আলেমগণ নাবী ও রাসূলের মধ্যে একাধিক পার্থক্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে সর্বোত্তম কথা হলো, যার নিকট আল্লাহ তা‘আলা আকাশের খবর পাঠিয়েছেন, তাকে যদি অন্যের নিকট সে খবর পৌঁছানোর আদেশ দেয়া হয়, তাহলে তিনি হবেন নাবী ও রসূল। আর তাকে যদি অন্যের নিকট সে খবর পৌঁছানোর আদেশ না দেয়া হয়, তাহলে তিনি হবেন নাবী; রসূল নন।[1]

সুতরাং রসূল নাবীর চেয়ে অধিকতর খাস। অর্থাৎ তাদের সংখ্যা নাবীদের সংখ্যার চেয়ে কম। সে হিসেবে প্রত্যেক রসূলই নাবী, কিন্তু প্রত্যেক নাবী রসূল নন। যাদের নিকট রসূল পাঠানো হয়েছে, তাদের দিক থেকে রেসালাত একটি ব্যাপক অর্থবোধক পরিভাষা। কারণ নাবী ও সাধারণ মানুষগণ তাদের দাওয়াতের আওতাধীন। নবুওয়াত রেসালাতের অংশ বিশেষ। রেসালাতের বাহকগণ অধিকতর খাস বিশেষত্বের অধিকারী। অর্থাৎ তাদের সংখ্যা নাবীদের তুলনায় কম এবং রেসালাত ও রাসূলের মর্যাদা নবুওয়াত ও নাবীর মর্যাদার চেয়ে বেশী।

সৃষ্টির জন্য রসূল পাঠানো আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম বিরাট নেয়ামত স্বরূপ। বিশেষ করে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠানো আমাদের জন্য সর্ববৃহৎ নেয়ামত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ

‘‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি তাদেরই মধ্য থেকেই একজন রসূল পাঠিয়ে বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তার আয়াত তাদেরকে পাঠ করে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

‘‘হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে সৃষ্টিজগতের জন্য আমার রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি’’। (সূরা আল আম্বীয়া: ১০৭)

[1]. কোনো কোনো আলেম নাবী ও রাসূলের মধ্যে এভাবে পার্থক্য করাকে সমর্থন করেন না। তারা বলেন, আল্লাহ তাআলা কাউকে নাবী বানিয়ে পাঠাবেন এবং তাকে তাবলীগ করার আদেশ দিবেন না, -এটি কিভাবে সম্ভব? এমনটি হতেই পারে না। কেননা কুরআন ও হাদীছের অনেক দলীল প্রমাণ করে যে, নাবীগণও তাবলীগ করেছেন। যেই হাদীছে ৭০ হাজার লোক ورأيت النبي ومعه الرجل والرجلان ورأيت النبي وليس معه أحد বিনা হিসাবে ও বিনা আযাবে জান্নাতে যাবে বলে উল্লেখ হয়েছে, সেখানে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি দেখলাম, কোনো কোনো নাবীর সাথে মাত্র একজন অনুসারী রয়েছে। আবার কোনো কোনো নাবীর সাথে রয়েছে দুইজন। সেই সঙ্গে এমন নাবীও দেখলাম, যার সাথে কোনো অনুসারী নেই’’। সুতরাং তাবলীগ করা ব্যতীত অনুসারী হয় কিভাবে? এতে বুঝা গেল যারা নাবী ও রাসূলের মধ্যে উপরোক্ত পার্থক্য করেছেন, তাদের কথা সঠিক নয়। শাইখ ইবনে আবীল ইয্ রহিমাহুল্লাহ নাবী ও রাসূলের মধ্যে যে পার্থক্য উল্লেখ করেছেন, এটি অপ্রাধান্য প্রাপ্ত মত।

অতএব, নাবী ও রাসূলের মধ্যকার পার্থক্যের ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, যাকে আল্লাহ তাআলা নতুন শরীয়াত দিয়ে কাফের ও মুশরিক সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছেন এবং তার মাঝে ও তার সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছে তিনি হলেন রসূল। আর যাকে পূর্ববর্তী রাসূলের শরীয়াতকে নবায়ন ও সংশোধন করার জন্য পাঠানো হয়েছে, তিনিই হলেন নাবী। সে হিসাবে নাবী ও রসূল উভয়কেই তাবলীগ করার আদেশ করা হয়েছে এবং তারা উভয়েই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।