ইসলামের বাহ্যিক মহান ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম একটি মহান অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত এ গবেষণার উপসংহারে এসে আমি তার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমূহ সারসংক্ষেপ আকারে উপস্থাপন করছি এবং সাথে নিম্নোক্ত উপদেশসমূহ পেশ করছি:

- হজ হচ্ছে ইসলামের রুকনসমূহের ধারাবাহিকতায় পঞ্চম রুকন, যা জীবনে একবার ফরয এবং তার জন্য সামর্থ্যের শর্ত করা হয়েছে; আর তাতে অনেক শ্রম ও কষ্ট নিয়োগের ব্যাপার রয়েছে, আর তা হলো আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির ওপর আবশ্যক হলো তার হজের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া এবং তার জন্য এমন সহীহ জ্ঞানের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করা, যে জ্ঞান হবে ‘কুরআন’ ও ‘সুন্নাহ’ নির্ভর। আরও প্রস্তুতি গ্রহণ করবে বিজ্ঞ আলোমগণের কাছে পথনির্দেশ ও পরামর্শ চাওয়ার মাধ্যমে।

- মানুষকে ভুল-ভ্রান্তিপূর্ণ বিষয়ে সতর্ক করা এবং তার ওপর কেন্দ্রীভূত করা কোনো কোনো মানুষের কাছে সঠিক ও যথার্থ শিক্ষানীতি মনে হতে পারে; কিন্তু তা সঠিক শিক্ষা-পদ্ধতির বিরোধী নয়। কারণ এর প্রমাণ হিসেবে আমি হুযায়ফা ইবনল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত একটি আছারকে উল্লেখ করেছি, যেখানে তিনি বলেছেন:

«كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَهُ عَنْ الْخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ، قِيلَ : لِمَ فَعَلْتَ ذَلِكَ ؟ قَالَ : مَنْ اتَّقَى الشَّرَّ ؛ وَقَعَ فِي الْخَيْرِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন ভালো সম্পর্কে, আর আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম মন্দ বিষয় সম্পর্কে। বলা হলো, কেন তুমি এরূপ করতে? তখন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মন্দ পরিহার করে চলবে, সে ভালো ও কল্যাণের মধ্যে থাকবে।”[1]

- হজের মধ্যকার আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তিগুলো উদ্ভূত আসার বা হাদীসের আলোকে এক মানের নয়; কেননা তার মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা ইসলামের লঙ্ঘন ও আমলসমূহ বিনষ্টকারী। যেমন, আল্লাহর ছাড়া অন্য কারও নিকট প্রার্থনা করা, আবার তার মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা ঈমানকে হ্রাস করে, ভালোকাজকে ধ্বংস করে।

- ঐসব আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তি, যার সাথে কোনো কোনো সময় হাজী সাহেব জড়িয়ে যান, তা শুধু মক্কা ও মদীনাতে হজের সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ছড়িয়ে আছে হাজী সাহেব কর্তৃক মক্কায় পৌঁছার পূর্বেকার সময়ের কাজকর্মে এবং হজ সমাপ্তির পরবর্তী সময়ের কাজকর্মের সাথে। বিষয়টি এমন, যা তার থেকে কঠিন সাবধানতা ও সামগ্রিক সতর্কতা অবলম্বন করাকে আবশ্যক করে দেয়।

- শরী‘আতের বিরোধিতা, আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তি ও অন্যান্য নেতিবাচক বিষয়গুলো প্রচলন ও প্রচার-প্রসারের পিছনে যে কারণটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তা হলো দীনের বিধিবিধান সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা ও মূর্খতা।

- সরকারি (ফাতওয়া বিভাগ, ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হজ মন্ত্রণালয়) এবং বেসরকারি (ভ্রাম্যমান সংস্থাসমূহ এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত হজ কাফেলা) কর্তৃপক্ষ ও এজেন্সীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ বিষয়গুলো উত্তরণের ব্যাপারে হজ মৌসুমে ও তার পূর্বে আলিম সমাজ, ছাত্রসমাজ ও দীনের পথে আহ্বানকারীদেরকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, যাতে হাজীগণকে হজের উদ্দেশ্যে তাদের আগমনের পূর্বেই এসব বিরোধের ব্যাপারে পূর্ণ সতর্ক করা যায় এবং তাতে নিপতিত হওয়া থেকে তাদেরকে সাবধান করা যায়। আর হজ মৌসুমের পরে তাদের ভূমিকা থাকবে মুসলিমগণকে শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের প্রশ্নসমূহের জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করা, আর ভুল-ভ্রান্তিসমূহ উল্লেখ করণসহ হজের সঠিক পদ্ধতি অবহিতকরণ প্রসঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট পুস্তিকা (বিভিন্ন ভাষায়) মুদ্রণ, প্রকাশ ও প্রচারে অংশগ্রহণ করা; আর এ কার্যক্রমটি বিদ্যমান রয়েছে- আলহামদু লিল্লাহ।- টেলিভিশন ও রেডিওর মতো প্রচার মাধ্যমসমূহকে ফলপ্রসূ করা এবং দর্শনীয় ও শ্রবণীয় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান তৈরি করা; আর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষায় ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ওয়েবসাইট তৈরি করা, যাতে হজের নিয়ম-পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা করা হবে, আর তাতে বর্ণনা করা হবে বিশেষ করে আকীদাগত বিরোধ ও ভুলত্রুটিসমূহ, যা হাজী সাহেব ধারণ করতে সক্ষম হবে, এমনকি তিনি তার দীনের ওপর সুস্পষ্ট ধারণা নিতে পারেবন মক্কায় অবস্থিত সম্মানিত ঘর বাইতুল্লাহতে পৌঁছার পূর্বেই ইনশাআল্লাহ।

>
[1] আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ২৩৩৯০।