পরিবহনে কিংবা ভীতিকর অবস্থায় ক্বিবলামুখী না হ’লেও চলবে।[1] অবশ্য পরিবহনে ক্বিবলামুখী হয়ে ছালাত শুরু করা বাঞ্ছনীয়।[2] যখন পরিবহনে রুকূ-সিজদা করা অসুবিধা মনে হবে, তখন কেবল তাকবীর দিয়ে ও মাথার ইশারায় ছালাত আদায় করবে। সিজদার সময় মাথা রুকূর চেয়ে কিছুটা বেশী নীচু করবে।[3] যখন ক্বিবলা ঠিক করা অসম্ভব বিবেচিত হবে, কিংবা সন্দেহে পতিত হবে, তখন নিশ্চিত ধারণার ভিত্তিতে ক্বিবলার নিয়তে একদিকে ফিরে সামনে সুৎরা রেখে ছালাত আদায় করবে।[4] নৌকায় দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে, যদি ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকে।[5] এ সময় বা অন্য যে কোন সময় কষ্টকর দাঁড়ানোর জন্য কিছুতে ঠেস দেওয়া যাবে। [6]
[2] . আবুদাঊদ হা/১২২৪-২৮; নায়ল ২/২৯১ পৃঃ।
[3] . আবুদাঊদ হা/১২২৭; বায়হাক্বী, আহমাদ, তিরমিযী, ছিফাত ৫৫-৫৬ পৃঃ।
[4] . দারাকুৎনী, হাকেম, বায়হাক্বী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ইরওয়া হা/২৯১।
[5] . বাযযার, দারাকুৎনী, হাকেম, ছিফাত, পৃঃ ৫৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৭৭; নায়ল ৪/১১২।
[6] . আবুদাঊদ, হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩১৯; ইরওয়া হা/৩৮৩।
পীড়িতাবস্থায় দাঁড়াতে অক্ষম হলে কিংবা রোগবৃদ্ধির আশংকা থাকলে বসে, শুয়ে বা কাত হয়ে ছালাত আদায় করবে।[7] সিজদার জন্য সামনে বালিশ, টুল বা উঁচু কিছু নেওয়া যাবে না। যদি মাটিতে সিজদা করা অসম্ভব হয়, তাহ’লে ইশারায় ছালাত আদায় করবে। সিজদার সময় রুকূর চেয়ে মাথা কিছুটা বেশী নীচু করবে।[8] জানা আবশ্যক যে, শারঈ ওযর ব্যতীত ‘বসা মুছল্লী দাঁড়ানো মুছল্লীর অর্ধেক নেকী পেয়ে থাকেন’।[9]
[8]. ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৩।
[9]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২৪৯, ১২৫২, ‘কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন’ অনুচ্ছেদ-৩৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৯৮ ‘রাতের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩১।
মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এতে তার কত বড় পাপ রয়েছে, তাহ’লে তার জন্য সেখানে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হ’ত অতিক্রম করে চলে যাওয়ার চাইতে।[10] ইমাম ও সুৎরার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাদীছে ‘শয়তান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।[11] এজন্য কিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল, মানুষ বা যেকোন বস্ত্ত দ্বারা মুছল্লীর সম্মুখে সুৎরা বা আড়াল করতে হয়।[12] তবে জামা‘আত চলা অবস্থায় অনিবার্য কারণে মুক্তাদীদের কাতারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে।[13] সিজদার স্থান থেকে সুৎরার মধ্যে একটি বকরী যাওয়ার মত ফাঁকা রাখা আবশ্যক।[14] অতএব মসজিদে বা খোলা স্থানে মুছল্লীর সিজদার স্থান হ’তে একটি বকরী যাওয়ার মত দূরত্ব রেখে অতিক্রম করা যেতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম। উল্লেখ্য যে, সুৎরা না পেলে সম্মুখে রেখা টানার হাদীছ ‘যঈফ’। [15] আজকাল বিভিন্ন মসজিদে সুৎরা বানিয়ে রাখা হয়। যা মুছল্লীর সামনে রেখে যাতায়াত করা হয়। এটি সামনে দিয়ে যাবার শামিল এবং শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ নেই।
[11] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৭।
[12] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৩,৭৭৯,৭৭৭ ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ-৯।
[13] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৮০।
[14] . বুখারী হা/৪৯৬; মুসলিম হা/১১৩৪; ছিফাত, পৃঃ ৬২।
[15] . আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৭৮১।
(১) বুঝদার বালক
(২) অন্ধ ব্যক্তি
(৩) বসা ব্যক্তির ইমামত দাঁড়ানো ব্যক্তির জন্য
(৪) দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমামত বসা ব্যক্তির জন্য
(৫) নফল আদায়কারীর ইমামত ফরয আদায়কারীর জন্য
(৬) ফরয আদায়কারীর ইমামত নফল আদায়কারীর জন্য
(৭) তায়াম্মুমকারীর ইমামত ওযূকারীর জন্য
(৮) ওযূকারীর ইমামত তায়াম্মুমকারীর জন্য
(৯) মুক্বীমের ইমামত মুসাফিরের জন্য
(১০) মুসাফিরের ইমামত মুক্বীমের জন্য।[16]
ফাসিক ও বিদ‘আতীর পিছনে ছালাত আদায় করা মাকরূহ।[17] তবে বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয আছে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ لَكُمْ فَإِنْ أَصَابُوْا فَلَكُمْ وَإِنْ أَخْطَئُوْا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ ‘ইমামগণ তোমাদের ছালাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এক্ষণে তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে তোমাদের জন্য রয়েছে নেকী, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ’। [18] এ বিষয়ে মহান খলীফা ওছমান (রাঃ)-কে বিদ্রোহীদের দ্বারা গৃহে অবরুদ্ধ অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, الصلاةُ أحسنُ ما يعملُ الناسُ فإذا أحسنَ الناسُ فأَحْسِنْ معهم وإذا أَسَاؤُا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ ‘মানুষের শ্রেষ্ঠ আমল হ’ল ছালাত। অতএব যখন তারা ভাল কাজ করে, তখন তুমি তাদের সাথী হও। আর যখন তারা মন্দ কাজ করে, তখন তুমি তাদের মন্দ কাজ থেকে দূরে থাক’। হাসান বছরীকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, صَلِّ و عليه بِدْعَتُهُ ‘তুমি তার পিছনে ছালাত আদায় কর। আর বিদ‘আতের গোনাহ বিদ‘আতীর উপরে বর্তাবে’। যুহরী বলেন, বাধ্যগত অবস্থায় ব্যতীত আমরা এটা জায়েয মনে করতাম না’।[19] আল্লাহ বলেন, مَعَ الرَّاكِعِيْنَ وَارْكَعُوْا ‘তোমরা রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’(বাক্বারাহ ২/৪৩)। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন যে, তিন ব্যক্তির ছালাত কবুল হয়না। তার মধ্যে একজন হ’ল ঐ ইমাম, যাকে মুছল্লীরা পসন্দ করে না’। [20]
সুন্নাত অমান্যকারী ব্যক্তিকে ইমাম বানানো যাবে না। এমনকি ফাসিক ও বিদ‘আতী কোন লোককে মসজিদ কমিটির সভাপতি বা সদস্য করা যাবে না। কেননা এতে তাকে সম্মান দেখনো হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ‘মুনকার’ কিছু দেখলে তা যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান।[21]
[18] . বুখারী, মিশকাত হা/১১৩৩, ‘ইমামের কর্তব্য’ অনুচ্ছেদ-২৭।
[19] . বুখারী হা/৬৯৫-৯৬ (ফাৎহুল বারী সহ), ‘আযান’ অধ্যায়-১০, ‘বিদ‘আতী ও ফিৎনা গ্রস্তের ইমামতি’ অনুচ্ছেদ-৫৬, ২/২২০-২৩।
[20] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১১২২-২৩, ১১২৮, সনদ হাসান, ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬।
[21] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৭, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’ অনুচ্ছেদ-২২।
(ক) পুরুষ ও মহিলাদের ছালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। ছালাতে নারীরা পুরুষের অনুগামী।[22] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারী-পুরুষ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা সেভাবে ছালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’।[23] মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে তাঁর পিছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ও জুম‘আ আদায় করেছেন।[24]
(খ) তবে মসজিদে পুরুষের জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ও জুম‘আ আদায় করা তাদের জন্য ফরয নয়। [25] অবশ্য মসজিদে যেতে তাদেরকে বাধা দেওয়াও যাবে না। এ সময় তারা সুগন্ধি মেখে (বা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে) মসজিদে জামা‘আতে যেতে পারবে না।[26] মহিলাদের জন্য বাড়ীতে গৃহকোণে নিভৃতে একাকী বা জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা উত্তম।[27]
(গ) মহিলাগণ (নিম্নস্বরে) আযান ও ইক্বামত দিবেন এবং মহিলা জামা‘আতের প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবেন।[28] ফরয ও তারাবীহর জামা‘আতে তাদের ইমামতি করার স্পষ্ট দলীল রয়েছে।[29] মা আয়েশা (রাঃ) ও উম্মে সালামাহ (রাঃ) প্রমুখ মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করতেন। [30] বদর যুদ্ধের সময় উম্মে ওয়ারাক্বাহ (রাঃ)-কে তার পরিবারের ইমামতি করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার জন্য একজন বৃদ্ধ মুওয়াযযিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।[31] অন্য বর্ণনায় খাছভাবে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে তার পরিবারের মহিলাদের ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন’।[32]
(ঘ) মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না।[33] কেননা আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। তাছাড়া এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন নির্দেশ নেই এবং তাঁর ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোন নযীর বা প্রচলন নেই। আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সময় যা দ্বীন ছিল না, পরে তা দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না।[34]
[23] . বুখারী, মিশকাত হা/৬৮৩ ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬।
[24] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৯ ‘খুৎবা ও ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪৫।
[25] . আবুদাঊদ হা/৫৬৭, ৫৭০; আহমাদ হা/২৭১৩৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭১।
[26] . আবুদাঊদ হা/৫৬৫; মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৯-৬১ ‘জামা‘আতে ছালাত ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭১।
[27] . আবুদাঊদ হা/৫৬৭, ৫৭০; মিশকাত হা/১০৬২-৬৩।
[28] . ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ (ছান‘আ, ইয়ামন : ১৪১১/১৯৯১) ১/৩২২ পৃঃ।
[29] . আবুদাঊদ হা/৫৯১, দারাকুৎনী প্রভৃতি ইরওয়া হা/৪৯৩; নায়ল ৪/৬৩।
[30] . বায়হাক্বী, ১/৪০৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১, ১৭৭।
[31] . আবুদাঊদ হা/৫৯১-৯২; ছহীহ ইবনু খুযায়মা, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩২২; নায়ল ৪/৬৩ ; ইরওয়া হা/৪৯৩।
[32] . দারাকুৎনী হা/১০৭১, সনদ যঈফ।
[33] . আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩১২।
[34] . আহমাদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/১৬৫ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ-৫।
(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-কে দু’বার মদ্বীনার ইমামতির দায়িত্ব দেন।[35] অন্ধ ছাহাবী উৎবান বিন মালেক (রাঃ) তার কওমের ইমামতি করতেন। [36]
(খ) আবু হুযায়ফা (রাঃ)-এর গোলাম সালেম ক্বোবা-র ‘আছবাহ (العصبة) নামক স্থানে হিজরতের পূর্বে মুসলমানদের ইমামতি করতেন। ওমর ও আবু সালামা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী তার মুক্তাদী হ’তেন।[37] হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গোলাম আবু ‘আমর মুক্ত হওয়ার পূর্বে লোকদের ইমামতি করতেন (মুসনাদে শাফেঈ)।
(গ) ‘আমর বিন সালামাহ বিন ক্বায়েস (রাঃ) ভাল ক্বারী হওয়ার কারণে ৬, ৭ বা ৮ বছর বয়সে ইমামতি করেছেন।[38]
[36] . বুখারী, নাসাঈ, নায়লুল আওত্বার ৪/৫৭-৫৮, ‘অন্ধের ইমামত’ অনুচ্ছেদ।
[37] . বুখারী, মিশকাত হা/১১২৭ ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬; নায়লুল আওত্বার ৪/৫৯।
[38] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ প্রভৃতি; নায়ল ৪/৬৩; বুখারী, মিশকাত হা/১১২৬।
(১) বালক বা কিশোর হলেও ক্বিরাআতে পারদর্শী ব্যক্তিই ইমামতির প্রথম হকদার। (২) ইলমে হাদীছে পারদর্শী ও সুন্নাতের পাবন্দ ব্যক্তি। (৩) সেদিকে সমান হ’লে বয়সে যিনি বড় তিনিই ইমাম হবেন।[39]
ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়, কেবল তাঁকে অনুসরণ করার জন্য’।[40] ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদী তাকবীর, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরাবে। [41] বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সিজদায় গিয়ে মাটিতে চেহারা না রাখা পর্যন্ত আমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পিঠ ঝুঁকাতো না।[42] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুক্তাদী যদি ইমামের আগে মাথা উঠায় (অর্থাৎ রুকূ-সিজদা থেকে বা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়), তবে (ক্বিয়ামতের দিন) তার মাথা হবে গাধার মাথা’ (অর্থাৎ তার ছালাত কবুল হবে না)। [43]
ইমামের অনুসরণ হবে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যাওয়ার জন্য। যেমন তাকবীর, রুকূ, ক্বিয়াম, সুজূদ, সালাম ইত্যাদি সময়ে। এর অর্থ এটা নয় যে, ইমাম সুন্নাত তরক করলে মুক্তাদীকেও সুন্নাত তরক করতে হবে। অতএব ইমাম বুকে হাত না বাঁধলে বা সশব্দে আমীন না বললে বা রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করলেও মুক্তাদী ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী সেগুলি আমল করবেন। এর ফলে তিনি সুন্নাত অনুসরণের নেকী পাবেন। ওযরের কারণে ইমাম বা কোন মুক্তাদী বসে পড়তে পারেন। কিন্তু অন্যেরা দাঁড়িয়ে পড়বেন।[44] ইমাম অবশ্যই প্রথম রাক‘আত তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ করবেন। ওযূ টুটে গেলে তিনি তাঁর পিছন থেকে একজনকে ইমামতি দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। ইমাম যদি ভুলবশত: নাপাক অবস্থায় ইমামতি করে থাকেন, তাহ’লে জামা‘আত শেষে পাক হয়ে তিনি তা পুনরায় পড়বেন। কিন্তু মুক্তাদীদের পুনরায় পড়তে হবে না।[45]
[41] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৭।
[42] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৬।
[43] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৪১, ১১৩৮।
[44]. বুখারী, মিশকাত হা/১১৩৯; মির‘আত ৪/৮৯।১৪৬ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
[45] ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮০।
ইমাম ক্বছর করলে মুক্বীম পুরা পড়বেন এবং ইমাম পুরা পড়লে মুসাফির পুরা পড়বেন। যদিও কিছু অংশ পান।[46] কেউ কোথাও গেলে সেই এলাকার লোকই ইমামতি করবেন।[47] তবে তাদের অনুমতিক্রমে তিনি ইমামতি করতে পারবেন। [48]
[47] . মুসলিম, আবুদাঊদ হা/৫৯৬; মিশকাত হা/১১২০।
[48] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১১৭, ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬।