ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَقَدْ عَلِمَ اللَّهُ تَعَالَى فِيمَا لَمْ يَزَلْ عَدَدَ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ، وَعَدَدَ مَنْ يَدْخُلُ النار، جملة واحدة، فلا يزداد فِي ذَلِكَ الْعَدَدِ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُ, وَكَذَلِكَ أَفْعَالُهُمْ فِيمَا عَلِمَ مِنْهُمْ أَنْ يَفْعَلُوهُ
মহান আল্লাহ আগে থেকেই জানেন, সর্বমোট কত সংখ্যক লোক জান্নাতে যাবে আর কত সংখ্যক লোক জাহান্নামে যাবে। এ সংখ্যায় কোনো কমবেশী হবে না। অর্থাৎ এ সংখ্যা কমবেও না, বাড়বেও না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের কাজকর্ম সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবহিত।[1]
.......................................................................
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ‘‘ নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত’’। (সূরা তাওবা: ১১৫, সূরা আনফাল ৭৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ‘‘আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা আহযাব: ৪০)
সুতরাং আল্লাহ এভাবে বিশেষিত যে, তিনি সর্ববিষয়ে আদি থেকেই পূর্ণ অবগত রয়েছেন বর্তমানেও সেভাবে আছেন এবং অনন্তকাল তিনি সর্ববিষয়ে অবগত থাকবেন। সর্ববিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা এমনভাবে অবগত রয়েছেন যে, অতীতে কোনো সময় কোনো জিনিস সম্পর্কেই তিনি অজ্ঞ ছিলেন না। আর তোমার প্রভু কোনো কিছুকে ভুলেও যান না।
আলী বিন আবু তালেব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
كُنَّا فِي جَنَازَةٍ فِي بَقِيعِ الْغَرْقَدِ، فَأَتَانَا رسول الله صلى الله عليه وسلم فَقَعَدَ وَقَعَدْنَا حَوْلَهُ، وَمَعَهُ مِخْصَرَةٌ، فَنَكَّسَ فَجَعَلَ يَنْكُتُ بِمِخْصَرَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: مَا مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ، إِلاَّ وقد كتب الله مَكَانهَا مِنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ، وَإِلاَّ قَدْ كُتِبَ: شَقِيَّةً أَوْ سَعِيدَةً. قال فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلا نَتَّكِلُ عَلَى كِتَابِنَا وَنَدَعُ الْعَمَلَ، فَقال مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ السَّعَادَةِ فَسَيَصِيرُ إِلَى عَمَلِ أَهْلِ السَّعَادَةِ، وَ مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الشَّقَاوَةِ فَسَيَصِيرُ إِلَى عَمَلِ أَهْلِ الشَّقَاوَةِ، ثم قَالَ: اعملوا فكل ميسر لما خلق له أَمَّا أَهْلُ السَّعَادَةِ فَيُيَسَّرُونَ لِعَمَلِ السَّعَادَةِ وَأَمَّا أَهْلُ الشَّقَاوَةِ فَيُيَسَّرُونَ لِعَمَلِ الشَّقَاوَةِ. ثُمَّ قَرَأَ: فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى الآيَةَ. (بخارى : 1362)
‘‘আমরা বাকী গোরস্থানের একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। তখন নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন এবং বসলেন। আমরাও তার চার পাশে বসে গেলাম। তার হাতে ছিল ছোট্ট একটি লাঠি। তিনি নীচের দিকে মাথা ঝুকালেন এবং লাঠি দিয়ে যমীনে আঘাত করতে লাগলেন। অতঃপর তিনি বললেন, এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার ঠিকানা জান্নাত কিংবা জাহান্নামে নির্ধারণ করা হয়নি এবং এও লিখা হয়নি যে, সে সৌভাগ্যবান না হতভাগ্য। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমরা কি নির্ধারিত বিষয়ের উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দেবনা? নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, আমাদের মধ্যে যারা সৌভাগ্যবান সে তো অবশ্যই সৌভাগ্যবানদের ন্যায় আমল করবে। আর আমাদের মধ্যে যে হতভাগ্য হিসাবে লিখিত তারা অচিরেই হতভাগ্যদের ন্যায় কাজ করবে। অতঃপর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা আমল করতে থাকো। প্রত্যেক মানুষকে যেই কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সেই আমল সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করলেন,
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى ‘‘যে ব্যক্তি দান করে ও তাকওয়ার পথ অনুসরণ করে এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে অচিরেই আমি তার জন্য সহজ পথকে আরো সহজ করে দিব। পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করলো ও বেপরোয়া হলো এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করলো, অচিরেই আমি তার জন্য সুগম করে দিবো কঠিন পরিণামের পথ’’। (সূরা লাইল: ৫-১০)[2]
[2]. মুত্তাফাকুন আলাইহি। ছহীহ বুখারী হা/১৩৬২, মুসলিম হা/২৬৪৭।