আল্লাহ তা‘আলা লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে সফলকাম বলেছেন। এর বিপরীতে অবৈধ যৌন সংযোগকারীকে ব্যর্থ, নিন্দিত ও সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧﴾ [المؤمنون: ١، ٧]
“মুমিনরা অবশ্যই সফলকাম। যারা সালাতে অত্যন্ত মনোযোগী। যারা অযথা ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত। যারা যাকাত দানে অত্যন্ত সক্রিয়। যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারী অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-৭]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ব্যাপকভাবে মানব জাতির নিন্দা করেছেন। তবে যারা নিন্দিত নয় তাদের মধ্যে যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী অন্যতম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٢٩ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٣٠ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٣١﴾ [المعارج: ٢٩، ٣١]
“আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী”। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ২৯-৩১]
লজ্জাস্থান হিফাযতের কারণেই মারইয়াম আলাইহাস সালাম মহিলাদের মধ্যে বিশেষ পূর্ণতা লাভ করেছেন এবং পবিত্র কুর‘আন মাজীদে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَرۡيَمَ ٱبۡنَتَ عِمۡرَٰنَ ٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتۡ بِكَلِمَٰتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِۦ وَكَانَتۡ مِنَ ٱلۡقَٰنِتِينَ ١٢﴾ [التحريم: ١٢]
“আল্লাহ তা‘আলা আরো দৃষ্টান্ত দিয়েছেন ইমরান তনয়া মারইয়ামের। যে নিজ সতীত্ব রক্ষা করেছে। ফলে আমরা তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছি এবং সে তার প্রভুর বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছে। সে ছিলো অনুগতদের অন্যতম”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا شَبَابَ قُرَيْشٍ! احْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، لاَ تَزْنُوْا، أَلاَ مَنْ حَفِظَ فَرْجَهُ فَلَهُ الْـجَنَّةُ»
“হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করো। কখনো ব্যভিচার করো না। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করতে পেরেছে তার জন্যই তো জান্নাত”।[1]
সাহল ইবন সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ তথা জিহ্বা এবং উভয় পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো”।[2]
উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اِضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْـجَنَّةَ: اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا الْأَمَانَةَ إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ»
“তোমরা নিজ থেকেই ছয়টি কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো। তোমরা কথা বললে সত্য বলবে। ওয়াদা করলে তা পুরা করবে। কেউ তোমাদের নিকট কোনো কিছু আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে আদায় করবে। লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। চোখকে নিম্নগামী করবে এবং হাতকে অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখবে”।[3]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا صَلَّتِ الْـمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْـرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا؛ دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْـجَنَّةِ شَاءَتْ»
“কোন মহিলা যদি রীতি মতো পাঁচ বেলা সালাত পড়ে, রামাদানের সাওম পালন করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে; উপরন্তু তার স্বামীর আনুগত্য করে তা হলে সে জান্নাতের যে কোনো গেট দিয়ে চায় ঢুকতে পারবে”।[4]
>[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৪
[3] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ১৯০১
[4] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ১৯৩১
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُ﴾ [النساء: ٣٤]
“সুতরাং যে সমস্ত নারী পুণ্যবতী তারাই স্বামীর আনুগত্য করে এবং তার অনুপস্থিতে তার সম্পদ ও নিজ সতীত্ব রক্ষা করে। যা আল্লাহ তা‘আলা রক্ষা করলেই তা রক্ষা পাওয়া সম্ভব”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [الاحزاب: ٣٥]
“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মহিলা, মুমিন পুরুষ ও মহিলা, অনুগত পুরুষ ও মহিলা, সত্যবাদী পুরুষ ও মহিলা, ধৈর্যশীল পুরুষ ও মহিলা, বিনয়ী পুরুষ ও মহিলা, সাদাকাকারী পুরুষ ও মহিলা, সাওম পালনকারী পুরুষ ও মহিলা, নিজ লজ্জাস্থান হিফাযতকারী পুরুষ ও মহিলা এবং আল্লাহ তা‘আলাকে অধিক স্বরণকারী পুরুষ ও মহিলা এদের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা রেখেছেন তাঁর ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ ٣١﴾ [النور: ٣٠، ٣١]
“(হে মুহাম্মাদ) তুমি মুমিনদেরকে বলে দাও, যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য প্রবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মুমিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِ﴾ [النور: ٣٣]
“যাদের বিয়ে করার (অর্থনৈতিক) কোনো সামর্থ্য নেই তারা যেন নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করে দেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمۡ وَيَهۡدِيَكُمۡ سُنَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَيَتُوبَ عَلَيۡكُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٢٦ وَٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيۡكُمۡ وَيُرِيدُ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلشَّهَوَٰتِ أَن تَمِيلُواْ مَيۡلًا عَظِيمٗا ٢٧ يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمۡۚ وَخُلِقَ ٱلۡإِنسَٰنُ ضَعِيفٗا ٢٨﴾ [النساء: ٢٦، ٢٨]
“আল্লাহ তা‘আলা চান তোমাদের জন্য (তাঁর হালাল-হারামসমূহ) বর্ণনা করতে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শসমূহ প্রদর্শন করতে; ওপরন্তু তোমাদের তাওবা গ্রহণ করতে। আল্লাহ তা‘আলা তো মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়। আল্লাহ তা‘আলা চান তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিতে। এ দিকে প্রবৃত্তি পূজারীরা চায় তোমরা যেন ঘোর অধঃপতনে পতিত হও। আল্লাহ তা‘আলা চান তোমাদের সাথে লঘু ব্যবহার করতে। কারণ, মানুষকে তো মূলতঃ দুর্বল রূপেই সৃষ্টি করা হয়েছে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৬-২৮]
আজ পর্যন্ত কেউ উক্ত বাস্তবতা অস্বীকার করে নি। আদি যুগ থেকে মানুষ সাধুতা ও পবিত্রতা নিয়ে গর্ব করে আসছে।
ইবরাহীম ইবন আবু বকর ইবন ‘আইয়াশ রহ. বলেন, আমি আমার পিতার মৃত্যুর সময় তাঁর পার্শ্বেই অবস্থান করছিলাম। আমি কাঁদতে শুরু করলে তিনি আমাকে বললেন, তুমি কাঁদো কেন? তোমার পিতা তো কখনো ব্যভিচার করে নি।