আল্লাহর নাযিলকৃত আংশিক বিধানের প্রতি ঈমান আনা

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কতিপয় বিধান ছাড়াই আংশিক বিধানের প্রতি ঈমান আনা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের রীতি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرائيلَ لا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْناً وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلاً مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ لا تَسْفِكُونَ دِمَاءَكُمْ وَلا تُخْرِجُونَ أَنْفُسَكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنْتُمْ تَشْهَدُونَ ثُمَّ أَنْتُمْ هَؤُلاءِ تَقْتُلُونَ أَنْفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقاً مِنْكُمْ مِنْ دِيَارِهِمْ تَظَاهَرُونَ عَلَيْهِمْ بِالْأِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَإِنْ يَأْتُوكُمْ أُسَارَى تُفَادُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ) [البقرة: 83، 84، 85]

আর যখন আমি বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতিত কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, ছ্বলাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা ফিরে গেলে। আর তোমরা (স্বীকার করে অতঃপর তা থেকে) বিমুখ হও। আর যখন আমি তোমাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা নিজদের রক্ত প্রবাহিত করবে না এবং নিজদেরকে তোমাদের গৃহসমূহ থেকে বের করবে না। অতঃপর তোমরা স্বীকার করে নিলে। আর তোমরা তার সাক্ষী। অতঃপর এই তোমরাই তো নিজদেরকে হত্যা করছ আর তোমাদের মধ্য থেকে একটি দলকে তাদের গৃহ থেকে বের করে দিচ্ছ। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে তাদের বিরূদ্ধে সহায়তা করছ। তারা যদি বন্দী হয়ে তোমাদের নিকট আসে, তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে মুক্ত কর। অথচ তাদেরকে বের করা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:৮৩-৮৫)।

কিতাবের কতিপয় বিধানের প্রতি ঈমান আনা বলতে সহজ বিধানকে গ্রহণ করা এবং আংশিক বিধান অস্বীকার করা। অর্থাৎ মানুষ হত্যা করা এবং তাদেরকে বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়াকে বৈধ মনে করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ أُولَئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ فَلا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ) [البقرة: 85، 86]

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ব্যতীত তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামত দিবসে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে খরিদ করেছে। সুতরাং তাদের থেকে আযাবকে হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:৮৫-৮৬)।

যারা আংশিক বিধানের প্রতি ঈমান আনে এবং আংশিক অস্বীকার করে; এটা হলো তাদের প্রতিফল। কেননা, কিতাবের পূর্ণবিধানের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজীব। কু-প্রবৃত্তির অনুসরণে যা অনুকূল হয় তা গ্রহণ এবং কু-প্রবৃত্তি ও ইচ্ছা বিরোধী হলে তা বর্জন করা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান এবং যারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কু-প্রবৃত্তি অনুযায়ী কিতাবের আংশিক গ্রহণ ও আংশিক বর্জন করে, এটা তাদেরই বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,

(أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لا تَهْوَى أَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقاً كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقاً تَقْتُلُونَ) [البقرة: 87]

তবে কি তোমাদের নিকট যখনই কোন রসূল এমন কিছু নিয়ে এল, যা তোমাদের মনঃপূত নয়, তখন তোমরা অহঙ্কার করেছ, অতঃপর (নাবীদের) একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছে আর একদলকে হত্যা করেছে (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:৮৭)।

অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট যে বিধান নিয়ে এসেছেন তা তাদের কু-প্রবৃত্তি অনুসারে হলে তারা সেটা গ্রহণ করে এবং কু-প্রবৃত্তি বিরোধী হলে বর্জন করে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তাদের নিকট তা সহজ মনে না হলে রসূলের বিরূদ্ধে তারা অবস্থান নিত। হয়তো তাকে তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো, আর না হয় তাকে হত্যা করতে উদ্যত হতো। আমরা এ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এখানে মুসলিমদের জন্য উপদেশ রয়েছে, যাতে তারা ঐসব জাহিলদের মত কর্ম-কান্ডে লিপ্ত না হয়। এমনটা করলে মুসলিমরা তাদের মতই বিপদগ্রস্ত হবে।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে