প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ﴾ [النور: ٣١]
“তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (ওড়না বা চাদর) দ্বারা আবৃত করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লামা ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, (আয়াতে বর্ণিত) খিমার হলো: যার দ্বারা মহিলা ঘোমটা দিয়ে স্বীয় মাথা আবৃত করে থাকে।
সুতরাং মহিলা যেহেতু চাদর বা ওড়না দ্বারা তার বক্ষদেশ আবৃত করার জন্য আদিষ্ট, অতএব সে তার চেহারা আবৃত করার জন্যও আদিষ্ট।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর বাণী:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল: তারা যেন তাদের ওড়না বা চাদরের কিছু অংশ নিজেদের (চেহারা ও বুকের) উপর টেনে দেয়।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ মুমিন মহিলাদেরকে আদেশ করেন যে, যখন তারা স্বীয় গৃহ থেকে কোনো প্রয়োজনে বের হবে তারা যেন চাদর বা ওড়না মাথার উপর দিয়ে (ঝুলিয়ে) তাদের চেহারা আবৃত করে।
শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সাহাবীর তাফসীর দলীল হিসেবে গণ্য, বরং কতিপয় আলিম বলেন, তা নবী পর্যন্ত উন্নীত (মারফু‘)।
তৃতীয়ত: ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইহরামরত মহিলা নিকাব (মুখাচ্ছাদন) ও হাত মোজা পরবে না।” (সহীহ বুখারী)
কাজী আবূ বকর ইবন আল আরাবী বলেন, ইবন উমার এর হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: ইহরামরত মহিলা নেকাব পরবে না, আর তা এটাই বুঝায় যে, হজ্জ ব্যতীত অন্য সময় চেহারা আবৃত করা ফরয। সুতরাং সে ইহরাম অবস্থায় চেহারার সাথে লাগিয়ে না রেখে তার উপর চাদর বা ওড়নার এক অংশ ঝুলিয়ে দিবে এবং সে পুরুষ থেকে বিমুখ থাকবে পুরুষরাও তার থেকে বিমুখ থাকবে।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ বলেন, সুতরাং এটি প্রমাণ করে যে নেকাব ও হাত মোজা ইহরামমুক্ত মহিলাদের নিকট সুপরিচিত বিষয় এবং তার দাবীই হলো মহিলাদের চেহারা ও হাত আবৃত করা।
চতুর্থত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “নারী হলো গোপনীয় বস্তু” এটি চেহারা আবৃত করার বিধিবদ্ধতার একটি দলীল।
শাইখ হামূদ আত-তুয়াইজিরী বলেন, এই হাদীসটি নারীর সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ পর পুরুষের জন্য গোপনীয় বস্তু হওয়ার নির্ভরযোগ্য দলীল। চাই তা তার চেহারা হোক বা অন্য কোনো অঙ্গ হোক।
ওহে যারা ধারণা করে যে, বর্তমান যুগে পর্দা করা মুসলিম নারীদের জন্য উপযোগী নয়, তারা শ্রবণ করুন!
ওহে যারা দাবী করেন যে, চেহারা আবৃত করা হলো উসমানী যুগের অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত।
ওহে যারা নারীদেরকে তাদের গৃহ থেকে বের করে সর্বক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে অবাধ মিশ্রণ ঘটাতে চান।
উল্লিখিত আয়াতসমূহ আপনার সামনে। অতএব, সেগুলো পড়ুন। উল্লিখিত হাদীসসমূহ আপনার সামনে। সেগুলো গবেষণা করুন। আর যে সমস্ত পূর্বাপর ইসলামী মনিষীদের মতামত অতিবাহিত হলো তা পর্দা ও চেহারা আবৃত করারই প্রমাণ বহন করে, সেগুলোও বুঝুন। সুতরাং আপনারা যদি ইতোপূর্বে এ সমস্ত আয়াত ও হাদীস সম্পর্কে অবহিত না হয়ে থাকেন, তবে এখন এসব আপনাদের সন্মুখে। আপনারা ভ্রান্তিতে অব্যাহত না থেকে মহাসত্যের দিকে ফিরে আসুন, আমরা সে অপেক্ষায় রয়েছি। কেননা সত্যের পথে প্রত্যাবর্তন হলো শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা এবং ভ্রান্তি ও বাতিলে অব্যাহত থাকা হলো নিকৃষ্ট ও জঘণ্যতম অসম্মান।
পক্ষান্তরে আপনারা যদি মহান আল্লাহর বাণী:
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ﴾ [النمل: ١٤]
“তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করলো যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]-এর মধ্যে যে শ্রেণির গুণ বর্ণিত হয়েছে, তার অন্তর্ভুক্ত হন তবে অবশ্যই আপনারা কখনও সত্য গ্রহণ করতে পারবেন না। অবশ্যই সঠিক মতে পৌঁছতে পারবেন না যদিও আপনাদের নিকট উপস্থাপন করি হাজারো আয়াত ও হাদীস। কেননা ইসলামে যে সার্বিক জীবনের আদর্শ রয়েছে এবং কুরআন যে সর্বকালের ও সর্বস্থানের জন্য আদর্শ তা আপনারা প্রকৃতভাবে বিশ্বাস করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠ ﴾ [المائدة: ٥٠]
“তবে কি তারা জাহেলিয়াত-বর্বরতার বিচার-মীমাংসা কামনা করে? আর দৃঢ় বিশ্বাসীদের কাছে বিচার-মীমাংসা কার্যে আল্লাহর চেয়ে কে উত্তম হবে?” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০]