আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়া সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আর তা পরিত্যাগ করলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
১। দা‘ওয়াত পরিত্যাগ করার কারণে বিভিন্ন শাস্তি নির্ধারিত আছে। যেমন:
(ক) মানব জাতির স্থানে অন্য জাতিকে অধিষ্ট করা (الاستبدال): আল্লাহ বলেন:
(وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ (38)) ... [محمد: 38]
‘যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য কোন সম্প্রদায়কে স্থলাভিষিক্ত করবেন, এরপর তারা তোমাদের অনুরূপ হবে না’ (সূরা মুহাম্মাদ: ৩৮)।
(খ) অভিশপ্ত হওয়া ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া (اللعن والحرمان من رحمة الله): আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ (78) كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ (79)) ... [المائدة: 78 - 79]
‘বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে,তারা দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছে- তা এই কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত। (৭৮) তারা পরস্পরকে মন্দ হতে নিষেধ করত না, যা তারা নিজেরা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ! (সূরা আল-মায়েদা: ৭৮-৭৯)।
(গ) শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হওয়া (العداوة والبغضاء): আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّا نَصَارَى أَخَذْنَا مِيثَاقَهُمْ فَنَسُوا حَظًّا مِمَّا ذُكِّرُوا بِهِ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَسَوْفَ يُنَبِّئُهُمُ اللَّهُ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ ) [للمائدة: 14]
‘আর যারা বলে, আমরা নাছারা, আমি তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার একটি অংশ ভুলে গিয়েছিল। ফলে, আমি তাদের মাঝে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত শত্রুতা ও ঘৃণা উসকে দিয়েছি এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করবেন’ (সূরা আল-মায়েদা: ১৪)।
(ঘ) ধ্বংস ও বিনাশ হওয়া (التدمير والهلاك):
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ (44) فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (45)) ... [الأنعام: 44 - 45]
‘অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের উপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল, তার কারণে তারা উৎফুল্য হল, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল। (৪৪) অতএব, যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল। আর সকল প্রশংসা রব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য’ (সূরা আল-আন‘আম: ৪৪-৪৫)।
(ঙ) দলাদলি ও অনৈক্য সৃষ্টি হওয়া এবং দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তিভোগ (الفرقة والخلاف والعذاب في الدنيا والآخرة): আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (104) وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ (105)) [آل عمران: 104 - 105].
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (১০৪) আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৪-১০৫)।
২। মুসলিম জাতি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতী কাজ ত্যাগ করলে তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে:
(ক) দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা ও আখেরাতের গুরুত্ব না দেয়া:
(খ) ধন-সম্পদ, সময় ও চিন্তা-চেতনা দ্বীনের কাজে না লাগানো:
(গ) পার্থিব জীবনে কাফেরদের অনুকরণ করা এবং মুসলিম দেশে কাফেরদের জীবন পদ্ধতি আমদানীর উদ্দেশ্যেতাদের কাছে শিক্ষা করা।
৩। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতী কাজ করলে সকল প্রকার কল্যাণের দরজা উম্মুক্ত হবে। ফলে, ঈমান এবং সৎআমল মানব জীবনে প্রবেশ করবে। তাদের জীবনে আরো প্রবেশ করবে ধৈর্য, ক্ষমা, অনুগ্রহ, দয়া ইত্যাদি সদাচরণ। কাফেররা দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করবে, আর অবাধ্যরা প্রবেশ করবে আনুগত্যে। কিন্তু যখন আমরা দা‘ওয়াতী কাজ করব না, তখন অকল্যাণের সমস্ত দরজা উম্মুক্ত হবে। সব ধরনের অকল্যাণ ও অনিষ্ট প্রবেশ করবে এবং বিদায় নেবে যাবতীয় কল্যাণ।
ঈমান, সৎ-আমল ও উত্তম চরিত্র যখনবিদায় নিবে, তখন তদস্থলে কুফর, মন্দকর্ম ও দুশ্চরিত্র প্রবেশ করবে। অবশেষে মানুষ দলেদলে দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, যেমনভাবে তারা দলে দলে দ্বীনে প্রবেশ করেছিল। এটাই হচ্ছে,আল্লাহ তা‘আলার নিয়ম, আর তার নিয়মে কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (96)) [الأعراف: 96].
‘আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। ফলে,তারা যা অর্জন করত, তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৯৬)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تُطِيعُوا فَرِيقًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوكُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ كَافِرِينَ (100) وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنْتُمْ تُتْلَى عَلَيْكُمْ آيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ وَمَنْ يَعْتَصِمْ بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (101)) [آل عمران: 100 - 101]
‘হে মুমিনগণ! যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তোমরা যদি তাদের একটি দলের আনুগত্য কর, তাহলে তারা তোমাদের ঈমানের পর তোমাদেরকে কাফের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে। (১০০) আর কিভাবে তোমরা কুফরী কর, অথচ তোমাদের কাছে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে, তাকে অবশ্যই সরল পথের দিশা দেয়া হবে’(সূরা আলে ইমরান: ১০০-১০১)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ وَلَا يَجِدْ لَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ) [النساء: 123]
‘যে মন্দকাজ করবে, তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না’ (সূরা আন-নিসা: ১২৩)।