১। হাজরে আসওয়াদের সামনে আসার পূর্বেই তাওয়াফ শুরু করা।
ইহা দ্বীনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে নাবী (সা.) নিষেধ করেছেন। আর ইহা কিছু ক্ষেত্রে রমযানের এক বা দুই দিন পূর্বে সিয়াম রাখার সাদৃশ্য। নাবী (সা.) যা করতে নিষেধ করেছেন। এ সম্পর্কে কতেক হাজীর যুক্তি যে, তারা সতর্কতা মূলক ইহা করে থাকেন, তাদের একথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আসল ও লাভজনক সতর্কতা হচ্ছে শরিয়তের অনুসরণ করা এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা.)-এর আগে বেড়ে না যাওয়া।
২। ভীড়ের সময় কতেক হাজীদের হাতীমের মধ্য দিয়ে তাওয়াফ করা।
তা এভাবে যে, হাতীমের এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অপর দরজা দিয়ে বের হয়ে যায় এবং হাতীমের অবশিষ্ট অংশ তারা ডান পার্শ্বে ছেড়ে দেয়। ইহা একটি বড় ভুল; এভাবে তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, এতে তারা পুরো কা‘বা ঘরের তাওয়াফ না করে তার কিছু অংশের তাওয়াফ করল।
৩। তাওয়াফের সাত চক্করেই রামাল (পায়ের ধাপ ছোট করে দ্রুত চলা) করা ভুল। সঠিক হচ্ছে শুধুমাত্র প্রথম তিন চক্করে রামাল করা।
৪। হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে বেশী ভীড়-ভাড় করা। এমন কি কোন কোন সময় ইহা লড়াই-ঝগড়া ও গালাগালী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। যার ফলে সেখানে মারমারি ও এমন অশালীন কথা-বার্তা হয়ে যায় যা এমন সৎ কাজে, আল্লাহর সম্মানিত মসজিদে এবং তাঁর পবিত্র ঘরের ছায়ায় হওয়া সমীচিন নয়। এধরণের অন্যায়ে লিপ্ত হলে শুধু তাওয়াফ অসম্পূর্ণ থাকে না, বরং পুরো হাজ্জ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:
﴿الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللّهُ﴾
হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে। অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থ করবে, তার জন্য হাজ্জের মধ্যে সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। আর তোমরা যে কোন সৎ কাজই কর, আল্লাহ তা জানেন।[1]
এধরণের ধাক্কা-ধাক্কি করা ইবাদাতে বিনয়ীভাব নষ্ট করে এবং মহান আল্লাহর যিকির হতে গাফিল করে দেয়, যা হচ্ছে তাওয়াফের মুখ্য উদ্দেশ্য।
৫। কতেক হাজীর ধারণা যে, হাজরে আসওয়াদ স্বয়ং উপকারী, তাই তারা তা স্পর্শ করার সময় নিজ গায়ে অথবা সঙ্গে থাকা সন্তানদের গায়ে হাত বুলায়। এসমস্ত কাজ অজ্ঞতা ও গুমরাহী। কারণ, লাভ ও ক্ষতি একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে।
আর আমি পূর্বে আমীরুল মু’মিনীন উমার (সা.)-এর বাণী উল্লেখ করেছি, হে পাথর! নিশ্চয়ই আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর, কোন ক্ষতিও করতে পার না এবং কোন উপকারও করতে পার না। তাই আমি যদি তোমাকে চুম্বন দিতে নাবী (সা.)-কে না দেখতাম তাহলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন দিতাম না।[2]
৬। কতেক হাজী কা’বা ঘরের চার কর্ণাই স্পর্শ করে ও চুম্বন দেয়, এমন কি অনেকে কা’বা ঘরের সমস্ত দেয়ালকে স্পর্শ করে ও চুম্বন দিয়ে থাকে এবং শরীরে হাত বুলায়। এ সমস্ত কাজ অজ্ঞতা ও গুমরাহী বৈ কিছু নয়।
কারণ রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা এবং হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শ করা মহান আল্লাহর ইবাদাত ও তাঁর মহত্ত্ব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। তাই নাবী (সা.) থেকে যতটুকু প্রমাণিত তাই যথেষ্ট মনে করা আবশ্যক। কারণ, নাবী (সা.) দুই রুকনে ইয়ামানী কা’বা ঘরের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ -যাতে হাজরে আসওয়াদ লাগানো রয়েছে- এবং পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ (রুকনে ইয়ামানী) ছাড়া বায়তুল্লাহর অন্য কোন কনা স্পর্শ করেননি।
আর মুসনাদ আহমাদে তাবেঈ মুজাহিদ (রহঃ) সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার মুআবিয়া (রা.)-এর সাথে তাওয়াফ করেন, তখন মুআবিয়া (রা.) কা’বা ঘরের চার কণা স্পর্শ করা শুরু করেন। তখন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, এ দু’টি কোণ (রুকনে শামী এবং রুকনে ইরাকী) কেন স্পর্শ করলেন? অথচ আল্লাহর রসূল (সা.) তা স্পর্শ করতেন না। তখন মুআবিয়া (রা.) উত্তরে বললেন, কা’বা ঘরের কোন কিছুই ছাড়ার মতো নয়। তখন উত্তরে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন:
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।[3] তখন উত্তরে মুআবিয়া (রা.) বলেন, তুমি ঠিকই বলেছ।[4]
[2]. সহীহ বুখারী ১৫৯৭।
[3]. সূরাহ্ আল-আহযাবঃ ২১
[4]. হাসান লি গাইরিহী: মুসনাদে আহমাদ ১৮৭৭।