দলীলের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে পূর্ববর্তীদের নিয়ম-নীতি-আমলকে দলীল হিসাবে পেশ করা

পূর্ববর্তীদের দলীল গ্রহণ করা সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:

قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الْأُولَى

ফিরআউন বলল, তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী? (সূরা ত্বহা ২০:৫১)। তিনি আরো বলেন,

مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ

এ কথাতো আমরা আমাদের পূর্বতম পিতৃ-পুরুষদের সময়েও শুনিনি (সূরা মুমিনুন ২৩:২৪)।

..............................................

ব্যাখ্যা: রসূলগণ জাহিলদের নিকট হক্ব পেশ করলে তাদের পূর্ব-পুরুষদের রীতিকে তারা দলীল হিসাবে পেশ করতো। মূসা আলাইহিস সালাম ফেরআউনকে ঈমানের দাওয়াত দিলে সে পূর্ববর্তীদেরকে দলীল হিসাবে পেশ করেছিল। আল্লাহর বাণী:

(قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الْأُولَى) [طه :51]

ফিরআউন বলল, তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী? (সূরা ত্বহা ২০:৫১)।

ফেরআউন পূর্ববর্তী যুগের কাফিরদেরকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করতো। এটাই হলো বাতিল ও জাহিলী যুক্তি। নূহ আলাইহিস সালাম তার জাতিকে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দিলে তারা বলেছিল,

(مَا هَذَا إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُرِيدُ أَنْ يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَنْزَلَ مَلائِكَةً مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ) [المؤمنون : 24]

এতো তোমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া কিছুই না। সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চায়। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে অবশ্যই ফেরেশতা নাযিল করতেন। এ কথাতো আমরা আমাদের পূর্বতম পিতৃ-পুরুষদের সময়েও শুনিনি (সূরা মুমিনুন ২৩:২৪)।

তারা আল্লাহর নাবী নূহ আলাইহিস সালাম এর দা‘ওয়াতের বিরোধিতা করেছিল এবং পূর্ব পুরুষরা যে রীতির উপর ছিল তা হক্ব বলে প্রমাণ পেশ করতো। তারা মনে করতো নূহ আলাইহিস সালাম যা নিয়ে এসেছেন তা বাতিল। কেননা তা ছিল পূর্ব-পুরুষদের বিরোধী। অপর দিকে কুরাইশ কাফিররা বলতো,

(مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَذَاإِلَّا اخْتِلاقٌ) [ص : 7]

আমরা তো সর্বশেষ ধর্মে এমন কথা শুনিনি। এটা তো বানোয়াট কথা ছাড়া আর কিছু নয় (সূরা ছ্বদ ৩৮: ৭)।

অর্থাৎ (مَا سَمِعْنَا بِهَذَا) তথা আমরা এটা শুনিনি যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন।

(فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ) তথা শেষ ধর্মে অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষ ও বাপদাদার ধর্মে। (إِنْ هَذَا إِلَّا اخْتِلاقٌ) তথা এটা মিথ্যা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তারা তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো। কিন্তু কেন? কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাপ্ত দীন ছিল তাদের পূর্ব-পুরুষ বিরোধী। আর পূর্ব পুরুষদের রীতি ছিল মূর্তি পূজা করা।

তাদের পিতা ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমাস সালাম এর দীনের দিকে তারা প্রত্যাবর্তন করেনি। বরং তাদের নিকটতম পূর্ব পুরুষদের রীতির দিকে তারা প্রত্যাবর্তন করেছিল। মক্কার কাফির কুরাইশরা ছিল তাদের বাপদাদা ও পূর্ব পুরুষদের অনুসারী। এটাই ছিল কাফির ও জাহিলদের রীতি। এভাবে পূর্ববর্তী জাতিদেরকে তারা দলীল হিসাবে গ্রহণ করতো।

রসূলগণের সাথে যা ছিল সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা বিবেকবানদের উপর আবশ্যক। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ও পূর্ব পুরুষদের রীতির মাঝে তাদের তুলনা করে দেখা আবশ্যক, যাতে তাদের নিকট বাতিল থেকে হক্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। বিবেকহীনরা নিজেরা বলে,

ما نقبل إلا ما عليه آباؤنا، ولا نقبل ما يخالفه

আমরা পূর্ব পুরুষদের রীতিই গ্রহণ করবো, এর বিপরীত কিছু মেনে নিবো না।

এটা অধিকন্তু বিবেকবানদের মর্যাদা পরিপন্থী বিষয়, যারা নিজেদের মুক্তি চায়। বর্তমানে কবরের ইবাদত করা হতে কবর পূজারীদের নিষেধ করা হলে তারা বলে, অমুক দেশে এটার প্রচলন আছে, অমুক গোষ্ঠী এটা করে ও যুগযুগ ধরে তা পালন করা হয়।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম দিন পালন করা থেকে যখন মিলাদপন্থীদের নিষেধ করতঃ বলা হয়, এটা বিদ‘আত। তখন তারা বলে, আমাদের পূর্ব থেকেই এর উপর আমল চালু আছে। যদি এটা বাতিলই হতো তাহলে পূর্ববর্তীরা এর উপর আমল করতো না। এটাই হলো জাহিলদের দলীল গ্রহণের স্বরূপ।

মানুষ যা পালন করে তাতে কোন শিক্ষা নেই। বরং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তাতেই শিক্ষা নিহিত আছে। কেননা মানুষ ভুল ও সঠিক উভয়টি করতে পারে। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তা অকাট্যভাবে সঠিক।

তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের বাপদাদা ও পূর্ব পুরুষদের উপর নির্ভর করতে বলেন নাই। বাপদাদা ও পূর্ব পুরুষদের রীতি যদি যথেষ্ট হতো, তাহলে রসূলগণের প্রয়োজন হতো না। এরূপভাবে সূফীগণ বলেন, রসূলের আনুগত্য করার চেয়ে আমরা যে অবস্থায় আছি সেটাই যথেষ্ট। আর আমাদের স্বীয় অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। ফলে আমরা সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার নিকট থেকে দীন গ্রহণ করি।

সূফীরা বলে, সুন্নাতের অনুসারীরা মৃতদের কাছ থেকে তাদের দীন গ্রহণ করে, তারা হাদীছের সনদের রাবীগণকে বুঝাতে চায়। আর তাদের কথা হলো আমরা চিরঞ্জীব আল্লাহর কাছ থেকে আমাদের দীন গ্রহণ করি।

তারা বলে, জন সাধারণের জন্য রসূলগণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে বিশেষ ব্যক্তি বর্গের জন্য রসূলের প্রয়োজন নেই। কেননা বিশেষ ব্যক্তিগণ আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। তারা বুঝতে পারেন যে, তাদের জন্য রসূলগণ প্রয়োজনহীন। এভাবে শয়তান তাদেরকে বলে, পথ প্রাপ্তদের জন্য রসূলগণের দরকার নেই। কেননা তারা সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে দীন গ্রহণ করে। এটাই জাহিলী দীন। অনেক মানুষই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে