প্রথম অধ্যায় - কোনো কোনো হজ পালনকারী কর্তৃক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দো‘আ ও সাহায্য প্রার্থনা করা এবং শির্ক মিশ্রিত অযীফা বা দো‘আর ওপর নির্ভর করা

মানুষ যেসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, বিশেষকরে হাজী সাহেবগণ, তন্মধ্যে উপরোক্ত কাজসমূহ খুবই মারাত্মক ও বিপজ্জনক। বিশেষ করে যখন তা সংঘটিত হয়ে থাকে হারামাইন শরীফাইন ও হজের পবিত্র স্থানসমূহে; চাই তা হউক তাদের হজের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত কোনো পাঠ এবং তাদের সাথে বহন করা তাদের শির্ক মিশ্রিত দো‘আ বা অযীফাসমূহ, যেমনটি পূর্বের অধ্যায়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে, অথবা হউক এগুলো ছাড়া এ জাতীয় অন্য কোনো দো‘আ; কারণ, তা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত, কারণ তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দীন ইসলাম থেকে খারিজ (বহিষ্কার) করে দেয়।

বস্তুত দো‘আ দুই প্রকার: ইবাদত হিসেবে দো‘আ এবং চাওয়া-পাওয়ার জন্য দো‘আ।

কুরআনে কারীমে দো‘আ দ্বারা কখনও এটাকে বুঝানো হয়েছে, আবার কখনো ঐটাকে বুঝানো হয়েছে। আর তার (দো‘আ) উভয় প্রকারকেই বুঝানো হয়।

সুতরাং চাওয়া-পাওয়ার জন্য দো‘আ (دعاء المسألة) মানে: এমন কিছু তলব করা, যা দা‘ঈ বা প্রার্থনাকারী ব্যক্তির কাজে লাগবে- উপকার লাভের মাধ্যমে হোক অথবা ক্ষতি দূরিকরণের মাধ্যমে হোক, আর এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির নিন্দা বা সমালোচনা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কারো কাছে প্রার্থনা করে, যে নাকি কোনো ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ أَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗاۚ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٧٦﴾ [المائ‍دة: ٧٦]

“বলুন, তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত কর, যার কোনো ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার? আর আল্লাহ্ তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦﴾ [يونس: ١٠٦]

“আর আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যা আপনার উপকারও করে না, অপকারও করে না। কারণ, এটা করলে তখন আপনি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা ইউনূস, আয়াত: ১০৬]

আর ‘ইস্তিগাছা’ (الاستغاثة) মানে: উদ্ধার কামনা করা; আর তা (সাহায্য) হলো কষ্ট বা অসুবিধা দূর করার জন্য কারও দ্বারস্থ হওয়া।[1]

আর উভয় বিষয়, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি অথবা কোনো সৃষ্টির কাছে এমন কোনো ব্যাপারে দো‘আ ও সাহায্যের আবেদন করা, যে ব্যাপারে সাহায্য করার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই, তা বড় শির্ক -এর অন্তর্ভুক্ত, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দীন ইসলাম থেকে খারিজ (বহিষ্কার) করে দেয়।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “শরী‘আত নিষিদ্ধ ‘ইস্তিগাছা’ বা বিপদে সাহায্যের ফরিয়াদ দুই প্রকার:

প্রথম প্রকার: প্রত্যেক ব্যাপারে সাধারণভাবে মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা।

দ্বিতীয় প্রকার: সৃষ্টির কাছে এমন কোনো ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন করা, যে ব্যাপারে স্রষ্টা ব্যতীত সাহায্য করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। সুতরাং কারও জন্য কোনো অধিকার নেই আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট এমন কিছু চাওয়া, যা দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নেই, সে চাওয়াটা নবীর কাছেও নয় এবং অন্যের কাছেও নয়, আর কোনো সৃষ্টির নিকট সাহায্যের ফরিয়াদ করবে না এমন কোনো বিষয়ে, যে ব্যাপারে স্রষ্টা ব্যতীত সাহায্য করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। আর কারও জন্য কোনো অধিকার নেই মৃত ব্যক্তির নিকট কোনো কিছুর ব্যাপারে আবেদন করা অথবা তার কাছে কোনো বিষয়ে সাহায্যের ফরিয়াদ করা, চাই তিনি নবী হউন অথবা অন্য কেউ”।[2] আর এ জাতীয় কবীরা গুনাহ, এমনকি দীন থেকে খারিজ করে দেওয়ার মত এ শির্কের ভয়াবহতা সত্ত্বেও হজের উদ্দেশ্যে সম্মানিত বাইতুল্লাহতে গমনে ইচ্ছুকদের কারও কারও নিকট থেকে তাদের হজের কর্মসূচীতে এমন সব অযীফা, দো‘আ ও যিকিরের ওপর নির্ভর করতে দেখা যায়, যাতে নবীগণ ও সৎব্যক্তিবর্গের মতো সম্মানিত ব্যক্তিগণের নিকট দো‘আ ও সাহায্য প্রার্থনা করার মত বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে যে ব্যক্তির সাথে শি‘আ ও সুফী সম্প্রদায়ের সম্পর্ক রয়েছে, তাদের এমন সব দো‘আ ও ফরিয়াদ রয়েছে, যার সবগুলোই মহান আল্লাহর সাথে শির্কের নামান্তর। কারণ, তার কিছু অংশের মধ্যে রয়েছে ইমাম ও সৎকর্মশীল শাইখগণের নিকট এমন সব প্রয়োজন পূরণের আবেদন, যা পূরণের ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারও নেই। যেমন, উপকার লাভ ও ক্ষতি দূর করার আবেদন, রোগমুক্ত করার আবেদন, রিযিক বৃদ্ধির আবেদন এবং সমস্যা ও অসুবিধা দূর করার আবেদন ইত্যাদি। আর এ কথা সবার জানা যে, এ বিষয়গুলো আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করে বিশেষ কোনো সময় ও স্থানে, যেমন, সম্মানিত হজের মাসে এবং মক্কার হারাম বা ক্যাম্পাসে (আল্লাহ তাকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন)।[3]

>
[1] দেখুন: ‘ফাতহুল মাজীদ’’: (পৃ. ১৭০-১৭১)।

[2] ‘আল-ইসতিগাছাতু ওয়ার রাদ্দু ‘আলাল বাকরী’: (১/৩৫৯-৩৬০)। ‘শিফা আস-সুদুর ফী যিয়ারাত আল-মাশাহেদ ওয়াল কুবূর’: (১২৩-১৩৭)।

[3] দেখুন: ‘আদ-দো‘আ ওয়া মানযিলাতুহু ফিল ‘আকীদা আল-ইসলামিয়্যা’: (২/৫১৭-৫২৭); ‘উসূলু মাযহাব আশ-শী‘আ’: (২/৪৪১-৪৫৩), (৩/১১৪৪-১১৪৮); ‘মাযাহেরুল ইনহিরাফাত আল-‘আকদিয়্যা ‘ইন্দাস্ সূফিয়্যা’: (১/১৪৮ -১৭২, ৪২৪-৪৪৫)।
দ্বিতীয় অধ্যায় - কা‘বার গেলাফ ও দৃশ্যমান পাথরসমূহ স্পর্শ করার দ্বারা স্বীয় শরীর মোছা

কা‘বা হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ঘর, আর তা হচ্ছে দুনিয়ার মধ্যকার সর্বশ্রেষ্ঠ ঘর, আল্লাহ তা‘আলা তাকে মর্যাদাবান ও সম্মানিত করেছেন তা নির্মিত হওয়ার দিন থেকেই। আর মুসলিমগণের মনে-প্রাণে পৃথিবীর সকল আশা-আকাঙ্খার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র আকাঙ্খা ও কামনা হলো তাকে দেখা।

কিন্তু কোনো বস্তুর প্রতি আমাদের ঝোঁক ও ভালোবাসাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ‘কুরআন’ ও ‘সুন্নাহ’-এর মানদণ্ডে, যাতে কোনো রকম অতিরঞ্জন ও অবহেলার আশঙ্কা না থাকে।

একদল লোক অনেক বেশি অতিরঞ্জন করে ফেলেছে, ফলে তারা ‘কাবা’-এর ব্যাপারে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করে; যার কারণে আমরা তাদেরকে তার গেলাফ ও দৃশ্যমান পাথরসমূহকে স্পর্শ করে স্বীয় শরীর মাসেহ করতে দেখি, তারা এ কাজটি করে বরকত হাসিলের আশায় এবং কল্যাণের ধারায় সিক্ত হওয়ার জন্য।[1]

এমনকি হাজীদের অজ্ঞতার কারণে বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা এমন কিছু ছেঁড়া-কাটা কাপড়ের টুকরা নিয়ে মক্কায় আগমন করে, যা তারা তাদের দেশের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছে এবং তারা তাদেরকে শক্তভাবে বলে দিয়েছে যে, তারা যেন তা ‘কা‘বা’ ঘরের দেওয়ালের সাথে স্পর্শ করে, অতঃপর তাদের নিকট তা হাযির করে দেয়।[2]

আর এ কাজটি নিঃসন্দেহে দলীল-প্রমাণবিহীন উদ্ভাবিত এক নতুন বিদ‘আত। কারণ, এ কাজের পক্ষে কোনো দলীল বর্ণিত হয়নি; আর ‘কা‘বা’ ঘরের পাথর ও গেলাফের আলাদা কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়নি; আর যদি এ কাজটির মধ্যে কোনো বিশেষ কল্যাণ থাকতো, তাহলে আমাদের পূর্বে সাহাবীগণ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তার দিকে এগিয়ে যেতেন।

এ সব কিছু হলো (বিদ‘আত), যদি এ কাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিশ্বাস না করে যে, এসব পাথর ও গেলাফের নিজস্ব কোনো প্রভাব রয়েছে, কিন্তু যদি সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া এসব পাথর ও গেলাফ উপকার ও ক্ষতি করতে পারে, তার কাজটি আল্লাহর নিকট পৌঁছিয়ে দিতে পারে অথবা ‘কা‘বা’ তার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে, তাহলে নিশ্চিত সে আল্লাহর সাথে শির্ক করলো- একেবারে বড় ধরণের শির্ক, যা তাকে দীন থেকে খারিজ (বহিষ্কার) করে দেবে (না‘উযুবিল্লাহ)।

আল্লামা মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বর্ণনা করেন: “বরকত লাভের আশায় ‘মাসজিদে হারাম’-এর সীমানা প্রাচীর অথবা ‘কা‘বা ঘর’ অথবা ‘মাকামে ইবরাহীম’ ইত্যাদি স্পর্শ করাটা বড় শির্ক -এর উপলক্ষসমূহের অন্যতম একটি উপলক্ষ বলে বিবেচিত হবে, বরং তা ছোট শির্ক তো বটেই)।[3]

আর এ অধ্যায়টি আমি শেষ করব আল্লামা মুহাম্মাদ ইবন ‘উসাইমীন রহ. এর দু’টি ফতোয়ার উদ্ধৃতি দেওয়ার মাধ্যমে; আর এ ফতোয়া দু’টি হলো এ বিষয়ে তাঁর নিকট উত্থাপিত দু’টি প্রশ্নের দু’টি জবাব।

[প্রথম ফতোয়া]: প্রশ্নের ভাষ্য:

তাওয়াফের মধ্যে কোনো কোনো মানুষকে কা‘বার দেওয়াল ও গেলাফ, মাকামে ইবরাহীম ও সাধারণ পাথর স্পর্শ করতে দেখা যায়; সুতরাং এ জাতীয় আমল বা কাজের বিধান কী হবে?

উত্তর: “মানুষ এ জাতীয় কাজ করে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল ও তাঁর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে; আর এমন প্রতিটি আমল, যা আপনি আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল ও তাঁর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে করবেন, অথচ তার সমর্থনে শরী‘আতের কোনো দলীল বা ভিত্তি নেই; তাহলে সে কাজটি বিদ‘আত বলে গণ্য হবে, যার থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক ও সাবধান করে বলেছেন:

«إِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ » .

“তোমরা দীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা থেকে দূরে থাকবে। কারণ, প্রত্যেকটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[4]

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কোনো হাদীস বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ‘আল-হাজার আল-আসওয়াদ’ (الحجر الأسود) ও ‘আর-রুকন আল-ইয়ামানী (الركن اليماني) ছাড়া অন্য কোনো কিছু স্পর্শ করেছেন।

আর তার ওপর ভিত্তি করে মানুষ যখন ‘আল-হাজার আল-আসওয়াদ’ (الحجر الأسود) ও ‘আর-রুকন আল-ইয়ামানী (الركن اليماني) ব্যতীত কা‘বার যে কোনো রুকন অথবা পার্শ্ব স্পর্শ করবে, তখন সে বিদ‘আতকারী বলে বিবেচিত হবে।

তাছাড়া আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা যখন মু‘আবিয়া ইবন আবি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে কা‘বার উত্তরের রুকনদ্বয়কে স্পর্শ করতে দেখলেন, তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন; তারপর মু‘য়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন: বায়তুল্লাহর কোনো কিছুই তো ফেলনা নয়। জবাবে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন আল্লাহর বাণীর কথা:

﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ﴾ [الاحزاب: ٢١]

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১] আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘ইমানিয়্যাইন রুকনদ্বয়’ (الركنين اليمانيين) তথা ‘রুকনে ইয়ামানী’ ও ‘হাজরে আসওয়াদ’-কে স্পর্শ করতে দেখেছি, তারপর মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কথার দিকে ফিরে আসলেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ﴾ [الاحزاب: ٢١]

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]

আর কোনো কোনো মানুষ কর্তৃক ‘মাকামে ইবরাহীম’-কে স্পর্শ করার মত কাজটি তো আরও উত্তমভাবেই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ জাতীয় কোনো কিছু বর্ণিত হয় নি যে, তিনি ‘মাকামে ইবরাহীম’-এর কোনো অঞ্চল স্পর্শ করেছেন, আর অনুরূপভাবে একই বিধান প্রযোজ্য হবে ‘যমযম কূপ’ স্পর্শ করা এবং কা‘বার বারান্দা বা উন্মুক্ত গ্যালারীর খুঁটিগুলো স্পর্শ করার ব্যাপারে।

আর এমন প্রত্যেক কাজই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে, যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত নয়, আর প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা ও বিপথগামীতা বলে বিবেচিত”।[5]

[দ্বিতীয় ফতোয়া]: প্রশ্নের ভাষ্য:

যারা কা‘বা’র গেলাফ স্পর্শ করে এবং লম্বা দো‘আ করে, তাদের বিধান কী হবে?

উত্তর: “ঐ সব ব্যক্তিবর্গের কর্মকাণ্ডেরও সুন্নাতসম্মত কোনো ভিত্তি নেই এবং তা বিদ‘আত হিসেবে গণ্য, জ্ঞান পিপাসুদের জন্য আবশ্যক হলো তাদেরকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়া এবং এ কথা বলে দেওয়া যে, এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়াত ও নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত নয়”।[6]

আর পাথরসমূহকে সম্মান করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, আর স্পর্শ করার ব্যাপারে কোনো দলীল বর্ণিত হয় নি, আর যদি তাকে কোনো কল্যাণ থাকতো, তাহলে সাহাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তা করতেন।

এ অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরও দু’টি মাসআলা রয়েছে:

প্রথম মাসআলা: কা‘বা’র (আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দিন) গেলাফ খুলে ফেলার পর তার দ্বারা জনগণ কর্তৃক বরকত হাসিল করা: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম কা‘বা’র গেলাফ দ্বারা বরকত অর্জন করার বিষয়টিকে হারাম বলে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর ফতোয়ার সারকথা হলো এই:

১. যাবতীয় দলীল ও প্রাচীন আসারসূহ প্রমাণ করে যে, কা‘বার পুরাতন গেলাফ খুলে ফেলা হয় এবং তা মক্কাবাসীর মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হয় পোশাক বা এ জাতীয় কোনো কিছু বানানোর কাজে ব্যবহার করার জন্য, আর তা খুলে ফেলার পর তার জন্য পবিত্রতা ও গৌরবের কোনো কিছু নেই এবং তার দ্বারা বরকত হাসিলেরও কোনো ব্যাপার নেই, আর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার উপস্থিতিতে তা খুলে ফেলা হলো এবং তা বণ্টন করে দেওয়া হল, অথচ তিনি তার প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেন নি।[7]

২. পূর্ববর্তী সৎব্যক্তিগণের কোনো একজন ব্যক্তিও কা‘বার পুরাতন গেলাফের দ্বারা বরকত অর্জনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন নি।

৩. আর যারা তা বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন, তারা শুধু তার দ্বারা অভাবীগণের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এটা করে থাকেন।

৪. পরবর্তী যুগে তার টুকরাগুলো বিদেশি হাজীগণের নিকট মোটা অংকের টাকায় বিক্রি হতে থাকে তার দ্বারা বরকত হাসিলের জন্য, আর এটা জায়েয নয় এবং এর কারণে তাদেরকে সম্মান করা বৈধ নয়। কেননা তা পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।

৫. আর পুরাতন গেলাফের দ্বারা বরকত অর্জনের জন্য তা কেনা-বেচার মধ্যে শির্কের উপলক্ষ্য বিদ্যমান রয়েছে।

দ্বিতীয় মাসআলা: বৃষ্টির সময়ে কা‘বার পাইপ থেকে পড়া পানি পান করা। আর এ বিষয়টি দৃষ্টিগোচরীভূত ও সর্বজন পরিচিত, আর তা মানুষের অজ্ঞতার কারণে; সুতরাং আমরা সাধারণ জনগণকে বৃষ্টির বর্ষণের সময়ে কা‘বার পাইপ থেকে পড়া পানি পান করার জন্য দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখতে পাই, এমনকি আমি এমন ব্যক্তিকেও দেখেছি, যিনি বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ার পর তার দিকে আসে, অতঃপর তা সংগ্রহ করে, তারপর তা পান করে; আর তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে আমরা তাদেরকে এমন অবস্থায় পাই যে, তারা বিশ্বাস করে- এ পানিতে বরকত রয়েছে, আর এটা তাদের এ আকীদা-বিশ্বাসের কারণে যে, যে বস্তু কা‘বাকে স্পর্শ করবে, তার মধ্যে বরকত পাওয়া যাবে। আর আমি যদি বরকত অর্জনের আকীদা-বিশ্বাস নিয়ে কা‘বা’র (আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন) দেওয়াল চুম্বন করা শরী‘আত সম্মত না হওয়ার কথা বলি, তাহলে আরও উত্তমভাবেই বলার কথা- কাপড়, গেলাফ ও পনির মত যেসব বস্তু তাকে স্পর্শ করে, তার দ্বারা বরকত অর্জনের চিন্তা করা শরী‘আতসম্মত নয়।

>
[1] দেখুন: ‘আল-বিদ‘উ ওয়াল মুহদাছাত ওমা লা আসলা লাহু’: (পৃ. ৩৯৬-৩৯৮); ‘শিফা আস-সুদুর ফী যিয়ারাত আল-মাশাহেদ ওয়াল কুবূর’: (পৃ. ১২৩); ‘আত-তামহীদ লি-শরহে কিতাব আত-তাওহীদ’: (পৃ. ৬০৯)।

[2] আর এ কাজটি খুবই পরিচিত ও স্বচক্ষে দেখা।

[3] এ তথ্যটি মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. এর নাতি তার থেকে ‘আত-তামহীদ লি-শরহে কিতাব আত-তাওহীদ’ নামক গ্রন্থে (পৃ. ৬১০) বর্ণনা করেছেন, আরও দেখুন: ফাতাওয়া ইবন ইবরাহীম: (১/১০১-১০৩)।

[4] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে ‘ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১৭১৪৪; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ৪২; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ৪৬০৭; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ২৬৭৬।

[5] দেখুন: ‘আল-বিদ‘উ ওয়াল মুহদাছাত ওমা লা আসলা লাহু’: (পৃ. ৩৯৬-৩৯৭)।

[6] দেখুন: ‘আল-বিদ‘উ ওয়াল মুহদাছাত ওমা লা আসলা লাহু’: (পৃ. ৩৯৭-৩৯৮)।

[7] দেখুন: আযরাকী, ‘আখবারু মাক্কা’: (১/২৫৮-২৬২)।
তৃতীয় অধ্যায় - আনুগত্যের উদ্দেশ্য ব্যতীত বরকত মনে করে হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা

একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেছেন[1]। তিনি তাঁর হাত মুবারক দ্বারা তা স্পর্শ (استلام)[2] করেছেন, অতঃপর তাঁর হাত চুম্বন করেছেন।[3]

আরও প্রমাণিত আছে যে, নবী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (হাজরে আসওয়াদকে) ‘মিহজান’ (লাঠি)[4] দ্বারা স্পর্শ করেছেন এবং ‘মিহজান’-কে চুম্বন করেছেন।

আর তার উপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পর্শের বিষয়টি ছিল তাঁর তাওয়াফ শুরু করার সময় এবং প্রতিবার দৌড়ের শুরুতে[5]। সুতরাং যদি তাঁর জন্য স্পর্শ করার কাজটি সহজ না হত, তাহলে তিনি তার দিকে ইশারা করতেন।[6]

আর প্রমাণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি তাওয়াফে রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করতেন[7]; আর যদি স্পর্শ করাটা তাঁর জন্য সহজ না হত, তাহলে তিনি তা বর্জন করতেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত; আর তাকে (রুকনে ইয়ামানীকে) চুম্বন করা অথবা তার দিকে ইশারা করার বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত বা প্রমাণিত নয়।[8]

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করার জন্যই মুসলিমগণ এ সুন্নাতের ওপর আমলকে অব্যাহত রাখবে[9], আর তা হলো ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে স্পর্শ করা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তারা এটা করবে না।

আর যখনই মুসলিমগণ হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে স্পর্শ করবে, তখন তারা তাকে এ উদ্দেশ্যে স্পর্শ করবে না যে, তাতে কিছু একটা আছে এবং তারা তার কাছে কোনো কিছু চাইবে না; আর তারা এ স্পর্শ করার কাজ থেকে আনুগত্যের সাওয়াব ছাড়া আর অন্য কোনো কিছু প্রত্যাশা করবে না। এ জন্যই প্রমাণিত আছে যে, উমার ইবনল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ‘হাজরে আসওয়াদ’-কে স্পর্শ করার সময় বলতেন:

«إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لَا تَضُرُّ، وَلَا تَنْفَعُ، وَلَوْلَا أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ، مَا قَبَّلْتُكَ»

“আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র; তুমি কোনো ক্ষতি করতে পার না এবং কোনো উপকারও করতে পর না; যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে আদৌ চুম্বন করতাম না।”[10]

ইমাম নববী রহ. বলেন, “উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ উক্তিটি শুধু এ জন্যই করেছেন যে, যাতে তিনি জনগণকে এ বক্তব্যটি শুনিয়ে দিতে পারেন এবং তাদের মাঝে তা ছড়িয়ে যায়। কারণ, খুব নিকট অতীতেই এমন একটা সময় ছিল, যখন তাদের মধ্যকার অনেকেই পাথর পূজার সাথে সম্পৃক্ত ছিল, পাথরকে সম্মান করত এবং তার ক্ষতি ও উপকার করার শক্তিতে বিশ্বাস করত, তারপর তিনি আশঙ্কা করলেন যে, তাদের কেউ কেউ এর দ্বারা প্রতারিত হতে পারে; ফলে তিনি যা বলার বললেন, আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন”।[11]

আর শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন রহ. বলেন, “তাওয়াফকারীগণের কেউ কেউ যেসব ভুল-ত্রুটি বা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে তার অন্যতম একটি হলো: তারা ধারণা করেন যে, ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে স্পর্শ করার বিষয়টি বরকতের জন্য, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়, ফলে তারা বরকত হাসিলের জন্য তা স্পর্শ করে। আর এটা নিঃসন্দেহে তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। কারণ, ‘হাজরে আসওয়াদ’-কে স্পর্শ করা অথবা তাকে স্পর্শ ও চুম্বন করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করা, আর এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘হাজরে আসওয়াদ’-কে স্পর্শ করতেন, তখন বলতেন ‘আল্লাহু আকবার’। এটা ইঙ্গিত করে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করা; এ পাথরটিকে স্পর্শ করার দ্বারা বরকত হাসিল করা উদ্দেশ্য নয়। আমীরুল মুমিনীন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«وَاللَّهِ، إِنِّي لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لَا تَضُرُّ، وَلَا تَنْفَعُ، وَلَوْلَا أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ، مَا قَبَّلْتُكَ».

“আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র; তুমি কোনো ক্ষতি করতে পার না এবং কোনো উপকারও করতে পর না। যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে আদৌ চুম্বন করতাম না।”এ ভুল ধারণাটি কিছু সংখ্যক মানুষের, আর তাদের ধারণা ও বিশ্বাস হলো, ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে স্পর্শ করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে বরকত হাসিল করা, যা তাদের কাউকে কাউকে প্রলুব্ধ করে তার ছোট ছেলেকে নিয়ে আসতে, তারপর সে ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে তার হাত দ্বারা স্পর্শ করে, অতঃপর সে তার ছোট্ট ছেলেকে অথবা তার শিশু বাচ্ছাকে তার ঐ হাত দ্বারা মুছে দেয়, যে হাত দ্বারা সে ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে স্পর্শ করেছে। আর এটা বিকৃত আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত, যার থিকে নিষেধ করা ওয়াজিব এবং আরও আবশ্যক হলো জনগণকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া যে, এ ধরণের পাথর কোনো ক্ষতি ও উপকার করতে পারে না। তাকে স্পর্শ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করা এবং তাঁর যিকির বা স্মরণকে প্রতিষ্ঠিত করা, পাশাপাশি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা”।[12]

>
[1] হাদীসটি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৫৩২; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২৭০)।

[2] বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত শব্দের অর্থ: আর তা হলো: ‘তাকে হাত দ্বারা স্পর্শ করা’; ইবন কুতাইবা রহ. বলেন, তা (শব্দটি) বাবে এর মাসদার, শব্দ থেকে গৃহীত, অর্থ (পাথর), তার একবচন হলো। যেমন, আপনি বলেন: (আমি পাথর ছুঁয়েছি, যখন আপনি পাথর থেকে তা স্পর্শ করেছেন, যেমনিভাবে আপনি বলেন, আমি সুরমা লাগিয়েছি, যখন আপনি সুরমা থেকে কিছু গ্রহণ করেন)। -গারীবুল হাদীস: (১/৪২); আরও দেখুন: আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/৪৩-৪৪)।

[3] হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২৬৮); আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৫৮৭৫)। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেন: “পাথর স্পর্শ করা ব্যতীত যখন কোনো কিছু দ্বারা তার দিকে ইশারা করবে, তখন সে তার হাত চুম্বন করবে না।; কারণ, চুম্বনটি শুধু পাথরের জন্য অথবা পাথরকে স্পর্শ করার কারণে।” [শরহুল ‘উমদা: (১/৪৩০)]।

[4] হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৫৩০; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২৭২।

আর ‘মিহজান’ শব্দটি যেরযুক্ত ‘মীম’, সাকিনযুক্ত ‘হা’ ও যবরযুক্ত ‘জীম’ যোগে; আর তা হলো: দণ্ডের মত মাথা বাঁকা লাঠি, একবচন, বহুবচনে: -দেখুন: আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/৪৪); ‘হাশিয়াতুস্ সিন্দী ‘আলা সুনান আন-নাসাঈ’: (৫/২৫৭)।

[5] হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৪৬৮৬; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৮৭৬; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৯৪৭।

[6] হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৫৩৪।

[7] হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৪৬৮৬; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৮৭৬; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৯৪৭।

[8] দেখুন: মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৬/৯৭)।

[9] ইবন কুদামা রহ. উল্লেখ করেন: “দু’টি রুকনকে স্পর্শ করার ব্যাপারে আলেমদের ইজমা‘ হয়েছে: ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’।” -আল-মুগনী: (৫/২২৬)।

[10] হাদীসটি ‘মাওকুফ’ সনদে উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৫২০; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২৭০।

[11] আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/৪২)।

[12] ফিকহুল ‘ইবাদাত: (পৃ. ৩৪৮-৩৪৯)।
চতুর্থ অধ্যায়শামী ও ইরাকী রুকনদ্বয়* ও কা‘বার দেওয়াল স্পর্শ ও চুম্বন করা

আমি পূর্বের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি যে, ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে স্পর্শ করা সুন্নাত। আর তা হবে শুধু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করার জন্য; কেননা এ দু’টি এমন রুকন, যা ইবরাহীম আ. এর ভিত্তির ওপর বহাল রয়েছে।

আর বাকি দু’টি রুকন: ‘রুকনে শামী’ ও ‘রুকনে ইরাকী’ এবং কা‘বার প্রাচীরের ব্যাপারে কোনো দলীল বর্ণিত হয় নি, আর এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, “কা‘বার দেওয়ালকে চুম্বন করাটা বিদ‘আতের মধ্যে শামিল হবে।”[1] আর যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক দৃষ্টির ওপর ভিত্তি করে আল্লাহর ইবাদত করতে চায়, তার ওপর কর্তব্য হলো- সে কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য ও দলীলের নিকট অবস্থান করবে এবং তার সীমা অতিক্রম করবে না।

তাছাড়া আরও এমন কিছু দলীল ও আছার বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো তাগিদ দেয় যে, মুসলিম ব্যক্তির জন্য শরী‘য়তের বিধান হলো— স্পর্শ করার কাজটি ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা; আর বাকি দু’টি রুকন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। আর এসব দলীল ও আছার থেকে কিছু যেমন,

আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

« لَمْ أَرَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْسَحُ مِنْ الْبَيْتِ إِلَّا الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَيْنِ»

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কা‘বা ঘরের কেবল ইয়ামানী দুই রুকনকে (‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’-কে) স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি।”[2]

তিনি আরও বলেন,

«مَا أُرَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَرَكَ اسْتِلاَمَ الرُّكْنَيْنِ اللَّذَيْنِ يَلِيَانِ الْحِجْرَ، إِلاَّ أَنَّ الْبَيْتَ لَمْ يُتَمَّمْ عَلَى قَوَاعِدِ إِبْرَاهِيمَ، [ وَلاَ طَافَ النَّاسُ وَرَاءَ الْحِجْرِ إِلاَّ لِذَلِكَ]».

“আমার মনে হয় যে, বায়তুল্লাহ হাতীমের দিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ইবরাহিমী ভিত্তির ওপর নির্মিত না হওয়ার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাওয়াফের সময়) হাতীম সংলগ্ন দু’টি কোণ স্পর্শ করতেন না। (আর এ জন্যেই জনগণ হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করেন)।”[3]

সুতরাং প্রথম ‘নস’ বা বক্তব্যটি প্রমাণ করে যে, স্পর্শ করার কাজটি কা‘বার শুধু দু’টি রুকনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর এটাই অধিকাংশ সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের উপলব্ধি।[4]

আর দ্বিতীয় ‘নস’ বা বক্তব্যটি প্রমাণ করে যে, ‘রুকনে শামী’ ও ‘রুকনে ইরাকী’ ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, ফলে এ দু’টি প্রকৃতপক্ষে রুকনই নয়।

ইবনু কুদামা রহ. বলেন, (হাতীম সংলগ্ন রুকন বা কোণ দু’টি স্পর্শ করা অধিকাংশ আলিমের মতে সুন্নাত নয়)।[5]

আর ইমাম নববী রহ. বলেন, [(রুকন দু’টি) ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’ ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং ‘আশ-শামিয়্যান’ (الشاميان) তথা ‘রুকনে শামী’ ও ‘রুকনে ইরাকী’ তাঁর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়; বরং উভয়টি পরিবর্তিত। কেননা হাতীম এ রুকন দু’টির সংলগ্ন এবং যার সবটুকু অথবা অংশবিশেষ বায়তুল্লার অন্তর্ভুক্ত।

‘হাজরে আসওয়াদ’ নামের রুকনটির দু’টি ফযীলত: একটি হলো তাতে ‘হাজরে আসওয়াদ’ রয়েছে; আর অপরটি হলো তা ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালামের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আর ‘রুকনে ইয়ামানী’-এর রয়েছে একটি ফযীলত, আর তা হলো: এটা ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, আর ‘আশ-শামিয়্যান’ (الشاميان) তথা ‘রুকনে শামী’ ও ‘রুকনে ইরাকী’-এর জন্য দু’টি ফযীলতের কোনো কিছুই নেই।

সুতরাং যখন আপনি এটা জানতে পারলেন, তখন ‘হাজরে আসওয়াদ’-এর বেলায় সুন্নাত হলো তাকে স্পর্শ করা এবং চুম্বন করা; আর ‘রুকনে ইয়ামানী’-এর ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো তাকে স্পর্শ করা এবং চুম্বন না করা। আর সুন্নাত হলো ‘আশ-শামিয়্যান’ (الشاميان) তথা ‘রুকনে শামী’ ও ‘রুকনে ইরাকী’-কে চুম্বন ও স্পর্শ না করা; সুতরাং ‘হাজরে আসওয়াদ’ বিশেষিত হয়েছে স্পর্শ করার সাথে সাথে চুম্বন করার দ্বারা। কারণ, তাতে দু’টি ফযীলত রয়েছে, আর ‘রুকনে ইয়ামানী’ বিশেষিত হয়েছে শুধু স্পর্শ করার দ্বারা; কারণ, তাতে শুধু একটি ফযীলত রয়েছে। আর (الشاميان) তথা ‘রুকনে শামী’ ও ‘রুকনে ইরাকী’-তে দু’টি ফযীলতের কোনোটিই নেই]।[6] আর তার উপর ভিত্তি করে ‘হাজরে আসওয়াদ’ ও ‘রুকনে ইয়ামানী’ ছাড়া অন্য কিছুকে স্পর্শ করাটা শরী‘য়তের বিধিভুক্ত নয়; আর যে ব্যক্তি বরকতের প্রার্থী হয়ে তা করবে, তাহলে সে হারামের দ্বারা বরকত হাসিলের আওতাভুক্ত হবে; আর তা হবে শির্কের উপায়-উপকরণসমূহের অন্যতম একটি।

>
* এ দু’টি রুকনকে ‘আশ-শামিয়্যান’ বলা হয়, যেমনিভাবে ‘রুকনে ইয়ামানী’ ও ‘হাজরে আসওয়াদ’-কে ‘আল-ইয়ামানিয়ান’ বলা হয়। ইমাম নববী রহ. বলেন: “কা‘বা শরীফের চারটি রুকন রয়েছে: ‘আর-রুকন আল-আসওয়াদ’, আর-রুকনান আশ-শামিয়্যান , তারপর ‘আর-রুকন আল-ইয়ামানী । আর ‘আর-রুকন আল-আসওয়াদ’ ও ‘আর-রুকন আল-ইয়ামানী-কে ‘আল-ইয়ামানিয়ান’ বলা হয়। -আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/৩৬)।
--------

[1] ফাতাওয়া ইবন ইবরাহীম: (১/১০২-১০৩)। আরও দেখুন: মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৬/৯৭); মানসাকু শাইখুল ইসলাম , সাবেক ফাতওয়া সমগ্র এর আওতায় মুদ্রিত: (২৬/১২১); আস-সুনান ওয়াল মুবতাদা‘আত আল-মুতা‘আল্লাকা বিল আযকার ওয়াস সালাওয়াত: (পৃ. ১৫২)।

[2] সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৫৩১; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২৬৭; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৯৪৬; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৮৭৪; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৯৪৯।

[3] সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৫০৬; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৩৩; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৮৭৫। প্রায় সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনার মতো এবং তার চেয়ে আরও কিছু বেশি।

[4] খুব শীঘ্রই ইমাম নববী রহ. এর বক্তব্য আসছে, যেখানে তিনি বলেছেন: এটাই অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের অভিমত।

[5] আল-মুগনী: (৫/২২৭)।

[6] আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/৪৭); আরও দেখুন: শরহুল ‘উমদা: (১/৪৩০)।
পঞ্চম অধ্যায় - 'মাকামে ইবরাহীম' দ্বারা বরকত অর্জনের চিন্তা করা এবং হাজীগণ কর্তৃক তাঁর দিকে নজর দেওয়া

১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗىۖ ﴾ [البقرة: ١٢٥]

“এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২৫] ‘মাকামে ইবরাহীম’ প্রসঙ্গে যে আয়াত বর্ণিত হয়েছে, তার লক্ষ্যবস্তু হলো তার পেছনে (তাওয়াফ শেষে) দুই রাকাত তাওয়াফের সালাতকে ইবাদত হিসেবে নির্দিষ্ট করা, যখন তা সহজসাধ্য হয়। সুতরাং ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব হিসেবে নির্দেশ সম্বলিত এমন কোনো ‘নস’ বক্তব্য আসেনি, যাতে তাকে স্পর্শ করা ও তার দ্বারা বরকত অর্জনের কথা রয়েছে।

২. কাতাদা ইবন দি‘আমা আস-সাদুসী রহ. বলেন, (আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗىۖ ﴾ [البقرة: ١٢٥]

“এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২৫] শুধুমাত্র তাদেরকে তার নিকট সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছে, তাদেরকে তা স্পর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয় নি, অথচ এ উম্মত অযথা এমন কিছু কষ্টকর বিষয় নিজেদের জন্য বরাদ্দ করে নিয়েছে, যা তাদের পূর্বেকার উম্মতগণও তাদের নিজেদের জন্য ঠিক করে নিয়েছিল। আর যারা তাঁর কদম ও আঙুলের চিহ্ন দেখেছেন, তাদের কেউ কেউ আমাদেরকে তা জানিয়েছেন যে, লোকেরা সেসব চিহ্ন মাসেহ করতে করতে সেগুলোর চিহ্নকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে”।[1]

৩. ইবন জুরাইজ রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

«قلتُ لِعطاءٍ : أرأيتَ أحدًا يُقبِّلُ «المقامَ»، أو يمسُّهُ ؟ قال : «أماَ أحدٌ يُعتَبرُ به فلاَ».

“আমি ‘আতা রহ. কে বললাম: আপনি কি ‘মাকামে ইবরাহীম’-কে চুম্বন অথবা স্পর্শ করতে কাউকে দেখেছেন? জবাবে তিনি বলেন, “গ্রহণযোগ্য কাউকে এরূপ করতে দেখি নি”।[2]

৪. ইবরাহীম আস-সায়েগ রহ. ‘আতা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«أنه كَرِهَ أن يُقبِّلَ الرَّجُلُ «الْمُقَامَ »، أو يمسحَهُ».

“তিনি (‘আতা রহ.) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন করা অথবা তাকে স্পর্শ করাকে হারাম মনে করতেন”।[3]

৫. মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

«لَا تُقبِّلْ «الْمُقَامَ »، ولَا تَلمِسْهُ».

“তুমি মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন করো না এবং তাকে স্পর্শও করো না”।[4]

আর ইবন মুফলিহ রহ. বলেন, (মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন ও স্পর্শ করার বিষয়টি শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করা হয়নি এবং এ ব্যাপারে ‘ইজমা’ হয়েছে; সুতরাং অপরাপর সকল স্থানের চুম্বন ও স্পর্শ করার বিষয়টি তো আরও উত্তমভাবেই শরী‘আতের বিধিবদ্ধ নয়; যা আমাদের শাইখ ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বর্ণনা করেছেন)।[5]তাছাড়া বরকতের আশায় তা স্পর্শ করার মধ্যে রাসূল ‘আলাইহিমুস্ সালামের হিদায়াতের বিরোধিতার বিষয় রয়েছে, যাঁরা জড়বস্তুকে সম্মান করতে নিষেধ করেছেন; আর সাধারণ জনগণ কর্তৃক স্পর্শ করার বিষয়টি শুধু ‘মাকামে ইবরাহীমে’ই সীমাবদ্ধ থাকে না, যা কিনা বিদ‘আত; বরং তারা তো মাকামে ইবরাহীমের বেড়া ও বেষ্টনীকেও মাসেহ করে থাকে!! (সুতরাং সেটার বিধান কি হতে পারে?)

>
[1] তা বর্ণনা করেছেন: আযরাকী, ‘আখবারু মাক্কা’: (২/২৯-৩০); ইবন জারির, ‘জামে‘উল বায়ান ‘আন তা’বীল আয়িল কুরআন’: (২/৫২৭) এবং শব্দগুলো তাঁর বর্ণনা থেকে নেয়া; আর তাঁর সাথে যোগ হয়েছেন আল্লামা সুয়ূতী, আদ-দুর্রুল মানছুর ফিত্ তাফসীর বিল-মা’ছুর: (১/২৯২)।

[2] তা বর্ণনা করেছেন: আবদুর রাযযাক, ‘আল-মুসান্নাফ’ (৮৯৫৭); আল-ফাকেহী, ‘আখবারু মাক্কা’: (১০০৫); আবদুর রাযযাক রহ. এর বর্ণনাতে এর পরিবর্তে এসেছে।

[3] আল-ফাকেহী রহ. তা বর্ণনা করেছেন, ‘আখবারু মাক্কা’: (১০০৬)

[4] ইবন আবী শায়বা রহ. তা বর্ণনা করেছেন, আল-মুসান্নাফ’ (১৫৫১৩)।

[5] আল-ফুরূ‘উ: (৩/৫০৩); আরও দেখুন: ‘আল-মুবদি‘উ ফী শরহে ‘আল-মুকনি‘উ’: (৩/২২৩); ‘আল-ইনসাফ ফী মা‘রেফাতির রাজেহ মিনাল খিলাফ ‘আলা মাযহাব আল-ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল’: (৯/১২২)।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে