ব্যাপারে একদল আলিম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন[21]। তারা হলেন: ইবনু তাহের আল-মাকদিসী রহ.[22], ইবনল জাওযী রহ.[23], আস-সাগানী রহ.[24], ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.[25], ইবন আবদিল হাদী রহ.[26], যাহাবী রহ.[27] ও শাওকানী রহ.[28]।
এ ক্ষেত্রে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এর বক্তব্যটিই যথেষ্ট, যেখানে তিনি বলেছেন: “নির্দিষ্ট কোনো কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হাদীসও (বিশুদ্ধভাবে) প্রমাণিত হয় নি, আর এ ব্যাপারে কেউ কোনো কিছু বর্ণনা করেন নি, না বর্ণনা করেছেন কোনো ‘সহীহ’ হাদীসের সংকলনকারী, না বর্ণনা করেছেন কোনো ‘সুনান’ গ্রন্থের সংকলনকারী; আর ইমাম আহমাদ প্রমুখের মত ‘আল-মুসনাদ’ সংকলনকারী ইমামগণের কোনো একজনও এ ধরণের হাদীস বর্ণনা করেন নি, আর এ ধরণের হাদীস শুধু তিনিই বর্ণনা করেছেন, যিনি ‘মাউদু‘ (জাল হাদীস) ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস সংকলন করেছেন।
আর এ বিষয়ে বর্ণিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ হাদীস হলো যা দারাকুতনী রহ. বর্ণনা করেছেন, আর তা তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের) কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলিম সমাজের সর্বসম্মত মতে ‘দ‘ঈফ’ বা দুর্বল। যেমন, তাঁর নামে প্রচলিত কথা:
«مَنْ زَارَنِي وَزَارَ أَبي إبْرَاهِيْمَ فِي عَامٍ وَاحِدٍ؛ ضَمِنْتُ لهُ عَلى اللهِ الجنة».
“যে ব্যক্তি একই বছরে আমাকে এবং আমার পিতা ইবরাহীমকে যিয়ারত করল, আমি তার জন্য আল্লাহর নিকট জান্নাতের জামিন হব।”[29] আর
«مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَمَاتِي ؛ فكأَنمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي»
“যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর আমার (কবর) যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল।”[30] আর
«مَنْ حجَّ البيتَ، ولَمْ يزُرْنِىْ ؛ فَقَدْ جَفَانِىْ».
“যে ব্যক্তি বায়তুল্লার হজ করল, অথচ আমার (কবর) যিয়ারত করল না, সে ব্যক্তি আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করল।”[31] আর এ ধরণের হাদীসের সব ক’টিই মিথ্যা ও বানোয়াট”।[32]আর তাদের দ্বিতীয় কারণের ওপর আলোচনা- আর তা হলো কোনো কোনো ফকীহ রহ.-এর কর্মকাণ্ড। যেমন, তারা হজের পরে সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে উদ্দেশ্য করে পরিকল্পিত সফরকে বৈধ বলে দলীল পেশ করে থাকেন, তা হলো ফিক্হ শাস্ত্রের গ্রন্থসমূহের ‘কিতাবুল মানাসিক’ (হাজ্জের অধ্যায়)-এর শেষের দিকে ফকীহগণ কর্তৃক ‘মদীনায়ে নববী’ ও ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত’-এর উদ্দেশ্য সফর করা এবং এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান প্রসঙ্গে আলোচনা করা, আর এ অধ্যায়ের প্রথম দিকে এর পরিপূর্ণ জবাব দেওয়া হয়েছে; আর আমি এখানে একটু বাড়িয়ে বলতে চাই যে, প্রকৃত যুক্তি-প্রমাণ হলো ‘কুরআন’ ও ‘সুন্নাহ’-এর দলীলের মধ্যে, আর যিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্য সফর করার বৈধতার পক্ষে কথা বলেন, তার নিকট কোনো সহীহ দলীল নেই, চাই সেই যিয়ারত সরাসরি হজের পরে হউক অথবা বছরের যে কোনো দিনেই হউক।
[2] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১১৩৩; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৯৪; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৭৪৮১; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৪০৪; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২৫; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৮৯৯।
[3] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১১৩২ এবং হাদীসের শব্দগুলো তার; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৯৭; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৭১৯১; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৪০৯; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ২০৩৩; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২৬; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৯৯; আর হাদীসের এ শব্দগুলো সহীহ বুখারীর; আর বাকিদের বর্ণনায়: এর পরিবর্তে, আর হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১১৩৯; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ (২/৯৭৫-৯৭৬); আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১১০৪০; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৪১০; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২৬।
[4] ফাতাওয়া ইবন ইবরাহীম: (৬/১২৬)।
[5] জেনে রাখা উচিৎ যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করাটা অবশ্যই শরী‘আতসম্মত সৎকাজসমূহের অন্যতম একটি সৎকাজ এবং এ ব্যাপারে কেউ সন্দেহ পোষণ করে না, তা যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করা তো দূরে থাক, তবে এখানে কথা হলো তাঁর কবরের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সফর নিয়ে, মদীনাতে যিনি অবস্থান করছেন অথবা যিনি ‘মাসজিদে নববী’-এর উদ্দেশ্যে মদীনাতে সফর করেন, তার জন্য তাঁর কবর যিয়ারত করা নিয়ে কোনো কথা নেই, অর্থাৎ তিনি ‘মাসজিদে নববী’-তে ইবাদত করার পর তাঁর কবর যিয়ারত করবেন। কোনো কোনো মানুষ দু’টো মাসআলাকে এক করে দিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা তৈরী করার জন্য। তারা সেসব সম্মানিত আলেমগণ যারা কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করেছেন, যেমন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা ও তার সহমতের আলেমদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকেন যে, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করে থাকেন। আসলে তা অসত্য কথা।
[6] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; আল-‘উকাইলী, ‘আদ-দু‘আফাউ’: (৪/১৩২১); আদ-দূলাবী, ‘আল-কুনা ওয়াল আসমাউ’: (১৪৮৩); ইবন ‘আদী, ‘আল-কামেল’: (৬/২৩৫০); দারাকুতনী, আস-সুনান: (২/২৭৮); বায়হাকী, আল-জামে‘ লি-শু‘আব আল-ঈমান’: (৩৮৬২); খতীব, ‘তালখীস আল-মুতাশাবেহ ফির্ রাসম’: (১/৫৮১)।
[7] যেমনটি হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ থেকে পরিষ্কার হয়েছে।
[8] আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমূ‘আ ফিল্ আহাদীস আল-মাওদু‘আ, হাদীস নং ৩২৬।
[9] দেখুন: লিসানুল মীযান: (৬/১৩৫)।
[10] দেখুন: লিসানুল মীযান: (৬/১৩৫)।
[11] দেখুন: লিসানুল মীযান: (৬/১৩৫)।
[12] মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৭/২৫)।
[13] মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৭/২৮); আরও দেখুন: কায়েদাতুন জালিলাতুন ফিত্ তাওয়াস্সুল ওয়াল ওসীলা: (পৃ. ১১৩-১৩৪)।
[14] আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ২১-২২)।
[15] দেখুন: কায়েদাতুন জালিলাতুন ফিত্ তাওয়াস্সুল ওয়াল ওসীলা: (পৃ. ১১৩ ); আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ২১)।
[16] অনুরূপ ভাষ্য হলো ‘আল-মু‘জাম আল-আওসাত’: (৪৫৪৬) ও ‘মাজমা‘উল বাহরাইন’: (১৮২৮); আর ‘আল-মু‘জাম আল-কাবীর’ এর মুদ্রণে রয়েছে:
[17] হাদীসটি ত্ববারানী রহ. বর্ণনা করেছেন: ‘আল-মু‘জাম আল-কাবীর’, হাদীস নং ১৩১৪৯; ‘আল-মু‘জাম আল-আওসাত’: (৪৫৪৬)।
[18] ‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ৪৯-৫০); আর তিনি হাদীসের অপর আরেকটি ত্রুটি আলোচনা করেছেন, সংক্ষেপ করার দিক বিবেচনা করে আমি তা আলোচনা না করার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়েছি।
[19] ‘কায়েদাতুন জালিলাতুন ফিত্ তাওয়াস্সুল ওয়াল ওসীলা: (পৃ. ১৩৩)।
আর ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. তাঁর ‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী নামক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গের হাদীসগুলো নিয়ে লম্বা আলোচনা করেছেন, যা আপনি অন্য কারও আলোচনার মধ্যে পাবেন না; আর আধুনিক গবেষণায় এ বিষয়ে আলোচনা আছে: ড. সালেহ ইবন হামিদ আর-রেফা‘য়ী, ‘আল-আহাদীস আল-ওয়ারেদা ফী ফাদায়েলিল মাদীনা জাম‘আন ওয়া দিরাসাতান’; শাইখ আহমাদ ইবন ইয়াহইয়া আন-নাজমী, ‘আওদাহুল ইশারা ফির্ রাদ্দে ‘আলা মান আজাযাল মামনূ‘ মিনায্ যিয়ারাত’ ।
[20] হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, ইবন হিব্বান, আল-মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ওয়াদ্ দু‘আফায়ে ওয়াল মাতরুকীন: (২/৪১৪); ইবন ‘আদী, ‘আল-কামেল’: (৭/২৪৮০); ইবনুল জাওযী, ‘আল-মাউদু‘আত মিনাল আহাদীস আল-মারফূ‘আত, হাদীস নং ১১৬৮।
[21] যেমনটি পরিষ্কার হয়েছে হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ থেকে।
[22] মা‘আরেফাতুত্ তাযকিরা ফিল্ আহাদীস আল-মাউদু‘আ: (৭৮৬)।
[23] ‘আল-মাউদু‘আত মিনাল আহাদীস আল-মারফূ‘আত: (পৃ. ১১৬৮)।
[24] ‘মাউদু‘আত আস-সাগানী: (পৃ. ৫২)।
[25] ইকতিযাউ আস-সিরাত আল-মুস্তাকীম লি-মুখালিফাতি আসহাবিল জাহীম: (২/২৯৬)।
[26] ‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ৮৭)।
[27] মীযানুল ই‘তিদাল ফী নাকদ আর-রিজাল: (৪/২৬৫)।
[28] আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমূ‘আ ফিল্ আহাদীস আল-মাওদু‘আ’: (পৃ. ৩২৪); আর তিনি তা উল্লেখ করেছেন কাছাকাছি শব্দ দ্বারা।
[29] ইমাম নববী রহ. বলেন: (এ হাদীসটি বাতিল, এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নয়; আর এটা কোনো ‘সহীহ’ ও দুর্বল গ্রন্থে পাওয়া যায় না, বরং কিছু কিছু পাপী এ হাদীসটি তৈরি করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে চালিয়ে দিয়েছে)। -আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/২৬১)।
আরও দেখুন: ফাতাওয়া আন-নববী: (পৃ. ৩৩০); ‘আল-আসরার আল-মারফূ‘আ’: (পৃ. ৪৮৯); আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমূ‘আ ফিল্ আহাদীস আল-মাওদু‘আ’: (পৃ. ১১৭-১১৮)।
[30] হাদীসটি দারাকুতনী রহ. বর্ণনা করেছেন, ‘আস-সুনান’ (২/২৭৮); তিনি হাদীসটি দু’টি পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন: তন্মধ্যে একটির ভাষ্য হলো: (আমার মৃত্যুর পর যে ব্যক্তি হজ করল, তারপর আমার কবর যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল)। আর অপর ভাষ্যটি হলো:
(যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর আমার (কবর) যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল)। আর এ ভাষ্যের কাছাকাছি শব্দে আরও কতগুলো বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে এবং এর একটি হাদীসও ‘সহীহ’ নয়।
ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. বলেন: (এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা বৈধ নয় এবং অনুরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা সঠিক নয়; কারণ, তা এমন হাদীস, যার মতন অপরিচিত ও অখ্যাত, সনদ পরিত্যাজ্য এবং হাফিযগণের একজনও তাকে ‘সহীহ’ বলেননি; আর ইমামগণের কেউ তার দ্বারা দলীল পেশ করেন নি, বরং তাঁরা তাকে দুর্বল বলেছেন এবং তার সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন, আর তাঁদের কেউ কেউ তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীসের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন)। — ‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ৬২)।
[31] হাদীসটি বর্ণনা করেছেন: ইবন হিব্বান, আল-মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ওয়াদ্ দু‘আফায়ে ওয়াল মাতরুকীন: (২/৪১৪); ইবন ‘আদী, ‘আল-কামেল’: (৭/২৪৮০); ইবনুল জাওযী, ‘আল-মাউদু‘আত মিনাল আহাদীস আল-মারফূ‘আত: (১১৬৮)।
[32] ইকতিযাউ আস-সিরাত আল-মুস্তাকীম লি-মুখালিফাতি আসহাবিল জাহীম: (২/২৯৬)।
হাজীগণ কর্তৃক যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনা ও তাঁর মাসজিদে প্রবেশ করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন মাসজিদে প্রবেশকারী ব্যক্তি সর্বপ্রথম যে চিন্তা করবে, তা হলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা এবং রাহামাতুল্লিল ‘আলামীনের ওপর সালাম পেশ করা। আর আলিমগণ তাঁর কবরের নিকট দাঁড়ানো এবং তাঁর প্রতি সালাম পেশের ধরন ও পদ্ধতি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন[1]; কিন্তু সাধারণ মানুষ এ কাজটিকে সীমা অতিক্রম করে অনেকগুলো মন্দ কাজে পরিণত করে। যেমন, কোনো কোনো মানুষ হুজরা তথা কবরের পাশ্ববর্তী দেওয়াল স্পর্শ করে স্বীয় শরীর মাসেহ করে, অথবা তার দ্বারা বরকত হাসিলের (বৃথা) চেষ্টা করে এবং তা চুম্বন করে, আর কতগুলো বানানো দো‘আ বা অযীফা পাঠ করে এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট দো‘আ করার সময় কবরকে সামনে রেখে দো‘আ করে; আর তাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো সে ব্যক্তি, যে ‘শির্কে আকবর’ (বড় শির্ক)-এর মধ্যে জড়িয়ে যায়, যে শির্ক তাকে দীন থেকে খারিজ করে দেয়; আর এটা হয়ে থাকে- যখন সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রার্থনা করে, তাঁর নিকট সাহায্য চায় এবং তাঁর কাছে প্রয়োজন পূরণের আবেদন করে।
ইমাম ইবন কুদামা রহ. বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের সীমানা প্রাচীর (বরকতের উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা এবং তা চুম্বন করা ভালো কাজ নয়।”[2]
ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, “এ জাতীয় কিছু আমার জানা নেই।”
আছরম রহ. বলেন, “আমি মদীনাবাসী বিজ্ঞ আলিমগণকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে স্পর্শ না করতে দেখিছি, তারা এক পাশে দাঁড়াতেন এবং সালাম পেশ করতেন।”
আবূ আবদিল্লাহ রহ. বলেন, “আর আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এরূপ করতেন।”[3]
ইমাম নববী রহ. বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করা বৈধ নয়। আর কবরের দেওয়ালের সাথে পিঠ ও পেট লাগানো মাকরূহ। আর একই কথা বলেছেন আবূ আবদিল্লাহ আল-হালিমী ও অন্যান্য প্রমুখ, তারা বলেন, আরও মাকরূহ হবে হাত দ্বারা তা (দেয়াল) স্পর্শ ও চুম্বন করা; বরং আদব হলো তার থেকে এমনভাবে দূরে থাকা, যেমনিভাবে সে তাঁর থেকে দূরে থাকত, যদি সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁর নিকট হাযির হত।”
এটাই হলো সঠিক কথা, যা আলিমগণ বলেছেন এবং তার ওপর তারা একমত হয়েছেন, আর অধিকাংশ সাধারণ মানুষের বিপরীত কথা ও এ জাতীয় কাজের দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না। কারণ, অনুসরণ ও কাজকর্মের বিষয়টি নির্দিষ্ট হবে শুধুমাত্র সহীহ হাদীস ও আলিমগণের মতামতের মাধ্যমে। আর সাধারণ জনগণ ও অন্যান্য মানুষের উদ্ভাবিত নতুন নতুন নিয়ম-কানূন, অজ্ঞতা ও মূর্খতার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না।
আর ‘সহীহাইন’ তথা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أحْدَثَ في دِينِنَا مَا لَيْسَ مِنْهُ، فَهُوَ رَدٌّ ».
“যে ব্যক্তি আমাদের দীনের ব্যাপারে এমন নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যাজ্য।” আর সহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا ؛ فَهُوَ رَدٌّ».
“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যার ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই, সে কাজ প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য।”
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا، وَصَلُّوا عَلَيَّ ؛ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ».
“তোমরা আমার কবরকে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ো না; আর তোমরা আমার ওপর দুরূদ পাঠ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দুরূদ আমার কাছে পৌঁছে যাবে।”[4] হাদীসটি ইমাম আবূ দাউদ রহ. সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
আর ফুদাইল ইবন ‘ইয়াদ রহ. বলেন, “তার অর্থ হলো: তুমি সঠিক পথ অনুসরণ কর এবং সুপথের অনুসারীরে সংখ্যার কমতি তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। আর ভ্রান্ত পথ থেকে দূরে থাক এবং বিপথগামীদের সংখ্যাধিক্যের দ্বারা প্রতারিত হয়ো না।
আর যে ব্যক্তির মনে জাগ্রত হয় যে, হাত দ্বারা স্পর্শ ও অনুরূপ কর্মকাণ্ড বেশি বেশি বরকত অর্জনে সহায়ক, সে ব্যক্তি স্বীয় মূর্খতা ও অসতর্কতার সাগরে ডুবে আছে; কারণ, বরকত তো শুধু ঐ কাজের মধ্যে আছে, যা শরী‘আতসম্মত, আর কীভাবে সঠিক পথ বাদ দিয়ে ভুল পথে ফযীলত ও মর্যাদা কামনা করা যায়?[5]।”
আর এ বরকতময় দেশের সরকার কিছু ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের চার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে জনগণকে এসব কাজ থেকে বাধা প্রদান করে এবং তাদের সঠিক পথ দেখিয়ে দেয় -আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন। আর আকীদাগত বিরোধের অধিকাংশই দেখা যায় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের নিকট।
[2] ইমাম গাযালী রহ. তাঁর ‘এহইয়াউ ‘উলুমুদ্ দীন’ গ্রন্থে যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে চুম্বন করে অথবা তার হাত দ্বারা স্পর্শ করে, সে ব্যক্তির নিন্দা ও সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন: “নিশ্চয় কবর বা মাযারকে স্পর্শ করা ও চুম্বন করাটা খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের সংস্কৃতি।” -‘এহইয়াউ ‘উলুমুদ্ দীন’: (১/২৭৮); আরও দেখুন: ‘আল-আমরু বিল ইত্তিবা‘য়ে ওয়ান্ নাহইউ ‘আনিল্ ইবতেদা‘য়ে’: (পৃ. ২৫৯)
[3] আল-মুগনী: (৫/৪৬৮)।
[4] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৮৮০৪; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ২০৪২; আর এ বিষয় বা পরিচ্ছেদে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত আছে, যার কিছু সংখ্যক সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়; হাদীসগুলো দেখুন: ফাদলুস্ সালাত ‘আলান্ নাবিয়্যে সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম: (পৃ. ১১৪-১২৯); হায়াতুল আম্বিয়া সালাওয়াতুল্লাহে ‘আলাইহিম বা‘দা ওফাতিহিম: (পৃ. ৯৩-১০৬); জালাউল আফহাম ফী ফাদলিস্ সালাত ‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইরিল আনাম: (পৃ. ১০৭-১১০) ও (১৬৩-১৬৫); আল-কাউলু আল-বাদি‘উ ফিস্ সালাত ‘আলাল হাবীব আশ-শাফী‘য়ে: (পৃ. ২২৫-২৪৭); তাহযীর আস-সাজিদ মিন ইত্তিখায আল-কুবুর মাসাজিদ: পৃ. ১২৮-১২৯)।
[5] আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/২৫৭-২৫৮); আরও দেখুন: ‘আদ-দীন আল-খালেস’: (৩/৬০০)।
ইসলামের বাহ্যিক মহান ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম একটি মহান অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত এ গবেষণার উপসংহারে এসে আমি তার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমূহ সারসংক্ষেপ আকারে উপস্থাপন করছি এবং সাথে নিম্নোক্ত উপদেশসমূহ পেশ করছি:
- হজ হচ্ছে ইসলামের রুকনসমূহের ধারাবাহিকতায় পঞ্চম রুকন, যা জীবনে একবার ফরয এবং তার জন্য সামর্থ্যের শর্ত করা হয়েছে; আর তাতে অনেক শ্রম ও কষ্ট নিয়োগের ব্যাপার রয়েছে, আর তা হলো আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির ওপর আবশ্যক হলো তার হজের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া এবং তার জন্য এমন সহীহ জ্ঞানের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করা, যে জ্ঞান হবে ‘কুরআন’ ও ‘সুন্নাহ’ নির্ভর। আরও প্রস্তুতি গ্রহণ করবে বিজ্ঞ আলোমগণের কাছে পথনির্দেশ ও পরামর্শ চাওয়ার মাধ্যমে।
- মানুষকে ভুল-ভ্রান্তিপূর্ণ বিষয়ে সতর্ক করা এবং তার ওপর কেন্দ্রীভূত করা কোনো কোনো মানুষের কাছে সঠিক ও যথার্থ শিক্ষানীতি মনে হতে পারে; কিন্তু তা সঠিক শিক্ষা-পদ্ধতির বিরোধী নয়। কারণ এর প্রমাণ হিসেবে আমি হুযায়ফা ইবনল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত একটি আছারকে উল্লেখ করেছি, যেখানে তিনি বলেছেন:
«كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَهُ عَنْ الْخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ، قِيلَ : لِمَ فَعَلْتَ ذَلِكَ ؟ قَالَ : مَنْ اتَّقَى الشَّرَّ ؛ وَقَعَ فِي الْخَيْرِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন ভালো সম্পর্কে, আর আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম মন্দ বিষয় সম্পর্কে। বলা হলো, কেন তুমি এরূপ করতে? তখন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মন্দ পরিহার করে চলবে, সে ভালো ও কল্যাণের মধ্যে থাকবে।”[1]
- হজের মধ্যকার আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তিগুলো উদ্ভূত আসার বা হাদীসের আলোকে এক মানের নয়; কেননা তার মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা ইসলামের লঙ্ঘন ও আমলসমূহ বিনষ্টকারী। যেমন, আল্লাহর ছাড়া অন্য কারও নিকট প্রার্থনা করা, আবার তার মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা ঈমানকে হ্রাস করে, ভালোকাজকে ধ্বংস করে।
- ঐসব আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তি, যার সাথে কোনো কোনো সময় হাজী সাহেব জড়িয়ে যান, তা শুধু মক্কা ও মদীনাতে হজের সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ছড়িয়ে আছে হাজী সাহেব কর্তৃক মক্কায় পৌঁছার পূর্বেকার সময়ের কাজকর্মে এবং হজ সমাপ্তির পরবর্তী সময়ের কাজকর্মের সাথে। বিষয়টি এমন, যা তার থেকে কঠিন সাবধানতা ও সামগ্রিক সতর্কতা অবলম্বন করাকে আবশ্যক করে দেয়।
- শরী‘আতের বিরোধিতা, আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তি ও অন্যান্য নেতিবাচক বিষয়গুলো প্রচলন ও প্রচার-প্রসারের পিছনে যে কারণটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তা হলো দীনের বিধিবিধান সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা ও মূর্খতা।
- সরকারি (ফাতওয়া বিভাগ, ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হজ মন্ত্রণালয়) এবং বেসরকারি (ভ্রাম্যমান সংস্থাসমূহ এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত হজ কাফেলা) কর্তৃপক্ষ ও এজেন্সীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ বিষয়গুলো উত্তরণের ব্যাপারে হজ মৌসুমে ও তার পূর্বে আলিম সমাজ, ছাত্রসমাজ ও দীনের পথে আহ্বানকারীদেরকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, যাতে হাজীগণকে হজের উদ্দেশ্যে তাদের আগমনের পূর্বেই এসব বিরোধের ব্যাপারে পূর্ণ সতর্ক করা যায় এবং তাতে নিপতিত হওয়া থেকে তাদেরকে সাবধান করা যায়। আর হজ মৌসুমের পরে তাদের ভূমিকা থাকবে মুসলিমগণকে শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের প্রশ্নসমূহের জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করা, আর ভুল-ভ্রান্তিসমূহ উল্লেখ করণসহ হজের সঠিক পদ্ধতি অবহিতকরণ প্রসঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট পুস্তিকা (বিভিন্ন ভাষায়) মুদ্রণ, প্রকাশ ও প্রচারে অংশগ্রহণ করা; আর এ কার্যক্রমটি বিদ্যমান রয়েছে- আলহামদু লিল্লাহ।- টেলিভিশন ও রেডিওর মতো প্রচার মাধ্যমসমূহকে ফলপ্রসূ করা এবং দর্শনীয় ও শ্রবণীয় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান তৈরি করা; আর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষায় ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ওয়েবসাইট তৈরি করা, যাতে হজের নিয়ম-পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা করা হবে, আর তাতে বর্ণনা করা হবে বিশেষ করে আকীদাগত বিরোধ ও ভুলত্রুটিসমূহ, যা হাজী সাহেব ধারণ করতে সক্ষম হবে, এমনকি তিনি তার দীনের ওপর সুস্পষ্ট ধারণা নিতে পারেবন মক্কায় অবস্থিত সম্মানিত ঘর বাইতুল্লাহতে পৌঁছার পূর্বেই ইনশাআল্লাহ।
>