হক্ব ও বাতিল যাই হোক দলের পক্ষপাতিত্ব করা, যা জাহিলরা নিজেদের জন্য আবশ্যক করে নিয়েছে। এব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা যথাযথভাবে তার বাণী উল্লেখ করেছেন।

......................................

ব্যাখ্যা: ঘৃণিত পক্ষপাতিত্ব হলো অহংকার ও সীমালঙ্ঘন করতঃ বাতিল-মিথ্যাকে জানার পরও তার উপর অটল থাকা এবং ব্যক্তি অথবা গোত্রের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে হক্ব অথবা বাতিল-মিথ্যার উপর বহাল থাকা, যা জাহিলী কর্ম।

জাহিলী কবি বলেন, (غَوَيْتُ وإنْ تَرْشَدْ غزية أَرْشد ... وما أنا مِنْ غزية إن غَوَتْ) দেখাও যদি অভিযানের পথ* দেখাবো আমিও গোমরাহীর পথ* কেউ ভ্রষ্ট হলে, নেইকো আমি অভিযানের দলে। এব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেন,

(وَلا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا) [المائدة: 8]

কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না (সূরা আল-মায়েদা ৫:৮)।

অর্থাৎ হকের ব্যাপারে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে প্ররোচিত না করে। যদিও তারা তোমাদের শত্রু। তাই শত্রু-মিত্র সকলের ব্যাপারে ন্যায় বজায় রাখাই উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى) [الأنعام: 152]

আর যখন তোমরা বলবে, তখন ইনসাফ কর, যদিও সে আত্মীয় হয় (সূরা আল-আন‘আম ৬:১৫২)।

আত্মীয়ের সাথে অন্যায় আচরণ করবে না। ভুল হলে তা সংশোধন করে নিবে, ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। বরং তার কল্যাণ কামনা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى) [الأنعام: 152]

আর যখন তোমরা বলবে, তখন ইনসাফ কর, যদিও সে আত্মীয় হয় (সূরা আল-আন‘আম ৬:১৫২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ) [المائدة: 8]

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসাবে সদা দন্ডয়মান হও (সূরা আল-মায়িদা ৫:৮)। তিনি আরো বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيّاً أَوْ فَقِيراً فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيراً) [النساء:135]

হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা কাছে আত্মীয়দের বিরূদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত (সূরা নিসা ৪:১৩৫)।

সুতরাং নিজের ক্ষেত্রে এবং শত্রু-মিত্র সকলের সাথে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করা মানুষের উপর আবশ্যক। কারো শত্রুতা যেন অন্যায় আচরণ ও অত্যাচারে প্ররোচিত না করে। এটাই মুসলিমের কাজ। অপরদিকে জাহিলরা তাদের সম্প্রদায়ের পক্ষপাতিত্ব করে যদিও ঐ সম্প্রদায় যালেম হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে জাহিলদের বিপরীত কর্মের আদেশ করেন এবং নিজ, আত্মীয়-স্বজন ও শত্রু-মিত্র সকলের ব্যাপারে হক্ব কথা বলার নির্দেশ দেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

انصر أخاك ظالماً أو مظلوماً"، قالوا: يا رسول الله، ننصره إذا كان مظلوماً، فكيف ننصره إذا كان ظالماً؟! قال: تمنعه عن الظلم، فذلك نصره

তুমি তোমার ভাইকে সাহায্যে কর হোক সে যালেম অথবা মাযলুম। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা মাযলুমকে সহযোগিতা করতে পারি, কিন্তু কিভাবে যালেমকে সাহায্যে করবো? তিনি বললেন, তোমরা যুলুম থেকে তাকে বিরত রাখবে। এটাই হবে তার প্রতি সাহায্যে করা।[1]
সাহায্য করা অর্থ কাউকে যুলুম করা হতে বিরত রাখা। যুলুম করতে সহযোগিতা করা সাহায্য নয়। এটাই অনুসরণীয়।

>
[1]. ছ্বহীহ বুখারী হা/২৪৪৩, ২৪৪৪, ৬৯৫৬।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে