সফরের সংজ্ঞা: পরিবার ও জন্মভূমী ত্যাগের নাম হচ্ছে সফর।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: সফর অনেক রকমের উদ্দেশ্যে হতে পারে, সে উদ্দেশ্য দ্বীনের (ইসলামের) জন্যও হতে পারে এবং দুনিয়াবী সংক্রান্তও হতে পারে।
সফরের হুকুম বা বিধান: যে উদ্দেশ্যে সফর করা হয় তার যা হুকুম (বিধান) তাই হবে সেই সফরের হুকুম।
- অতএব সফর যদি কোন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে শুরু করা হয় তবে উক্ত সফরও ইবাদাত বলে গণ্য হবে। যেমন, হাজ্জ, উমরা ও জিহাদের সফর।
- আর যদি সফর কোন জায়েয (বৈধ) কাজের উদ্দেশ্যে শুরু করা হয় তবে উক্ত সফরও জায়েয বলে গণ্য হবে। যেমন, বৈধ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা।
- পক্ষান্তরে যদি কোন হারাম কাজের উদ্দেশ্যে সফর করা হয় তাহলে সফরের হুকুমও (বিধান) হারাম হবে। যেমন, কোন পাপ কাজ বা ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সফর করা।
আর যে ব্যক্তি হাজ্জ বা অন্য কোন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে সফর করবে তার জন্য নিম্নের বিষয়সমূহের প্রতি গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক:
১। মহান আল্লাহর জন্য নিয়্যাতকে বিশুদ্ধ/নিখুঁত করা:
আর তা এভাবে যে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের সৎ উদ্দেশ্য রাখবে। যাতে করে তার যাবতীয় কথা, কাজ এবং খরচ-খরচা তার জন্য মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের উপায় হতে পারে। তার নেকী বৃদ্ধি পাবে, গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং তার মর্যাদা সুউচ্চ হবে।
নাবী (মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ
তুমি যে কোন খরচে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা কর তাহলে তাতে তোমাকে তার নেকী দেয়া হবে, এমন কি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে তাতেও নেকী রয়েছে (ছহীহ বুখারী হা/১২৯৫, ছহীহ মুসলিম হা/১৬২৮)।
২। আল্লাহ যেসব সৎ কাজ ফরয করেছেন তা পালন করার এবং যে সব কথা ও কাজ হারাম করেছেন তা হতে বিরত থাকার জন্য আগ্রহী হওয়া।
- সুতরাং যথা সময়ে জামা‘আত সহকারে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত কায়েম করায়, নিজ সফর সঙ্গীদের কল্যাণ কামনায়, সৎ কাজের উপদেশ দানে ও অন্যায় কাজে বাধা দানে এবং কৌশলের সাথে ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে আহবান করায় যত্নবান হবে।
- অনুরূপ হারাম কথা ও হারাম কাজ হতে বিরত থাকায় তৎপর হবে। সুতরাং মিথ্যা, গীবত (পরনিন্দা), চুগোলখোরী, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্যান্য আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকবে।
৩। উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হবে। যেমন: দৈহিক শ্রম, জ্ঞান ও অর্থ দ্বারা দানশীলতার প্রমাণ পেশ করবে।
- তাই সাহায্য-সহযোগিতার মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে সাহায্য করবে,
- জ্ঞানপিপাষু ও শিক্ষার মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে জ্ঞান দান করবে এবং
- নিজ ধন-সম্পদ নিজ প্রয়োজনে এবং মুসলিম ভাইদের প্রয়োজনে ব্যয় করে দানশীলতার বাস্তব রূপ দান করবে।
- আর সফরে বের হওয়ার পূর্বে কিছুটা বেশী করে টাকা-পয়সা এবং সফর সম্বল নিয়ে নেয়া উচিৎ; কারণ, হঠাৎ তার প্রয়োজন হতে পারে অথবা অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
- আর সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় যেন আপনি হাঁসিমুখে থাকেন, মনে উদারতা রাখেন, সন্তুষ্ট চিত্তে সময় কাটান, নিজ সাথী-সঙ্গীদেরকে খুশী রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং আপনি যেন তাদেরকে ভালবাসেন যাতে করে তারাও আপনাকে ভালবাসে। আর যদি সাথী-সঙ্গীদের পক্ষ হতে আপনার সাথে কোন রকম দুর্ব্যবহার করা হয় বা আপনার মতের উল্টো কাজ হয় তাহলে তাতে ধৈর্য ধারণ করা এবং ভাল পন্থায় তার সমাধান করা আবশ্যক। যাতে করে আপনি তাদের মাঝে মান সম্মান নিয়ে চলতে পারেন এবং তাদের মন জয় করতে সক্ষম হন।
৪। সফরের শুরুতে ও সফরকালীন যে সব দু‘আ-যিকির পাঠ করা নাবী (সা.) হতে প্রমাণিত, তার প্রতি আমল করবেন।
- যার একটি হচ্ছে যানবাহনে পা রেখে (بِسْمِ الله) বিসমিল্লাহ পাঠ করবে।
- যানবাহনে ভালভাবে বসে আল্লাহ পাকের নিয়ামত স্মরণ করবে যে, তিনি এ বাহন আমার জন্য সহজলভ্য করেছেন। অতঃপর নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে:
اللهُ أكْبَر، اللهُ أكْبَر، اللهُ أكْبَر، سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ . اللّهُمَّ إنا نسألكَ في سفرنا هذا البرّ والتَّقوى ، ومنَ العملِ ما ترضى ، اللَّهُمَّ هَوِّن عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا ، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ . اللَّهُمَّ أنْتَ الصَّاحِبُ في السَّفَرِ ، والخَلِيفَةُ في الأهْلِ . اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ وَسُوءِ المُنْقَلَبِ في المالِ وَالأَهْلِ
[আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হাযা, ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুন ক্ব-লিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকা ফী সাফারিনা হাযাল বিররা ওয়াত্তাক্বওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারযা, আল্লাহুম্মা হাওয়িন আলাইনা সাফারানা হাযা, ওয়াত্য়ি আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সাহিবু ফিস্সাফারি, ওয়াল খলীফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন ওয়া-সাইস্ সাফারি, ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি, ওয়া সুইল মুনক্বালাবি ফিল মালি ওয়াল আহ্ল]
আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আমি পবিত্রতা ঘোষনা করি তাঁর যিনি, এগুলোকে আমাদের (ব্যবহারের) জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অথচ আমরা এগুলোকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমরা আমাদের এই সফরে আপনার নিকট সৎ কর্ম ও পাপমূক্ত জীবন কামনা করি এবং এমন কাজ-কর্ম কামনা করি যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দাও এবং তার দূরত্ব সঙ্কুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি সফরের সঙ্গী এবং পরিবারে স্থলাভিসিক্ত। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সফরের কষ্ট হতে, খারাপ দৃশ্য দর্শন হতে এবং ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছি (ছহীহ মুসলিম হা/১৩৪২, ছহীহ: আবূ দাউদ হা/২৫৯৯, মুসনাদে আহমাদ হা/৬৩৭৪।)।
- আর কোন উঁচু জায়গায় উঠার সময় তাকবীর (اَللهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে এবং কোন নীচু জায়গায় অবতরণের সময় তাসবীহ (سُبْحَانَ اللهِ সুবহানাল্লাহ) পাঠ করবেন (ছহীহ বুখারী হা/২৯৯৩, সুনানে দারিমী হা/২৭১৬, সুনানুল কুবরা বাইহাকী হা/১০৩৬)।
- আর কোন স্থানে অবস্থানের সময় বলবে:
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
[আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তা-ম্মা-তি মিন শার্রি মা খলাক্বা]
আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ বাণী দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করছি তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট হতে (ছহীহ মুসলিম হা/২৭০৮, সুনানে দারিমী হা/২৭২২, ইবনে মাজাহ হা/৩৫৪৭, তিরমিযী হা/৩৪৩৭)।
এ দু‘আ পাঠ করলে অন্যত্র না যাওয়া পর্যন্ত কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।
মুসাফিরের প্রতি সময়মত জামা‘আত সহকারে সলাত সম্পাদন করা অনুরূপ ফরয, যেমন মুক্বীম অবস্থায় জামা‘আতে সলাত আদায় করা ফরয।
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইরশাদ করেন:
﴿وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ﴾ النساء102
আর যখন তুমি মু’মিনদের মাঝে অবস্থান করবে ও তাদের সঙ্গে সলাত কায়েম করবে তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং সশস্ত্র থাকে, তাদের সাজদাহ করা হলে তারা যেন তোমাদের পশ্চাতে অবস্থান করে এবং যে দলটি সলাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সঙ্গে সলাত আদায় করে এবং সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে।[1]
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা যুদ্ধ অবস্থায় ভয় থাকা সত্ত্বেও উভয় দলের উপর জামা‘আত সহকারে সলাত আদায় করা ফরয করেছেন। সুতরাং শান্তি ও নিরাপত্তার অবস্থায় জামা‘আতে সলাত আদায় করা আরো বেশী ফরয। আর আল্লাহর রসূল (সা.) ও তাঁর সহচরগণ বাড়িতে মুক্বীম অবস্থায় এবং সফরে সর্বদা জামা‘আত সহকারে সলাত আদায় করতেন। এমনকি প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা.) বলেছেন:
وَلَقَدْ رَأيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤتَى بهِ ، يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ في الصَّفِّ
আমরা নিজেদেরকে (সাহাবীগণকে) দেখেছি যে, (তাঁরা সকলে জামা‘আতে সলাত আদায় করতেন,) জামা‘আত থেকে পিছনে থাকত একমাত্র মুনাফিক্ব (কপট ব্যক্তি) যার কপটতা ছিল সর্বজন বিদিত। আর এমনও কিছু মানুষ ছিল যাদেরকে দু‘জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে (বাড়ি থেকে মসজিদে) নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করানো হতো।[2]
আর উযূ ও পবিত্রতার ক্ষেত্রে যত্নবান হবে। তাই ছোট নাপাকী দূরীকরণের জন্য উযূ করবে; যেমন, পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গত হওয়া এবং গভীর নিদ্রা।
আর বড় নাপাকী দূরীকরণের জন্য গোসল করবে। যেমন, বীর্যপাত বা সহবাস। আর যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা যদি পানির পরিমাণ কম থাকে যা পানাহরের ক্ষেত্রে প্রয়োজন, তাহলে তায়াম্মুম করবে।
কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইরশাদ করেছেন:
﴿وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيداً طَيِّباً فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾ المائدة-6
আর যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি মলত্যাগ করে আসে কিংবা যদি তোমরা নারীদের সঙ্গে সঙ্গত হও আর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে, তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা চাপিয়ে দিতে চান না, তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান আর তোমাদের প্রতি তাঁর নি’আমাত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[3]
উযূ এবং গোসলের পদ্ধতি তো সকলের জানা। আর তায়াম্মুমের পদ্ধতি হচ্ছে যে, উভয় হাত মাটিতে একবার মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে।
যেমন, নাবী (সা.) আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) কে বললেন: তোমার জন্য মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করাই যথেষ্ট হবে।[4]
অপর একটি বর্ণনায় আছে: নাবী (সা.) নিজ হাত মাটিতে মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও নিজ হস্তদ্বয় মাসাহ করলেন।[5]
আর মনে রাখবে যে, তায়াম্মুমের পবিত্রতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী পবিত্রতা। সুতরাং পানি পেলেই তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে এবং পানি ব্যবহার করা ফরয হয়ে যাবে।
অতএব বড় অপবিত্রতার ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি তায়ম্মুম করার পর পানি পেলেই তার প্রতি তার অপবিত্রতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গোসল করা ফরয হবে।
অনুরূপ মলত্যাগ করার পর তায়াম্মুম করে পবিত্রতা হাসিল করার পর পানি পেলে ছোট নাপাকী (অপবিত্রতা) দূরীকরণের উদ্দেশ্যে উযূ করা ফরয হয়ে পড়বে। একটি হাদীসে এসেছে:
إِنَّ الصَّعِيدَ الطَّيِّبَ طَهُورُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدْ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِينَ فَإِذَا وَجَدَ الْمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ
নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলিমের জন্য পবিত্রতার উপায়, যদিও সে ব্যক্তি দশ বছর ধরে পানি না পায়। অতঃপর পানি পেলে নিজ শরীরকে পানি স্পর্শ করাবে (উযু ফরয থাকলে উযূ করবে আর গোসল ফরয থাকলে গোসল করবে) ইহা তার জন্য কল্যাণকর।[6]
[2]. সহীহ মুসলিম ৬৫৪।
[3]. সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫:৬
[4]. সহীহ বুখারী ৩৪১।
[5]. সহীহ বুখারী ৩৪৩।
[6]. মুসনাদ আহমাদ, আবূ দাউদ ৩৫৭ ও তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ, দেখুন, ইরওয়া হাঃ নং ১৫৩, মিশকাতুল মাসাবিহ ৫৩০।
মুসাফিরের জন্য সুন্নাত হলো, চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত আদায় করা।
কারণ, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সা.)-এর সফর সঙ্গী হয়েছি, তিনি (চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি) কখনও দুই রাক‘আতের বেশী পড়তেন না। আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রা.) ও তাই করতেন।
মা আয়িশাহ (রা.) হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সর্ব প্রথম সলাত দুই দুই রাক‘আত ফরয করা হয়। অতঃপর নাবী (সা.) মদীনায় হিজরাত করলে সেখানে চার চার রাক‘আত ফরয করা হয়, তবে সফরের সলাত আগের মতই (দুই দুই রাকাআত) বহাল রাখা হয়।[1]
তাই মুসাফিরের জন্য সুন্নাত হচ্ছে চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত আদায় করা। আর এর সময় হচ্ছে মুসাফিরের নিজ শহর থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত। তার এই সফরের সময়সীমা দীর্ঘ হোক কিংবা অল্প হোক।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত যে নাবী (সা.) মাক্কায় উনিশদিন পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন যাতে তিনি চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত আদায় করেছিলেন।[2]
তবে কোন মুসাফির যদি এমন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করে যে চার রাক‘আত পড়েন, সে ইমামকে সলাতের শুরু থেকে কিংবা সলাতের মধ্যে যে অবস্থায় পাবে, সর্বাবস্থায় মুসাফির মুকতাদীকেও চার রাক‘আত পড়া আবশ্যক।
কেননা নাবী (সা.) বলেছেন:
(إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلَا تَخْتَلِفُوا عَلَيْه)
ইমাম এ জন্য বানানো হয়েছে যেন তাঁর অনুসরণ করা হয়, সুতরাং তাঁর বিরোধিতা করবে না।[3] নাবী (সা.) আরো বলেন:
(فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا)
যতটা ইমামের সঙ্গে পেলে তা আদায় কর আর যা ছুটে যায় তা পুরো করে নাও।[4]
প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, মুসাফির একা সলাত আদায় করলে দু‘রাকাআত পড়ে, আর যদি কোন মুক্বীম ইমামের পিছনে সলাত আদায় করে তবে চার রাক‘আত পড়ে এর কারণ কি? তখন তিনি উত্তরে বলেন, ইহাই হচ্ছে রসূল (সা.) এর সুন্নাত।
আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) সফরে যখন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করতেন তখন চার রাক‘আত পড়তেন। আর যখন একা সলাত আদায় করতেন তখন চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত সলাত আদায় করতেন।[5]
[2]. সহীহ বুখারী ১০৮০
[3]. সহীহ বুখারী ৩৭৮ ও সহীহ মুসলিম ৪১১
[4]. সহীহ বুখারী ৬৩৬ ও সহীহ মুসলিম ৬০২
[5]. সহীহ মুসলিম ৬৯৪।
যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশার সলাত একত্রে পড়ার প্রয়োজন হলে মুসাফিরের জন্য ইহা সুন্নাত। বিশেষ করে যখন সফররত অবস্থায় থাকবে। সুতরাং দুই ওয়াক্ত সলাত একত্রিত করার ক্ষেত্রে সলাতের প্রথম ওয়াক্ত বা শেষ ওয়াক্তের মধ্যে যেটা সহজ হয় তাই করবে।
আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সা.) যদি সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে সফর শুরু করতেন তাহলে যুহর সলাতকে আসর পর্যন্ত বিলম্ব করে কোন স্থানে অবতরণ করতেন। অতঃপর দুই ওয়াক্ত জমা করে সলাত আদায় করতেন।[1] আর ভ্রমণ করার পূর্বে সূর্য ঢলে গেলে যুহর সলাত আদায় করে বাহনে আরোহণ করতেন।[2]
আর সুনানু বায়হাক্বীতে রয়েছে যে, আল্লাহর রসূল (সা.) এর সফর অবস্থায় সূর্য ঢলে পড়লে যুহর ও আসর একত্রিত করে আদায় করে নিতেন।
আর যদি মুসাফিরের দুই ওয়াক্ত সলাত জমা করে আদায় করার কোন প্রয়োজন না থাকে তাহলে জমা করবে না, যেমন কোন ব্যক্তি যদি এমন স্থানে অবস্থান করে থাকে যেখান থেকে পরবর্তী সলাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার প্রস্থান করার ইচ্ছা নেই তাহলে দুই ওয়াক্ত সলাত একত্রিত না করাই উত্তম; কারণ, এর কোন প্রয়োজন নেই। এ জন্যই নাবী (সা.) যখন বিদায় হাজ্জে মিনায় অবস্থান করেছিলেন তখন দু’ওয়াক্তের সলাত একত্রিত করে আদায় করেননি। কেননা এর কোন প্রয়োজন ছিল না।
[2]. সহীহ বুখারী ১১১২
মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম ব্যক্তির মতই সুন্নাত ও নফল সলাত আদায় করবে। যেমন, যুহার (চাশত) সলাত, তাহাজ্জুদ সলাত, বিতর সলাত, ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত ও অন্যন্য নফল সলাত আদায় করবে।
তবে যুহর, মাগরিব ও ইশার সুন্নাতে রাতিবা না পড়াই হচ্ছে সুন্নাত। মহান আল্লাহ পাক একমাত্র সর্বাধিক জ্ঞাত।