নাবীগণের বংশধর হওয়ার কারণে অহংকার করা। এব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ
সেটা এমন এক উম্মত যা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্যই, (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:১৩৪)।
.........................................
ব্যাখ্যা: বনী ইসরাঈলের কর্মকান্ড হলো নাবীগণের বংশধর হওয়ার কারণে তারা অহংকার করতো, কিন্তু তাদের অনুসরণ করতো না। বিশেষত শেষ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেও তারা অনুসরণ করতো না। অথচ তাদের উপর ওয়াজীব ছিল যে, তার অনুসরণ করা। তারা বলতো, আমরা নাবীগণের বংশধর এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তারা তাদের অনুসরণ করতো না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন,
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ
সেটা এমন এক উম্মত যা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্যই, (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:১৩৪)।
মানুষকে তার নিজের আমল দিয়েই মূল্যায়ন করা হবে; অন্যের আমল দিয়ে নয়। নাবীগণ হলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ। কিন্তু তাদের অনুসরণ না করলে তারা তাদের বংশধরদের কোন কাজেই আসবে না। নাবীগণের আমল নাবীদের উপরই বর্তাবে আর বংশধরদের আমল তাদের নিজেদের উপরই বর্তাবে। অনুরূপভাবে যারা তাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের কৃতিত্ব নিয়ে অহংকার করে তারা ধারণা করে যে, বাপ-দাদারা সৎ ও আলেম হওয়ার কারণে আমলের চেয়ে তারাই যথেষ্ট। অনুরূপভাবে বাইতুল্লাহর অধিবাসীরাও নিজেদেরকে বাইতুল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করে ধারণা করে যে, সৎ আমলের চেয়ে বাইতুল্লাহর অধিবাসী হওয়াই যথেষ্ট। এটাই হলো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি
অনুরূপভাবে যারা নাবীর আমল অথবা মর্যাদা অথবা ওলী-আওলীয়া ও নেকলোকদের আমলকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের সাথে অন্যের আমলের সম্পর্ক কি? তাদের আমল তাদের জন্যই নির্ধারিত, আমাদের আমল আমাদের জন্যই নির্ধারিত। ঐ নেকলোকদের আমল আমাদের জন্য কাজে আসবে না। কিয়ামতের দিন কেউ কারো উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَا كَسَبْتُمْ وَلا تُسْأَلونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ) [البقرة:134]
তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্যই, আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্যই। আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:১৩৪)।
নিজেদের জন্য আমল করা ব্যতীরেকেই যারা আওলীয়া, নেকলোক ও তাদের আমলকে ওসীলা হিসাবে গ্রহণ করে অথবা নেকলোক ও নাবীদের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করা অথবা তাদের নৈকট্য লাভ করা করা যথেষ্ট মনে করে এ আয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يا معشر قريش، اشتروا أنفسكم، لا أغني عنكم من الله شيئاً، يا عباس عم رسول الله، يا صفية عمة رسول الله، لا أغني عنكم كمن الله شيئاً، يا فاطمة بنت محمد، سليني من مالي ما شئت، لا أغني عنك من الله شيئاً
হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা আত্ম রক্ষা কর। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না। হে রসূলের চাচা আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না। হে সাফিয়া! আল্লাহর রসূলের ফুফু, আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না। হে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না।[1]
অতঃপর রসূল বলেন, আমি মানুষের চেয়ে আল্লাহর অধিক নৈকট্য অর্জনকারী। আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারবো না। তাই রসূল অথবা রসূলের নৈকট্য অথবা আওলীয়া ও নেকলোকদের নৈকট্যর দিকে সম্পৃক্ত করা অথবা তাদের মর্যাদাকে ওসীলা হিসাবে গ্রহণ করা কিয়ামতের দিন কারো কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
(يَوْمَ لا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِنَفْسٍ شَيْئاً وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِلَّهِ) [الانفطار:19]
সেদিন কেউ কারো কোন কিছুর ক্ষমতা রাখবে না। আর সেদিন সকল বিষয় হবে আল্লাহর কর্তৃত্বে (সূরা ইনফিতার ৮২:১৯)। তিনি আরো বলেন,
(يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ) [عبس: 34- 37]
সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও তার বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে; সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুতর অবস্থা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে (সূরা আবাসা ৮০:৩৪-৩৭)।কিয়ামতের দিন প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এমনকি ঈসা আলাইহিস সালাম বলবেন, হে রব! আমার প্রসবকারিণী মাতা মারইয়ামের ব্যাপারে তোমার নিকট কোন সাহায্য চাচ্ছি না। আমি নিজের মুক্তির জন্যই সাহায্যে চাই।
>