রসূলগণের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা।

ব্যাখ্যা: কতেক রসূলকে অস্বীকার করা এবং কতিপয়ের প্রতি ঈমান আনা আহলে কিতাবদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

মূর্তিপূজক ও মুশরিকরা রসূলগণের প্রতি আদৌ ঈমান আনে না। বরং সকল রসূলকে অস্বীকার করে।

অন্যদিকে ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করে। আর খ্রিষ্টানরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করে। আর যে একজন নাবীকে অস্বীকার করে সে মূলতঃ সকল নাবী-রসূলকেই অস্বীকার করে। কেননা, নাবী-রসূলগণের পন্থা একই এবং দীন একটিই। তারা পরস্পর ভাই ভাই। তাই একজনকে অস্বীকার করার কারণে সকলকেই অস্বীকার করা হয়। যারা রসূলকে অস্বীকার করে আর কতিপয়ের প্রতি ঈমান আনে তাদের ক্ষেত্রে দলীল-প্রমাণ একই তথা সকলকেই তারা অস্বীকার করে। সুতরাং তাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ) [البقرة: 136] ، (آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ) [البقرة: 285]

তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর এবং যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নাবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত। রসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তার রসূলগণের উপর, আমরা তার রসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:১৩৬,২৮৫)।

অর্থাৎ আমরা কোন রসূলের মাঝে পার্থক্য করি না। ঈমানের ছয়টি রুকনের একটি হলো সকল রসূলের প্রতি ঈমান আনা, যা হাদীছে জিবরাঈলে বর্ণিত হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে সংবাদ দিন। তখন তিনি জবাবে বলেন,

أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر، وتؤمن بالقدر خيره وشره

আল্লাহ, তার ফেরেশতামন্ডলী, আসমানী কিতাবসমূহ, তার সকল রসূল, আখেরাত এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখাই হলো ঈমান।[1]

এসব বিষয়ের আংশিকের প্রতি ঈমান আনা যথেষ্ট নয়। বরং সবগুলোর প্রতিই ঈমান আনতে হবে। এসবের কোন একটি অস্বীকার করলে সবগুলোই অস্বীকার করা হবে। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوحٍ الْمُرْسَلِينَ)

নূহ-এর সম্প্রদায় রসূলগণকে অস্বীকার করেছিল (সূরা আশ-শু‘আরা ২৬:১০৫)।

(كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ)

‘আদ জাতি রসূলগণকে অস্বীকার করেছিল (সূরা আশ-শু‘আরা ২৬:১২৩)।

(كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ)

সামূদ জাতি রসুলগণকে অস্বীকার করেছিল (সূরা আশ-শু‘আরা ২৬:১৪১)।নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতি ও আদ সম্প্রদায় তাদের নাবীকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করতো। তাদের নিজ নিজ নাবীকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করার কারণে মূলতঃ তারা সকল নাবী-রসূলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো।

>
[1]. ছ্বহীহ বুখারী ৫০, ছ্বহীহ মুসলিম ১০।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে