ঝ. আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের পদ্ধতি (كيفية الدعوة إلى الله)

দাঈ মানুষের নিকট নিম্নোক্ত হক্ব দায়িত্ব নিয়ে উপস্থিত হবে:

  • শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে এবং পর্যায়ক্রমেদা‘ওয়াতী কাজে অগ্রসর হবে
  • সহজ করবে ও সুসংবাদ দিবে
  • বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে ও কোমল আচরণ করবে
  • ভালবাসা ও দয়া প্রদর্শন করবে
  • হাসিমুখে কথা বলবে ও আন্তরিকতা বজায় রাখবে
  • আহবান করবে ও দু‘আ করবে
  • আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে
  • সম্মান ও বিনম্রতা বজায় রাখবে
  • ধৈর্য ধারণ করবে ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করবে
  • সু-ধারণা করবে। কেননা, কু-ধারণার মাধ্যমে নয়টি খারাপ ও ক্ষতিকর বিষয়ের উদ্ভব ঘটে। সেগুলি হলো: গোয়েন্দাগিরী, অতঃপর সন্দেহ, অতঃপর গীবত, অতঃপর চোগলখোরী, অতঃপর বিদ্বেষভাব পোষণ, অতঃপর শত্রুতা, অতঃপর সম্পর্কছিন্ন, অতঃপর অন্যের পিছে লেগে থাকা।
  • আমরা মানুষের যথাযথ প্রশংসা করে আন্তরিকতা সৃষ্টি করব। তাদের ভাল বিষয়সমূহ আলোচনা করব, তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিব, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখব। তাদের পছন্দনীয় বৈধ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিব। ফলে তারা আমাদেরকে ভালবাসবে, আমাদের কথা শুনবে, তারা আমাদের উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে, সর্বোপরি আমাদের দ্বীনি ব্যাপারে আগ্রহী হবে। অতঃপর আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হবে।
  • অতঃপর আমরা তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার মহানত্ব, তার নামসমুহ ও গুণাবলীর মহানত্ব ওমর্যাদা বর্ণনা করব, যাতে তারা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে।
  • অতঃপর আমরা আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত এবং তার বান্দাদের উপর তার অনুগ্রহ বিশেষ করে এই দ্বীনের মাধ্যমে তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তা বর্ণনা করব-যাতে তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ও তার আনুগত্য করে। তা হলে আল্লাহ তাদের প্রতি তার অনুগ্রহ বাড়িয়ে দিবেন।
  • অতঃপর আমরা তাদেরকে ইবাদত, সৃষ্টি, নামসমূহ ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার আহবান জানাব। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একক আনুগত্যের আহবান জানাব। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবংতার রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাড়া প্রকৃত কোন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব নেই।
  • অতঃপর আমরা রবের নিকট মানুষের মুখাপেক্ষীতা ও তাদের দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করব- যাতে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হয়।
  • অতঃপর ঈমান, সৎচরিত্র ও সৎ আমলের ফযীলত বর্ণনা করব।
  • তারপর জান্নাত ও তার স্থায়ী নেয়ামত, যা আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন, সে সম্পর্কে আমরা তাদেরকে বর্ণনা করব। আর কাফেরদের জন্য জাহান্নাম এবং এর মধ্যে যে শাস্তি আল্লাহ প্রস্ত্তত করে রেখেছেন, তার কথা বর্ণনা করব।

এসব বিষয় মানুষ যখন জানবে, তখন তাদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হবে, আগ্রহ সৃষ্টি হবে দ্বীনের উপর আমল করার এবং দা‘ওয়াতী কাজ করার। পাশাপাশি এসব বিষয়ে তাদের ধৈর্য ধারণ করা সহজ হবে।

  • দ্বীন প্রচার ও আল্লাহর কালিমা উড্ডীনের নিমিত্তে আমরা আমাদের সবকিছু ব্যয় করব। হক্ব প্রচারের জন্য আমরা আমাদের জীবন, ধন-সম্পদ, সময়, পরিবার-পরিজন, ঘর-বাড়ি, ইচ্ছা-আকাঙ্খাসহ সবকিছু উৎসর্গ করব; ঠিক যেমনটি করেছিলেন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম। অবশেষে আল্লাহ তার দ্বীনকে বিজয়ী করেছিলেন। এভাবে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি, দুনিয়ায় শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারব।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (100)) ... [التوبة: 100].

‘আর মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে স্থায়ী থাকবে। এটাই মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তাওবা: ১০০)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُولَئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ(88) أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ(89)) [التوبة: 88 - 89].

‘কিন্তু রাসূল ও তার সাথে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে, আর সে সব লোকদের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (৮৮) আল্লাহ তাদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাতসমূহ, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটিই মহা সফলতা’ (সূরা আত-তাওবা: ৮৮-৮৯)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ ) [آل عمران: 159]

‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।

৪। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ (102)) ... [الأنعام: 102]

‘তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। তিনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর তত্ত্বাবধায়ক’ (সূরা আল-আন‘আম: ১০২)।

৫। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا (21)) ... [الأحزاب: 21]

‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহর অনেক যিকর করে’ (সূরা আল-আহযাব: ২১)।