আল্লাহর দিকে আহবানকারী দা‘ওয়াতী কাজ করলে তিনি দু’টি অবস্থার মুখোমুখি হনঃ
(ক) মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া। যেমনটি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলায় হয়েছিল, যখন মদীনাবাসীরা তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন এবং তার আগমনে আনন্দিত হয়েছিলেন।
(খ) জনগণের সরে যাওয়া। যেমনটি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলায় হয়েছিল, যখন তায়েফের নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তার বিরুদ্ধে নির্বোধ ও শিশুদেরকে উস্কে দিয়েছিল, এমনকি তারা তাকে পাথর দিয়ে প্রহার করেছিল। মহান আল্লাহ তাঁর অলী-আউলিয়াকে তার শত্রুদের নিকট সমর্পণ করেন না। তবে, সর্বজ্ঞাত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো দাঈকে শিক্ষা দেন এবং কখনও কষনও তার মাধ্যমে অন্যকে শিক্ষা দেন।
মানুষের ব্যাপক সাড়া দাঈর জন্য বেশি কঠিক এবং মারাত্মক। এক্ষেত্রে তার অহংকার আসতে পারে, তাকে পদমর্যাদায় ভূষিত করার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। ফলে, তিনি দুনিয়ার ফিতনার সম্মুখীন হতে পারেন।
আর এগুলি দাঈকে দ্বীনের দা‘ওয়াত দেয়া থেকে বিরত রাখতে এবং দুনিয়া, ধন-সম্পদ, পদমর্যাদা ও বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে দ্বীন থেকে অন্যমনস্ক রাখতে শয়তানের অপচেষ্টা মাত্র।
তবে, জনগণ দূরে সরে গেলে এবং দা‘ওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তা দাঈর জন্য বেশি উত্তম এবং তার শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী। কেননা, এর মাধ্যমে দাঈ বেশি বেশি আল্লাহমুখী হয়। এর ফলে নেমে আসে আল্লাহর সাহায্য, যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল; যখন তায়েফবাসী তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং আল্লাহ তাকে জিবরীল (আ.) ও পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করেছিলেন। অতঃপর সসম্মানে তার মক্কায় প্রবেশের বিষয়টি তাঁর জন্য সহজ করেছিলেন। অতঃপর ইসরা ও মি‘রাজের মাধ্যমে তাকে সম্মানিত করেছিলেন। তারপর মদীনায় হিজরতের বিষয়টিও তার জন্য সহজ করেছিলেন। অবশেষে, ইসলামের বিজয় এবং যমীনে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটিও সহজ করে দিয়েছিলেন।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ (2) وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ (3)) [العنكبوت: 2 - 3]
‘মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? (২) আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে,আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যে, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী’ (সূরা আল-আনকাবূত: ২-৩)।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنّهَا قَالَتْ لِرَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: يَا رَسُولَ اللهِ! هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ؟ فَقَالَ: «لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ، وَكَانَ أَشَدّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ العَقَبَةِ، إذْ عَرَضْتُ نَفْسِي عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيلَ بْنِ عَبْدِ كُلاَلٍ، فَلَمْ يُجِبْنِي إلَى مَا أَرَدْتُ، فَانْطَلَقْتُ وَأَنَا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِي، فَلَمْ أَسْتَفِقْ إلاّبِقَرْنِ الثّعَالِبِ.فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلّتْنِي، فَنَظَرْتُ فَإذَا فِيهَا جِبْرِيلُ، فَنَادَانِي. فَقَالَ: إنّ الله عَزّ وَجَلّ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدّوا عَلَيْكَ، وَقَدْ بَعَثَ إلَيْكَ مَلَكَ الجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ. قَالَ: فَنَادَانِي مَلَكُ الجِبَالِ وَسَلّمَ عَلَيّ. ثُمّ قَالَ: يَا مُحَمّدُ! إنّ الله قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَأَنَا مَلَكُ الجِبَالِ، وَقَدْ بَعَثَنِي رَبّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرِكَ. فَمَا شِئْتَ؟ إنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الأَخْشَبَيْنِ». فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ الله مِنْ أَصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُد الله وَحْدَهُ، لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3231) , ومسلم برقم (1795)، واللفظ له
২। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জীবনে কি উহুদ দিবসের চেয়েও অধিকতর কঠিন কোন দিন এসেছে? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের হাতে ‘আক্বাবার’ দিন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা এরচেয়েও অধিকতর কঠিন ছিল, যখন আমি (আল্লাহর পানে দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে) ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল ইবনু আব্দে কিলালের কাছে নিজেকে পেশ করছিলাম। কিন্তু সে আমার কাঙ্ক্ষিত ডাকে সাড়া দেয়নি। তখন আমি অত্যন্ত বিষণ্ণ অবস্থায় সম্মুখের দিকে চলতে লাগলাম এবং কারনুছ-ছা‘আলিব নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সংজ্ঞা ফিরে পাইনি। তারপর যখন আমি মাথা উঠালাম, তখন দেখলাম, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়া দিয়ে রেখেছে এবং এর মধ্যে জিবরীল (আ.) কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, মহা মহিমান্বিত আল্লাহ আপনার ব্যাপারে আপনার সম্প্রদায়ের উক্তি এবং আপনার বিরুদ্ধে তাদের উত্তরও শুনেছেন এবং তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশ্তাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপারে যেরূপ ইচ্ছা সেরূপ আদেশ করেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশ্তাও আমাকে ডাক দিলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, ‘‘হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের উক্তি আল্লাহ তা‘আলা শুনেছেন। আমি পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা, আপনার রব আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার ইচ্ছামত আমাকে নির্দেশ দেন। আপনি কি করতে চান? (আপনি বললে) আমি এ পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপা দিয়ে দিব। তখন রাসূল(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: আমি বরং আশা করছি যে, আল্লাহ তা‘আলা হয়তো এদের ঔরশ থেকেই এমন ব্যক্তি বের করে আনবেন, যারা তার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে এক আল্লাহর ‘ইবাদত করবে (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৫)।