যখন আমাদের ব্যবসার লাভের কারণে নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হব, তখন ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি যাকাতের আমল আমাদের দ্বারা পালন হবে। এর মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন হবে। ধনী ও গরীবের মাঝে সেতু বন্ধন রচনা হবে।যাকাত সম্পদের ময়লা-আবর্জনা। যাকাত দিয়ে সম্পদকে ময়লা আবর্জনা থেকে পরিষ্কার করতে হয়। যাকাত কখনো সম্পদ কমায় না। যাকাত সম্পদ বাড়ায়। যাকাত দেওয়া দ্বারা ব্যবসায়ী তার সম্পদকে কলুষমুক্ত করল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن رِّبٗا لِّيَرۡبُوَاْ فِيٓ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ فَلَا يَرۡبُواْ عِندَ ٱللَّهِۖ وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن زَكَوٰةٖ تُرِيدُونَ وَجۡهَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُضۡعِفُونَ ٣٩﴾ [الروم: ٣٩]

“আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলতঃ আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদপ্রাপ্ত”। [সূরা রূম, আয়াত: ৩৯]

আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, যাকাত দ্বারাই সম্পদ বৃদ্ধি পায় সুদ নয়। সুদের পরিণতি খুবই করুণ। সুদ পরিহার করা ও তা থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের সর্বাত্মক সতর্ক থাকতে হবে।

২. লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি অনুসরণ করা:

ব্যবসায়িক যে কোনো লেনদেন ও কারবারের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيۡنٍ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗى فَٱكۡتُبُوهُۚ وَلۡيَكۡتُب بَّيۡنَكُمۡ كَاتِبُۢ بِٱلۡعَدۡلِۚ﴾ [البقرة: ٢٨٢]

“হে মুমিনগণ যখন তোমরা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণের আদান প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোনো লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দিবে; ...দু’জন সাক্ষী কর,...। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮২]

৩. খাদ্যে ভেজাল মেশানো থেকে বিরত থাকা:

খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী লোকদের সমাজের মানুষ ভালো চোখে দেখে না। তাদের বিশ্বাস করে না, অন্তর থেকে সম্মান করে না। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও ব্যর্থতা নিজের চোখেই দেখতে পারে। পরকালের কঠিন শাস্তি তো তাদের ভোগ করতে হবেই। ইদানীং শুধু ভেজাল নয়, বিভিন্ন আধুনিক নামের বিষও মেশানো হয়। এমনকি ভেজাল ওষুধেরও বাজারে ছড়াছড়ি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَتَبَدَّلُواْ ٱلۡخَبِيثَ بِٱلطَّيِّبِۖ ٢﴾ [النساء : ٢]

“এবং তোমরা অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করো না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২]

যখন ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উভয় পক্ষ অনুভব করবে আমরা উপকৃত হয়েছি তখন সেখানে একটি হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে। ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাবে। যা একটি সুগঠিত সমাজের জন্য প্রয়োজন। এতে উভয় পক্ষই পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সওয়াব পাবেন।

ব্যবসা করে গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা শুধু লাভ করছি তা নয়; বরং আমরা তাদের জিনিস ও সেবা প্রদান করছি। এটি নবীদের সামাজিক কর্মসূচীর মতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ، وَالصِّدِّيقِينَ، وَالشُّهَدَاءِ».

“সত্যবাদী ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ীগণ বিচার দিবসে নবী, ওলী ও শহীদগণের সাথে অবস্থান করবে”।[1]

ব্যবসায়ীদের খুশি হওয়া উচিৎ যে, তারা অন্যের জন্য চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করেন। একজনের চাকুরী হওয়ার অর্থ হচ্ছে একটি বেকারত্ব কমল, একজনের হালাল আয়ের পথ প্রশস্ত হলো, রাষ্ট্রের মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটল -এ সবই ইসলামের নির্দেশ।মোটকথা, ব্যবসা শুধু আয়-রোজগারে একটি ব্যবস্থার নাম নয়। ব্যবসার সাথে যেমনিভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক, অনুরূপভাবে রয়েছে সামাজিক, মানবিক ও ইসলামী আদর্শ সহ বিভিন্ন কর্মসূচী ও বাস্তব-ধর্মী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সত্যিকার ব্যবসায়ী হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন।

>
[1] তিরমিযী, হাদীস নং ১২০৯
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে