শরীরে প্রাণের উপস্থিতি যেমন জরুরী, তেমনি মানব জাতির জন্য দ্বীন ইসলাম অত্যাবশ্যক। শরীর থেকে প্রাণ বের হলে তা যেমন অকেজো হয়, তেমনি মানব জাতি দ্বীন হারালে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত সবই নষ্ট হয়। আর দেহের মাপ অনুযায়ী দুনিয়াতে ফাসাদ ও নোংরামি ছড়ায়। দ্বীন ব্যতীত মানুষ খালি কৌটার মত মূল্যহীন। মানুষ সঠিক দ্বীন থেকে বিচ্যুত হলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত ইচ্ছানুযায়ী জীবন যাপন করে, ফাসাদ সৃষ্টির ব্যাপারে হিংস্র জন্তুর মত হয়ে যায় এবং অনিষ্ট সাধন, অপকৌশল ও ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে শয়তানদের মত হয়ে যা। মহান আল্লাহ এই মানুষের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং তাকে অন্যদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। যেমনঃ তিনি তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, তার মাঝে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, ফেরেশতামণ্ডলী দ্বারা তার সামনে সেজদা করিয়ে নিয়েছেন, জ্ঞানের উপকরণ শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও বিবেক দিয়ে তাকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং তাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের দা‘ওয়াত দেওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছেন, যাতে দ্বীন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় এবং সকল মানুষ তাদের একমাত্র প্রভূর ইবাদত করতে পারে- যার কোন শরীক নেই। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের গুরুত্ব বিবেচনা করে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে বিস্তারিত ও পরিপূর্ণ বিবরণী পেশ করেছেন। বিভিন্ন যুগে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে নবীগণের জীবন-চরিত বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি নবীগণের জাতিদের সাথে তাঁদের ঘটনাবলি বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যেমন নূহ, হূদ, ছালেহ, ইবরাহীম, ইসমাঈল, মূসা, ঈসা, দাঊদ, সুলাইমান, লূত, শু‘আইব, ইউসুফ (আ.) প্রমুখের কাহিনী ।
দা‘ওয়াত হচ্ছে আমলের মূল। দা‘ওয়াতের গুরুত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের ইবাদতের কথা বিস্তারিত বর্ণনা করেননি, না ইবরাহীম (আ.)-এর ছালাত, না আদম (আ.)-এর হাজ্জ, না দাঊদ (আ.)-এর ছিয়াম। তবে, তিনি সংক্ষেপে এ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা কোন একজন নবীর ইবাদতের কাহিনীও কুরআনে বিস্তারিত বর্ণনা করেননি। অথচ তিনি নবীগণের দা‘ওয়াতী পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, তিনি মানুষের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দিতে তাঁদের জীবন-চরিত ও প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। এর কারণ হচ্ছে, এই মুসলিম উম্মতকে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের জন্য পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণই তাদের আদর্শ, যাতে তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবমণ্ডলীর নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের পথনির্দেশ অনুযায়ী চলতে পারে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (2)) [الجمعة: 2]
‘তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তিলাওয়াত করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন‘কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল’ (সূরা আল-জুমুআ': ২)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَالْمُسْلِمِينَ) [فصلت: 33]
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যিনি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন, সৎকর্ম করেন এবং বলেন যে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩৩)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْهَدَى اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ (36)) [النحل: 36]
‘আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এমর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর ত্বাগূতকে। অতঃপর তাদের মধ্য হতে আল্লাহ কাউকে হেদায়াত দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য হতে কারো উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, মিথ্যাবাদীদের পরিণতি কীরূপ হয়েছে’ (সূরা আন-নাহল: ৩৬)।