জাহেলী যুগে আরবের লোকেরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এবং ইবাদত করার সময় নেককার লোকদের শরীক করতো। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নিকট তাদের সুপারিশ (শাফা‘আত) কামনা করতো। তারা ধারণা করতো যে, আল্লাহ তা‘আলা এমনটি পছন্দ করেন এবং নেককার লোকেরাও তা পছন্দ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ) [يونس: 18]

আর তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী (সূরা ইউনুছ ১০:১৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى) [الزمر: 3]

আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে’ (সূরা আয যুমার ৩৯:৩)।

এটিই ছিল সব চেয়ে বড় বিষয়, যে ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের বিরোধিতা করেছেন। তিনি একনিষ্ঠতা (ইখলাস) বর্ণনা করলেন এবং লোকদের জানিয়ে দিলেন যে, এটাই হচ্ছে আল্লাহর দীন, যে দীন দিয়ে তিনি সকল রসূলকে পাঠিয়েছেন এবং তিনি একনিষ্ঠ আমল ছাড়া অন্য কোন আমল গ্রহণ করেন না। তিনি আরো বললেন যে, যারা তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী আমল করবে, আল্লাহ তাদের উপর জান্নাতকে হারাম করে দিবেন এবং তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।

এ বিষয়টার কারণেই মানব জাতি ‘মুসলিম’ ও ‘কাফির’ দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর কারণেই শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে এবং জিহাদ বিধিবদ্ধ হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ) [الأنفال: 39]

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় (সূরা আল আনফাল ৮:৩৯)।

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْأِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ‘ইবাদত করবে (সূরা আয যারিয়াত ৫১:৫৬)।

‘ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার অধিকার। তার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে তার ইবাদত করা বৈধ নয়, সে যেই হোক না কেন। জাহিলরা এ নির্দেশটি উল্টিয়ে দেয়। তারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ছেড়ে দেয় অথচ এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে মূর্তি, গাছ, পাথর, ফেরেশতা, জিন, আওলীয়া ও নেককার লোকদের ইবাদত করে। এভাবে তারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের জন্য ইবাদত করে।

জাহিলদের মধ্যে কেউ কেউ আদৌ আল্লাহর ইবাদত করে না; আর তারা হচ্ছে, কাফির ও বস্তুবাদী নাস্তিক। আবার কেউ কেউ আল্লাহ্‌র ইবাদত করে, তবে তার সাথে অন্যের ইবাদতও করে। মূলতঃ তাদের বিধানও কাফির-নাস্তিকদের মতই। যারা আল্লাহর সাথে অন্যের ইবাদত করে, তারা ঐ লোকদের মত, যারা আদৌ আল্লাহর ইবাদত করে না। কেননা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত বাতিল। আর আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে অংশীদারিত্ব পছন্দ করেন না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমল শরী‘আত সম্মত হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বিদ‘আতী আমল কবুল করেন না, অনুরূপভাবে তিনি শিরকযুক্ত আমলও গ্রহণ করেন না। সেজন্য, সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ জাহিলিয়্যাত হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং বিদ‘ধাতী কাজ করা।

শাইখ রহিমাহুল্লাহ এ বিষয় দিয়ে তার আলোচনা শুরু করেছেন। কেননা জাহিলী বিষয়সমূহের মধ্যে তা সবচেয়ে মারাত্মক। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়কে অস্বীকার করা এবং তা মানুষকে ছেড়ে দেয়ার আহবান জানাতেন। অন্যান্য নাবী-রসূলগণের মত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের নির্দেশ দিতেন। আর আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত ছেড়ে দিতে বলতেন। এটা ছিল রসূলগণের দাওয়াতের সূচনা। কেননা তাওহীদ সকল আমলের মূল ভিত্তি। এটা বিনষ্ট হলে আমল মূল্যহীন বলে গণ্য হয়। তাওহীদ ব্যতীত ছ্বলাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাত ও অন্যান্য সকল প্রকার ইবাদত মূল্যহীন। যেহেতু মূলভিত্তি তথা তাওহীদ বিনষ্ট হয়েছে, তাই কোন আমলই মূল্যায়ন যোগ্য নয়। শিরকের কারণে আমল বিনষ্ট ও বাতিল বলে গণ্য হয়।

জাহিলীযুগে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের সাথে বিভিন্ন বস্তুর ইবাদত করা হতো। যেমন- আওলীয়া ও নেক লোকদের ইবাদত করা: নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতি সৎ লোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে- যেমন-ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুস ও নসর আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ব্যতীত তারা এসব লোকদের কবর পূজা করতো। তারা মনে করতো এসকল ব্যক্তি সৎ, তারা আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী করে দিবে এবং আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। তারা এর উপর ভিত্তি করে আওলীয়া, নেকলোক ও ফিরিশতাদের ইবাদত করতো। তারা বলে: তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে এ কারণে তাদের ইবাদত করি। তাদের কথা: তারাই আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। তারা আওলীয়া, নেকলোক ও ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর শরীক মনে করতো না। বরং তারা বলতো, আমাদের জন্য তারা আল্লাহর নিকটে পৌছার মাধ্যম এবং তারা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। তাদের কাজকর্মকে তারা শিরক মনে করে না। কেননা শয়তান এভাবে তাদের কর্মকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে যে, এটা শিরক নয়। বরং এটা নেক লোকদের ওসীলা বা মাধ্যম ও সুপারিশ মাত্র। তারা বলে যে, নাম দিয়ে উপকার পাওয়া হয় না। বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে উপকার লাভ করতে হয়। যদিও তারা সুপারিশ ও নৈকট্য লাভ করার জন্য নাম ব্যবহার করে তবুও তা শিরক। কেননা নাম দিয়ে কখনো বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন করা যায় না। আল্লাহ তা‘আলা তার ইবাদতে কাউকে অংশীদার করা পছন্দ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً) [الكهف: 110]

সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে (সূরা আল কাহাফ ১৮:১১০)। তিনি আরো বলেন,

(فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصاً لَهُ الدِّينَ) [الزمر: 2]

অতএব আল্লাহর ‘ইবাদত কর তারই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে (সূরা আয যুমার ৩৯:২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ [سورة البينة: 5]

আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে(সূরা আল বায়্যিনাহ ৯৮:৫)।

তিনি আরো বলেন,

فَادْعُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ

সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ডাক, তার উদ্দেশ্যে দীনকে একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত করে (সূরা গাফির ৪০:১৪)।

ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ ছাড়া ইবাদত মূল্যহীন। জাহিলিয়্যাতের বড় সমস্যা হচ্ছে আওলীয়া ও নেক লোকদের ইবাদত করা, মৃত ও অস্তিত্বহীনদের নিকট সাহায্য কামনা ও আশ্রয় প্রার্থনা করা, তাদের কাছে অভাব-অভিযোগ পেশ করা। যেমনভাবে বর্তমানে এসবকে কেন্দ্র করে কবর পূজা করা হয়। কবর পূজা, মৃতদের কাছে নৈকট্য লাভ করা ও আল্লাহ ব্যতীত তাদেরকে ডাকা ও তাদের কাছে সাহায্য কামনা করা বর্তমান চালু আছে যা জাহিলী কর্ম বলে গণ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ) [يونس:18]

আর তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী (সূরা ইউনূস ১০:১৮)।

অনুরূপভাবে বস্তু পূজাও বর্তমান চালু আছে। ঐ সব কবর পূজারীদেরকে কবর পূজার বৈধতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ ও তা থেকে নিষেধ করা হলে তারা বলে, আমরা কবর পূজা করি না, আর ইবাদততো আল্লাহর জন্যই হয়। আমাদের জন্য তারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ ও সুপারিশের মাধ্যম। জাহিলদের এ বিষয়কে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ) [يونس:18]

আর তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী (সূরা ইউনূস ১০:১৮)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى) [الزمر: 3]

আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে’ (সূরা আয যুমার ৩৯:৩)।

তারা তাদের ইবাদত করে না কিন্তু তারা মনে করে যে, সৃষ্টি করা, রিযিক দেয়া ও জীবন-মৃত্যুতে তারা আল্লাহর অংশীদার (নাউযুবিল্লাহ) অথচ তারা জানে একমাত্র আল্লাহই সব কিছুর মালিক। তারা আওলীয়া ও নেক লোকদের ইবাদত করে যাতে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। তারা বলে থাকে, আমরা পাপী বান্দা। যেহেতু তারা নেক লোক, এ হিসাবে আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা আছে। তাই আমাদের তাওবা ও ইবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার জন্য তাদের মাধ্যম অবলম্বন করি। এ জন্য শয়তান জিন ও মানবজাতিকে এ কাজটি তাদের জন্য সৌন্দর্য মন্ডিত করে। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো তারা কুরআন পাঠ করে, এ সম্পর্কিত আয়াতও জানে কিন্তু তারা সতর্ক হয় না। এ সত্ত্বেও তারা কবর পূজায় অবিচল থাকে। আর কবর পূজা জাহিলী কর্ম। জাহিলিয়্যাত, জাহিলী কাজকর্ম ও তার কুফল সম্পর্কে তারা অবগত নয়।

শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন, এটা হলো বড় সমস্যা যে বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরোধিতা করেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একনিষ্ঠতার কথা বর্ণনা করেন। আর আল্লাহর যে দীনের উপর রসূলগণ প্রেরিত, তা তিনি প্রচার করেন। একনিষ্ঠতা ছাড়া আমল কবুল হয় না তা মানুষকে অবহিত করেন। তিনি আরোও বলেন, ইখলাস ব্যতীত উত্তম মনে করে যারা কোন আমল করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য জান্নাত হারাম করেন, তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। এটা এমন সমস্যা যার কারণে মুসলিম ও কাফিরের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। আর কাফিরদের শত্রুতার কারণে জিহাদ বিধিবদ্ধ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ) [الأنفال: 39]

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় (সূরা আল আনফাল ৮:৩৯)।

আল্লাহ তা‘আলার নিকট অভাব-অভিযোগ পেশ করতে বান্দাকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে কি অথচ আল্লাহ তা‘আলা বান্দার নিকটে থেকে সাড়াদানকারী? তিনি বান্দার কথা শুনেন, তাদেরকে দেখেন, দয়া করেন ও তাদের তাওবা কবুল করেন। তিনি আমাদেরকে দু‘আয় কোন মাধ্যম অবলম্বন করার নির্দেশ দেননি। বরং তিনি আমাদেরকে সরাসরি তার নিকট দু‘আ করতে বলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَادْعُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ) [غافر: 14]

সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ডাক, তার উদ্দেশ্যে দীনকে একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত করে (সূরা গাফির ৪০:১৪)।

(وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُنِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ) [غافر:60]

আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদত হতে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (সূরা গাফির ৪০:৬০)।

আল্লাহ তা‘আলা কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি তার কাছে দু‘আ করার নির্দেশ দেন। শিরক হলো মারাত্নক সমস্যা যে ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলদের বিরোধিতা করেন। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে প্রেরিত হয়ে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার একত্বের দিকে দাওয়াত দেন এবং শিরক পরিত্যাগ করতে বলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

قولوا: لا إله إلا الله؛ تفلحوا

তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বল, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই, তাহলে তোমরা সফলতা লাভ করবে।[1] তিনি আরো বলেন,

أُمرت أن أقاتل الناس حتى يقولوا: لا إله إلا الله، فإذا قالوها عصموا مني دماءهم وأموالهم

অর্থাৎ আমি মানুষের সাথে সংগ্রাম করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তারা এটা স্বীকার করলে আমার পক্ষ থেকে তাদের জীবন ও ধনসম্পদের নিরাপত্তা থাকবে।[2]

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাবেশে, আবাসস্থলে, আর হাজ্জের মৌসুমে তাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর একত্বের দাওয়াত দিতেন এবং দাওয়াতী কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। যেমন তিনি তায়েফবাসীদেরকে আল্লাহর একত্বের দাওয়াত দেন। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার একত্ব প্রকাশ করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমেই একত্বের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেন। এজন্য দা‘ঈর উপর আবশ্যক হলো দাওয়াতী কাজে তাওহীদের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত দেন এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আওলীয়া, নেকলোক ও অন্যান্যের ইবাদত পরিত্যাগ করতে বলেন। এটাই ছিল রসূলগণের দীন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ [الأنبياء:25]

আর তোমার পূর্বে এমন কোন রসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী অবতরণ করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর’ (সূরা আল আম্বিয়া ২১:২৫)।

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولاً أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ) [النحل: 36]

আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর ত্বাগূতকে (সূরা আন নাহাল ১৬:৩২)।

এটাই ছিল রসূলগণের দাওয়াতী পদ্ধতি যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান করেন। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সব কিছুকে পরিত্যাগ করতে বলেন এবং ধারাবাহিকভাবে মানুষকে সংশোধনের আহবান জানান। আর আল্লাহ তা‘আলা তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শিরকমুক্ত আমল ও ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ব্যতীত কোন কিছু কবুল করেন না। আর আমল কবুল হওয়ার জন্য তা শরীয়ত সম্মত হওয়া আবশ্যক। তাই বিদ‘আতী আমল আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না, আর শিরকযুক্ত আমলও গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً) [الكهف: 110]

সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে (সূরা আল কাহাফ ১৮:১১০)।

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً

তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না (সূরা আন নিসা ৪:৩৬)।

আল্লাহ তা‘আলা তার ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে ক্ষান্ত হননি, তিনি শিরক থেকেও বান্দাকে বিরত থাকতে বলেন। কারণ শিরক মিশ্রিত আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আর ঈমান আনয়নের পূর্বে ত্বাগুতকে অস্বীকার করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لا انْفِصَامَ لَهَا [البقرة: 256]

অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয় (সূরা আল বাক্বারাহ ২:২৫৬)।

এটিই হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। আর কালিমার মাঝে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এবং শিরক পরিত্যাগ ও আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ নিহিত আছে। (لا إله) তথা কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। এ অংশটুকুর মাধ্যমে সকল বাতিল কৃত্রিম উপাস্যসমূহকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। (إلا الله) তথা আল্লাহ ব্যতীত। কালিমার এ অংশের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ সাব্যস্ত হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ছাড়া কোন আমল তার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদ্ধতি অনুসরণ ছাড়া বিদ‘আতী আমলও তিনি কবুল করেন না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد

যে আমাদের নির্দেশ ব্যতিরেকে আমল করলো তা প্রত্যাখ্যাত।[3]

অন্য রেওয়ায়েতে তিনি আরোও বলেন:

من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد

যে আমাদের দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করলো যা দীন নয় তা প্রত্যাখ্যাত।[4]

এ কারণে আলেমগণ বলেন, দু’টি শর্ত ছাড়া আমল গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলার জন্যই একনিষ্ঠভাবে আমল করা।

দ্বিতীয়ত: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদ্ধতি অনুসারে আমল করা।

দু’টি শর্তের কোন একটি ভঙ্গ হলে আমল কবুল হবে না এবং তাকে সৎআমল বলে গণ্য করা হবে না।

মূর্তি, আওলীয়া, গাছ, পাথর ও কবর ইত্যাদির পূজা করা যারা ভালমনে করে এবং আল্লাহর বিধান ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদ্ধতি অনুসারে ইবাদত করে না, এরূপ ইবাদতকারী ও কুপ্রবৃত্তির উপর নির্ভরশীলদেরকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কর্মের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং জাহান্নাম হবে তাদের আবাস স্থল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ) [المائدة: 72]

নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন (সূরা আল মায়িদা ৫:৭২)।

অর্থাৎ চুড়ান্ত ভাবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর (التحريم) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো নিষিদ্ধ। মুশরিকদের জন্য জান্নাত চুড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। তাদের জন্য জান্নাতের প্রত্যাশা নেই এবং জাহান্নামই তাদের আবাসস্থল। এটা হলো আল্লাহর সাথে শিরক করার মন্দ পরিনাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى) [الزمر: 3]

যদিও তারা বলে থাকে, আমরাতো তাদের ইবাদত করি না কিন্তু তারাতো আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। তারা এর উপরই মৃত্যু বরণ করে, তারা ফিরে আসে না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর জাহান্নামকে তাদের জন্য চিরস্থায়ী আবাস স্থল নির্ধারণ করেন। যে মুক্তি পেতে চায় সে এ ব্যাপারে সতর্ক হয়। আর জাহিলী কাজকর্ম ও অন্যান্য অবাধ্যতা ছেড়ে দেয়।

শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ সমস্যার কারণে মানুষ মুসলিম ও কাফিরে বিভক্ত অর্থাৎ তাওহীদ ও শিরকে বিভক্ত। একদল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যবাদী জেনে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করে, তারাই মু’মিন। আর আরেক দল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধিতা বশতঃ শিরকের উপর ও তাদের ইবাদতের উপর অবিচল থাকে। আর তাদের পূর্ব পুরুষরা ইতিপূর্বে যেভাবে ইবাদত করতো। পূর্ববর্তী জাতিরা শিরকের উপর ছিল। তারা রসূলগণের বিরোধিতা করতো। কেননা তাদের পূর্ব পুরুষদের রীতিনীতির উপর তারা অবিচল থাকতে চায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ) [الزخرف:23]

আর এভাবেই তোমাদের পূর্বে যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী পাঠিয়েছি, তখনই সেখানকার বিলাসপ্রিয়রা বলেছে, নিশ্চয় আমরা তো আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে এক মতাদর্শের ওপর পেয়েছি তাই আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি (সূরা আয যুখরুফ ৪৩:২৩)। তারা বলে,

أَتَنْهَانَا أَنْ نَعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا) [هود: 62]

তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ তাদের উপাসনা করতে আমাদের পিতৃপুরুষরা যাদের উপাসনা করত? (সূরা হুদ ১১:৬২)।

এটা তাদের মুখের কথা ও তাদের যুক্তি। তারা পূর্বপুরুষদের রীতিকে আঁকড়ে ধরে থাকে। তা ছিল আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত।

এর কথা: শত্রুতার সময় অর্থাৎ তাওহীদ পন্থী ও মুশরিকের মাঝে, মু’মিন ও কাফিরের মাঝের শত্রুতা। সুতরাং কাফিরদের সাথে শত্রুতা রাখা মু’মিনদের উপর আবশ্যক। তাই কাফিরদের প্রতি ভালবাসা রাখা বৈধ নয় যদিও তারা নিকটতম (প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয়) হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لا تَجِدُ قَوْماً يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْأِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ

যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে তাদেরকে পাবে না এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে বন্ধু হিসাবে যারা আল্লাহ ও তার রসূলের বিরোধীতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি গোষ্ঠী হয় তবুও। এদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তার পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। (সূরা মুজাদালাহ ৫৮:২২)।

আল্লাহ ও তার রসূল এবং মু’মিনদের সাথে বন্ধুত্ব করা আবশ্যক। কুফরী ও কাফির এবং শিরক ও মুশরিকদের থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَداً حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ

আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন (সূরা মুমতাহানাহ ৬০:৪)।

তাহলেই তারা হবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর দলের অন্তর্ভুক্ত। যারা বর্তমানে দীন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনা-পর্যালোচনা করে, আর মানুষকে সে দিকে ডাকে এবং বলে যে, এগুলো আসমানী ধর্ম। তাদের কতিপয় স্পর্ধার সাথে বলে যে, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা কাফির বলে গণ্য হবে না। এ কথাটি যা নিয়ে এসেছেন তার বিপরীত ও আল কুরআন বিরোধী এবং আমাদের জন্য অনুসরণীয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর আদর্শও বিরোধী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْأِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ) [التوبة:23]

হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম (সূরা আত-তাওবাহ ৯:২৩)।

ঐ সব বিতর্ককারীরা বলে, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা আহলে কিতাব ও বিশশ্বাসী। আর তাদের প্রত্যেকের ধর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আমাদের সাথে তাদের যোগসূত্র রয়েছে। আমরা পরস্পরকে সাহায্য করতে পারি। তারা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে কাফির মনে করে না। বর্তমানে মানুষকে এ বিষয়ের দিকে দৃঢ়তার সাথে ডাকা হয়। এ ধরণের আহবান আল্লাহর সাথে মু’মিনদের বন্ধুত্বকে ধ্বংস করে। তাই কাফির ও মু’মিনদের মাঝে কোন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না। যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনবে না, তারা কাফির। হোক সে কিতাবী অথবা কিতাববিহীন। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হওয়ার পর তার প্রতিই ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক, অন্য কাউকে সমর্থন করা যাবে না। তাই তার প্রতি যে বিশ্বাস রাখে না সে কাফির। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশ্বাস রাখে না, এজন্য তারা কাফির।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

والَّذي نَفْسُ محمَّدٍ بيَدِه لا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هذه الأُمَّةِ وَلاَ نَصرانيٌّ، ثم يَمُوتُ ولم يُؤمِن بالذي أُرْسِلْتُ به إلا كان من أصحاب النَّار

সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইয়াহুদী হোক আর খ্রিষ্টান হোক, যে ব্যক্তি আমার রিসালাতের খবর শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।[5]

সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়াত প্রাপ্তির পর তার আদর্শ হতে কেউ বের হতে পারবে না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

والله لو كان أخي موسى حياً ما وسعه إلا اتباعي

আল্লাহর কসম! যদি মূসা আলাইহিস সালাম বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাকে অনুসরণ করা ছাড়া তার কোন উপায় থাকতো না।[6]

তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন সঠিক দীনের অস্তিত্ব নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْأِسْلامِ دِيناً فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ) [آل عمران:85]

আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত (সূরা আলে-ইমরান ৩:৮৫)।

ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের এ ধরণের আহবান বাতিল বা প্রত্যাখ্যাত। এ বাতিল দাওয়াত প্রচারের জন্য অনেক সভা সমাবেশ করা হয়ে থাকে। ধর্মসমূহকে একীভূত করার জন্য তা প্রচারের উদ্দেশে তারা অর্থসম্পদও ব্যয় করে। আর তারা তাদের বিষয়বস্তুর নামকরণ করেছে (الحوار بين الأديان) অর্থাৎ ধর্মসমূহের বিতর্ক। সুবহানাল্লাহ! ঈমান ও কুফর নিয়ে বিতর্ক! শিরক ও তাওহীদ নিয়ে বিতর্ক! আল্লাহর বন্ধুদের সাথে শত্রুদের বিতর্ক!?

অতঃপর শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ কারণে জিহাদকে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ) [الأنفال: 39]

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় (সূরা আল আনফাল ৮:৩৯)।


[1]. ছ্বহীহ: মুসনাদে আহমাদ, ছ্বহীহ ইবনে হিব্বান, ত্ববারানী ক্বাবীর, সুনানে দ্বারাকুতনী, মুসতাদরাক হাকীম।

[2]. ছ্বহীহ বুখারী ১৩৯৯, ২৯৪৬, ছ্বহীহ মুসলিম ২০,২১।

[3]. ছ্বহীহ মুসলিম ১৭১৮।

[4]. ছ্বহীহ বুখারী ২৬৯৭, ছ্বহীহ মুসলিম ১৭১৮।

[5]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৫৩।

[6]. হাসান: মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১৭৭, শুয়াবুল ঈমান, শারহুস সুন্নাহ,
কাফিরদের সাথে আমাদের আবশ্যকীয় নীতি তিনটি

প্রথম: তাদের সাথে শত্রুতা রাখা। কেননা তারা আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শত্রু।

দ্বিতীয়: তাদেরকে ঈমান ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্যের দাওয়াত দেয়া। এটা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব-আবশ্যক।

তৃতীয়: কাফিরদেরকে দাওয়াত দেয়ার পর তারা ইসলাম গ্রহণ না করলে তাদের সাথে জিহাদ করা। এক্ষেত্রে জিহাদ আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ) [الأنفال: 39]

তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় (সূরা আল আনফাল ৮:৩৯)।

মুসলিমদের শক্তি সামর্থ থাকলে তারা শেষ পর্যায়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ) [التوبة: 5]

তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক (সূরা আত তাওবাহ ৯:৫)।

এ আয়াতে ইসলামে জিহাদের কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো শিরক দূরীভূত করা যতক্ষণ না ফিতনার মূলৎপাটন হয়। যে ফিতনার মাধ্যমে মুরতাদ (দীন ত্যাগ করা) হয় তা হচ্ছে শিরক। এজন্য সম্পূর্ণভাবে শিরকী ফিতনা দূরীভূত করতে হবে। আর যুদ্ধ করতে হবে যতক্ষণ না দীন পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই জিহাদের উদ্দেশ্য। কর্তৃত্ব গ্রহণ ও প্রভাব বিস্তার করা জিহাদের উদ্দেশ্য নয়। আর জিহাদের মাধ্যমে ধনসম্পদ অর্জনও উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কালিমাকে উড্ডীন করা ও শিরকের মূলৎপাটন করা।

সুতরাং কাউকে প্রতিহত করা ইসলামে জিহাদের উদ্দেশ্য নয়। যেমন কতিপয় জ্ঞানপাপী বলেন, প্রতিহত করার জন্যই দীন ইসলাম সাব্যস্ত। অর্থাৎ তারা যখন আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে তখন তাদের শত্রুতা রুখে দেয়ার জন্য কেবল যুদ্ধ করবো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ) তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর (সূরা আত তাওবাহ ৯:৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় (সূরা আল আনফাল ৮:৩৯)।

ইসলামে দাওয়াত-প্রচার (نشر الدعوة) ও দীনের প্রসারতা (نشر الدين) এবং শিরকের মূলৎপাটন (إزالة الشرك) করাই যুদ্ধের উদ্দেশ্য। সূরা আনফালের উপরোক্ত (৮:৩৯) আয়াত থেকে উক্ত উদ্দেশ্য সাব্যস্ত হয়।

ইসলামে যুদ্ধ দু’প্রকার:

(১) প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ যা মুসলিমদের নিরুপায় অবস্থায় প্রযোজ্য

(২) প্রভাব বিস্তারমূলক যা মুসলিমদের শক্তি সামর্থ থাকলে প্রযোজ্য হয়।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে