জাহিলরা তাদের দল ছাড়া অন্যর হক্বকে গ্রহণ করে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا) [البقرة: 91]

তারা বলে, আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি (সূরা আল বাক্বারাহ ২:৯১)।।

..............................................

ব্যাখ্যা: যখন জাহিলদেরকে বলা হয়, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যা নাযিল হয়েছে তার উপর ঈমান আনো তখন তারা বলে,

(قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا)

অর্থাৎ মুসা আলাইহিস সালাম এর উপর যা নাযিল হয়েছিল।

(وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ) [البقرة: 91]

আর এর বাইরে যা আছে তারা তা অস্বীকার করে (সূরা বাক্বারাহ ২:৯১)।

অর্থাৎ অন্য কিছু

(وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقاً لِمَا مَعَهُمْ) [البقرة: 91]

তা সত্য, তাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারী (সূরা বাক্বরাহ ২:৯১)।

তারা বলে, আমরা তাওরাতের উপর ঈমান আনবো যা আমাদের নাবী মূসা আলাইহিস সালাম এর উপর নাযিল হয়েছে।

(وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ) [البقرة: 91]

আর এর বাইরে যা আছে তারা তা অস্বীকার করে (সূরা বাক্বরাহ ২:৯১)।

তা হলো ইনজিল যা ঈসা আলাইহিস সালাম এর উপর নাযিল হয়েছে। আর কুরআন নাযিল হয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর।

(وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقاً لِمَا مَعَهُمْ)

তা সত্য, তাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারী (সূরা বাক্বরাহ ২:৯১)।

যা তাওরাতে আছে, ইনজিল ও কুরআন তা সত্যায়নকারী।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা এভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, মূসা আলাইহিস সালাম এর উপর যা নাযিল হয়েছে তোমরা যদি তার অনুসরণ করেই থাকো, তাহলে নাবীগণকে তোমরা কিভাবে হত্যা করতে পারো? নাবীগণকে হত্যার করার কথা কি মূসা আলাইহিস সালাম এর উপর নাযিল হয়েছিল? জাহিলরা যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া আলাইহিমাস সালামকে হত্যা করেছে, ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। তাদের চক্রান্ত থেকে তিনি তাকে বাঁচিয়েছেন। আর তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। নাবীগণকে হত্যা করাই যেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لا تَهْوَى أَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقاً كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقاً تَقْتُلُونَ) [البقرة: 87]

তবে কি তোমাদের নিকট যখনই কোন রসূল এমন কিছু নিয়ে এল, যা তোমাদের মনঃপূত নয়, তখন তোমরা অহঙ্কার করেছ, অতঃপর (নাবীদের) একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছে আর একদলকে হত্যা করেছে (সূরা বাক্বরাহ ২:৮৭)।

তারা কতিপয় রসূলকে মিথ্যাবাদী মনে করেছে, কিছু সংখ্যককে হত্যা করেছে। কিন্তু কেন তারা এরূপ করেছিল? কারণ রসূলগণ তাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা তাদের কু-প্রবৃত্তি বিরোধী ছিল। তাহলে তারা কিভাবে বলতে পারে আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার উপর আমরা ঈমান আনবো? তাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান কোথায়? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী ও তার রিসালাতের কথা তাওরাতেও বর্ণিত হয়েছে। তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি তারা ঈমান আনয়ন করে না কেন? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনার অর্থই হলো তাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা। অথচ তারা তাকে অস্বীকার করে বলে,

(نُؤْمِنُ بِمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا) [البقرة: 91]

আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি (সূরা বাক্বরাহ ২:৯১)।

যারা বলে, আমি অমুক আলেম ছাড়া কাউকে অনুসরণ করি না, এ আয়াত তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে অথচ তার উপর হক্ব গ্রহণ করা ওয়াজীব। ইমাম অথবা দারস দানকারী অথবা শাইখের পক্ষপাতিত্ব করা তার জন্য আবশ্যক নয়। যেমন বিভিন্ন পন্থার পীর রয়েছে। তাদের মুরিদ ও অনুসারীরা পীরদের পক্ষপাতিত্ব করে। পীর যা বলে তা ব্যতিরেকে তারা হক্বকে গ্রহণ করে না। এটাই বাতিল বিষয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত সুনির্দিষ্টভাবে কারো আনুগত্য করা ওয়াজীব নয়। আর যে বলে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের আনুগত্য করাও ওয়াজীব, তাহলে সে হবে মুরতাদ। তাকে তাওবা করতে হবে নচেৎ তাকে হত্যা করা হবে। যেমন কোন এক ব্যক্তিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমজ্ঞানী মনে করা হলে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ তাকে হত্যা করার ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো আনুগত্য করা ওয়াজীব নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত ইমাম ও আলেমদের মাঝে হক্ব পাওয়া গেলে তাদের আনুগত্য করতে হবে। ইজতিহাদে তাদের ভুল পরিলক্ষিত হলে তা গ্রহণ করা বৈধ নয়, যদিও তারা ইমাম হন। ইমামগণ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার সাথে আমাদের কথার মিল হলে তবেই তা গ্রহণ করবে নচেৎ নয়।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে