জিবত ও ত্বাগুতের প্রতি বিশ্বাস রাখা।

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيباً مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ) [النساء: 51]

তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে (সূরা আন নিসা ৪:৫১)।

জিবত হলো যাদু, কারো মতে, শয়তান। যারা আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারাই ত্বাগূত।

আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন যে, তারা মুসলিমদের সাথে লড়াই করবে না। মদিনায় যারা থেকে যেতে ইচ্ছুক তাদেরকে বিতাড়িত করবে না। এ বিষয়ের উপর তারা অঙ্গীকার করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার ছাহাবীদের বিপক্ষে ইয়াহুদীদের ক্ষমতা সঙ্কুচিত হলে তারা দেখলো যে, ইসলাম সাহায্য প্রাপ্ত হচ্ছে ও বিস্তার লাভ করছে, তখন ইয়াহুদীদের নেতা মক্কার কুরাইশদের কাছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানায়। আর সে তাদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরূদ্ধে যুদ্ধে বের হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে কুরাইশদেরকে উদ্বুদ্ধ করলেন। কুরাইশরা তাদেরকে বললো, তোমরা আহলে কিতাব; তাহলে কারা হকের উপর আছে, আমরা নাকি মুহাম্মাদ?

কুরাইশরা এটাও বললো, তোমরা তার বিরোধিতা করছো কেন? তারা জবাবে বলে, আমরা মেহমানকে সম্মান করি, আত্মীয়ের সাথে সদাচারণ করি, হাজীদেরকে পানি পান করাই এবং আরো অনেক ভাল কাজ করি। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রভুকে গালি দেয়, আমাদের দীনের দোষারোপ করে, আমাদের বাপ-দাদার বিরোধিতা করে এবং সে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে; এরূপ আরো অনেক কাজ করে। অতঃপর তারা তাদেরকে বললো, তোমরা হক্বের উপর আছো আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছে বাতিলের উপর। অথচ তারা জানতো, মুহাম্মাদই হক্বের উপর রয়েছে। তিনি আল্লাহর রসূল আর তারা হচ্ছে প্রতিমা-মূর্তি পূজারী।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বলেন,

(أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيباً مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَؤُلاءِ أَهْدَى مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلاً) [النساء: 51]

তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে, এরা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত (সূরা নিসা ৪:৫১)।

তারা শুধু মন্তব্য করেছিল, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা কিভাবে বলেন,

(يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ)

আসলে বাহ্যিকতার উপর ভিত্তি করেই তারা ঈমান নামকরণ করেছিল। সুতরাং বুঝা গেল কাফিররা যে রীতির উপর বহাল আছে তার অনুকূলে কথা বলাও কুফরী; যদিও আন্তরিকভাবে তা বিশ্বাস করা না হয়।

বর্তমানে কেউ বলে, (মুরজিয়া সম্প্রদায়), অন্তরে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত কুফরী কথা বললে, জবরদস্তি ছাড়াই কুফরী কথা উচ্চারণ করলে, কুফরী কাজ করলে, আল্লাহ ও তার রসূলকে গালি দিলে এবং যে কোন প্রকার কুফরী করলেই মুরজিয়াদের নিকট তাকে কাফির বলা যাবে না যতক্ষণ না জানা যায় তার অন্তরে কি আছে। এটাই মুরজিয়া সম্প্রদায়ের বাড়াবাড়ি মূলক কথা। আমরা এ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা

(يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ) [النساء: 51]

তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে (সূরা নিসা ৪:৫১)।

এ আয়াতাংশ দ্বারা ঐসব লোকদের দোষ বর্ণনা করেছেন, যারা বাহ্যিক দৃষ্টিতে জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনেনি, বরং আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতো তারা ভুল পথে আছে এবং মুহাম্মাদ সঠিক পথে আছেন। কিন্তু প্রধান প্রধান ব্যক্তিবর্গ বাহ্যিকভাবে রসূলের সাথে হিংসা ও শত্রুতা বজায় রাখার জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করতো। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কাফির বলে আখ্যা দিয়েছেন। কাউকে কাফির আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তাদের কথা প্রত্যাখ্যাত, যারা বলে, কুফরী কথা বললে, কুফরী কর্ম করলে, আল্লাহ ও তার রসূলকে গালি দিলেই তৎক্ষণাৎ মানুষকে কাফির বলা যাবে না, যতক্ষণ না আন্তরিকভাবে তারা তা স্বীকার করে। এ ভ্রষ্টতা থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে