ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, فمن سأل: لم فعل؟ فقد رد حكم الكتاب، ومن رد حكم الكتاب،كان من الكافرين ‘‘অতএব যে ব্যক্তি একথা জিজ্ঞেস করবে তিনি কেন এ কাজ করলেন? সে আল্লাহর কিতাবের হুকুম অমান্য করল। আর যে ব্যক্তি কিতাবের হুকুম অমান্য করল, সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল’’।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান, তার কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, তার রসূলসমূহের প্রতি ঈমান এবং তার ইবাদতের মূলভিত্তি হলো সবকিছু মাথা পেতে মেনে নেয়া এবং ইসলামী শরীয়াতের আদেশ-নিষেধসমূহের বিস্তারিত হেকমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এমন কোনো নাবীর উম্মতের কথা আমাদেরকে বলেননি, যারা তাদের নাবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং নাবীর আনিত দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস করার পর তাকে আদেশ-নিষেধের হেকমত সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করেছিল। আল্লাহর পক্ষ হতে তিনি যেই দ্বীন প্রচার করেছেন, তারা হেকমতের কথা জিজ্ঞাসা করেনি। তারা যদি তাদের নাবীকে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো, তাহলে তারা তাদের নাবীর প্রতি ঈমানদার হতে পারতো না। বরং তারা তাদের নাবীর প্রতি অনুগত হয়েছে এবং তার কথা মেনে নিয়েছে। তাদের নাবী যেসব আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধান নিয়ে এসেছেন, তা থেকে যেগুলোর হেকমত তারা জানতে পেরেছে, তা তো জানতে পেরেছেই। আর যেসব বিষয়ের হেকমত তারা জানতে পারেনি, তা মেনে নেয়ার জন্য ঐগুলোর হেকমত জানার অপেক্ষা করেনি। হেকমত সম্পর্কে জানাকে তারা নবুওয়াতের শানের অন্তর্ভুক্ত মনে করেনি। তাদের রসূলকে তারা হেকমত সম্পর্কে প্রশ্ন করার অনেক উর্ধ্বে মনে করতো।
ইঞ্জিলে বর্ণিত হয়েছে, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা এ কথা বলো না যে, আমাদের রব কেনো এ আদেশ করেছেন? বরং তোমরা বলো, আমাদের রব কিসের আদেশ দিয়েছেন? এ জন্যই এ উম্মতের পূর্বসূরীগণ ছিলেন জ্ঞান-বুদ্ধির দিক দিয়ে অধিক পরিপূর্ণ। তারা তাদের নাবীকে কখনো এ প্রশ্ন করতেন না যে, আল্লাহ তা‘আলা কেন আমাদেরকে এ আদেশ করেছেন? কেন এ নিষেধ করেছেন? কেন এটি নির্ধারণ করেছেন? কেন তিনি এটি করেছেন? তারা ভালো করেই জানতেন যে, এ ধরণের প্রশ্ন করা ঈমান ও আনুগত্যের পরিপন্থি। তারা আরো জানতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পন না করলে ইসলামের উপর কারো অবস্থান সুদৃঢ় হয় না।
সুতরাং দ্বীনের সকল বিষয়ের প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদর্শনের প্রথম স্তর হলো উহাকে সত্যায়ন করা। অতঃপর তা বাস্তবায়ন করার প্রতি সুদৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা। অতঃপর বাস্তবায়ন করতে কোনো প্রকার বিলম্ব না করা। সে সঙ্গে যেসব বিষয় দ্বীনের বিধিবিধান মেনে চলার প্রতিবন্ধক হয়, তা থেকে সাবধান থাকা। অতঃপর পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের বিষয়গুলো পালন করার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া। হেকমত জানার অপেক্ষায় না থেকে আদেশগুলো বাস্তবায়ন করা। এমন যেন না হয় যে, হেকমত জানতে পারলে আদেশ বাস্তবায়ন করবে এবং তা জানতে না পারলে বাস্তবায়ন করা হতে বিরত থাকবে। কেননা এরূপ করা আনুগত্যের পরিপন্থি। এটি মানুষের দ্বীন পালনের পথে বিরাট বাধাও বটে।
ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ ইবনে আব্দিল বারের বরাত দিয়ে বলেন, ইলম অর্জনের আগ্রহ নিয়ে, নিজ থেকে মূর্খতা দূর করার জন্য এবং দ্বীন পালনের জন্য জরুরী মনে করে কোনো বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন করলে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা অজানা রোগের চিকিৎসাই হলো প্রশ্ন করা। যে ব্যক্তি বিদ্রোহী হয়ে এবং জানার আগ্রহ ছাড়াই প্রশ্ন করবে, তার জন্য কোনো প্রশ্ন করা জায়েয নেই।
ইবনুল আরাবী বলেন, আলেমের উচিত দলীলের ভিত্তিতে কথা বলা, গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করা, ইজতেহাদের যোগ্যতা অর্জন করা এবং মাসায়েল নির্গত করার জন্য সহায়ক দলীল-প্রমাণ প্রস্ত্তত করা। তিনি আরো বলেন, নতুন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে অথবা যুদ্ধ-বিগ্রহ সংক্রান্ত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে যথাযথ পন্থায় তা সমাধানের চেষ্টা করা হলে আল্লাহ তা‘আলা মুজতাহিদের জন্য সে ব্যাপারে সঠিক পন্থা উন্মুক্ত করে দিবেন। ইবনুল আরাবীর উক্তি এখানেই শেষ।
নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো লোকের ইসলাম সুন্দর করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে অনর্থক কথা বলা বাদ দেয়া’’।[1] ইমাম তিরমিযী এবং অন্যান্য ইমামগণ এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের হুকুম প্রত্যাখ্যান করবে তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কোনো দলীলের ভিত্তিতে যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের তাবীল করবে, তার জন্য সঠিক কথা বর্ণনা করা হবে। যাতে করে সে ভুল পথ বর্জন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলা যা করেন, সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না। কেননা তার সকল কাজই হেকমত, রহমত ও ইনসাফে পরিপূর্ণ। তা যে শুধু প্রতাপশালী ও ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা নয়। যে এ বলে থাকে জাহাম বিন সাফওয়ান ও তার অনুসারীরা। শাইখের উক্তি: ولا نكفر أحدا من أهل القبلة بذنب ما لم يستحله، ‘‘আহলে কিবলার কেউ গুনাহ করলেই আমরা তাকে কাফের বলি না, যতক্ষণ না সে হালাল মনে করে সেই গুনাহয় লিপ্ত হয়’’- এ অংশের ব্যাখ্যা করার সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্বিরণ আসবে। ইনশা-আল্লাহ।