হজ বা উমরা অবস্থায় এসব নিষিদ্ধ কাজ করলে তার ওপর ফিদিয়া তথা যবেহ করা ওয়াজিব হয়। অথবা মিসকীনদের খাদ্য দান করতে হবে। অথবা সাওম পালন করবে। হজ অথবা উমরার ইহরাম বাঁধলে নিম্নোক্ত কাজসমূহ নারী পুরুষ উভয়ের জন্য করা হারাম:
১- শরীরের যেকোনো অঙ্গ থেকে চুল মুণ্ডানো, কাটা অথবা উপড়ে ফেলা।
২- হাত ও পায়ের নখ কাটা।
৩- এমন কোনো কাপড় দিয়ে পুরুষের মাথা ঢেকে রাখা যা মাথার সাথে লেগে থাকে। নারীদের চেহারা ঢেকে রাখা, তবে ভিনপুরুষ থাকলে ঢেকে রাখবে।
৪- পুরুষের ক্ষেত্রে সেলাই-করা পোশাক পরা। সেলাই করা পোশাক অর্থ এমন পোশাক যা মানুষের শরীরের মাপে অথবা কোনো অঙ্গের মাপে সেলাই করে তৈরি করা হয়েছে, যেমন স্বাভাবিক পরিধানের পোশাক, প্যান্ট-পাজামা, জামা, ইত্যাদি।
৫- সুগন্ধি লাগানো।
৬- ভক্ষণ করা হয় এমন স্থলজ শিকার-জন্তু হত্যা করা বা শিকার করা।
৭- বিবাহ করা।
৮- সহবাস করা। প্রথম তাহাল্লুল হওয়ার আগে (১০ তারিখ মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার পূর্বে) সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হজ বাতিল হয়ে যাবে। তাকে বাতিল হওয়া সত্বেও তাকে বুদনা তথা পূর্ণ একটি উট দম হিসেবে দিতে হবে, হজের বাকী কাজ পূর্ণ করতে হবে এবং পরের বছর আবার হজ করতে হবে। আর প্রথম তাহাল্লুল (১০ তারিখ মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার পরে) সহবাস হলে তার হজ বাতিল হবে না, তবে তাকে ছাগল দম হিসেবে যবাই করতে হবে।
৯- স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্যভাবে সহবাস করলে এতে বীর্যাপাত হলে বুদনা ওয়াজিব হবে আর বীর্যাপাত না হলে ছাগল ওয়াজিব হবে। তবে উভয় অবস্থাতেই হজ বাতিল হবে না।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজের বিধানের ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের মতোই; তবে সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে আলাদা। তারা ইচ্ছামতো সেলাইকৃত জামা-কাপড় পরতে পারবে তবে তা অশ্লীল হতে পারবে না। তারা মাথা ঢেকে রাখবে এবং চেহারা খোলা রাখবে, তবে গাইরে মুহরিম তথা পরপুরুষ থাকলে চেহারাও ঢেকে রাখবে।
হজে তিনটি কাজের যেকোন দু’টি কাজ করলে প্রথম তাহাল্লুল বা প্রাথমিকভাবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত হয়ে যায়। সেগুলো হচ্ছে:
১- তাওয়াফ
২- পাথর নিক্ষেপ ও
৩- মাথার চুল মুণ্ডানো বা কাটা।
তামাত্তু হজ পালনকারী মহিলা তাওয়াফের আগে হায়েযগ্রস্ত হলে এবং সে হজের কার্যক্রম ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করলে তখন সে ইহরাম বাঁধবে এবং এতে সে ক্বারিন হজকারী হিসেবে গণ্য হবে। হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীরা তাওয়াফ ব্যতীত হজের সব কাজ করবে, শুধু তাওয়াফটি পবিত্র হলে আদায় করবে।
মুহরিম ব্যক্তির জন্য খাওয়া যোগ্য পশু যেমন, মুরগি ইত্যাদি যবেহ করা বৈধ। হিংস্র ও ক্ষতিকর প্রাণী যেমন, সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতাবাঘ, সাপ, বিচ্চু, ইঁদুর ও সব ধরণের ক্ষতিকর প্রাণি হত্যা করা জায়েয। এমনিভাবে তার জন্য সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করা ও খাওয়া জায়েয।
মুহরিম ও গাইরে মুহরিম সকলের জন্য মক্কার হারাম এলাকার গাছ কাটা ও আগাছা উপড়ে ফেলা হারাম। তবে ইযখির কাটা যাবে। এমনিভাবে হারাম এলাকার প্রাণীও হত্যা করা হারাম। কেউ এসব করলে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। মদীনার হারাম সীমানা থেকেও গাছ কাটা হারাম, তবে কেউ গাছ কেটে ফেললে তাকে কিছু ফিদিয়া দিতে হবে না।
কারো উল্লিখিত সহবাস ব্যতীত ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজের কোনো একটি করার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে যেমন, মাথার চুল মুণ্ডানো বা সেলাইকৃত পোশাক পরা ইত্যাদি করলে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। সে নিচের যেকোন একটি আদায়ের মাধ্যমে এ ফিদিয়া আদায় করতে পারবে। সেগুলো হলো:
১- তিনদিন সাওম পালন করবে।
২- অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে এক মুদ গম বা চাল বা এ জাতীয় খাদ্য দান করতে হবে।
৩- অথবা ছাগল যবেহ করতে হবে।
কেউ অজ্ঞতাবশত বা ভুলে বা জোরপূর্বক ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করলে সে গুনাহগার হবে না এবং তাকে কোনো ফিদিয়াও দিতে হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَا﴾ [البقرة: ٢٨٦]
“হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬]
কেউ ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃত স্থলজ প্রাণী হত্যা করলে তাকে অনুরূপ প্রাণী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, উক্ত প্রাণী যবাই করে হারামের অধিবাসী মিসকীনদেরকে খাদ্য খাওয়াতে হবে অথবা এর মূল্যে খাদ্য ক্রয় করে তা মিসকীনকে খাওয়াতে হবে, প্রত্যেক মিসকীনকে এক মুদ পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অথবা প্রত্যেক মুদের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন করতে হবে। আর হত্যাকৃত প্রাণীর যদি অনুরূপ প্রাণী পাওয়া না যায় তাহলে তাকে উক্ত প্রাণীর মূল্য ধার্য করে সে মূল্য দ্বারা খাদ্য ক্রয় করে তা হারামের অধিবাসী মিসকীনদেরকে খাদ্য খাওয়াতে হবে। প্রত্যেক মিসকীনকে এক মুদ পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অথবা প্রত্যেক মুদের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন করতে হবে।
বীর্যপাত ছাড়া সহবাসের ফিদিয়া উপরোক্ত বিশেষ প্রয়োজনে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার ফিদিয়ার মতোই। অর্থাৎ সাওম পালন বা খাদ্য দান বা ছাগল যবেহ করা।
আর হজে প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞামুক্ত হওয়ার আগে সহবাস করলে বুদনা (উট) ফিদিয়া দিতে হবে। উট যবেহ করতে অক্ষম হলে হজের দিনগুলোতে তিনদিন ও হজের পরে বাড়ি ফিরে বাকী সাত দিন সাওম পালন করতে হবে। আর প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞামুক্ত হওয়ার পরে সহবাস করলে শুধু কষ্টের কারণে করা কাজের ফিদিয়া (অর্থাৎ সাওম পালন বা মিসকীনকে খাদ্য দান বা ছাগল যবেহ করা) দিলেই হবে।
তামাত্তু‘ ও ক্বারিন হজ আদায়কারী মক্কাবাসী না হলে তাদের ওপর হাদী তথা ছাগল বা উটের সাত ভাগের একভাগ বা গরুর সাত ভাগের একভাগ যবেহ করা ওয়াজিব। আর কেউ হাদী যবেহ করতে না পারলে সে হজের দিনগুলোতে তিনদিন ও বাড়ি ফিরে বাকী সাত দিন সাওম পালন করবে।
হজ পালনে বাধাগ্রস্ত ব্যক্তি হাদী যবেহ করতে না পারলে দশ দিন সাওম পালন করে হালাল হবে।
কেউ একই ধরনের নিষিদ্ধ কাজ বারবার সম্মুখীন হলে সে ফিদিয়া আদায় না করে থাকলে একবার ফিদিয়া আদায় করলেই হবে, তবে শিকার করলে তার জন্য আলাদা আলাদা ফিদিয়া দিতে হবে। আর কেউ ভিন্ন ধরণের নিষিদ্ধ কাজ একাধিক বার করলে যেমন, একবার মাথা মুণ্ডন করলো, তারপরে নখ কাটলো তাকে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা ফিদিয়া আদায় করতে হবে।