ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَكُلُّ شَيْءٍ يَجْرِي بِتَقْدِيرِهِ وَمَشِيئَتِهِ وَمَشِيئَتُهُ تَنْفُذُ لَا مَشِيئَةَ لِلْعِبَادِ إِلَّا مَا شَاءَ لَهُمْ، فَمَا شَاءَ لَهُمْ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ
সবকিছু তার নির্ধারণ এবং ইচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয়। তার ইচ্ছাই কার্যকর হয়, তার ইচ্ছা ব্যতীত বান্দার কোনো ইচ্ছাই বাস্তবায়ন হয় না। অতএব তিনি বান্দাদের জন্য যা চান তাই হয়, আর যা চান না তা হয় না।
.............................................................
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
‘‘তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাইরে কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সুবিজ্ঞ’’। (সূরা দাহার: ৩১) আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাকবীরের ২৯ নং আয়াতে বলেন,
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
‘‘তোমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে কোনোই ইচ্ছা করতে পারো না’’।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন‘আমের ১১১ নং আয়াতে বলেন,
وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَىٰ وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ
‘‘আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাও নাযিল করতাম, মৃতরাও তাদের সাথে কথা বলতো এবং সারা দুনিয়ার সমস্ত জিনিসও তাদের চোখের সামনে একসাথে তুলে ধরতাম, তাহলেও তারা ঈমান আনয়ন করতো না। তবে যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়, তাহলে অন্য কথা। কিন্তু বেশীর ভাগ লোকই অজ্ঞ’’। আল্লাহ তা‘আলা পরের আয়াতে বলেন,
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
‘‘আর এভাবে আমি মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানদেরকে প্রত্যেক নাবীর দুশমনে পরিণত করেছি, তারা ধোঁকা ও প্রতারণার ছলে পরস্পরকে চমকপ্রদ কথা বলতো। তোমার রব ইচ্ছা করলে তারা এমনটি কখনো করতে পারতো না। কাজেই তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও, তারা মিথ্যা রচনা করতে থাকুক’’ (সূরা আন‘আম ১১২)। আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউনুসের ৯৯ নং আয়াতে বলেন,
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
‘‘যদি তোমার রব ইচ্ছা করতেন, তাহলে যমীনের সবাই ঈমান আনয়ন করতো। তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের উপর জবরদস্তি করবে? আল্লাহ তা‘আলা সূরা আনআমের ১২৫ নং আয়াতে বলেন,
فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ
‘‘আল্লাহ যাকে সত্যপথ দেখাবার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন, তার বক্ষদেশ খুব সংকীর্ণ করে দেন। যাতে মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশের দিকে উঠার চেষ্টা করছে’’।
অর্থাৎ জোর খাটিয়ে যেমন আকাশের দিকে উঠা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আল্লাহ যার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেন তার মধ্যে ঈমান ও তাওহীদের আলো ঢুকানো সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে না দেয়া পর্যন্ত তাতে ঈমান ও তাওহীদ প্রবেশ করে না। আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা হুদের ৩৪ নং আয়াতে বলেন,
وَلَا يَنفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘‘আমি তোমাদেরকে নসীহত করতে চাইলেও আমার নসীহত তোমাদের কোনো কাজে লাগবে না যদি আল্লাহ নিজেই তোমাদের বিভ্রান্ত করার ইচ্ছা করেন। তিনিই তোমাদের রব এবং তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে’’।[1] আল্লাহ তা‘আলা সূরা আনআমের ৩৯ নং আয়াতে বলেন,
مَن يَشَإِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন’’। এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু করার ইচ্ছা করেন, তাই হয়। তিনি যা করার ইচ্ছা করেন না, তা হয় না। তার রাজত্বের মধ্যে কিভাবে এমন কিছু হতে পারে, যা তিনি চান না!! ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট এবং অধিক বড় কাফের আর কে হতে পারে, যে ধারণা করে আল্লাহ তা‘আলা কাফেরের পক্ষ হতে ঈমান সংঘটিত হওয়ার ইচ্ছা করেছেন, কিন্তু কাফের কুফুরী করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছার উপর কাফেরের ইচ্ছা জয়লাভ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথার অনেক উর্ধ্বে।