চার ধরণের সম্পদের ওপর যাকাত ফরয। সেগুলো হলো:
মূল্যবান সম্পদ, পশু, জমিন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ব্যবসায়িক সম্পদ।
১- মূল্যবান সম্পদ হলো সোনা, রুপা ও কাগজের নোট:
বিশ মিসকাল সোনা হলে এতে যাকাত ফরয হবে। এতে (দশমাংশের চতুর্থাংশ হারে) চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত ফরয হবে।
রুপা দুইশত দিরহাম হলে এতেও (দশমাংশের চতুর্থাংশ হারে) চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত ফরয হবে।
বর্তমানে প্রচলিত কাগজের নোট মূল্যবান সম্পদের হিসেবে হিসেব করা হবে। এ নোটের সম্পদ যদি সোনা বা রুপা যেকোন একটির নিসাবের সমান হয় এবং এক বছর অতিক্রম করে তবে এতে (দশমাংশের চতুর্থাংশ হারে) চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত ফরয হবে।
২- চতুষ্পদ প্রাণির যাকাত:
উট, গরু ও ছাগল মরুভূমি ও প্রাকৃতিক চারণভূমি থেকে খাদ্য আহরণকারী হলে এতে যাকাত ফরয হয়। নিসাব পূর্ণ হলে এবং একবছর অতিক্রান্ত হলে নিম্নোক্ত হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে:
ক- ছাগলের যাকাত:
৪০-১২০টি মেষের জন্য ১টি মেষ।
১২১-২০০টি মেষের জন্য ২টি মেষ।
২০১-৩০০টি মেষের জন্য ৩টি মেষ।
৩০০ এর অতিরিক্ত হলে প্রতি একশতে ১টি করে মেষ দিতে হবে।
খ- গরুর যাকাত:
গরুর সর্বনিম্ন নিসাব ৩০ থেকে ৩৯টি গরুর জন্য ‘তাবী‘ বা তাবী‘আ (এক বছর বয়সী) ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
৪০-৫৯টি গরুর জন্য মুসিন্না বা দু’বছর বয়সী ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
৬০টি গরুর জন্য দু’টি তাবী‘ বা একবছর বয়সী ২টি গরু যাকাত দিতে হবে।
এভাবে প্রতি ৩০টির জন্য এক বছর বয়সী ১টি ‘তাবী‘ বা তাবী‘আ গরু এবং প্রতি ৪০টি গরুর জন্য একটি মুসিন্না বা দু’বছর বয়সী ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
গ- উটের যাকাত:
উটের সর্বনিম্ন নিসাব ৫টি থেকে ৯টি উটের জন্য পূর্ণ একবছর বয়সী ১টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
১০-১৪টি উটের জন্য ২টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
১৫-১৯টি উটের জন্য ৩টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
২০-২৪টি উটের জন্য ৪টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
২৫-৩৫টি উটের জন্য একটি বিনতে মাখাদ্ব উট বা এক বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৩৬-৪৫টি উটের জন্য বিনতে লাবূন বা দু’বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৪৬-৬০টি উটের জন্য হিক্বাহ বা তিন বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৬১-৭৫টি উটের জন্য জায‘আহ বা চার বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৭৬-৯০টি উটের জন্য দু’টি বিনতে লাবূন বা দু’বছর বয়সী ২টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৯১-১২০টি উটের জন্য দু’টি হিক্কাহ বা তিন বছর বয়সী ২টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
১২ এর পরে প্রতি ৪০টি উটে এক বিনতে লাবূন বা এক বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট, আর প্রতি ৫০টি উটে এক হিক্বাহ বা তিন বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
উট, গরু ও ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণি যদি ব্যবসা ও উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয় তবে এগুলো বছর অতিক্রম করলে এর মূল্য ধরে ২.৫% হিসেবে যাকাত দিবে।
আর যদি গৃহপালিত প্রাণি ব্যবসায়িক সম্পদ না হয় তবে এতে যাকাত নেই।
স্ত্রী পশু যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে; শুধু গরুর যাকাতের ক্ষেত্রে এবং বিনতে লাবুনের পরিবর্তে ইবন লাবুন বা হিক্কাহ বা জিয‘আ বা যাকাতের নিসাব পুরোটাই যদি পুরুষ পশু হয়, সে ক্ষেত্রেও পুরুষ পশু যাকাত আদায় করা যাবে।
৩- জমিন থেকে উৎপাদিত ফসলের যাকাত:
সমস্ত খাদ্যশস্য, ওজন করা ও গুদামজাত করা যায় এমন ফলমূল যেমন, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদিতে নিসাব পূর্ণ হলে যাকাত ফরয। আর এর নিসাবের পরিমাণ হলো ৩০০ সা‘, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সা‘ অনুযায়ী, যা প্রায় ৬২৪ কিলোগ্রাম।
নিসাব পূর্ণ করতে একই প্রকারের ফল একই বছরের সব ফল একত্র করা হবে। যেমন, সব ধরণের খেজুর।
খাদ্যশস্য ও ফলের যাকাতের পরিমাণ:
১- বিনা খরচে প্রাকৃতিক বৃষ্টির পানিতে বা ঝর্ণার পানিতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য ও ফলমূলে ‘উশর বা এক দশমাংশ (১০%) হারে যাকাত ফরয।
২- শ্রম নির্ভর সেচ, যেমন কূপ ইত্যাদি থেকে পানি এনে সেচ দেওয়া সাপেক্ষে যে ফসল উৎপন্ন হয় তাতে যাকাতের পরিমাণ হলো অর্ধ ‘উশর (৫%)।
৩- যেসব খাদ্যশস্য ও ফলমূল কিছু বিনা খরচে বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু শ্রম নির্ভর সেচ, যেমন কূপ ইত্যাদি থেকে পানি এনে সেচ দেওয়া সাপেক্ষে উৎপন্ন হয়েছে তাতে ৭.৫% হারে যাকাত ফরয।
খাদ্যশস্যে যখন দানা পরিপক্ক হয় এবং খোসাযুক্ত হয় এবং ফলমূল যখন পরিপক্ক হয়ে খাওয়ার উপযোগী হয় তখন এতে যাকাত ফরয হয়।
শাকসব্জি ও ফলমূল ব্যবসার জন্য হলে কেবল এতে যাকাত ফরয হবে, তখন এতে নিসাব পূর্ণ হলে ও বছর অতিক্রান্ত হলে এর মূল্য থেকে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
সামুদ্রিক মূল্যবান জিনিস যেমন, মণিমুক্তা, নীলকান্তমণি ও মাছ ইত্যাদিতে কোনো যাকাত নেই। তবে এগুলো যদি ব্যবসার জন্য হয় তবে এতে ব্যবসার মালের মতো নিসাব পূর্ণ হলে ও বছর অতিক্রান্ত হলে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
রিকায তথা গুপ্তধন বলতে জমিনের নিচে পুঁতে রাখা ধন সম্পদ। এ সম্পদ কম হোক বা বেশি হোক কেউ তা পেলে ফাইয়ের খাত তথা গরীব, মিসকীন ও কল্যাণকর কাজে এক পঞ্চমাংশ (২০%) হারে যাকাত আদায় করতে হবে।
৪- ব্যবসায়িক সম্পদের যাকাত:
ব্যবসায়িক সম্পদ বলতে পশু, খাদ্য, পানীয় ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বেচা-কেনার মাধ্যমে লাভের উদ্দেশ্যে জমা রাখা হয়। কারো কাছে ব্যবসায়িক সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকলে এবং তা একবছর অতিবাহিত হলে গরীবের সর্বাধিক সুবিধাজনক হিসেবে বছর শেষে সমস্ত মূল্যমানের ওপর ২.৫% হিসেবে যাকাত ফরয হবে। তবে ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত সে ব্যবসায়িক পণ্য থেকে দেওয়াও জায়েয।
যেসব ব্যবসায়িক পণ্য নিজের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে; ব্যবসার নিয়তে নয়, এতে যাকাত নেই।
যখন পশু ও ব্যবসায়ী পণ্য নিসাব পরিমাণ হয়ে যাবে, তখন পশু থেকে আগত বাচ্চা এবং ব্যবসা থেকে অর্জিত লভ্যাংশে ‘বছর পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি’ মূলবস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট হবে। (অর্থাৎ পশুর বাচ্ছা ও ব্যবসায় অর্জিত লভ্যাংশের জন্য আলাদা বছর পূর্ণ হতে হবে না। মূল পশু ও মূল ব্যবসায়ী পণ্যের বছর পূর্ণ হওয়াই যথেষ্ট)