বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে মুসলিম উম্মাহ ও জাতির মুক্তি-পরিত্রাণ লাভ এবং সামাজিক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন প্রতিটি মুসলিমের প্রাণের দাবি। মুসলিম উম্মাহ ও জাতির এ প্রাণের দাবি আদায়ের জন্য প্রথমেই একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর ওপর একান্ত ভরসা করতে হবে। তারপর সকল প্রকার নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই আত্মনির্ভর ও আত্মশক্তিতে বলিয়ান হতে হবে। এ আত্মনির্ভরতা এবং আত্মশক্তি অর্জিত হবে মুসলিম উম্মাহ ও জাতির পারিবারিক জীবনে একটি মুসলিম মানব সন্তানকে আত্মিক ও মানসিকভাবে গঠন করার মাধ্যমে। আর এ কাজটি করতে পারে শিশুর পিতা কর্তৃক অনুপ্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে। কারণ, একজন পিতা সর্বাবস্থায় তার সন্তান ও শিশুদের তরবিয়ত ও শাসন ইত্যাদি তাদের কল্যাণের জন্যই করে থাকে। এজন্য শিশুদের পিতার অনুপ্রেরণা প্রদানই মুসলিম উম্মাহর সামাজিক পরিবর্তনের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে থাকে।
যেহেতু একজন পিতা সার্বক্ষণিকভাবে তার সন্তানদের কল্যাণ কামনায় নিয়োজিত থাকেন, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য তারাই শিশুদের অনুপ্রেরণা যোগাতে পারেন। বর্তমান যুগে ইসলামী শিক্ষা প্রশিক্ষণ, তা‘লীম-তরবিয়ত এবং ইসলামী সংস্কার-পরিশোধনের একমাত্র চাবিকাঠি তাদের হাতেই বলতে হয়। তবে মুসলিম উম্মাহ ও জাতির সামাজিক পরিবর্তন ও পরিশোধনের জন্য সন্তান ও শিশুদের গঠনের ক্ষেত্রে জাতির চিন্তাবিদ গবেষক, পরিশোধক ও সংস্কৃতিবিদদেরকে সহায়তা করতে হবে। তাদেরকে শিশুদের কল্যাণের বিষয়াবলীর প্রতি দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। তাদেরকে শিশুদের আত্মিক ও মানসিক গঠনের পথ ও পন্থা ইসলামের মূল্যবোধ ও মূলনীতির আলোকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যাতে সকলেই ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ লাভ করতে পারে। এজন্য জাতির চিন্তাবিদ, গবেষক ও সংস্কৃতিবিদদের জাতির সামাজিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু বলা যেতে পারে।
এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ ও জাতির খেদমতে এবং জাতির নতুন প্রজন্মকে শক্তিশালী ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে মাদরাসা ও অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা শিশুদের বাবা-মা ও অভিভাবকদের জন্য বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করতে পারে, যে সেমিনারের মাধ্যমে তারা বাবা-মা ও অভিভাবকদের সামনে সঠিক সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং শিশুদের সঠিক তা‘লীম-তরবিয়তের মৌলিক পদ্ধতিসমূহ তুলে ধরতে পারে।
তেমনিভাবে এ কাজে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নিতে পারে। তারা যুবকদের জন্য এ প্রসঙ্গে বিশেষ ধরনের শিক্ষা এবং ইসলামিক বিধান অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিবার গঠনের পদ্ধতি ও নিয়মাবলি ইত্যাদি শিক্ষা দিতে পারে, যাতে ঐ যুবকরা সঠিক পদ্ধতিতে দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে তাদের সন্তান সন্ততিদেরকে ইসলামিক মূল্যবোধ ও মূলনীতি অনুযায়ী সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং তা‘লীম-তরবিয়ত প্রদান করতে পারে।
বিশেষভাবে ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। তারা জাতির সংকট নিরসনে এবং চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ও সামাজিক পরিবর্তন সাধনের জন্য শিশুদের অভিভাবক বাবা-মাদের জন্য সেমিনার, সভা, আলোচনা পর্যালোচনা-সহ নানা রকম ব্যবস্থা নিতে পারে, তাদের সতর্ক ও সচেতন করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন একটি জাতি উপহার দিতে পারে, যারা মুসলিম উম্মাহ ও জাতির পরিবর্তন, পরিশোধন এবং সংস্কার সাধন করতে সক্ষম। কারণ, বাবা, মা ও অভিভাবকরাই হচ্ছে শিশু গঠনের প্রাথমিক মাদরাসা ও শিক্ষালয়। তাদের মাধ্যমেই সঠিক জাতি গঠন সম্ভব হবে।