কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত সপ্তম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

৯ যিলহাজ্জ সূর্য উদয় হয়ে গেলে মিনা হতে আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। অতঃপর সহজসাধ্য হলে মাথার উপর থেকে সূর্য ঢলা পর্যন্ত নামেরাহ নামক স্থানে অবতরণ করবে। আর যদি কষ্টের কারণ হয় তাহলে কোন গোনাহ নেই। কারণ নামেরায় অবস্থান করা সুন্নাত, ইহা ওয়াজিব নয়। তারপর সূর্য ঢলে পড়লে যুহর ও আসর সলাত অগ্রিম একত্রিত (জমা তাকদীম) করে দুই দুই রাক’আত আদায় করবে, যেমন নাবী (সা.) আদায় করেছিলেন।

তাই জাবির (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: আল্লাহর রসূল (সা.) নামেরাহ্ নামক স্থানে উনার তাঁবু লাগাতে বললেন। অতঃপর তিনি আরাফায় পৌঁছিলে দেখেন যে, তাঁর জন্য নামেরায় তাঁবু লাগানো হয়েছে, তখন সেখানে অবতরণ করলেন। তারপর সূর্য ঢলে গেলে ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীকে প্রস্ত্তত করতে বললেন, অতঃপর তার পীঠে চেপে আরাফার উপত্যকায় আগমন করলেন এবং সেখানে খুতবা প্রদান করলেন। তারপর আযান ও ইকামাত দিয়ে প্রথমে যুহর সলাত আদায় করলেন, তারপরে ইকামাত দিয়ে আসর সলাত আদায় করলেন। এ দু’সলাতের মাঝে কোন সুন্নাত পড়লেন না। তারপর বাহনে চেপে আরাফার অবস্থানস্থলে আসেন এবং সেখানে কাসওয়া নামক উষ্ট্রীকে বসিয়ে দিয়ে তার পেট পাথর সমূহের (জাবালুর রাহমাহ্) দিকে করে দেন। আর পদচারীদের পাহাড়কে সামনে রেখে কিবলামূখী হোন এবং সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে দু‘আ করতে থাকেন।[1]

আর (হাজ্জের অবস্থায়) কসর করে এবং দু’সলাতকে একত্রিত করে আদায় করার বিধান মক্কাবাসী ও অন্যান্য সমস্ত হাজীদের জন্য।

আর দু’ওয়াক্ত সলাত জমা’ তাকদীম (অগ্রীম একত্রিত) করার বিধানের রহস্য হচ্ছে, যেন হাজীগণ নিজ নিজ ইমামের সাথে সলাত আদায় করে নিয়ে নিজ নিজ স্থানে ফিরে গিয়ে দু‘আর জন্য অবসর হয়ে যেতে পারেন।

কারণ, হাজীদের জন্য সুন্নাত হল যে, তাঁরা আরাফার দিনের শেষ ভাগে দু‘আ, যিকির ও তিলাওয়াতের জন্য অবসর হয়ে যাবেন।

আর নাবী (সা.) থেকে হাদীসে বর্ণিত দু‘আ ও যিকির করার জন্য আগ্রহী হবেন। কারণ, সেগুলি হচ্ছে ব্যাপক অর্থবোধক এবং অধিক উপকারী দু‘আ। যেমন নিম্নের দু’আগুলি (যা বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত) পাঠ করবে:

اللَّهُمّ َاجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْراً، وَفي سَمْعِيْ نُوْراً وَفي بَصَرِيْ نُوْراً

[আল্লাহুম্মা-জ্আ’ল ফী ক্বালবী নূরা, ওয়া ফী সাম্ঈ নূরা, ওয়া ফী বাসারী নূরা]

হে আল্লাহ্ ! আমার হৃদয়ে জ্যোতি দান কর, আমার শ্রবণশক্তিতে জ্যোতি দান কর এবং আমার দৃষ্টিশক্তিতে জ্যোতি দান কর।[2]

(اللَّهُمّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)

[আল্লাহুম্মা রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনয়্যা হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান ওয়া কিবনা আযাবান্ নার]

হে আল্লাহ্ আমাদের প্রতিপালক! দুনিয়াতে আমাদেরকে কল্যাণ দান কর, আখিরাতেও আমাদেরকে কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।[3]

(اللَّهُمّ إنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَمِنْ دَرَكِ الشِّقَاءِ، وَمِنْ سُوْءِ الْقَضَاءِ، وَمِنْ شَمَاتَةِ الْأعْدَاءِ)

[আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন জাহদিল বালা-ই ওয়া মিন দারাকিশ্ শিকা-ই, ওয়া মিন সুইল কাযা-ই। ওয়া মিন শামাতাতিল আ‘দা-ই]

হে আল্লাহ্ ! আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি বিপদ-আপদের কষ্ট হতে, দুর্ভাগ্য হওয়া থেকে, মন্দ ফায়সালা হতে এবং শত্রুদের খুশী হওয়া থেকে।[4]

اللَّهُمّ إنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْجُبُنِ وَالْبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

[আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখ্‌লি, ওয়া যাল্ইদ্ দায়নি ওয়া গালাবাতির্ রিজাল।]

হে আল্লাহ্! আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি দুশ্চিন্তা থেকে, শোক থেকে, অপারগ হওয়া থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণের বোঝা থেকে এবং মানুষের আধিপত্য থেকে।[5]

اللَّهُمّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْغِنَى، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْفَقْرِ

[আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল্ মা’সামি ওয়াল মাগরাম, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল গিনা, ওয়া আউযু বিকা মিন ফিতনাতিল ফাকরি]

হে আল্লাহ্! আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি গুনাহ থেকে, ঋণ থেকে এবং সচ্ছলতার ফিতনার অনিষ্ট থেকে, আরো তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি দারিদ্রের ফিতনা থেকে।[6]

اللَّهُمّ اغْسِلْ عَنِّيْ خَطَايَايَ بِمَاءِ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّ قَلْبِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَبَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ

[আল্লাহুম্মা-গসিল্ আন্নী খাত্বায়্যায়া বি মা-ইস্ সালজি ওয়াল বারাদ। ওয়া নাক্বি কালবী মিনাল্ খাত্বায়্যা কামা নাক্বায়্‌তাস্ সাওবাল্ আবয়্যাযা মিনাদ্ দানাস, ওয়া বা-ইদ বায়্‌নী ওয়া বায়্‌না খাত্বায়্যায়া কামা বা-আদতা বায়্‌নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব]

হে আল্লাহ্ ! আমার গুনাহসমূহ বরফ ও সীলাবৃষ্টির পানি দ্বারা ধুয়ে দাও। আর আমার হৃদয়কে গুনাহসমূহ থেকে পরিস্কার করে দাও, যেমন তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা-আবর্জনা থেকে পরিস্কার করে থাক। আর আমার মাঝে এবং আমার গুনাহসমূহের মাঝে দূরত্ব তৈরি কর যেমন তুমি দূরত্ব করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে।[7]

আরাফার দিনের দু‘আ হচ্ছে সর্বাধিক উত্তম দু‘আ। নাবী (সা.) বলেছেন:

خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আ হলো আরাফার দু‘আ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আ যা আমি বলেছি এবং আমার পূর্বের নাবীরা বলেছেন, তা হলো:

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

[লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু, লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হাম্দু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর]

আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।[8]

  • আর যদি রসূল (সা.) থেকে বর্ণিত (দু‘আ মাসূরাহ্) কারো না জানা থাকে তাহলে যে কোন বৈধ দু‘আ নিজ ভাষায় করবে।
  • অতঃপর যদি ক্লান্তি বোধ হয় তাহলে নিজ সাথী-সঙ্গীদের সাথে লাভজনক কথা-বার্তা, একে অপরকে কু্রআন শুনানো অথবা যে কোন উপকারী বই-পুস্তক পাঠ করা, বিশেষ করে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও অশেষ দানের কথা আলোচনা করা; যাতে করে আজকের দিনে আল্লাহর নিকট আশার দিকটা মযবুত হয়, এসব কাজ ভাল।
  • আবার কিছুক্ষণ পরে আল্লাহর নিকট একগ্রচিত্তে কান্না করে দু‘আ করায় ফিরে আসবে। আর বিশেষ করে এই দিনের শেষভাগে দু‘আ করায় অধিক মনোযোগী হবে।
  • আর দু‘আর অবস্থায় কিবলামুখী হওয়া উচিত, যদিও পাহাড় পিছনে হোক কিংবা ডানে হোক বা বামে। কারণ কিবলামুখী হওয়া সুন্নাত।
  • অনুরূপ দুই হাত তুলে দু‘আ করবে। তবে যদি কোন একটি হাত উঠাতে বাধা থাকে তাহলে একটি হাত তুলে দু‘আ করবে। কেননা উসামা বিন যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, আমি আরাফায় নাবী (সা.) এর বাহনের পিছনে বসা ছিলাম, তখন তিনি (সা.) উভয় হাত উত্তোলন করে দু‘আ করছিলেন। হঠাৎ করে তাঁর উষ্ট্রি কাত হয়ে গেলে তার লাগামের রশীটি পড়ে যায়, তখন তিনি এক হাতে রশীটি উঠিয়ে নেন এবং অপর হাতটি উঠিয়ে দু‘আ করতে থাকেন।[9]

আর দু‘আই মহান আল্লাহর নিকটে নিজ প্রয়োজন ও শোচনীয়তা প্রকাশ করবে এবং বার-বার করে একগ্রচিত্তে দু‘আ করবে। আর দু‘আ কবুল হওয়ার ব্যাপারে তাড়া-হোঁড়া করবে না এবং দু‘আয় সীমা লঙ্ঘনও করবে না। যেমন, এমন কিছু চাওয়া যা ইসলামী শরিয়তে জায়েয নয় অথবা সৃষ্টিগতভাবে যা সম্ভব নয়। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন:

(ادْعُواْ رَبَّكُمْ تَضَرُّعاً وَخُفْيَةً إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ )الأعراف55

তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে বিনয়ের সঙ্গে এবং গোপনে আহবান কর, তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।[10]

আর হারাম ভক্ষণ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, ইহা দু‘আ কবুল হওয়ার সর্বাধিক বড় বাধা। আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নাবী (সা.) বলেছেন:

(أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنْ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) وَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ)

হে লোকেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করনে না। আর তিনি মু’মিনদের তাই নির্দেশ দিয়েছেন যা রসূলগণকে নির্দেশ দিয়েছেন; তাই তিনি ইরশাদ করেছেন: হে রসূলগণ ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত আহার কর, আর সৎ কাজ কর, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি পূর্ণরূপে অবগত। (সূরাহ্ মু’মিনূনঃ ৫১) আর আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদেরকে বলেন: হে মু’মিনগণ! আমার দেয়া পবিত্র বস্ত্তগুলি খেতে থাক [সূরা বাক্বারা ২ঃ ১৭২]। "তারপর রসূল (সা.) এমন ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে দীর্ঘ সময় ধরে সফর করে, তার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত এবং ধুলো ধুসরিত, সে নিজ হস্তদ্বয় আকাশের দিকে উঠিয়ে দু‘আ করে আর বার-বার করে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্যবস্ত্ত হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম এবং তার আহারও হারাম,। এ অবস্থায় তার দু‘আ কেমন করে কাবুল হবে?"[11]

তাহলে নাবী (সা.) এমন ব্যক্তি দু‘আ কবুল হওয়াকে অসম্ভব মনে করলেন যার আহার ও বস্ত্র হারাম, অথচ তার দু‘আ কাবূল হওয়ার অন্যান্য কারণগুলি বিদ্যমান ছিল। (যা উক্ত হাদীসে নাবী (সা.) উল্লেখ করেছেন।) এর একমাত্র কারণ হচ্ছে হারাম বস্ত্ত ভক্ষণ করা।

আর যেখানে নাবী (সা.) আরাফায় অবস্থান করেছিলেন সেখানে অবস্থান করা সহজসাধ্য হলে তা উত্তম। তা না হলে আরাফার যেখানে অবস্থান করা সহজসাধ্য হবে সেখানে অবস্থান করবে। কেননা জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) বলেন:

نَحَرْتُ هَاهُنَا وَمِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ فَانْحَرُوا فِي رِحَالِكُمْ وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَجَمْعٌ كُلُّهَا مَوْقِفٌ

আমি এখানে কুরবানী করলাম, তবে মিনার সব জায়গায় হচ্ছে কুরবানীর স্থান। সুতরাং তোমরা নিজ নিজ অবস্থান স্থলে কুরবানী কর। আর আমি এখানে (আরাফায়) অবস্থান করলাম। তবে আরাফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল। আর আমি (মুযদালিফায়) এখানে অবস্থান করলাম। তবে মুযদালিফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল।[12]

আর আরাফায় অবস্থানকারীর (হাজীর) জন্য তার সীমানা সম্পর্কে নিশ্চিৎ হওয়া আবশ্যক। আরাফার চতুর্দিকের সীমানায় বেশ কিছু চিহ্ন দেয়া আছে যা সন্ধান করলে সহজেই পেয়ে যাবে। কারণ, অনেক হাজীরা এ ব্যাপারে অবহেলা করে, ফলে তারা অজ্ঞতা বশতঃ এবং অন্ধ অনুকরণের কারণে আরাফার সীমানার বাইরে অবস্থান করে। মনে রাখবে যে, যারা আরাফার সীমানার বাইরে অবস্থান করবে তাদের হাজ্জ হবে না। কারণ, হাজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থানের নাম।

যার দলীল আব্দুল্লাহ বিন ইয়া‘মুর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, নাজদের অধিবাসী কতিপয় লোকেরা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নিকট তাঁর আরাফায় অবস্থানকালে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন তিনি একজন ঘোষনাকারীকে একথা ঘোষনা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন:

الْحَجُّ عَرَفَةُ مَنْ جَاءَ لَيْلَةَ جَمْعٍ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ أَيَّامُ مِنًى ثَلَاثَةٌ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ

হাজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থানের নাম। সুতরাং যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছাবে সে হাজ্জ পেয়ে গেল। মিনায় অবস্থানের দিন হচ্ছে তিন দিন। তবে যে ব্যক্তি দুই দিনে তাড়াতাড়ি করবে তার কোন গোনাহ্ নেই। আর যে (তিন দিন পর্যন্ত) বিলম্ব করবে তারও কোন গোনাহ্ নেই।[13]

তাই আরাফার সীমানা সম্পর্কে হাজীদের সজাগ থাকা আবশ্যক, যাতে করে তার সীমানার ভিতরে আছে কি না এ বিষয়ে নিশ্চিৎ হয়ে যায়।

আর যারা আরাফায় দিনে অবস্থান করবে তাদের সেখানে সূর্য অস্ত হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। কারণ, নাবী (সা.) সূর্য অস্ত হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছেন এবং তিনি একথার নির্দেশ দিয়েছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[14]

আর একারণে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আরাফা থেকে প্রস্থান করা জাহিলী যুগের প্রথা ছিল, ইসলামে যার বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আরাফায় অবস্থানের শেষ সময় হচ্ছে ঈদুল আয্হার দিন ফজর হওয়া পর্যন্ত।

কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

(مَنْ جَاءَ لَيْلَةَ جَمْعٍ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ)

যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছাবে সে হাজ্জ পেয়ে যাবে।[15]

অতএব কোন ব্যক্তির আরাফায় অবস্থানের পূর্বেই যদি ফজর হয়ে যায় তাহলে তার হাজ্জ ছুটে যাবে। সুতরাং এ ব্যক্তি যদি তার ইহরামের শুরুতে এ বলে শর্ত করে থাকে যে, "হে আল্লাহ! যদি আমাকে কোন কিছু হাজ্জ সম্পূর্ণ করতে বাধা প্রদান করে, তাহলে আমি সেখানেই হালাল হয়ে যাব" তাহলে সে নিজ ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে, তাতে তার প্রতি কোন দাম (কুরবানী) ওয়াজিব হবে না।

আর যদি কোন শর্ত না করে থাকে তাহলে সে মক্কাহ্ গিয়ে কা‘বা ঘরের তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সাঈ এবং মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে উমরাহ্ করে হালাল হয়ে যাবে। তার সঙ্গে যদি হাদীর (কুরবানী) পশু থাকে তবে তাকে যবহ করে দিবে, অতঃপর আগামি বছর তার ছুটে যাওয়া হাজ্জের কাযা করবে এবং কুরবানী করবে। আর যদি কুরবানী করতে না পারে তাহলে দশটি সিয়াম পালন করবে। তার মধ্যে তিনটি সিয়াম হাজ্জের সফরেই এবং সাতটি নিজ পরিবারে ফিরে আসার পরে রাখবে।[16]

[1]. সহীহ মুসলিম ১২১৮।

[2]. সহীহ মুসলিম ৭৬৩।

[3]. সূরা বাক্বারা আয়াত নং ২০১, সহীহ বুখারী ৪৫২২

[4]. সহীহ বুখারী ৬৬১৬।

[5]. সহীহ বুখারী ২৮৯৩।

[6]. সহীহ বুখারী ৬৩৬৮।

[7]. সহীহ বুখারী ৬৩৬৮, সহীহ মুসলিম ৫৮৯।

[8]. তিরমিযী ৩৫৮৫, হাদীসটি হাসান।

[9]. সহীহ: নাসাঈ ৩০১১।

[10]. সূরাহ্ আল-আ‘রাফঃ ৫৫

[11]. সহীহ মুসলিম ১০১৫।

[12]. সহীহ মুসলিম ১২১৮।

[13]. সহীহ: তিরিমিযী ৮৮৯, নাসাঈ ৩০৪৪, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ২৮২২।

[14]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭

[15]. আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিরিমিযী ও ইবনু মাজাহ

[16]. সূরা বাকারা ২:১৯৬।