মাসজিদে নাববী যিয়ারত শরিয়াতসম্মত ও মুসতাহাব আমলের অন্তর্ভুক্ত। এ মাসজিদ হচ্ছে তিনটি মাসজিদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে দ্বিতীয়, যে তিনটি মাসজিদে সলাত আদায় এবং ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে সফর করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী (সা.) বলেছেন:
لَا تَشُدُّوا الرِّحَالَ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِي هَذَا وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى
তোমরা তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন স্থানে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) সফর করবে না। আমার এ মাসজিদ (মাসজিদ নববী), মাসজিদ হারাম এবং মাসজিদ আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাসের মাসজিদ)।[1]
আবূ হুরায়রা (রা.) হতে আরও বর্ণিত, নাবী (সা.) বলেন:
صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ
আমার এ মাসজিদে একটি সলাত আদায় করা মাসজিদে হারাম ছাড়া অন্য সকল মাসজিদের তুলনায় এক হাযার গুণ সলাত অপেক্ষা উত্তম।[2]
আর ইমাম আহমাদ আব্দুল্লাহ বিন যুবায়রের হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন:
وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ صَلَاةٍ فِي هَذَا
মাসজিদে হারামে এক সলাত আদায় করা এ মাসজিদে (মদীনার মাসজিদে নাববীতে) একশত সলাত আদায় করা অপেক্ষা উত্তম।[3]
আর নাবী (সা.)-এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি: এ মসজিদে (মাসজিদে নাববীতে) এক সলাত আদায় করা কা‘বার মাসজিদ ছাড়া অন্য সকল মাসজিদের তুলনায় এক হাযার গুণ সলাত অপেক্ষা উত্তম।[4]
আর আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) বলেন:
مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي
আমার ঘর এবং মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বার আমার হাওযে কাওসারে অবস্থিত হবে।[5]
হাজী বা অন্যান্য লোকের জন্য হাজ্জ কার্য সম্পাদন করার আগে হোক কিংবা পরে হোক নাবী (সা.)-এর মাসজিদ যিয়ারত করা এবং সেখানে সলাত আদায় করা সুন্নাত। তবে এ মসজিদ যিয়ারত করা হাজ্জে কবুল হওয়ার জন্য শর্তও নয়, হাজ্জের কোন রুকুনও নয় এবং ওয়াজিবও নয়। এমন কি মসজিদ নাববীর যিয়ারত হাজ্জের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
মাসজিদে নাববীর যিয়ারতের সুন্নাতী পদ্ধতি হলো যে, মাসজিদে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা রাখবে এবং এ দু‘আগুলি পাঠ করবে:
بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم
[বিসমিল্লাহি, ওয়াস্সলাতু ওয়াস্সালামু আলা রসূলিল্লাহ্। আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনূবী, ওয়াফ্তাহলী আব্ওয়াবা রহমাতিকা। আউযু বিল্লাহিল আযীম, ওয়াবি ওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়াসুলত্ব-নিহিল ক্বদীম, মিনাশশাইত্ব-নির্ র-জীম]
আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি, আর সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আমার গুনাসমূহ ক্ষমা করে দাও এবং আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলি খুলে দাও। আমি মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করছি, তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর অনাদি রাজত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান হতে।[6]
অতঃপর দু’রাক‘আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সলাত আদায় করবে। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:
إِذَا دَخَلَ أحَدُكُمُ المَسْجِدَ ، فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ
যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে তখন দু’রাক‘আত সলাত আদায় না করা পর্যন্ত যেন না বসে।[7]
আরো কা‘ব বিন মালিক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সা.) (তাবূক যুদ্ধের) সফর থেকে ফিরে মদীনায় পদার্পণ করলেন। আর তিনি যখনই সফর থেকে আসতেন প্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাক‘আত সলাত আদায় করতেন।[8]
আর জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা মদীনায় ফিরলে তিনি বলেন: মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক‘আত সলাত আদায় কর।[9]
আর সহজসাধ্য হলে রাওযায় (নাবী (সা.)-এর ঘর এবং মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানকে রাওযা বলা হয়,[10] কিন্তু বিদ‘আতীরা নাবী (সা.)-এর কবরকে রাওযা বলে থাকে, যা স্পষ্ট ভুল পরিভাষা) সলাত আদায় করা উচিত; কারণ, এ স্থানের ফযীলত রয়েছে। আর যদি তা সহজসাধ্য না হয় তাহলে মসজিদের যে কোন স্থানে সলাত আদায় করে নিবে। আর ইহা একা একা সলাত আদায়ের সময় করবে, কিন্তু জামা‘আতে সলাত আদায়ের সময় প্রথম কাতারে সলাত আদায়ের জন্য সচেষ্ট হবে; কারণ, জামা‘আতের সলাতই উত্তম।
এর দলীল নাবী (সা.) এর বাণী:
خيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أوَّلُهَا
পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথম কাতার।[11]
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إلاَّ أنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاسْتَهَمُوا
লোকেরা যদি জানত যে, আযানে এবং প্রথম কাতারে কী ফযীলত আছে, অতঃপর তাতে কুর‘আ (লটারী) করা ছাড়া যদি সুযোগ না পেত তাহলে তারা অবশ্যই কুর‘আ করে তা হাসিল করার প্রয়াস চালাত।[12]
>[2]. সহীহ বুখারী ১১৯০ ও সহীহ মুসলিম ১৩৯৪, তিরমিযী ৩২৫
[3]. সহীহ: মুসনাদে আহমাদ ১৬১১৭।
[4]. সহীহ মুসলিম ১৩৯৪।
[5]. সহীহ বুখারী ১১৯৬, তিরমিযী ৩৯১৫, সহীহ মুসলিম ১৩৯১।
[6]. সহীহ: ইবনে মাজাহ ৭৭১, আবূ দাউদ ৪৬৬।
[7]. সহীহ বুখারী ৪৪৪ ও সহীহ মুসলিম ৭১৪।
[8]. সহীহ বুখারী ৪৪১৮ ও সহীহ মুসলিম ২৭৬৯।
[9]. সহীহ বুখারী ২৬০৪।
[10]. সহীহ বুখারী ১১৯৫ ও সহীহ মুসলিম ১৩৯০, তিরমিযী ৩৯১৬।
[11]. সহীহ মুসলিম ৪৪০
[12]. সহীহ বুখারী ৬১৫ ও সহীহ মুসলিম ৪৩৭
মদীনায় এসে সর্বপ্রথম মাসজিদে নাববীতে সলাত আদায়ের পর নাবী (সা.) ও তাঁর দুই সঙ্গী - খলীফা আবূ বাকর সিদ্দীক ও উমার ফারূক (রা.)-এর প্রতি সালাম পেশ করার জন্য যাবে।
(১) অতঃপর প্রথমে নাবী (সা.)-এর কবরের সামনে কবরকে সামনে করে এবং কিবলাকে পিছনে করে বলবে:
السَّلامُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
[আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্ নাবীউ, ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকাতুহু]
হে নাবী! আপনার প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং তাঁর বরকত বর্ষিত হোক।
তবে যদি আরো কিছু বাক্য অতিরিক্ত বলে, তাহলে কোন দোষ নেই, যেমন এভাবে বলা:
السَّلامُ عَلَيْكَ يَا خَلِيْلَ اللهِ وَأَمِيْنَهُ عَلَى وَحْيِهِ، وَخِيْرَتَهُ مِنْ خَلْقِهِ، أَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ، وَأَدَّيْتَ الْأَمَانَةَ، وَنَصَحْتَ الْأُمَّةَ، وَجَاهَدْتَ فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِهِ
[আসসালামু আলাইকা ইয়া খালীলাল্লাহ! ওয়া আমীনাহু আলা ওয়াহ্ইহী, ওয়া খীরাতাহু মিন খালকিহী। আশহাদু আন্নাকা ক্বদ বাল্লাগতার রিসালাতা, ওয়া আদ্দাইতাল আমানাতা, ওয়া নাসাহতাল উম্মাতা, ওয়া জাহাদতা ফিল্লাহি হাক্কা জিহাদিহ্]
হে আল্লাহর খালীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু), তাঁর ওয়াহীর আমানত রক্ষাকারী ও তাঁর সমস্ত সৃষ্টির সেরা! আপনার প্রতি সালাম, আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে, আপনি (আল্লাহর) পায়গাম পৌঁছে দিয়েছেন, আমানত যথাযথ আদায় করে দিয়েছেন, উম্মাতের প্রতি নসীহাত করেছেন এবং আল্লাহর পথে যথাযথ জিহাদ করেছেন।[1]
তবে যদি কেউ প্রথমটি পাঠ করেই ক্ষান্ত হয়, তাহলে তা ভাল। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) সালাম পাঠ করার সময় শুধুমাত্র নিম্নের অংশটুকুই বলতেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে আসতেন।
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا بَكْرٍ، السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَبَتِ
[আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ্! আস্সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর! আস্সালামু আলাইকা ইয়া আবাতি]
হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। হে আবু বাকর! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। হে আমার আব্বাজান! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।[2]
(২) তারপর আবু বাকর (রা.)-এর কবরের সামনে দাঁড়াবার জন্য ডান দিকে এক কদম এগিয়ে যাবে এবং বলবে:
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا بَكْرٍ، السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَلِيْفَةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ أُمَّتِهِ، رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ خَيْراً
আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা বাক্র! আস্সালামু আলাইকা ইয়া খলীফাতা রসূলিল্লাহী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফী উম্মাতিহি, রাযিয়াল্লাহু আনকা ওয়াজাযাকা আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খইরান।
হে আবূ বাকর! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, হে আল্লাহর রসূল-এর উম্মাতের খলীফা! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাক এবং আপনাকে মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মাতের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।[3]
(৩) তারপর উমার (রা.)-এর কবরের সামনে দাঁড়াবার জন্য ডান দিকে এক কদম এগিয়ে যাবে এবং বলবে:
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عُمَرُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ، رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ خَيْراً
[আসসালামু আলাইকা ইয়া উমার! আস্সালামু আলাইকা ইয়া আমীরাল মু‘মিনীন! রদ্বিইয়াল্লাহু আনকা ওয়াজাযাকা আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খইরান]
হে উমার! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, হে মু‘মিনদের আমীর! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাক এবং আপনাকে মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মাতের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।[4]
আর নাবী (সা.) এবং তাঁর দুই সাহাবীকে সালাম পেশ করার সময় আদব-কায়দার লক্ষ্য রেখে ধীর শব্দে সালাম পাঠ করবে। কারণ, মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ। আর বিশেষ করে মসজিদে নাববীতে এবং নাবীর পবিত্র কবরের নিকটে।
সহীহ বুখারীতে সায়িব বিন ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে দাঁড়িয়ে ছিলাম অথবা ঘুমিয়ে ছিলাম (বর্ণনাকারীর সন্দেহ)। হঠাৎ করে আমাকে একজন কংকর মারল। আমি চেয়ে দেখি যে, তিনি হলেন উমার বিন খাত্তাব। তিনি আমাকে বললেন, যাও এ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আস। তাদেরকে তাঁর নিকট ধরে নিয়ে আসলাম। তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কে? অথবা জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কোথাকার লোক? তারা বলল যে, আমরা তায়েফের অধিবাসী। তখন তিনি বললেন, তোমরা যদি মদীনার লোক হতে তাহলে তোমাদেরকে বেত্রাঘাত করে শাস্তি দিতাম। আল্লাহর রাসূল (সা.) এর মসজিদে চিৎকার করে কথা বলছ!।
রসূল (সা.) এবং তাঁর দুই সঙ্গীর কবরের নিকট দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা ও সেখানে দু‘আ করা উচিৎ নয়। ইমাম মালিক ইহা অপছন্দ করেন এবং তিনি বলেন যে, ইহা বিদআত, যা সালাফগণ করেননি। আর এ উম্মাতের শেষকালের লোকেদের সংশোধন ঐভাবেই হবে যেভাবে প্রথম যুগের মানুষের সংশোধন হয়েছে।
ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেন: ইমাম মালিক (রহঃ) - যিনি মদীনার ইমাম ছিলেন- মদীনাবাসীদের জন্য এ বিষয়টিকে অপছন্দ করেন যে, কোন ব্যক্তি মাসজিদে নাববীতে প্রবেশ করলেই নাবী (সা.)-এর কবরের নিকট হাযির হবে। কারণ, সালাফগণ (সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়িন ইযাম) এ ধরণের কাজ করতেন না। বরং তাঁরা নাবী (সা.)-এর মাসজিদে এসে আবূ বাকর, উমার, উসমান ও আলী (রা.)-এর পিছনে সলাত আদায় করতেন এবং তাঁরা সলাতের তাশাহহুদে বলতেন:
السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
[আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্ নাবীউ, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু]
হে নাবী! আপনার প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং তাঁর বরকত বর্ষিত হোক।
অতঃপর সলাত শেষ করলে তাঁরা বসে থাকতেন কিংবা মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যেতেন। কিন্তু তাঁরা সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে নাবী (সা.) এর কবরের নিকট আসতেন না। কারণ, তাঁরা ভাল করে জানতেন যে, নামাযের মধ্যে নাবী (সা.)-এর প্রতি সলাত ও সালাম পাঠ করা বেশী পরিপূর্ণ ও উত্তম।
ইমাম ইবনু তায়মিয়্যা (রহঃ) আরো বলেন যে, নাবী (সা.)-এর সাহাবীগণ শ্রেষ্ঠ যুগের মানুষ ছিলেন, তাঁর আদর্শ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের সর্বাধিক অনুগত ছিলেন।
(আর ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ্ আল উসায়মীন (রহঃ) বলেন:) আমি বলব যে, সাহাবীগণ নাবী (সা.) এর সম্মান ও ভালবাসায় সর্বাধিক মযবুত ছিলেন। তাই তাঁরা মাসজিদে নাববীতে প্রবেশ করলে তাঁদের কেউ কবরের নিকট যেতেন না, তাঁরা না হুজরার ভিতর দিয়ে যেতেন আর না তার বাইরে দিয়ে। অথচ তাঁদের আমলে মা আয়িশা (রা.)-এর হুজরার দরজা দিয়ে সহজে প্রবেশ করা যেত। তাঁরা এ সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কবরের নিকট ঢুঁকতেন না। না ঢুঁকতেন সালাম করার উদ্দেশ্যে, না দরূদ পাঠের উদ্দেশ্যে, না নিজেদের জন্যে দু‘আ করার উদ্দেশ্যে, আর না কোন হাদীস বা মাস‘আলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে।
আর সাহাবীগণ কেউ তাঁর কবরের নিকট এসে যেসব বিষয়ে মতোবিরোধ হয় সে সম্পর্কে কোন সমাধানও চাইতেন না। অনুরূপ তাঁদের কারো ব্যাপারে শয়তান এ সাহসও পায়নি যে, তাঁদেরকে কুমন্ত্রণা দিবে যে, নাবী (সা.) এর নিকট গিয়ে বৃষ্টি কামনা কর কিংবা তিনি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুক অথবা ক্ষমা প্রর্থনা করুক। যেমন নাবী (সা.) এর জীবদ্দ্যশায় সাহাবীগণ তাঁর নিকট গিয়ে বৃষ্টির জন্য বা বিজয়ের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আর দরখাস্ত করতেন।
ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রহঃ) আরো বলেন সাহাবীগণ নাবী (সা.) এর তিরোধানের পরে নিজেদের জন্য দু‘আ করতে চাইলে কিবলামূখী হয়ে মাসজিদে নাববীতে তেমনি দু‘আ করতেন যেমন তাঁর জীবদ্দ্যশায় দু‘আ করতেন। তাঁরা কেউ দু‘আর জন্য হুজরার নিকটে আসতেন না এবং হুজরার ভিতরেও ঢুঁকতেন না।
ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রহঃ) আরো বলেন, আর সাহাবীগণ খোলাফায়ে রাশিদীনগণের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বা অন্যান্য কাজে সফর থেকে আসতেন, অতঃপর মসজিদে নাববীতে সলাত আদায় করতেন এবং সলাতের ভিতরে ও মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নাবী (সা.) এর প্রতি সালাম পাঠ করতেন। কিন্তু তাঁরা কেউ নাবী (সা.) এর কবরের নিকট আসতেন না; কারণ, তাঁরা জানতেন যে, নাবী (সা.) এধরণের কাজের নির্দেশ দেননি।
তবে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) সফর থেকে ফিরে আসলে নাবী (সা.) এর কবরের কাছে এসে নাবী (সা.) এবং তাঁর দুই সঙ্গীর প্রতি সালাম পাঠ করতেন।[5] আর হতে পারে যে, আব্দুল্লাহ বিন উমার ছাড়াও অন্য কোন সাহাবী এ আমল করতেন। তবে অধিকাংশ সাহাবীগণ আব্দুল্লাহ বিন উমারের মত এ কাজটি করতেন না।
আর কোন ব্যক্তি যেন হুজরার দেয়ালে হাত না বুলায় এবং তাতে চুম্বন না দেয়; কারণ, ইহা যদি আল্লাহর ইবাদাত এবং রসূলের সম্মানার্থে করে তাহলে তা হবে বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত গুমরাহী কাজ। অথচ মুআবিয়াহ্ (রা.) কা‘বা ঘরের রুকনে শামী ও রুকনে ইরাকী স্পর্শ করলে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) তার প্রতিবাদ করেন। অথচ এধরণের কাজ রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের ক্ষেত্রে শরিয়াত সম্মত। আর মনে রাখবেন যে, আল্লাহর রসূলের সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁর ভালবাসা দেয়ালে হাত বুলানোতে নেই, অথচ এ দেয়াল তাঁর অনেক যুগ পরে তৈরী করা হয়েছে। আসলে তাঁর ভালবাসা এবং সম্মান প্রদর্শন নাবী (সা.) এর সার্বিক ক্ষেত্রে অনুসরণ করা এবং তাঁর আনীত দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার না করা যার তিনি নির্দেশ দেননি। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নাবী! বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[6]
আর যদি হুজরার দেয়ালে হাত বুলানো এবং তাতে চুম্বন দেয়া শুধু মাত্র আবেগ বা উদ্দেশ্য বিহীন হয় তাহলে ইহা নির্বুদ্ধিতা এবং গুমরাহী, যাতে কোন ফায়দা নেই। বরং তাতে ক্ষতি এবং অজ্ঞ লোকদের জন্য প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর যিয়ারতে গিয়ে রসূল (সা.)-কে কোন উপকার হাসিলের কিংবা ক্ষতি প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে আহবান করবে না। কারণ, ইহা শির্ক। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। যারা অহংকারবশতঃ আমার ইবাদাত করে না, নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।[7] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَداً
আর মসজিদগুলো কেবলমাত্র আল্লাহরই জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য আর কাউকে ডেক না।[8]
আর আল্লাহ পাক তাঁর নাবী (সা.)-কে উম্মাতের উদ্দেশ্যে এ ঘোষণার নির্দেশ দেন যে, তাদের জানিয়ে দাও, আমি নিজের উপকার ও অপকারেরও ক্ষমতা রাখি না। তাই ইরশাদ হচ্ছে:
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعاً وَلاَ ضَرّاً إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَاْ إِلاَّ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
হে নাবী! বল, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তাহলে নিজের জন্য অনেক বেশি ফায়দা হাসিল করে নিতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। মু’মিন সম্প্রদায়ের প্রতি আমি সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া অন্য কিছু নই।[9]
আর তিনি যদি নিজের জন্য ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা না রাখেন, তাহলে অন্যের ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা অবশ্যই রাখেন না। তাই আল্লাহ পাক নাবী (সা.)-কে ঘোষণা করার নির্দেশ দেন যে, তিনি অন্য লোকের জন্যও ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা রাখেন না। ইরশাদ হচ্ছে:
قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرّاً وَلَا رَشَداً
হে নাবী! বল, আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি না।[10] আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হলে:
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
আর তুমি সতর্ক কর তোমার নিকটাত্মীয় স্বজনদের।[11] রসূল (সা.) সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে বলেন:
يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ يَا صَفِيَّةُ بِنْتَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لَا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنْ اللَّهِ شَيْئًا سَلُونِي مِنْ مَالِي مَا شِئْتُمْ
হে মুহাম্মাদ-এর কন্যা ফাতিমা, হে আব্দুল মুত্তালিবের মেয়ে সাফিয়্যা, হে আব্দুল মুত্তলিবের সন্তানরা! আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য কোন কিছুর মালিক নই। তবে আমার ধন- সম্পদ হতে তোমাদের যা ইচ্ছে আমার নিকট চাইতে পার।[12]
আর নাবী (সা.) (মৃত্যুর পরে) এর নিকট দরখাস্ত করাও যাবে না যে, আমার জন্য দু‘আ করে দেন কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কারণ, ইহা তাঁর মৃত্যুর সাথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
যার প্রমাণ নাবী (সা.)-এর এই বাণী:
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ
আদম সন্তান মারা গেলে তাঁর কর্ম বন্ধ হয়ে যায়।[13]
আর আল্লাহর এ বাণীর সম্পর্ক তাঁর জীবদ্দশার সাথে। আল্লাহ পাক বলেন:
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّاباً رَّحِيماً
যখন তারা নিজেদের উপর যুলুম করেছিল, তখন যদি তোমার নিকট চলে আসত, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হতো এবং রসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত, তাহলে তারা আল্লাহকে নিঃসন্দেহে তাওবাহ কবুলকারী ও পরম দয়ালুরূপে পেত।[14]
সুতরাং ইহাতে তাঁর মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলার কোন দলীল নেই। কারণ, আল্লাহ বলেন, (إِذ ظَّلَمُواْ) ‘ইয্ যালামূ’ অর্থাৎ ‘যখন তারা যুলুম করেছিল’, আল্লাহ (إِذَا ظَلَمُواْ) ‘ইযা যালামূ’ বলেননি। আর মনে রাখবেন যে, ‘ইয্’ শব্দটি অতীত কাল বুঝায়, পক্ষান্তরে ‘ইযা’ শব্দটি ভবিষ্যৎ কাল বুঝায়। তাই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল নাবী (সা.) এর যুগের একটি সম্প্রদায় সম্পর্কে। পরবর্তীকালের লোকদের জন্য এ আয়াত প্রযোজ্য নয়। অতএব নাবী (সা.) এবং তাঁর দুই সঙ্গীর কবর যিয়ারত এবং তাঁদের প্রতি সালাম পেশ করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত নিয়ম-নীতি অবলম্বণ করা উচিত।
তারপর বাক্বী‘ কবরস্থান যিয়ারত করা উচিত। সেখানে যে সব সাহাবী এবং তাবিঈন এর কবর রয়েছে তাঁদের প্রতি সালাম পাঠ করবে।
যেমন, খলীফা রাশিদীন উসমান বিন আফ্ফান (রা.)। তাঁর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে সালাম বলবে:
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عُثْمَانُ بن عفان ، السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ، رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أُمَّةِ مُحَمَّدِ خَيْراً
[আস্সালামু আলাইকা ইয়া উসমান বিন আফ্ফান! আস্সালামু আলাইকা ইয়া আমীরাল মু‘মিনীন! রাযিয়াল্লাহু আনকা ওয়াজাযাকা আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খায়রান]
হে উসমান বিন আফফান! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, হে মু‘মিনদের আমীর! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাক এবং আপনাকে মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মাতের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।[15]
আর কবরস্থানে প্রবেশের সময় রসূল (সা.) নিজ উম্মাতকে যে দু‘আ শিখিয়েছেন তা পাঠ করবে।
যেমন বুরাইদাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (সা.) সাহাবীগণকে কবরস্থানে যাওয়ার জন্য এ দু‘আ শিখাতেন:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا، إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
[আস্সালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইন্না ইন্ শা-আল্লাহু লালাহিকূন। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ্]
হে ঈমানদার মুসলিম কবরবাসীরা! আপনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আর আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের সাথে অবশ্যই মিলিত হব। আমি আল্লাহর নিকট আমাদের ও আপনাদের জন্য নিরাপত্তা কামনা করি।[16]
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
[আস্সালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইন্না ইন্ শা-আল্লাহু বিকুম লাহিকূন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ্]
হে ঈমানদার মুসলিম কবরবাসীরা! আপনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আর আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের সাথে অবশ্যই মিলিত হব। আল্লাহর নিকট আমাদের ও আপনাদের জন্য নিরাপত্তা কামনা করি।[17]
আর এ মর্মে আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী (সা.) রাতের শেষাংশে বাক্বী‘ কবরস্থানে গিয়ে এ দু‘আ পাঠ করতেন:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ غَدًا، مُؤَجَّلُونَ، وَإِنَّا، إِنْ شَاءَ اللهُ، بِكُمْ لَاحِقُونَ، اللهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ
[আস্সালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিন মু’মিনীন, ওয়া আতাকুম মা তুআদূনা গাদান মু’আজ্জালূন, ওয়া ইন্না ইন্ শাআল্লাহু বিকুম লাহিকূন, আল্লাহুম্মাগফির্ লি-আহলি বাকীইল গারকাদ্]
হে ঈমানদার সম্প্রদায়ের কবরবাসীরা! আপনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আগামিতে প্রতিশ্রুত বস্ত্ত আপনাদের নিকট এসে গিয়েছে। আর আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ্! বাকী’উল গারকাদের অধিবাসীদের (কবরবাসী) ক্ষমা করে দাও।[18]
আর কোন ব্যক্তি যদি উহুদে গিয়ে শহীদগণের যিয়ারত করে তাঁদের প্রতি সালাম পাঠ করে এবং তাঁদের জন্য দু‘আ করে, আর উহদ যুদ্ধে যা ঘটেছে তার রহস্য ও গুঢ় তত্ত্বসমূহ নিয়ে চিন্তা করে এবং তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে তাহলে তা ভাল। আর মাসজিদে কুবা গিয়ে সেখানে সলাত আদায় করবে। কারণ, এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ
প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত।[19]
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সা.) প্রত্যেক শনিবার কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো বাহনে চেপে মসজিদে কুবা যেতেন।[20]
আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.)-ও এ আমলটি করতেন। অন্য একটি বর্ণনায় আছে, সেখানে গিয়ে দু’রাক’আত সলাত আদায় করতেন।[21]
আর ইমাম নাসাঈ সাহ্ল বিন হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সা.) বলেছেন:
مَنْ خَرَجَ حَتَّى يَأْتِيَ هَذَا الْمَسْجِدَ مَسْجِد قُبَاء فَصَلَّى فِيهِ كَانَ لَهُ عَدْلُ عُمْرَة
যে ব্যক্তি এই মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে কুবায় আগমন করবে, অতঃপর সেখানে সলাত আদায় করবে, তার উমরা বরাবর নেকী হবে।[22]
আর যখন (যে কোন সফর থেকে) নিজ শহরে ফিরে আসবে তখন নিম্নের দু‘আটি বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত পাঠ করতে থাকবে। কারণ, নাবী (সা.) এভাবেই করতেন:
آيِبُونَ ، تَائِبُونَ ، عَابِدُونَ ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ
[আয়িবূনা, তায়িবূনা, আবিদূনা, লি রব্বিনা হা-মিদূন]
আমরা ফিরে আসছি, আমরা তাওবাহ করছি, আমরা ইবাদত করছি এবং আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসা করছি।[23]
আর মহান আল্লাহ যে হাজ্জ পালন এবং মদীনা যিয়ারত সহজ করে দিয়েছেন এর জন্য হাজীগণ যেন আল্লাহ পাকের প্রশংসা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন এবং মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের মাধ্যমে যেন তাঁর দ্বীনের উপর অটল থাকেন, যাতে করে আল্লাহভীরু সংযত এবং তাঁর নিরাপদ বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
﴿أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ ۞ الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ۞ لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴾
জেনে রেখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান আনে আর তাক্বওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য সুসংবাদ দুনিয়াতে আর আখিরাতেও। আল্লাহর কথার কোন হেরফের হয় না, এটাই হল বিরাট সাফল্য।[24]
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। সলাত ও সালাম হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদের প্রতি, তাঁর বংশধরের প্রতি এবং সমস্ত সাহাবীগণের প্রতি।
[2]. সহীহ: সুনানুল কুবরা বাইহাকী ১০২৭১।
[3]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল- উসাইমীন।
[4]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল- উসাইমীন।
[5]. সহীহ: সুনানুল কুবরা বাইহাকী ১০২৭১।
[6]. সূরা আল-ইমরান ৩ঃ ৩১
[7]. সূরাহ্ আল মু’মিনঃ ৬০
[8]. সূরাহ্ আল-জিন্নঃ ১৮
[9]. সূরাহ্ আল-আ‘রাফঃ ১৮৮
[10]. সূরা জিন্নঃ ২১
[11]. সূরাহ্ আশ্-শু’আরাঃ ২১৪
[12]. সহীহ মুসলিম ২০৫।
[13]. সহীহ মুসলিম ১৬৩১।
[14]. সূরা আন্ নিসা ৪ঃ ৬৪
[15]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল- উসাইমীন।
[16]. সহীহ মুসলিম ৯৭৫।
[17]. সহীহ: ইবনে মাজাহ ১৫৪৭।
[18]. সহীহ মুসলিম ৯৭৪।
[19]. সূরা আত্-তাওবা ৯ঃ ১০৮
[20]. সহীহ বুখারী ১১৯৩।
[21]. সহীহ বুখারী ১১৯১, ১১৯৪।
[22]. সহীহ: নাসাঈ ৬৯৯।
[23]. সহীহ মুসলিম ১৩৪৫।
[24]. সূরা ইউনুসঃ ৬২-৬৪