(ক) দু’জন মুছল্লী হলে জামা‘আত হবে। ইমাম বামে ও মুক্তাদী ডাইনে দাঁড়াবে।[49] তিনজন মুছল্লী হলে ইমাম সম্মুখে এবং দু’জন মুক্তাদী পিছনে দাঁড়াবে।[50] তবে বিশেষ কারণে ইমামের দু’পাশে দু’জন সমান্তরালভাবে দাঁড়াতে পারেন। তার বেশী হ’লে অবশ্যই পিছনে কাতার দিবেন।[51] সামনের কাতারে পুরুষগণ ও পিছনের কাতারে মহিলাগণ দাঁড়াবেন। [52] পুরুষ সকলের ইমাম হবেন। কিন্তু নারী কখনো পুরুষের ইমাম হবেন না। নারী ও পুরুষ কখনোই পাশাপাশি দাঁড়াবেন না। দু’জন বয়স্ক পুরুষ, একটি বালক ও একজন মহিলা মুছল্লী হ’লে বয়স্ক একজন পুরুষ ইমাম হবেন। তাঁর পিছনে উক্ত পুরুষ ও বালকটি এবং সকলের পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। আর যদি দু’জন পুরুষ ও একজন মহিলা হন, তাহ’লে ইমামের ডাইনে পুরুষ মুক্তাদী দাঁড়াবেন এবং পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। [53] একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হ’লে সামনে পুরুষ ও পিছনে মাহিলা দাঁড়াবেন। ইমামকে মধ্যবর্তী ধরে কাতার ডাইনে ও বামে সমান করতে হবে। তবে ডাইনে সামান্য বৃদ্ধি হবে। কিন্তু কোনক্রমেই ডান প্রান্ত থেকে বা মসজিদের উত্তর দেওয়াল থেকে ২য় ও পরবর্তী কাতার সমূহ শুরু করা যাবে না। প্রয়োজনে ইমাম উঁচুতে ও মুক্তাদীগণ নীচে দাঁড়াতে পারেন।[54] ইমামের আওয়ায পৌঁছলে এবং ইক্তেদা সম্ভব হ’লে ইবনু হাজার বলেন, ইমাম নীচে থাকুন বা উপরে থাকুন ছালাত আদায় করা জায়েয।[55] তবে ইমামের নীচে থাকাই উত্তম। এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বার জামা‘আতে ইমাম বা মুক্তাদী হিসাবে যোগদান করতে পারেন। তখন দ্বিতীয়টি তার জন্য নফল হবে। [56] ইমাম অতি দীর্ঘ করলে কিংবা অন্য কোন বাধ্যগত কারণে মুক্তাদী সালাম ফিরিয়ে জামা‘আত ত্যাগ করে একাকী শুরু থেকে ছালাত আদায় করতে পারবেন।[57]
(খ) কাতার সোজা করা (تسوية الصفوف)
সম্মুখের কাতারগুলি আগে পূর্ণ করতে হবে।[58] কেননা ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মুখে এভাবেই কাতার দিয়ে থাকেন। [59] কাতার সোজা করতে হবে এবং কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কেননা কাতার সোজা করা ছালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত’। [60] আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে আমাদের কাঁধগুলিতে হাত দিয়ে পরস্পরে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ ‘তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের অন্তরগুলি বিভক্ত হয়ে যাবে’।[61] আনাস (রাঃ) বলেন, وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ قَدَمَهُ بِقَدَمِهِ ‘আমাদের মধ্য থেকে একজন পরস্পরের কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দিতেন’। ছাহাবী নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ بِكَعْبِهِ ‘অতঃপর দেখলাম যে, একজন ব্যক্তি মুছল্লীদের পরস্পরের কাঁধে কাঁধ, হাঁটুতে হাঁটু ও গোড়ালিতে গোড়ালি মিলিয়ে দিচ্ছেন’।[62] যার ভিত্তিতে ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে- بَابُ إِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِى الصَّفِّ ‘ছালাতের কাতারে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো অনুচ্ছেদ’। [63]
এখানে পা মিলানো অর্থ পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দেওয়া। যাতে কোনরূপ ফাঁক না থাকে এবং কাতারও সোজা হয়। বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّوْا ‘তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরস্পরে ভালভাবে (কাঁধ ও পা) মিলাও’।[64] আবুদাঊদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ... وَلاَ تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ ‘কাঁধগুলি সমান কর ও ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের জন্য কোন জায়গা খালি ছেড়োনা’। ‘কেননা আমি দেখি যে, শয়তান ছোট কালো বকরীর ন্যায় (كأَنَّها الْحَذَفُ) তোমাদের মাঝে ঢুকে পড়ে’। [65] ইবনু হাজার বলেন, নু‘মান বিন বাশীরের বর্ণনার শেষাংশে كَعْبَه بكَعْبِه ‘গোড়ালির সাথে গোড়ালি’ কথাটি এসেছে। এর দ্বারা পায়ের পার্শ্ব বুঝানো হয়েছে, পায়ের পিছন অংশ নয়, যেমন অনেকে ধারণা করেন’।[66] এখানে মুখ্য বিষয় হ’ল দু’টি: কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা। অতএব পায়ের সম্মুখভাগ সমান্তরাল রেখে পাশাপাশি মিলানোই উত্তম।
পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী স্ব স্ব কাতারে দু’পা স্বাভাবিক ফাঁক করে দাঁড়াবেন। যাতে পায়ের মাঝখানে নিজের জুতা জোড়া রাখা যায়। [67] দেহের ভারসাম্যের অধিক পা ফাঁক করবেন না। মহিলা মুছল্লী তার দুই গোড়ালি একত্রিত করে দাঁড়াবেন না। এগুলি স্রেফ কুসংস্কার মাত্র। পরস্পরে কাঁধ, হাঁটু ও গোড়ালি মিলানোর কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করে বানোয়াট যুক্তিতে নিয়মিতভাবে পরস্পরে পা ফাঁক করে কাতার দাঁড়ানোর মধ্যে কোন নেকী নেই, স্রেফ গোনাহ রয়েছে। এই বাতিল রেওয়াজ থেকে দ্রুত তওবা করে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাই ভাই হয়ে কাতার দাঁড়ানো কর্তব্য।
উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝখানে কাতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।[68]
(গ) ১ম কাতারের নেকী :
১ম কাতারে নেকী বেশী। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি লোকেরা জানতো ১ম কাতারে কি নেকী আছে, তাহ’লে তারা লটারী করত। [69] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[70] অবশ্য ১ম কাতারে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণ ইমামের নিকটবর্তী থাকবেন, অতঃপর মর্যাদা অনুযায়ী অন্যান্যগণ। এ সময় মসজিদে বাজারের মত শোরগোল করা নিষেধ (إِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ)। [71]
(ঘ) একাকী কাতারের পিছনে না দাঁড়ানো :
কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়াবে না। কেননা অনুরূপভাবে ছালাত আদায়ের কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে বলেন।[72] তবে সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় পিছনে একাকী দাঁড়ানো জায়েয আছে। [73]
[50] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১০৭, অনু-২৫।
[51] . নাসাঈ হা/১০২৯; আবুদাঊদ হা/৬১৩।
[52] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৯২; আবুদাঊদ হা/৬৭৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৮।
[53] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১০৮, ১১০৯, অনুচ্ছেদ-২৫; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩০৮।
[54] . আবুদাঊদ হা/৫৯৭, অনুচ্ছেদ-৬৭।
[55] . ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৫৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৯-৮০।
[56] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৮।
[57] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৩৩ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; মির‘আত ৪/১৩৯।
[58] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৯৪, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[59] . আবুদাঊদ হা/৬৬১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৪।
[60] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[61] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[62] . আবুদাঊদ হা/৬৬২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৪।
[63] . বুখারী হা/৭২৫, ফৎহুল বারী, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৭৬।
[64] . বুখারী হা/৭১৯, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৭২; ঐ, মিশকাত হা/১০৮৬ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪; মির‘আত ৪/৪।
[65] . আবুদাঊদ হা/৬৬৬-৬৭; মিশকাত হা/১১০২, ১০৯৩, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[66] . আবুদাঊদ হা/৬৬২; বুখারী হা/৭২৫; ফাৎহুল বারী, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, ‘কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো’ অনুচ্ছেদ-৭৬, ২/২৪৭ পৃঃ।
[67] . আবুদাঊদ হা/৬৫৪-৫৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯০।
[68] . আবুদাঊদ হা/৬৭৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৫।
[69] . বুখারী হা/৭২১ (ফাৎহুল বারী সহ), মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৮, ‘ছালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।
[70] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[71] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৮৮-৮৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[72] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১১০৫ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[73] . বাক্বারাহ ২/২৮৬, তাগাবুন ৬৪/১৬; নায়ল ৪/৯২-৯৩ পৃঃ।