ক্বিয়াসের অনেক শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো:
(১) ক্বিয়াস তার চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী দলীলের সাথে বিরোধপূর্ণ হবে না। কাজেই যে ক্বিয়াস نص বা কুরআন-হাদীছের সুস্পষ্ট দলীল, ইজমা ও ছাহাবীদের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তা গ্রহণযোগ্য নয়। (যখন আমরা বলি যে, ছাহাবীদের বক্তব্য দলীলযোগ্য)।
সুতরাং যে ক্বিয়াস পূর্বোক্ত দলীল সমূহের সাথে বিরোধপূর্ণ হয়, তাকে فاسد الاعتبار বা গ্রহণের অযোগ্য ক্বিয়াস হিসাবে অভিহিত করা হয়। এর দৃষ্টান্ত হলো প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে, এর উপর ক্বিয়াস করে বলা যে, প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিবাহ করতে পারবে। এ ক্বিয়াসটি نص এর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে فاسد الاعتبار বা অগ্রণযোগ্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لا نكاح الا بولي অর্থাৎ অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ নেই।[1]
(২) মূল দলীলের হুকুমটি نص বা ইজমার মাধ্যমে সাব্যস্ত হতে হবে। সুতরাং যদি মূল হুকুমটি ক্বিয়াসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়, তাহলে তার উপর অন্যকে কিবয়াস করা যাবে না। বরং এটিকে প্রথম মূলের উপর ক্বিয়াস করতে হবে। কেননা, সেদিকে ফিরে যাওয়াই উত্তম। কারণ যে বিষয়কে আসল নির্ধারণ করে তার উপর শাখাকে ক্বিয়াস করা হয়, অনেক সময় তা ছহীহ হয় না। এখানে আরো কারণ হলো فرع কে فرع এর উপর ক্বিয়াস করা, অতঃপর সেই فرع কে আবার أصل এর উপর ক্বিয়াস করা কোন উপকার ছাড়াই দীর্ঘসূত্রতা মাত্র।
এর দৃষ্টান্ত হলো এটা বলা যে, ভূট্টাতে সুদ প্রযোজ্য হবে চাউলের উপর ক্বিয়াস করে। চাউলে সুদ প্রযোজ্য হয় গমের উপর ক্বিয়াস করে। এভাবে ক্বিয়াস করা শুদ্ধ নয়। বরং এভাবে বলতে হবে যে, ভূট্টাতে সুদ প্রযোজ্য হবে গমের উপর ক্বিয়াস করে। এর কারণ হলো, যাতে نص দ্বারা সাব্যস্ত أصل এর উপর ক্বিয়াস করা যায়।
(৩) أصل এর হুকুম একটি জ্ঞাত علة থাকতে হবে। যাতে أصل ও فرع এর علة এর মাঝে সমন্বয় করা যায়। যদি মূলের হুকুম কেবল ইবাদত হয়, তাহলে তার উপর অন্য কিছুকে ক্বিয়াস করা যাবে না। এর দৃষ্টান্ত হলো উটের মাংসের উপর ক্বিয়াস করে এটা বলা যে, উট পাখির মাংস খেলে ওযু ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু উটের সাথে উট পাখির মিল রয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হবে, এ ক্বিয়াস ছহীহ নয়। কারণ মূলের হুকুমের জ্ঞাত কোন কারণ নেই।[2] প্রসিদ্ধ মতানুসারে এটা নিরঙ্কুশ ইবাদত।
(৪) হুকুমের সাথে সংগতিপূর্ণ অর্থকে ইল্লত ধরতে হবে, যার গ্রহণযোগ্যতা শরীয়তের মূলনীতি থেকে জানা যাবে। যেমন: মদ হারামের ইল্লত বা কারণ হলো মাদকতা আসা বা মাতাল হওয়া। ইল্লতের অর্থ যদি দূরবর্তী গুণকে ধারণ করে, যার সাথে হুকুমের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই, তাহলে সেটিকে ইল্লত হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে না। যেমন: সাদা, কালো প্রভৃতি। এর উদাহরণ হলো আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের হাদীছ যখন বারীরাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করা হয়, তখন তাঁর স্বামীর ব্যাপারে তাকে ঐচ্ছিকতা প্রদান করা হয়। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, তার স্বামী কালো দাস ছিলো। এখানে আব্দুল্লাহ বিন আববাসের বক্তব্য ‘কালো’ একটি দূরবর্তী গুণ; যার সাথে ঐচ্ছিকতা প্রদানের হুকুমের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এ জন্য কোন দাসীকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করা হলে তার স্বামী যদি দাস হয়, তবে তাকে ঐচ্ছিকতা প্রদান করা হবে। যদিও তার স্বামী ফর্সা হয়। অনুরূপ ভাবে স্বামী স্বাধীন থাকলে, দাসীকে স্বাধীন করার পরও তার জন্য ঐচ্ছিকতা সাব্যস্ত হবে না, যদিও তার স্বামী কালো হয়।
(৫) أصل এর ন্যায় فرع এর মাঝেও ইল্লত বিদ্যমান থাকা। যেমন: বাবা-মাকে ‘উহ্’ বলা নিষেধের উপর ক্বিয়াস করে বাবা-মাকে প্রহার করা নিষেধ করা। কেননা, উভয়ের ক্ষেত্রে কারণ হলো কষ্ট দেওয়া। কাজেই فرع এর মাঝে ইল্লত পাওয়া না গেলে ক্বিয়াস শুদ্ধ হবে না।এর দৃষ্টান্ত হলো এরূপ বলা যে, গমের মধ্যে সুদ হারামের কারণ হলো এটি পরিমাপযোগ্য। অতঃপর এটা বলা যে, গমের উপর ক্বিয়াস করে আপেলেও সুদ প্রযোজ্য হবে। এ ক্বিয়াস শুদ্ধ নয়। কারণ فرع এর মাঝে ইল্লত পাওয়া যায়নি। কেননা, আপেল পরিমাপযোগ্য নয়। (বরং ওযনযোগ্য)।
[2]. হাদীছে উটের গোশত খেলে ওযু ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কেন ওযু ভেঙ্গে যায়, এর কোন ইল্লত বা কারণ বর্ণনা করা হয়নি। যেহেতু এর কোন কারণ জানা যায় না, কাজেই এর উপর অন্যকে কিয়াস করা যাবে না। কেননা, কিয়াস করার জন্য শর্ত হলো আসলের এর হুকুমের ইল্লত জানা থাকতে হবে।