প্রশ্ন ১২: যদি কোন বহিরাগত হাজী হাজ্জ করবে না বলে সরকারকে প্রতারিত করার উদ্দেশে সাধারণ পোশাকে মক্কায় প্রবেশ করে। তারপর মক্কা থেকেই ইহরাম করে হাজ্জ সম্পাদন করে তাহলে তার হাজ্জ করা জায়েয হবে কি? আর এর জন্য তার প্রতি কি করা আবশ্যক।

উত্তর ১২: তার এভাবে সম্পাদিত হাজ্জ শুদ্ধ হবে, কিন্তু তার এই কর্ম দু’টি কারণে হারাম:

প্রথম কারণ: ইচ্ছাকৃত মীক্বাত থেকে ইহরাম না করার কারণে সে মহান আল্লাহ পাকের নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করল।

দ্বিতীয় কারণ: সে সরকারী আইন বিরোধী কাজ করল। অথচ আমাদেরকে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ না হলে সর্বক্ষেত্রে সরকারী আইন মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

তাই এই ব্যক্তিকে এরূপ গোনাহ থেকে মহান আল্লাহর নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। আর সে যেন একটি কুরবানী মক্কায় যবহ করে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দেয়; কারণ, মীক্বাত থেকে ইহরাম করার ওযাজিব পরিত্যাগ করেছে। যেমন কিছু আলিম বলেছেন যে, যে ব্যক্তি হাজ্জ কিংবা উমরার কোন একটি ওয়াজিব ত্যাগ করবে তার প্রতি একটি ফিদয়া (কুরবানী) ওয়াজিব হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ১৩: আমি শুনেছি যে, তামাত্তু হাজ্জ সম্পাদনকারী ব্যক্তি যদি (হাজ্জের মাসে উমরা করার পর) নিজ দেশে ফিরে চলে আসে তাহলে তার তামাত্তু থাকে না। তাহলে কি তার জন্য ঐ বছরে বিনা কুরবানীতে হাজ্জ মুফরাদ করা জায়েয হবে?

উত্তর ১৩: হ্যাঁ, কোন তামাত্তু হাজ্জ সম্পাদনকারী ব্যক্তি যদি (হাজ্জের মাসে উমরা করার পর) নিজ দেশে ফিরে যায়, অতঃপর নিজ দেশ থেকে পুনরায় হাজ্জের সফর করে তাহলে সে হাজ্জ ইফরাদকারী বলে গণ্য হবে। কারণ, তার নিজ পরিবারে চলে আসার কারণে উমরা ও হাজ্জের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। অতএব তার পুনরায় সফর করার অর্থ হচ্ছে হাজ্জের উদ্দেশে সফর করা। এঅবস্থায় তার হাজ্জ হাজ্জে ইফরাদ বলে গণ্য হবে; যার ফলে তার প্রতি তামাত্তু হাজ্জের কুরবানী ওয়াজিব হবে না। তবে সে যদি এই কাজটি ওয়াজিব কুরবানী থেকে বাঁচার হিল্লা-বাহানা হিসেবে করে তাহলে তার কুরবানী মাফ হবে না। কারণ, কোন ওয়াজিব থেকে বাঁচার জন্য হিল্লা-বাহানা করলে তা মাফ হয় না। অনুরূপ কেউ যদি কোন হারাম কাজ করার জন্য হিল্লা-বাহানা করে (যেমন, তিন তালাকের পরে হারাম স্ত্রীকে হালাল করার জন্য হিল্লা বা হীলা করা) তাহলে তা হালাল হবে না।

প্রশ্ন ১৪: যদি কোন মুসলিম হাজ্জের মাস আসার পূর্বেই হাজ্জের নিয়তে মক্কায় আসে, তারপর উমরা করে হাজ্জ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করে হাজ্জ সম্পাদন করে, তাহলে তার হাজ্জ হাজ্জে তামাত্তু বলে গণ্য হবে, না কি হাজ্জে মুফরাদ বলে গণ্য হবে?

উত্তর ১৪: এঅবস্থায় তার হাজ্জ হাজ্জে মুফরাদ বলে গণ্য হবে। কারণ, হাজ্জের মাসগুলিতে উমরার ইহরাম করে তা সমাপ্ত করে সেই বছরেই হাজ্জ করলে তাকে তামাত্তু হাজ্জ বলা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি হাজ্জের মাস আসার পূর্বেই মক্কায় আসে, তারপর উমরা করে হালাল হয়ে হাজ্জ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করে হাজ্জ সম্পাদন করে, তাহলে তার হাজ্জ হাজ্জে মুফরাদ বলে গণ্য হবে। তবে কেউ যদি হাজ্জে কিরানের নিয়ত করে অর্থাৎ হাজ্জ ও উমরা একত্রিত করে ইহরাম করে তাহলে তা হাজ্জে কিরান বলে গণ্য হবে। আর হাজ্জে তামাত্তু ঐ ব্যক্তির জন্য যে, হাজ্জের মাসগুলিতে উমরা সম্পাদন করবে। কারণ, হাজ্জের মাস চলে আসলে তাতে হাজ্জের ইহরাম করা উমরার ইহরামের অপেক্ষা অগ্রাধিকারযোগ্য। তাই মহান আল্লাহ বান্দাদের বোঝা হাল্কা করে দিয়ে তাদেরকে শুধু অনুমতিই দেননি বরং তাদের জন্য হাজ্জের পূর্বে উমরা করে হাজ্জে তামাত্তু করাকে পছন্দ করেছেন।

প্রশ্ন ১৫: কোন একটি হাজ্জ কাফেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফা থেকে বের হয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলে তখন তারা মক্কা রওনা হয়ে যায়। অতঃপর পুলিশ তাদেরকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে দেয়। তারপর তারা মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হলে পথে থেমে যেতে বাধ্য হয়, সুতরায় তারা রাত এগারোটার সময় মাগরিব ও এশার সলাত আদায় করে। তারপর তারা ফজরের আযানের সময় মুযদালিফায় প্রবেশ করে এবং সেখানে ফজর সলাত আদায় করার পরে সেখান থেকে মিনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে। এতে কি তাদের প্রতি দম (কুরবানী) ওয়াজিব হবে কি, হবে না?

উত্তর ১৫: এ অবস্থায় তাদের প্রতি দম (কুরবানী) ওয়াজিব হবে না। কারণ, তারা ফজরের আযানের সময় মুযদালিফায় প্রবেশ করে সেখানে ভোরের অন্ধকারে ফজর সলাত আদায় করতে পেরেছে। আর নাবী (সা.) হতে এমর্মে প্রমাণিত, তিনি বলেন:

مَنْ شَهِدَ صَلَاتَنَا هَذِهِ وَوَقَفَ مَعَنَا حَتَّى نَدْفَعَ وَقَدْ وَقَفَ بِعَرَفَةَ قَبْلَ ذَلِكَ لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَقَدْ أَتَمَّ حَجَّهُ وَقَضَى تَفَثَه

যে ব্যক্তি আমাদের এ (ফজর) সলাতে উপস্থিত হবে এবং এখান থেকে রওনা হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে অবস্থান করবে। আর এর পূর্বে সে আরাফায় রাত্রে কিংবা দিনে অবস্থানও করেছে, তাহলে সে তার হাজ্জ সম্পূর্ণ করে নিল এবং তার দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করে ফেলল।[5]

তবে এরা এশার সলাতকে অর্ধরাত্রের পরে বিলম্ব করে আদায় করায় ভুল করেছে। কারণ, এশার সলাতের সময় অর্ধরাত্র পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়। যেমন নাবী (সা.) হতে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর (সা.)-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।[6] অতএব এশার সলাত অর্ধরাতের পরে বিলম্ব করা জায়েয নয়।

প্রশ্ন ১৬: ইহা সর্বজন বিদীত যে, মাথামুণ্ডন করা ইহরামের অবস্থায় নিষিদ্ধ। তাহলে ঈদের দিন হালাল হতে গিয়ে কিভাবে মাথামুণ্ডন দ্বারা শুরু করা জায়েয হবে? কারণ, আলিমগণ বলেন, তিনটি কাজের মধ্যে যে কোন দু’টি কাজ করে নিলে হালাল হওয়া যায়; যার একটি হচ্ছে মাথামুণ্ডন। তাহলে হাজীরা মাথামুণ্ডন দ্বারা হালাল হওয়া শুরু করতে পারে কি?

উত্তর ১৬: হ্যাঁ, মাথামুণ্ডন দ্বারা হালাল হওয়া শুরু করা জায়েয হবে। কারণ, হালাল হওয়ার সময় মাথামুণ্ডন করা হাজ্জের ইবাদাতের উদ্দেশ্যে, তাই ইহা হারাম হবে না। বরং ইহা এমন এক ইবাদাত হবে যা শরিয়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর যখন ইহা শরিয়াত নির্দেশিত বিষয়, তখন গোনাহ বলেও গণ্য হবে না এবং তা নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়াও নয়। আর নাবী (সা.) থেকে প্রমাণিত যে, তাঁকে কুরবানী করার এবং কংকর নিক্ষেপ করার পূর্বে মাথামুণ্ডন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি (সা.) বলেন: কোন আপত্তি নেই।[7] আর কোন বিষয়ের শরিয়াত নির্দেশিত হওয়া কিংবা নিষিদ্ধ হওয়া শরিয়াত থেকেই নেয়া হবে। আপনি কি চিন্তা করেছেন যে, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সিজদা করা শির্ক, কিন্তু যখন আল্লাহ পাক আদাম (আ.)-কে সিজদা করার জন্য মালাইকাকে (ফেরেশতাগণ) নির্দেশ দিলেন তখন ফেরেশতাগণের আদাম (আ.)-কে সিজদা করা নেকীর কাজ বলে গণ্য হলো। আরো কি চিন্তা করেছেন যে, হত্যা করা, আর বিশেষ করে সন্তানদের হত্যা করা মারাত্মক বড় গোনাহ্, কিন্তু মহান আল্লাহ্ নিজ নাবী ইবরাহীম (আ.)-কে যখন নির্দেশ দিলেন যে, তুমি আপন ছেলে ঈসমাঈল (আ.)-কে কুরবানী কর তখন তা এমন নেকীর কাজে পরিণত হল যে, তার মাধ্যমে নাবী ইবরাহীম (আ.) উচ্চ মর্যাদা হাসিল করলেন। তবে মহান আল্লাহ্ নিজ রহমতে তাঁর এবং তাঁর পুত্রের বোঝা হাল্কা করে দিলেন। তাই ইরশাদ হচ্ছে:

فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ۞ وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ ۞ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ۞ إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ۞ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ۞ (الصافات 103 -107)

অতঃপর দু’জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল। আর ইবরাহীম তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিলাম, হে ইবরাহীম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটাই ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে পুত্রটিকে ছাড়িয়ে নিলাম।[8]

প্রশ্ন ১৭: তামাত্তু বা কিরান হাজ্জের হাদী (কুরবানী) যবহ করার সময় কখন শেষ হয়? আর কুরবানীর সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে কি কোন মতবিরোধ আছে?

উত্তর ১৭: যিলহাজ্জ মাসের ১৩ তারীখের সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে তামাত্তু বা কিরান হাজ্জের হাদী (কুরবানী) যবহ করার সময় শেষ হয়ে যায়। আর ঈদের দিন এক বর্শা পরিমাণ সূর্য উঠার পরে ঈদের সলাত সমাপ্ত হলে কুরবানী করার সময় শুরু হয়ে যায়। আর কুরবানীর সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে কি কোন মতবিরোধ আছে বলে যে জিজ্ঞেস করেছেন, তার উত্তর হচ্ছে যে, হ্যাঁ, কুরবানীর শুরু ও শেষ সময়ের ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। তবে আমি যা উল্লেখ করেছি তাই হচ্ছে সঠিক। আল্লাহই সর্বধিক জ্ঞাত।

প্রশ্ন ১৮: যে ব্যক্তি মিনায় রাত ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে মক্কায় চলে যায় এবং সেখান থেকে ফজর পর্যন্ত ফিরে আসলো না, তার বিধান কি?

উত্তর ১৮: যদি রাত ১২টা মিনায় অর্ধরাত বলে গণ্য হয় তাহলে তারপরে মিনা থেকে বের হলে কোন দোষ নেই। যদিও তাশরীকের দিন ও রাতগুলি মিনায় কাটানোই হচ্ছে উত্তম। আর যদি রাত ১২টায় অর্ধ রাত পূরা না হয় তাহলে ঐ সময় মিনা হতে বের হওয়া জায়েয হবে না। কারণ, ফকীহগণের মতে মিনায় রাতের অধিকাংশ সময় কাটানো আবশ্যক।

প্রশ্ন ১৯: লোকেরা বলে থাকে যে, যে পাথর দ্বারা একবার জামরায় মারা হয়েছে তা দ্বারা দ্বিতীয়বার মারা যাবে না। একথা কি সঠিক? আর এর দলীল কি?

উত্তর ১৯: একথা সঠিক নয়। কারণ, যারা বলে যে, যে পাথর দ্বারা একবার জামরায় মারা হয়েছে তা দ্বারা দ্বিতীয়বার মারা যাবে না, তারা এর দলীল হিসেবে তিনটি যুক্তি পেশ করেছে:

(১) তারা বলে যে, যে পাথর দ্বারা একবার জামরায় মারা হয়েছে তা ফরয পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহৃত পানির মত। আর ফরয পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহৃত পানি পবিত্র। কিন্তু তা অন্যকে পবিত্র করতে সক্ষম নয়।

(২) তেমনি এ পাথর স্বাধীনকৃত ক্রিতদাসের মত; সে দাস স্বাধীন হওয়ার পর কোন কাফফারায় বা অন্য কোন ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করা যাবে না।

(৩) যদি এবিষয়টি জায়েয বলা হয় তাহলে সমস্ত হাজীদের একটি পাথর দ্বারা জামরায় পাথর মারা জায়েয হতে পারে। যেমন আপনি একটি পাথর জামরায় মারলেন, অতঃপর সেই পাথরটি কুড়িয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বার মারলেন তারপর আবার সেটি কুড়িয়ে নিয়ে মারলেন। এভাবে সাতবার কংকর মারা সম্পূর্ণ করলেন। অতঃপর অন্য হাজি এসে সে পাথরটি নিয়ে একইভাবে সাতবার মারা সম্পূর্ণ করল।

তারা এ তিনটি যুক্তি পেশ করেছে। কিন্তু ভালভাবে চিন্তা করে দেখলে তাদের সবগুলি যুক্তি অত্যন্ত দুর্বল প্রমাণিত হয়।

প্রথম যুক্তির খণ্ডন: এর উত্তরে আমরা বলব যে, আমরা উপরোক্ত মাস‘আলাটির বিধান যে, ‘ফরয পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহৃত পানি পবিত্র, কিন্তু তা অন্যকে পবিত্র করতে সক্ষম নয়’। একথা সঠিক মনে করি না; কারণ, এর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। আর পানির আসল গুণ হচ্ছে পবিত্রতা দান করা, ইহা বিনা দলীলে অস্বীকার করা যায় না। তাই আমরা বলব যে, ফরয পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহৃত পানি পবিত্র এবং তা অন্যকে পবিত্র করতে সক্ষম। অতএব যে মাস‘আলার উপর কিয়াস করা হয়েছে যখন সেটিই ঠিক নয়, তাহলে কংকর নিক্ষেপের মাস‘আলাকে যে তার উপর কিয়াস করা হয়েছে সেটিও ঠিক নয়।

দ্বিতীয় যুক্তির খণ্ডন: আর তা হল জামরায় মারা পাথরকে স্বাধীনকৃত কৃতদাসের উপর কিয়াস করা, এর উত্তর হলো যে, এ কিয়াস (যুক্তি) যুক্তিসংগত নয়। বরং দুটো মাস‘আলায় পার্থক্য আছে। আর তা এভাবে যে, কৃতদাস স্বাধীন করা হলে সে আর গোলাম থাকে না, বরং সে একজন স্বাধীন মানুষে পরিণত হয়। সুতরাং তাকে পুনরায় স্বাধীন করা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে পাথর জামরায় নিক্ষেপ করা হলেও তা পাথর বলেই গণ্য হয়। অতএব তা একবার জামরায় নিক্ষেপ করার পরেও বারবার নিক্ষেপ করার যোগ্যতা রাখে। এজন্য মনে রাখবেন যে, উক্ত স্বাধীনকৃত গোলাম পুনরায় যদি শরিয়াতসম্মত কারণে দাসে পরিণত হয় তাহলে তাকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করা যাবে।

তৃতীয় যুক্তির খণ্ডন: আর তা হল যে, “যদি এবিষয়টি জায়েয বলা হয় তাহলে সমস্ত হাজীদের একটি পাথর দ্বারা জামরায় পাথর মারা জায়েয হতে পারে।” এর জবাবে আমরা বলব যে, এমনটি করা সম্ভব হলে তা হতে পারে, কিন্তু ইহা অসম্ভব। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে পাথর থাকা সত্ত্বে কোন মুসলিম একাজটি করবেও না।

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, জামরায় পাথর মারতে গিয়ে কোন ব্যক্তির হাত থেকে যদি একটি বা ততধিক কংকর পড়ে যায় তাহলে নিজের আশ-পাশ থেকে কংকর কুড়িয়ে নিয়ে জামরায় মেরে নিবে। যদিও তার বিশ্বাস যে, এ কংকর দ্বারা জামরায় পূর্বে কংকর মারা হয়েছে।

প্রশ্ন ২০: যদি কোন হাজ্জ কিংবা উমরা সম্পাদনকারী ব্যক্তি সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট না করে শুধু মাথার দুই দিক থেকে কিছু চুল ছোট করে হালাল হয়ে যায় তাহলে তার বিধান কি?

উত্তর ২০: যদি ইহা হাজ্জের তাওয়াফ এবং জামরায় পাথর মারার পর ঘটে তাহলে এর বিধান হচ্ছে যে, সে ব্যক্তি নিজ সাধারণ কাপড়ে থেকেই মাথা মুণ্ডন কিংবা সম্পূর্ণরূপে মাথার চুল ছোট করবে। আর যদি সে ব্যক্তি উমরায় থাকে তাহলে সাধারণ কাপড় খুলে ইহরামের সিলাই বিহীন কাপড় পরিধান করবে। অতঃপর ইহরাম অবস্থায় অর্থাৎ ইহরামের কাপড়ে মাথা মুণ্ডন কিংবা সম্পূর্ণরূপে মাথার চুল ছোট করবে।

প্রশ্ন ২১: কোন হাজীর জন্য তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে হাজ্জের সাঈ করা কি জায়েয হবে?

উত্তর ২১: যদি হাজী হাজ্জে ইফরাদ কিংবা কিরানের নিয়্যাত করে থাকে তাহলে তার জন্য তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে হাজ্জের সাঈ করা জায়েয। এ দুই অবস্থায় তাওয়াফে কুদূমের পরে সাঈ সম্পাদন করে নিতে পারবে। যেমন নাবী (সা.) এবং তাঁর যে সমস্ত সাহাবীগণ হাদীর (কুরবানী) পশু সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তারা করেছেন। আর যদি কোন হাজী হাজ্জে তামাত্তুকারী হয় তাহলে তাকে দু’টি সাঈ করতে হবে;

প্রথম সাঈ উমরার জন্য মক্কায় আসার পরেই তা সম্পাদন করবে।

আর দ্বিতীয় সাঈ হাজ্জের জন্য, যা তাওয়াফে ইফাযার পরে সম্পাদন করাই উত্তম। কারণ, সাঈ হচ্ছে তাওয়াফের আওতাভুক্ত। তবে যদি কোন ব্যক্তি এই হাজ্জের সাঈ তাওয়াফে ইফাযার পূর্বেই করে নেয় তাহলে সঠিক (অগ্রাধিকার যোগ্য) মতে তাতে কোন দোষ নেই। কারণ, নাবী (সা.)-কে জনৈক ব্যক্তির পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আমি তাওয়াফ করার পূর্বেই সাঈ করে ফেলেছি? উত্তরে নাবী (সা.) বলেন: কোন আপত্তি নেই। মনে রাখবেন যে, হাজীগণ ঈদের দিনে ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি কাজ করবে:

(১) জামরায়ে আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করা।

(২) কুরবানী করা।

(৩) মাথা মুণ্ডন করা কিংবা মাথার চুল ছোট করা।

(৪) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা।

(৫) সাফা-মারওয়ার সাঈ করা।

তবে কোন ব্যক্তি যদি হাজ্জে কিরান কিংবা হাজ্জে ইফরাদের নিয়্যাতে এসে তাওয়াফে কুদূমের পরেই সাঈ করে থাকে তাহলে আর পুনরায় সাঈ করতে হবে না। তবে যেই ধারাবহিকতার সাথে আমি উল্লেখ করলাম ঐভাবে আদায় করাই উত্তম। কিন্তু যদি কেউ তার কোন একটি অপরটির আগে বা পরে করে ফেলে, বিশেষ করে কোন প্রয়োজনের কারণে তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। ইহা মহান আল্লাহর রহমত ও তাঁর অনুগ্রহ। পরিশেষে সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।

[5]. নাসাঈ ও তিরমিযী ৮৯১, হাদীসটি সহীহ

[6]. সহীহ মুসলিম ৬১২।

[7]. সহীহ বুখারী ১৭৩৪, ১৭৩৬-১৭৩৭।

[8]. সূরা আস্ সা-ফফা-ত: ১০৩- ১০৭