পূর্বে আমরা তাওহীদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করেছি কুরআনুল কারীমের আলোকে। কারণ, এটিই সেই মহান কালেমা, যার জন্য অস্তিত্বে এসেছে আসমান ও জমিন; সৃজিত হয়েছে সকল মখলুক এবং প্রেরিত হয়েছেন রাসূলগণ। এ কালেমা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই শরী‘আত প্রদান ও কিতাব নাযিল করা হয়েছে। আবার এ কালেমার জন্যই দাঁড়ি-পাল্লা স্থাপন, হিসেবের খাতা খোলা এবং জান্নাত ও জাহান্নামের বাজার বসবে। মানুষ মুমিন ও কাফির, নেককার ও বদকার দু’ভাগে বিভক্ত এ কালেমার জন্য। আল্লাহর সৃষ্টি ও আদেশ, সাওয়াব ও শাস্তির মূল রহস্য এ কালেমা। এটি সে সত্য বাণী, যার ওপর দীন প্রতিষ্ঠিত ও কিবলা নির্ধারিত। কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাইকে এ কালেমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।

বান্দার পা আল্লাহর সম্মুখ থেকে হটবে না, যতক্ষণ না তাদেরকে দু’টি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে:

১. তোমরা কার ইবাদাত করেছ?

২. রাসূলদের কী উত্তর দিয়েছ?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ জানা, তার স্বীকৃতি প্রদান করা ও তার ওপর আমল করে কালেমা বাস্তবায়ন করা।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লার অর্থ জানা, তাকে আল্লাহর রাসূল হিসেবে স্বীকার করা, তার বশ্যতা মেনে নেওয়া ও তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে তার রিসালাহ বাস্তবায়ন করা।[1]

সন্দেহ নেই, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ফযীলত কারো পক্ষে গণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়, কারণ তার ওপর নির্ভর করে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা, প্রতিদান ও সাওয়াব, তাই তার সব অর্থ কারো অন্তরে উদয় হওয়া বা কল্পনায় আসা সম্ভব নয়। এখানে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস থেকে কয়েকটি ফযীলত লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করব।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ফযীলত: এ কালেমার আমল সর্বোত্তম, তার সাওয়াব অনেক বেশি ও অনেক গোলাম আজাদ করার সমান। এ কালেমা তার পাঠকারীর জন্য শয়তান থেকে ঢালস্বরূপ হয়। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ، كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ، إِلَّا أَحَدٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ»

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন একশত বার পাঠ করবে: «لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ» (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক তার কোনো শরীক নেই, তার জন্যই সকল রাজত্ব এবং তিনি সকল প্রশংসার মালিক, আর তিনিই সকল বস্তুর ওপর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী) এটি তার জন্য দশটি গোলাম আযাদ করার সমান হবে, তার আমলনামায় এক শত নেকী লিখা হবে এবং তার আমলনামা থেকে এক শত পাপ মোচন করা হবে। এ কালেমা সে দিন তার জন্য শয়তান থেকে ঢালস্বরূপ হবে, যতক্ষণ না সে সন্ধ্যায় উপনীত হয়। আর সে যা নিয়ে উপস্থিত হবে তার চেয়ে উত্তম কিছু নিয়ে কেউ উপস্থিত হবে না, তবে যে এ কালেমা তার চেয়ে বেশি পাঠ করবে সে ব্যতীত”।[2]

ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ قَالَهَا عَشْرَ مِرّاتٍ كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ أَرْبَعَةَ أَنْفُسٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ»

“যে ব্যক্তি উক্ত দো‘আ দশবার বলবে, সে যেন ইসমাঈলের বংশধর থেকে চার ব্যক্তিকে মুক্ত করল”।[3]

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: নবীগণ যত অযীফা পাঠ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম অযীফা এ কালেমা। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আরাফাতের সন্ধ্যায় আমি এবং আমার পূর্বে নবীগণ যা বলেছি, তন্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে[4]:

«لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ، لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

অপর বর্ণনায় এসেছে: সর্বোত্তম দো‘আ ‘আরাফাতের দিনের দো‘আ। আমি ও আমার পূর্বে নবীগণ যা বলেছি, তন্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে:[5]

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: কিয়ামতের দিন এটি পাপের দফতরের বিপরীত ভারী হয়ে নুয়ে পড়বে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«يُصَاحُ بِرَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَيُنْشَرُ لَهُ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ سِجِلا، كُلُّ سِجِلٍّ مِنْهَا مَدُّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ عز وجل لَهُ: " أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ " فَيَقُولُ: لا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ عز وجل: أَلَكَ عُذْرٌ أَوْ حَسَنَةٌ؟ " فَيَهَابُ الرَّجُلُ، فَيَقُولُ: لا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ عز وجل: بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَاتٍ، وَإِنَّهُ لا ظُلْمَ عَلَيْكَ "، فَتُخْرَجُ لَهُ بِطَاقَةٌ فِيهَا: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلاتِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّكَ لا تُظْلَمُ ".قَالَ: فَتُوضَعُ السِّجِلاتُ فِي كِفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِي كِفَّةٍ، فَطَاشَتِ السِّجِلاتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ»

“কিয়ামতের দিন সকল মানুষের সামনে আমার উম্মত থেকে এক ব্যক্তিকে চিৎকার করে ডাকা হবে, অতঃপর তার নিরানব্বইটি দফতর পেশ করা হবে, প্রত্যেক দফতরের দৈর্ঘ্য হবে চোখের দৃষ্টি সমপরিমাণ, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন: এসব থেকে কোনোও একটি তুমি অস্বীকার কর? সে বলবে: না, হে আমার রব। আল্লাহ বলবেন: তোমার কোনো অজুহাত অথবা কোনো নেকী আছে কি? লোকটি ভয় পেয়ে যাবে এবং বলবে, হে আমার রব্ব, না কোনো নেকী নেই। আল্লাহ বলবেন: অবশ্যই, আমাদের কাছে তোমার একটি নেকী আছে, আর নিশ্চিত থাক তোমার ওপর যুলুম করা হবে না, এরপর একটি কার্ড পেশ করা হবে, যেখানে থাকবে:

«أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»

লোকটি বলবে: হে আমার রব, এসব দফতরের বিপরীতে এ কার্ডের মূল্য কী? আল্লাহ বলবেন: তুমি যুলমের শিকার হবে না। তিনি বলেন, অতঃপর সকল দফতর এক পাল্লায় আর কার্ডটি রাখা হবে অপর পাল্লায়, তখন দফতরগুলো উপরে উঠে যাবে আর কালেমার কার্ড ভারী হয়ে নুয়ে পড়বে”।[6]

এতে সন্দেহ নেই যে, উক্ত ব্যক্তি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, সে জন্যই তার কার্ডটি সকল দফতরকে হালকা করে নিজে ভারী হয়ে নুয়ে পড়েছে। কারণ মানুষের অন্তরে থাকা ঈমানের তারতম্যের ফলে আমলও তারতম্য হয়, অন্যথায় সে ময়দানে এরূপ লোক অনেক থাকবে, যারা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, কিন্তু তার মত তাদের সাওয়াব হাসিল হবে না। কারণ, তাদের অন্তরে কালেমার ঈমান দুর্বল ছিল। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ»

“যে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলেছে এবং তার অন্তরে যবের ওজন পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে সে জাহান্নাম থেকে বের হবে। জাহান্নাম থেকে সেও বের হবে, যে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলেছে এবং তার অন্তরে গম পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে। আবার জাহান্নাম থেকে সেও বের হবে, যে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলেছে এবং তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে”।[7]

এ থেকে সাব্যস্ত হয় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা সবাই সমান নয়, সমানভাবে সবাই তার ঈমান ধারণ করে নি।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: যদি আসমান ও জমিনকে এ কালেমার বিপরীতে ওজন করা হয়, তবুও তা নুয়ে পড়বে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

«أنَّ نُوحًا قَالَ لِابْنِهِ عند موته: آمُرُكَ بِلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَإِنَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعَ، وَالْأَرْضِينَ السَّبْعَ، لَوْ وُضِعَتْ فِي كِفَّةٍ، وَوُضِعَتْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فِي كِفَّةٍ، رَجَحَتْ بِهِنَّ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَلَوْ أَنَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعَ كُنَّ حَلْقَةً مُبْهَمَةً، لقَصَمَتْهُنَّ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ»

“নূহ আলাহিস সালাম মৃত্যুর সময় স্বীয় সন্তানকে বলেছেন: আমি তোমাকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ, যদি সাত আসমান ও সাত জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহকে অপর পাল্লায় রাখা হয়, তবুও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাদের বিপরীত নুয়ে পড়বে। আর যদি সাত আসমান এক বৃত্তে পরিণত হয় তবুও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাকে হালকা করে দিবে।[8]

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: আল্লাহর সাথে এ কালেমার কোনো পর্দা নেই, বরং সকল পর্দা ভেদ করে সে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তিরমিযি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَا قَالَ عَبْدٌ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَطُّ مُخْلِصًا إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ حَتَّى تُفْضِيَ إِلَى الْعَرْشِ مَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ»

“কোন বান্দা যখনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ» বলেছে, তখনি অবশ্যই তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয়েছে, যেন তা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যাবত সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে”।[9]

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: এ কালেমা যে বলবে তার জন্য তা নাজাতস্বরূপ হবে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মুয়াযযিনকে বলতে শুনলেন: «أشهد أن لاإله إلاالله» (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই)। তিনি বললেন: «خَرَجَ مِنَ النَّارِ» “সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেল”।[10]

ইতবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ: لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ، يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ»

“নিশ্চয় যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, আল্লাহ তাকে আগুনের ওপর হারাম করে দিবেন”।[11]

‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অপর ফযীলত: এ কালেমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের সর্বোত্তম শাখা বলেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ شُعْبَةً، أعلاها قَوْلُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ»

“ঈমান সত্তরের অধিক শাখা সংবলিত। সর্বোত্তম শাখা হলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আর তার সর্বনিম্ন শাখা রাস্তা থেকে কষ্ট দূর করা”।[12]

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: এ কালেমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম যিকির বলেছেন, যেমন ইমাম তিরমিযী প্রমুখগণ জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:

«أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ، وأَفْضَلَ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلَّهِ»

“সর্বোত্তম যিকির: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও সর্বোত্তম দো‘আ: আল-হামদুলিল্লাহ”।[13]

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অপর ফযীলত: এ কালেমা যে অন্তর থেকে বলবে, কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি সেই ধন্য হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ধন্য কে হবে? তিনি বললেন:

«لَقَدْ ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، أَنْ لَا يَسْأَلَنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ»

“হে আবু হুরায়রা, আমি ধারণা করেছি, এ হাদীস সম্পর্কে তোমার চেয়ে আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। কারণ, হাদীসের ওপর আমি তোমার আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান সে হবে, যে নিজের অন্তর অথবা নফস থেকে খালিসভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে”।[14]

অত্র হাদীসে তিনি বলেছেন: «مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ» এ কথা প্রমাণ করে, মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা যথেষ্ট নয়, বরং কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কালেমার শর্তসমূহ ও তার জরুরি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা আবশ্যক, অন্যথায় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মূল্যহীন।

[1] যাদুল মা‘আদ: (১/৩৪)

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯১

[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৩

[4] তাবরানী, দো‘আ: (৮৭৪)

[5] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৮৫; সিলসিলাহ সহীহাহ: (৪/৭ ও ৮)

[6] আল-মুসনাদ: (২/২১৩); তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৩৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩০০; সহীহ আল-জামে‘, হাদীস নং ৮০৯৫

[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৩, ৩২৫

[8] মুসনাদ: (২/১৭০); সিলসিলাহ সহীহাহ, লিল আলবানী: (১৩৪)

[9] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৯০; সহীহ আল-জামে‘ (হাদীস নং ৫৬৪৮) গ্রন্থে আলবানী হাসান বলেছেন।

[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮২

[11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩, ২৬৩

[12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫

[13] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৮৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮০০; সহীহ আল-জামে‘ (হাদীস নং ১১০৪) গ্রন্থে আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

[14] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯