নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি ৭। আহূতদের বিধান (أحكام المدعوين) মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী ৭ টি

কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা তিন ধরণের মানুষের পরিচয় উল্লেখ করেছেনঃ

১. মুমিন (المؤمنون)
২. কাফের (الكفار)
৩. মুনাফিক (المنافقون)

১। মুমিনরা ঈমান ও সৎ আমল বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ (2) الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ (3) أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ (4)) . [الأنفال: 2 - 4]

‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। (২) যারা ছালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। (৩) তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক’ (সূরা আল-আনফাল: ২-৪)।

মুমিনরা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, যারা দুনিয়াতে হবে সৌভাগ্যবান আর আখেরাতে জান্নাত লাভ করবে।

২। কাফেররা কুফর, আল্লাহর অবাধ্যতা ও কু-প্রবৃত্তির উপভোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ (12)) [محمد: 12]

‘কিন্তু যারা কুফরী করে, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং তারা আহার করে যেমন চতুষ্পদ জন্তুরা আহার করে। আর জাহান্নামই তাদের বাসস্থান’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১২)।

কাফেররা হবে নিকৃষ্টতম স্তরের বাসিন্দা, তারা সবাই দুনিয়াতে হবে হতভাগা আর আখেরাতে জাহান্নামী।

৩। মুনাফিকরা কাফেরদের চেয়েও বেশী বিপদজনক। তারা মুখে মুসলিমদের সাথে অবস্থান করলেও তাদের অন্তর কাফেরদের সাথেই থাকে। তারা ভেতর থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। যেমন- আল্লাহ বলেন:

(وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِنْ يَقُولُوا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُسَنَّدَةٌ يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ (4)) [المنافقون: 4]

‘আর যখন তুমি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখবে, তখন তাদের শরীর তোমাকে মুগ্ধ করবে। আর যদি তারা কথা বলে, তুমি তাদের কথা (আগ্রহ নিয়ে) শুনবে। তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতই। তারা মনে করে, প্রতি আওয়াজই তাদের বিরুদ্ধে। এরাই শত্রু, অতএব এদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করুন। তারা কিভাবে সত্য থেকে ফিরে যাচ্ছে’ (সূরা আল-মুনাফিকবুন: ৪)।

তারা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। দুনিয়াতে হতভাগা ও শঙ্কায় থাকবে। আর সব ধরনের আওয়াযই তারা তাদের বিরুদ্ধে মনে করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا ) [النساء: 145]

‘নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না’ (সূরা আন-নিসা: ১৪৫)।

মুমিনদের উচিত, আল্লাহর দিকে কাফের ও মুনাফিকদের দা‘ওয়াত দেয়ার চেষ্টা করা।

খ. আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের বিরোধিতাকারীরা (المعارضون للدعوة إلى الله)

তিন শ্রেণীর মানুষের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতদাতা (দাঈ) গণকে আল্লাহ পরীক্ষা করেন। প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষেরই তাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু অনুসারী, বাণী, লেনদেন ও দা‘ওয়াত রয়েছে।

প্রথম: যারা সত্য উপলব্ধি করা সত্ত্বেও হিংসা ও সীমালঙ্ঘন বশতঃ তার বিরোধিতা করে। যেমন- ইয়াহূদী। অথবা যারা সত্য জেনেও পথভ্রষ্ট হয়। যেমন-খ্রিস্টান। আল্লাহ বলেন:

(وَدَّ كَثِيرٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُمْ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ) [البقرة: 109]

‘আহলে কিতাবের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশতঃ (তারা এরূপ করে থাকে)। সুতরাং তোমরা ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চল, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর নির্দেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১০৯)।

দ্বিতীয়: নেতৃস্থানীয় ও সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ, যারা দুনিয়াদার ও প্রবৃত্তির অনুসারী। যখন তারা বুঝতে পারে যে, দ্বীন তাদেরকে পরিচালিত করবে এবং তাদের পছন্দনীয় বিষয়ে বাধাগ্রস্ত করবে, তখন তারা দ্বীনের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়।

যেমন- আল্লাহ বলেন:

(فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (50)) [القصص: 50]

‘অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হেদায়াত করেন না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ: ৫০)।

তৃতীয়: যারা বাতিলের উপর বেড়ে উঠে। এ শ্রেণীর মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের যে অবস্থায় পায়, তাকেই হক্ব মনে করে; অথচ তারা বাতিলের উপর। বেশীরভাগ মানুষই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন:

(إِنَّهُمْ أَلْفَوْا آبَاءَهُمْ ضَالِّينَ (69) فَهُمْ عَلَىآثَارِهِمْ يُهْرَعُونَ (70)) ..[الصافات: 69 - 70]

‘নিশ্চয় এরা নিজেদের পিতৃপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল; (৬৯) ফলে তারাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে দ্রুত ছুটেছে’ (সূরা আছ-ছফফাত: ৬৯-৭০)।

আর তারা অন্ধ অনুসারীও:

(وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ (170)) .. [البقرة: 170]

‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা অনুসরণ কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, তার; তারা বলে, বরং আমরা অনুসরণ করব আমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি। যদি তাদের পিতৃ-পুরুষরা কিছু না বুঝে এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত না হয়, তাহলেও কি?’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৭০)।

গ. আল্লাহর দিকে আহবানের ক্ষেত্র (ميادين الدعوة إلى الله)

সকল স্তরের মানুষই আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের মুখাপেক্ষী।

১। কাফের ও মুশরিকদেরকে ইসলামে প্রবেশের এবং কুফর থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য দা‘ওয়াত দিতে হবে। আর ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের মত আরো যাদের চিন্তা-চেতনা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের প্রত্যেককেই কাফের-মুশরিকদের সাথে দা‘ওয়াতে সম্পৃক্ত করা হবে।

২। ছহীহ দ্বীনের ছহীহ বিধান বর্ণনার মাধ্যমে বিদ‘আতীদেরকে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দিতে হবে, যাতে তারা জাগ্রত জ্ঞান সহকারে এবং দ্বীনের উত্তম অনুসারী হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে।

৩। পাপী ও চরিত্রহীন ব্যক্তিদেরকে আল্লাহর বড়ত্বের উপদেশ দানের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দিতে হবে, যাতে তারা আল্লাহর মর্যাদা উপলব্ধি করে। তাঁর নেয়ামত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে দা‘ওয়াত দিতে হবে, যাতে তারা তাঁর শুকরিয়া আদায় করে। তার সীমাহীন রহমতের কথা স্মরণ করিয়ে তাদেরকে দা‘ওয়াত দিতে হবে, যাতে তারা আল্লাহর নিকট (তাওবা) ফিরে আসে। দা‘ওয়াত দিতে হবে জান্নাতের প্রতি উৎসাহিত করে, যাতে তারা তাঁর আনুগত্য করে এবং জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে, যাতে তারা তাঁর অবাধ্য না হয়।

৪। ইবাদতশারীগণও দা‘ওয়াতের মুখাপেক্ষী, যাতে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আমল সুন্দর হয়, অন্যকে দা‘ওয়াত দানে তারা যেন উৎসাহিত হয়। এতে তারা নিজে সংশোধিত হওয়া এবং অন্যকে সংশোধিত করার উভয় বৈশিষ্ট্যেরই সমন্বয় করতে পারবে।

৫। আলেমগণও দা‘ওয়াতের মুখাপেক্ষী, যাতে তারা তাদের জ্ঞান অনুযায়ী আমল করতে পারেন এবং মানুষের মাঝে তাদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারেন।

৬। মুসলিম জনসাধারণকেও আল্লাহর দিকে আহবান করতে হবে, যাতে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আমল সুন্দর হয় এবং তাদের পাপের জন্য তাওবা করে। আল্লাহ তা‘আলার দিকে দা‘ওয়াত দান, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজ থেকে নিষেধ, উপদেশ দান, কল্যাণ কামনা এবং সঠিক পথ প্রর্দশন এ কাজগুলো থেকে মুমিন, কাফের, আনুগত্যকারী, অবাধ্য, আলেম, জাহিল (অজ্ঞ) কেউই অমুখাপেক্ষী নয়। প্রত্যেকেই তাদের অবস্থা অনুপাতে আল্লাহর দিকে আহবান করবে এবং অবস্থানুযায়ী সকলকেই দা‘ওয়াত দিতে হবে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يَاأَيُّهَا النَّاسُ أَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ) [فاطر: 15]

‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর নিকট মুখাপেক্ষী আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত’ (সূরা ফাতির: ১৫)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ) [يوسف: 108]

‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।

ঘ. আহূতদের প্রকার এবং তাদের দা‘ওয়াতের ধরণ (أصناف المدعوين، وكيفية دعوتهم)

মানুষ চিন্তা-চেতনা ও আমলের দিক থেকে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তাই তাদের ভিন্নতা অনুযায়ী তাদের দা‘ওয়াত, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকেনিষেধের বিধানও ভিন্ন ভিন্ন হবে, আর তা নিম্নরূপ:

১। অপূর্ণ ঈমানের অধিকারী এবং বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ।

এসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমরা ধৈর্য ধারণসহ তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবো, নরম কথা ও সহানুভূতির সাথে শিক্ষা দেবো। কোমলতার সাথে উত্তম কাজের দিক-নির্দেশনা দিব। যেমন- একজন আগন্তুক বেদুঈন এসে মসজিদে পেশাব করলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে ধৈর্যের সাথে ভাল আচরণ করেছিলেন।

عَنْ أنَس بن مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قال: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي المَسْجِدِ مَعَ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - إِذْ جَاءَ أعْرَابِيٌّ، فَقَامَ يَبُولُ فِي المَسْجِدِ، فَقَالَ أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: مَهْ مَهْ. قالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «لا تُزْرِمُوهُ، دَعُوهُ». فَتَرَكُوهُ حَتَّى بَالَ، ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: «إِنَّ هَذِهِ المَسَاجِدَ لا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا البَوْلِ وَلا القَذَرِ، إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلاةِ، وَقِرَاءَةِ القُرْآنِ». أوْ كَمَا قالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -، قالَ: فَأمَرَ رَجُلاً مِنَ القَوْمِ، فَجَاءَ بِدَلْوٍ مِنْ مَاءٍ، فَشَنَّهُ عَلَيْهِ. متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (219) , ومسلم برقم (285)، واللفظ له

আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ এক বেদুঈন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগলেন, তা দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ ‘থামো থামো’ বলে তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিলেন। আনাস (রা.) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তোমরা তাকে বাধা দিও না, বরং তাকে ছেড়ে দাও। লোকেরা তাকে ছেড়ে দিলেন, তিনি প্রস্রাব সেরে নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে কাছে ডেকে বললেন: এটা হলো মসজিদ। এখানে প্রস্রাব করা কিংবা ময়লা-আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এ হলো আল্লাহর যিকর করা, ছালাত আদায় করা এবং কুরআন পাঠ করার স্থান। অথবা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথাটা যেভাবে বলেছেন তাই। আনাস (রা.) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিতে এক বালতি পানি আনতে আদেশ করলেন। সে এক বালটি পানি আনলে তিনি তা প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/২১৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫)।

২। অপূর্ণ ঈমানের অধিকারী কিন্তু বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত।

উত্তম উপদেশ ও হিকমাত (কৌশল জ্ঞান) এর সাথে এ ব্যক্তিকে আল্লাহর দিকে আহবান করতে হবে। তার সামনে বোধগম্য উদাহরণ ও যৌক্তিক দলীল পেশ করতে হবে। তার ঈমান বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করতে হবে, যাতে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের উপর অটল থাকে।

عَنْ أَبي أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ: إِنَّ فَتًى شَابّاً أَتَى النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي بِالزِّنَا، فَأَقْبَلَ القَوْمُ عَلَيْهِ فَزَجَرُوهُ، قَالُوا: مَهْ مَهْ، فَقَالَ: «ادْنُهْ»، فَدَنَا مِنْهُ قَرِيباً، قَالَ: فَجَلَسَ، قَالَ: «أَتُحِبُّهُ لأُمِّكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لأُمَّهَاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لاِبْنَتِكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِبَنَاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لأُخْتِكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ، جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لأُخَوَاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لِعَمَّتِكَ؟» قَالَ: لاَ، وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِعَمَّاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لِخَالَتِكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِخَالاَتِهِمْ»، قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ، وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ». قال: فَلَمْ يَكُنْ بَعْدُ ذَلِكَ الفَتَى يَلْتَفِتُ إِلَى شَيْءٍ. صحيح/ أخرجه أحمد برقم (22564) , انظر «السلسلة الصحيحة» رقم (370)

আবূ উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একজন যুবক রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। লোকজন তাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, চুপ করো। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে কাছে আসতে দাও। অতঃপর যুবকটি কাছে আসলেন। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার মায়ের জন্য যেনা পছন্দ করো? যুবকটি বললেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। কেউই তার মায়ের জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য যেনা পছন্দ করো? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার মেয়ের জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার বোনের জন্য যেন পছন্দ করো? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার বোনের জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার ফুফুর জন্য যেনা পছন্দ করো? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার ফুফুর জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার খালার জন্য যেনা পছন্দ করো? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার খালার জন্য যেনা পছন্দ করে না। তারপর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর হাত যুবকটির গায়ে রেখে বললেন:

«اللَّهمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ، وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ»

‘‘হে আল্লাহ! তার গুনাহ মাফ করো, তার অন্তর পবিত্র রাখো, তার লজ্জা স্থানের হিফাযত করো।’’অতঃপর ঐ যুবক আর কখনো এ কাজে লিপ্ত হননি (মুসনাদে আহমাদ, হা/ ২২৫৬৪, ছহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহ, ৩৭০)।

৩। দৃঢ় ঈমানের অধিকারী কিন্তু বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ।

এ ধরণের ব্যক্তিকে সরাসরি শরী‘আতের বিধান ও অবাধ্যতার কুফল বর্ণনার মাধ্যমে এবং তার ঘটিত অসৎকাজ দূরীকরণে সঠিক দিশা প্রদানের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দিতে হবে।

عَنْ عَبْدالله بْنِ عَبّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - رَأَىَ خَاتِماً مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ، فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ وَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَىَ جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ» فَقِيلَ لِلرّجُلِ، بَعْدَ مَا ذَهَبَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعْ بِهِ،قَالَ: لاَ، وَالله لاَ آخُذُهُ أَبَداً، وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -. أخرجه مسلم برقم (2090)

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক লোকের হাতে একটি সোনার আংটি লক্ষ্য করে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে তার হাতে রাখে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে স্থান ত্যাগ করলে ব্যক্তিটিকে বলা হলো, আপনার আংটি উঠিয়ে নিন। এটি দিয়ে উপকার হাছিল করুন। তিনি বললেন, না। আল্লাহ কসম! আমি কÿনো ওটা নিব না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো ওটা ফেলে দিয়েছেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২০৯০)।

৪। দৃঢ় ঈমানের অধিকারী ও বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত।

এ ধরনের ব্যক্তির ব্যাপারে কোন আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। আগের ব্যক্তিদের তুলনায় এ ধরনের ব্যক্তির পাপ থেকে তাকে শক্তভাবে নিষেধ করতে হবে এবং কঠিন আচরণ করতে হবে, যাতে সে পাপকাজে অন্যের আদর্শ না হয়।

كما اعتزل النبي - صلى الله عليه وسلم - الثلاثة الذين خُلِّفوا في غزوة تبوك خمسين ليلة، وأمر الناس بهجرهم لما تركوا الخروج مع الرسول والناس لغزوة تبوك مع كمال إيمانهم وعلمهم ولا عذر لهم، ثم تاب الله عليهم، وهم هلال بن أمية، وكعب بن مالك، ومرارة بن الربيع رضي الله عنهم.والقصة مفصلة في الصحيحين (متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (4418) , ومسلم برقم (2769)

যেমন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাবূক যুদ্ধে না যাওয়ার অপরাধে তিন ব্যক্তি থেকে ৫০ দিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং মানুষদেরকে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ তাদের পূর্ণ ঈমান ও জ্ঞান ছিল, কোন অজুহাত ছিল না। অবশ্য পরবর্তীতে আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন। তারা হচ্ছেন, হিলাল ইবনু উমাইয়াহ, কা‘ব ইবনু মালেক ও মুরারা ইবনুর-রবী‘। ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমে ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।[1] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (118)) ... [التوبة: 118]

‘এবং সে তিন জনের (তাওবা কবুল করলেন), যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আযাব থেকে কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতঃপর তিনি তাদের তওবার তাওফীক্ব দিলেন, যাতে তারা তাওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা: ১১৮)।

৫। যে ব্যক্তি ঈমান ও বিধি-বিধান উভয় সম্পর্কে অজ্ঞ।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর অধিকাংশ কাফেরই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে প্রথমত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দা‘ওয়াত দিতে হবে। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও তার নামসমূহ, গুণাবলী, তার সীমাহীন দয়া এবং মহা নেয়ামত সম্পর্কে জানাতে হবে। আল্লাহর শান্তির অঙ্গীকার ও শাস্তির ভয় স্মরণ করাতে হবে, জান্নাত লাভে উৎসাহ প্রদান এবং জাহান্নাম সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতে হবে। তারা ঈমানে অটল হলে পর্যায়ক্রমে আল্লাহর বিধানাবলী জানাতে হবে। যেমনঃ ছালাত এবং ছালাতের আবশ্যকীয় বিষয় পবিত্রতা ও অযূ ইত্যাদি; তারপর যাকাত...এভাবে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِوَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ ) [محمد: 19]

‘অতএব, জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯)।

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - لَمَّا بَعَثَ مُعَاذاً رَضيَ اللهُ عَنْهُ عَلَى اليَمَنِ، قال: «إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أهْلِ كِتَابٍ، فَلْيَكُنْ أوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ، فَإِذَا عَرَفُوا اللهَ، فَأخْبِرْهُمْ: أنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ، فَإِذَا فَعَلُوا، فَأخْبِرْهُمْ أنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً مِنْ أمْوَالِهِمْ، وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِذَا أطَاعُوا بِهَا، فَخُذْ مِنْهُمْ، وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أمْوَالِ النَّاسِ» متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (1458) , واللفظ له، ومسلم برقم (19)

২। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। মু‘আয ইবনু জাবাল (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে (ইয়ামানের প্রশাসক নিযুক্ত করে) পাঠালেন। তিনি বললেন, তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো, যারা কিতাবধারী। সুতরাং তাদেরকে আহবান জানাবে এ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, প্রত্যেক দিন ও রাতে আল্লাহ তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি তারা তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের থেকে আদায় করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদের ভালো সম্পদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকো। আর মাযলূমের অভিশাপকে ভয় কর, কেননা তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল নেই’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮;ছহীহ মুসলিম, হা/১৯)।

>
[1]. মুত্তাফাকুন আলাইহি। ছহীহ বুখারী, হা/৪৪১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৯।
ঙ. ইসলাম গ্রহণকারীর প্রতিদান (ثواب مَنْ قَبِل الإسلام)

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِزْقًا قَالُوا هَذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (25)) ... [البقرة: 25]

‘এবং যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, এটা তো পূর্বে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পূতঃপবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৫)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا (107) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا (108)) ... [الكهف: 107 - 108].

‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। (১০৭) সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে চাইবে না’ (সূরা আল-কাহাফ: ১০৭-১০৮)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ (30) نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ (31) نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ (32)) [فصلت: 30 - 32].

‘নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে অবতীর্ণ হন এবং বলেন, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার ওয়াদাপ্রাপ্ত তোমরা হয়েছিলে। (৩০) ‘আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু ও আখেরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরও থাকবে যা তোমরা দাবী করবে। (৩১) পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩০-৩২)।

চ. ইসলাম গ্রহণ না করলে তার শাস্তি (عقوبة من لم يقبل الإسلام)

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِالْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا) [النساء: 115]

‘আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হেদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ’ (সূরা আন-নিসা: ১১৫)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا هِيَ حَسْبُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ (68)) [التوبة: 68].

‘আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের লা‘নত করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব’ (সূরা আত-তাওবা: ৬৮)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ (85)) ... [آل عمران: 85].

‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায়,তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)।

৪। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:

«وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لا يَسْمَعُ بِي أحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأَمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أرْسِلْتُ بِهِ، إِلا كَانَ مِنْ أصْحَابِ النَّارِ». أخرجه مسلم برقم (153)

সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইয়াহূদী হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার রিসালাতের খবর শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩)।

ছ. আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দানের পর মানুষের অবস্থা (أحوال الناس بعد الدعوة)

আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের পর মানুষ ঈমান আনবে অথবা আনবে না।

১। যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, তিনি তাদেরকে সুখ-দুঃখের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। আর মানুষও তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে ও কষ্ট দিবে, যাতে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী এবং মুমিন ও মুনাফিকের পরিচয় প্রকাশ পায়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ (2) وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ (3)) .. [العنكبوت: 2 - 3]

‘মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? (২) আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যে, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী’ (সূরা আল-আনকাবূত: ২-৩)।

২। যে ঈমান আনবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন শাস্তি দিবেন, যা অত্যধিক কঠিন এবং স্থায়ী। মুমিন হোক কিংবা কাফের প্রত্যেকেই কষ্ট পাবে। তবে, মুমিন শুরুতে যন্ত্রনা ভোগ করলেও দুনিয়া ও আখেরাতে প্রশংসনীয় সফলতা লাভ করবে। কিন্তু কাফের শুরুতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলেও দুনিয়াতে তাদের জন্য রয়েছে মন্দ পরিণাম ও আখেরাতে জাহান্নামে স্থায়ী যন্ত্রণা।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ (196) مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ ) ... [آل عمران: 196 - 197]

‘নগরসমূহে সেসব লোকের চলা-ফেরা তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে, যারা কুফরী করেছে। (১৯৬) অল্প ভোগ্যসামগ্রী। এরপর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম আর তা কতইনা মন্দ বিছানা’ (সূরা আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ بِهَا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ (55)) [التوبة: 55]

‘অতএব, তোমাকে যেন মুগ্ধ না করে তাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদি, আল্লাহ এর দ্বারা কেবল তাদের আযাব দিতে চান দুনিয়ার জীবনে এবং তাদের জান বের হবে কাফের অবস্থায়’ (সূরা আত-তাওবা: ৫৫)।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে