শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ১. তাওহীদের সংজ্ঞা ও তার প্রকারভেদ ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) ১ টি
রসূলগণ যে তাওহীদের প্রতি আহবান করেছেন, তার প্রকারভেদ - ২

সুতরাং ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই’ এ হুকুম ও ফায়ছালার মধ্যে এর বিষয়বস্তু বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখানে যদি শুধু জবানের উচ্চারণ উদ্দেশ্য হতো, তাহলে ইহার ইল্ম অর্জন করা আবশ্যক হতো না, ইহা দ্বারা কোনো উপকার হতো না এবং এর দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে দলীল পেশ করাও সম্ভব হতো না।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাতে রয়েছে বান্দার জন্য তাওহীদের বর্ণনা, তাদের জন্য রয়েছে দিক নির্দেশনা এবং এর পরিচিতি। যেমন কোন বান্দার কাছে যখন কোন বিষয়ে সাক্ষ্য থাকবে, সে যদি তা বর্ণনা না করে; বরং তা গোপন করে, তাহলে তার দ্বারা কেউ উপকৃত হবে না এবং এর মাধ্যমে কোনো দলীল-প্রমাণও কায়েম হবে না। সুতরাং তাওহীদের সাক্ষ্য বর্ণনা করা ব্যতীত যেহেতু তার দ্বারা উপকৃত হওয়া সম্ভব নয়, তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তা অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। মানুষের শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বিবেক ও বোধশক্তির নিকট আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের দলীলগুলো বর্ণনা করেছেন।

আসমানী কিতাব ও নাবী-রসূলদের মাধ্যমে তাওহীদের দলীলগুলোর ব্যাপারে কথা হলো আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তার পূর্ণতার গুণাবলী, একত্ব এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন এবং ঐগুলোর খোলাখুলি বর্ণনা প্রদান করেছেন। সে সম্পর্কিত সুস্পষ্ট আয়াতগুলোর তেলাওয়াত শুনেই তা দ্বারা উপকৃত হওয়া সম্ভব।

আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মানিত কিতাবে নিজের যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন এবং তার শ্রেষ্ঠতম রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রভুকে যেসব বিশেষণে বিশেষিত করেছেন, জাহমীয়া, মুতাযেলা এবং কতিপয় সিফাতকে বাতিলকারী আশায়েরা ও মাতুরীদি সম্প্রদায়ের লোকেরা এ ধারণায় ঐ সব সিফাতকে অস্বীকার করে যে, তা বিবেক-বুদ্ধি ও বোধশক্তিকে পরাজিত করে। আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে এবং রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সুন্নাতে যেসব গুণাবলীর সুস্পষ্ট বর্ণনা প্রদান করেছেন, তা তাদের ধারণার সম্পুর্ণ পরিপন্থী। আল্লাহ তা‘আলা সূরা যুখরুফের শুরুতে বলেন,

حم وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ

‘হা-মীম এ সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ! সূরা ইউসুফের শুরুতে আরো বলেন,

الر تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ

‘‘আলিফ-লাম-রা! এগুলো সুস্পষ্টরূপে বর্ণনাকারী কিতাবের আয়াত’’। তিনি সূরা হিজরের শুরুতে আরো বলেন,

الر تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ

‘‘আলিফ-লাম-রা! এগুলো আল্লাহর কিতাব ও সুস্পষ্টভাষী কুরআনের আয়াত’’। সূরা আল-ইমরানের ১৩৮ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

هَٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ

‘‘এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশ’’। সূরা মায়েদার ৯২ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَاحْذَرُوا ۚ فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا عَلَىٰ رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ

‘‘আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকো। কিন্তু যদি তোমরা আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রাখো, সত্য সুস্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আমার রাসূলের আর কোনো দায়িত্ব নেই’’।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা নাহালের ৪৪ নং আয়াতে আরো বলেন,

وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

‘‘এ উপদেশ বাণী তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে পারো যা তাদের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’’।

এমনিভাবে সুন্নাত কুরআনের অর্থকে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে এবং তাকে সাব্যস্ত করে। মহান প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের দ্বীনের মূলনীতির ব্যাপারে কারো ব্যক্তিগত মত বা রুচি অথবা আবেগ-অনুভূতির অনুসরণ করার মুখাপেক্ষী করেননি। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই, যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের বিরোধিতা করেছে, তারা নিজেরাই পরস্পর মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمْ الْإِسْلَامَ دِينًا

‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’’ (সূরা আল মায়েদা: ৩)। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে দ্বীনকে পূর্ণ করার কোন প্রয়োজন নেই।

আবু জা’ফর ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর শাইখের বক্তব্য:

لَا نَدْخُلُ فِي ذَلِكَ مُتَأَوِّلِينَ بِآرَائِنَا وَلَا مُتَوَهِّمِينَ بِأَهْوَائِنَا، فَإِنَّهُ مَا سَلِمَ فِي دِينِهِ إِلَّا مَنْ سَلَّمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَدَّ عِلْمَ مَا اشْتَبَهَ عَلَيْهِ إِلَى عَالِمِهِ

‘‘এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা আমাদের রায় দ্বারা কথা বলি না এবং প্রবৃত্তির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ধারণার উপর নির্ভর করেও কিছু বলি না। কারণ কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত তার দ্বীনকে ভ্রষ্টতা ও বক্রতা থেকে নিরাপদ রাখতে পারবে না, যতক্ষণ না সে গায়েবী বিষয়গুলো মহান আল্লাহ এবং তার রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিঃশর্তভাবে সমর্পন করবে এবং যে বিষয়গুলো তার কাছে অস্পষ্ট মনে হবে সেটি কেবল আল্লাহর দিকেই ফিরিয়ে দিবে’’এ অংশের ব্যাখ্যা করার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলোর আরো বিস্তারিত আলোচনা হবে। ইনশা-আল্লাহ।

সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ সম্পর্কিত দৃশ্যমান যেসব আয়াত রয়েছে, তাতে চিন্তা-গবেষণা করলে এবং তা দ্বারা দলীল গ্রহণ করলে দেখা যায় তাতে কুরআনের আয়াত ও হাদীছের বাণীর মতোই তাওহীদের প্রমাণ রয়েছে। আর বোধশক্তির দলীলসমূহ উভয় প্রকার দলীলকে একত্র করেছে। নাবী-রসূলগণ তাওহীদের যেসব দলীল নিয়ে এসেছেন, বোধশক্তি তার সত্যতাকে সুদৃঢ় করে। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর সাক্ষ্য, দৃষ্টির সামনে দৃশ্যমান সৃষ্টির মধ্যকার নিদর্শনসমূহ, বোধশক্তির দলীলসমূহ এবং ফিতরাতী দলীলগুলো একসাথে মিলিত হয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পরিপূর্ণ আদল, রহমত, অনুগ্রহ এবং হিকমতের কারণে বান্দার অজুহাত কবুল করাকে ভালোবেসেছেন, পছন্দ করেছেন এবং সৃষ্টির নিকট তাওহীদের যুক্তি-প্রমাণ ও অকাট্য দলীল পেশ করার প্রতি খুবই গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এ জন্যই তিনি যতো নাবী-রসূল পাঠিয়েছেন, তাদের সকলকেই এমন নিদর্শন দিয়েছেন, যা তাদের সত্যতার প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ

‘‘আমি আমার রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। তাদের সাথে কিতাব ও মীযান নাযিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে’’ (সূরা হাদীদ: ২৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِوَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

‘‘হে মুহাম্মাদ! তোমার আগে আমি যখনই রসূল পাঠিয়েছি, মানুষই পাঠিয়েছি, যাদের কাছে আমি নিজের অহী প্রেরণ করতাম। যদি তোমরা নিজেরা না জেনে থাকো তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো। আগের রসূলদেরকেও আমি উজ্জ্বল নিদর্শন ও কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছিলাম এবং এ বাণী তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে পারো যা তাদের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’’ (সূরা আন নাহল ৪৩-৪৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

قُلْ قَدْ جَاءَكُمْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِي بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِي قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوهُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

‘‘হে নাবী! তাদেরকে বলো, আমার আগে তোমাদের কাছে অনেক রসূল এসেছেন, তারা অনেক উজ্জ্বল নিদর্শন এনেছিলেন এবং তোমরা যে নিদর্শনটির কথা বলছো সেটিও তারা এনেছিলেন’’ (সূরা আলে ইমরান: ১৩৮)।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে ইমরানের ১৮৪ নং আয়াতে আরো বলেন,

فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ جَاءُوا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيرِ

‘‘হে মুহাম্মাদ! এরা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তাহলে তোমার পূর্বে বহু রাসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হয়েছে। তারা স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, সহীফা ও আলোদানকারী কিতাব এনেছিল’’। আল্লাহ তা‘আলা সূরা শুরার ১৭ নং আয়াতে বলেন,

اللَّهُ الَّذِي أَنزَلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَالْمِيزَانَ

‘‘আল্লাহই এ কিতাব ও মীযান যথাযথভাবে নাযিল করেছেন’’।

রসূলদেরকে যেসব নিদর্শন দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে কম প্রকাশ্য আয়াত ছিল হুদ আলাইহিস সালামের নিদর্শনসমূহ। এমনকি তার জাতির লোকেরা বলেছিল, হে হুদ! তুমি তো আমাদের কাছে কোনো নিদর্শনই নিয়ে আসোনি। অথচ তিনি যে নিদর্শনগুলো নিয়ে এসেছিলেন, তা ছিল অত্যন্ত সুষ্পষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা যাকে এগুলো নিয়ে গবেষণা করার তাওফীক দিয়েছেন, সে কেবল বুঝতে সক্ষম হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে হুদ আলাইহিস সালামের নিদর্শনগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন,

إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ مِنْ دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونِ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آَخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

‘‘হুদ বললেন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি। আর তোমরা সাক্ষী থাকো। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করছো, আমি ঐসব কিছু থেকে মুক্ত। তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাও। অতঃপর তোমরা আমাকে একটুও অবকাশ দিয়ো না। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব। ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী যত প্রাণী রয়েছে, সবারই কপাল তার মুষ্ঠিতে আবদ্ধ। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সরল পথে রয়েছেন’’ (সূরা হুদ: ৫৪-৫৬)।

হুদ আলাইহিস সালামের কথার মধ্যে তাওহীদের অন্যতম বিরাট নিদর্শন রয়েছে। তিনি মাত্র একজন ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চিত্তে, নির্ভয়ে এবং বলিষ্ঠ কণ্ঠে বিরাট একটি জাতির সামনে এ ভাষণ তুলে ধরেছেন। তিনি যা বলেছেন, তাতে তিনি ছিলেন পর্বত প্রবল আত্মবিশ্বাসী ও প্রত্যয়ী। তার জাতির লোকেরা যে বাতিলের উপর ছিল, তা থেকে তিনি প্রথমে নিজেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন এবং এর উপর আল্লাহ তা‘আলাকে সাক্ষী রেখেছেন। এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন, যাতে তিনি তার উপর সম্পূর্ণ আস্থাবান। তিনি তার জাতিকে সুস্পষ্টভাবে এ কথা জানিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ তা‘আলাই তার একমাত্র অভিভাবক ও সাহায্যকারী।

সুতরাং তিনি শত্রুদেরকে তার উপর শক্তিশালী করবেন না। অতঃপর হুদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি তাদের দ্বীন ও তাদের ঐসব মাবুদ হতে সম্পূর্ণ মুক্ত যাদের কারণে তারা কাউকে বন্ধু বানায় ও কাউকে শত্রু বানায় এবং জান-মাল ব্যয় করে ও তাদেরকে সাহায্য করে। অতঃপর তিনি প্রকাশ্যভাবে মূর্তিগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, তারা সকলে মিলে যদি হুদ আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং তাকে হত্যা করে মনের জ্বালা-যন্ত্রণা নিবারণ করতে চায় এবং তারা যদি তাদের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চায় ও কোনো প্রকার অবকাশ না দেয়, তবে তারা কেবল ঐ পরিমাণ ক্ষতিই করতে পারবে, যা আল্লাহ তা‘আলা তার উপর লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার দাওয়াতকে তাদের কাছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন, সেই সত্তাই হলেন তার ও তাদের সকলের রব, যার হাতের মুঠোয় রয়েছে সকলের ললাটের কেশ গুচ্ছ। তিনিই তার অভিভাবক এবং নিয়ন্ত্রক। তিনিই তাকে সাহায্য ও শক্তিশালী করবেন। তিনি সঠিক পথে রয়েছেন। সুতরাং যে তার উপর ভরসা করবে, তার ক্ষমতার স্বীকৃতি দিবে, তিনি তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিবেন না এবং তার বিরুদ্ধে তার শত্রুদেরকে খুশী করবেন না।

নাবী-রসূলগণ আল্লাহর পক্ষ হতে যেসব দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শন নিয়ে এসেছেন, তার চেয়ে অধিক উত্তম এবং উজ্জল নিদর্শন আর কী হতে পারে? আর তা হলো আল্লাহ তা‘আলা নাবী-রসূলদের দ্বীনের পক্ষে নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তার বান্দাদের জন্য তাকে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম অতি সুন্দর নাম হলো, তিনি হলেন, المؤمن (নিরাপত্তা দানকারী)। এ নামের দু’টি ব্যাখ্যার মধ্যে একটি ব্যাখ্যা হলো, সত্যায়নকারী, যিনি সত্যবাদীদের সত্যের দলীল-প্রমাণগুলো প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার বান্দাদেরকে দিক-দিগমেত্মর এবং তাদের নিজেদের মধ্যকার ঐসব নিদর্শন দেখাবেন, যা তাদের সামনে খোলাখুলি বর্ণনা করে দিবে যে, রসূলগণ যে অহীর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, তা সত্য। আল্লাহ তা‘আলা সূরা হামীম সেজদার ৫৩ নং আয়াতে বলেন,

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ

‘‘অচিরেই আমি এদেরকে সর্বত্র আমার নিদর্শনসমূহ দেখাবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যে যেসব নিদর্শন রয়েছে তাও দেখাবো। যাতে এদের কাছে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এটাই সত্য’’।

অর্থাৎ কুরআন সত্য। কেননা কুরআন সম্পর্কে আলোচনা পূর্বের আয়াতে অতিক্রান্ত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা সেখানে বলেছেন, হে নাবী, এদের বলো, তোমরা কি কখনো এ কথা ভেবে দেখেছো যে, সত্যিই এ কুরআন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে আর তোমরা তা অস্বীকার করতে থাকো তাহলে সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হবে, যে এর বিরোধিতায় বহুদূর অগ্রসর হয়েছে’’। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, এটাই কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার রব প্রতিটি জিনিস দেখছেন?’’

সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তার রসূল যা নিয়ে এসেছেন, তা সত্য, তিনি ওয়াদা করেছেন যে, বান্দাদেরকে তার সৃষ্টিগত ও কর্মগত নিদর্শনসমূহ থেকে এমন কিছু নিদর্শনও দেখাবেন, যাতে প্রমাণিত হবে যে, কুরআন সত্য। এরপর আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বড় ও সুস্পষ্ট আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার এ সাক্ষ্য যে, তিনি সবকিছু দেখেন।

সুতরাং আল্লাহর অতি সুন্দর নামসমূহের অন্যতম হলো, الشهيد অর্থাৎ সর্বদ্রষ্টা, যার দৃষ্টির অন্তরালে কোনো কিছুই আড়াল হয় না এবং যার জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছুই নেই। বরং তিনি সবকিছু সম্পর্কে অবগত, সর্বদ্রষ্টা এবং প্রত্যেক জিনিসের খুটিনাটি সবকিছুই জানেন। এ হলো তার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী দ্বারা দলীল গ্রহণের কিছু প্রমাণ। প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার কথা ও বাণী দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে, অতঃপর দিগ-দিগমেত্মর সর্বত্র বিরাজমান নিদর্শন ও মানুষের নিজেদের মধ্যকার নিদর্শন দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার কর্মসমূহ এবং সৃষ্টির মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে।

আপনি যদি প্রশ্ন করেন, আল্লাহ তা‘আলার নাম ও গুণাবলী দ্বারা কিভাবে দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে? অথচ মানুষের পরিভাষায় নাম দ্বারা দলীল গ্রহণ করার বিষয়টি পরিচিত নয়।

এর জবাব হলো, যে ব্যক্তির ফিতরাত বা সৃষ্টিগত স্বভাব স্রষ্টার প্রতি কুফরী করা, তার গুণাবলী অস্বীকার করা কিংবা তার গুণাবলীকে মানুষের গুণাবলীর সাথে তুলনা করার দোষে দূষিত হয়নি, আল্লাহ তা‘আলা সেই ফিতরাতের মধ্যে এ বিশ্বাস স্থাপন করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলার সুন্দরতম নাম ও সুমহান গুণাবলী সব দিক থেকেই পরিপূর্ণ। তিনি ঐ সব বিশেষণে বিশেষিত, যা দ্বারা তিনি নিজেকে বিশেষিত করেছেন এবং যা দ্বারা তার রসূলগণ তাকে গুণান্বিত করেছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পূর্ণতার যে গুণাবলী সৃষ্টির নিকট অস্পষ্ট রয়ে গেছে, তা তাদের নিকট পরিচিত গুণাবলীর চেয়ে আরো বহুগুণ বড়। তার পবিত্রত ও পূর্ণতার অন্তর্ভুক্ত হলো, তার এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, তিনি সবকিছু দেখেন এবং সবকিছু সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। এমন অবগত যে, আসমান-যমীনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য একটি অণুপরিমাণ জিনিসও তার অবগতি ও দৃষ্টির বাইরে নয়। যে সত্তার অবস্থা এ রকম, তাহলে বান্দাদের জন্য আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করা কিভাবে শোভনীয় হতে পারে? কিভাবেই বা তার ইবাদতের সাথে অন্যকে শরীক করা যেতে পারে এবং তার সাথে অন্যান্য মাবুদ নির্ধারণ করা যেতে পারে?

আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণতার বিষয়ে কিভাবে এটি শোভনীয় হতে পারে যে, যারা তার উপর মহা মিথ্যা রচনা করবে, তাদেরকে সমর্থন করবেন এবং তাদের সম্পর্কে এমন খবর দিবেন, যা বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। এমন নয় যে, বাতিলের উপর থাকা সত্ত্বেও তিনি বাতিলপন্থীকে সাহায্য করবেন, তার কাজকে সমুন্নত করবেন, তার আহবান শুনবেন, তার শত্রুকে ধ্বংস করবেন এবং বাতিলপন্থীর দ্বীনকে এমন দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শন দিয়ে সাহায্য করবেন, যা আনয়ন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ সে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপকারী এবং তার নামে বানোয়াট কথা রচনাকারী।

আর এটি সকলের জানা যে, প্রত্যেক জিনিসের উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দৃষ্টি, তার ক্ষমতা, তার হিকমত, মর্যাদা এবং সকল দোষ-ত্রুটি থেকে তার পরিপূর্ণ পবিত্রতা উপরোক্ত ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। যারা এটিকে জায়েয মনে করবে, তারা আল্লাহর মারেফত থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে।

আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নামগুলোর মাধ্যমে তার জন্য কার্যাদি সাব্যস্ত করার দলীলে কুরআন মজীদ পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলার খাঁটি বান্দাগণ এ পদ্ধতিতেই আল্লাহ তা‘আলার কার্যাদি সাব্যস্ত করেন। তারা আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ দ্বারা তার কর্মের পক্ষে দলীল গ্রহণ করে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা আরো দলীল গ্রহণ করেন যে, আল্লাহর জন্য কী করা শোভনীয় এবং কী করা শোভনীয় নয়? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ (44) لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ (45) ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ (46) فَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ

‘‘যদি এ নাবী নিজে কোনো কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং ঘাড়ের রগ কেটে দিতাম। তোমাদের কেউ আমাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতো না’’। (সূরা আল-হাক্কাহ: ৪৪-৪৭)

সামনে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নামসমূহ এবং সুউচ্চ গুণাবলী দ্বারাও আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ সাব্যস্ত ও শির্ক বাতিল হওয়ার উপর দলীল পেশ করা হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

‘‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই। তিনি مَلِك (মালিক), قُدُّوس (অতি পবিত্র) سَلَام (শান্তিদাতা), مؤْمِن (নিরাপত্তা দানকারী), مُهَيْمن (রক্ষাকারী), عَزِيز (পরাক্রমশালী), جَبَّار (প্রতাপশালী) এবং مُتَكَبِّر (মহিমান্বিত)। তারা যাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা‘আলা তা থেকে পবিত্র’’ (সূরা আল হাশর: ২৩)।

কুরআনে অনুরূপ আয়াত অনেক রয়েছে। তবে অল্প সংখ্যক লোকই এ পথ অনুসরণ করে। খাঁটি লোকেরাই এ পথের সন্ধান পেয়ে থাকে। সাধারণ লোকেরা কেবল বাহ্যিক নিদর্শন দ্বারাই তাওহীদের দলীল গ্রহণ করে থাকে। কেননা এ পদ্ধতি অধিক সহজ এবং অধিক প্রশস্ত। আর আল্লাহ তা‘আলা তার কতক সৃষ্টিকে অন্য কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকেন।

কুরআন মজীদে তাওহীদের এমনসব দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শনের সমাবেশ ঘটেছে, যা অন্য কোনো কিতাবে ঘটেনি। কুরআন একদিকে যেমন স্বতন্ত্র একটি দলীল অন্যদিকে দলীল-প্রমাণ দ্বারা উহার সত্যতা সুসাব্যস্ত ও সুপ্রমাণিত। সে সঙ্গে তা সাক্ষী স্বরূপ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা তার বিশুদ্ধতা ও সত্যতা সুসাব্যস্ত। যে ব্যক্তি রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যতার নিদর্শন অনুসন্ধান করতে চায়, তার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَرَحْمَةً وَذِكْرَىٰ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

‘‘আর এদের জন্য কি এ নিদর্শন যথেষ্ঠ নয় যে, আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদেরকে পড়ে শুনানো হয়? আসলে যারা ঈমান আনে তাদের জন্য এর মধ্যে রয়েছে রহমত ও নসীহত’’ (সূরা আল আনকাবুত: ৫১)।

সুতরাং যখন জানা গেল যে, তাওহীদে উলুহীয়াহ হলো ঐ তাওহীদ, যা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা তার নাবী-রসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং যাসহ আসমানী কিতবসমূহ নাযিল করা হয়েছে, যেমন ইতিপূর্বে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

তাই যারা তাওহীদকে নিমেণাক্ত তিনভাগে বিভক্ত করেছে, তাদের কথার প্রতি কর্ণপাত করা হবে না। যারা তাওহীদকে অভিনব পদ্ধতিতে তিনভাগে বিভক্ত করেছে, তারা নাবী-রসূলদের নিয়ে আসা এ তাওহীদুল উলুহীয়াকে নাম দিয়েছেتوحيد العامة তথা সাধারণ মানুষের তাওহীদ হিসেবে।

তাদের নিকট দ্বিতীয় প্রকার তাওহীদ হলো توحيد الخاصة তথা বিশেষ ব্যক্তিদের তাওহীদ।

হাকীকতের মাধ্যমে এ প্রকার তাওহীদ সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ সুফীদের ধারণায় তাদের কেউ হাকীকতের স্তরে পৌঁছতে পারলে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রেমের স্বাদ লাভ করতে পারে ও পরমাত্মার সাথে তার যোগাযোগ হয়। এটা হচ্ছে সুফী সাধনার চুড়ান্ত স্তর। এ স্তরে উন্নীত হলে সুফী ধ্যানের মাধ্যমে নিজস্ব অস্তিত্ব আল্লাহর নিকট বিলীন করে দেয় এবং তাদের জন্য যেই প্রকার তাওহীদ অর্জিত হয়, তাকেই সম্ভবত তারা তাওহীদুল খাসসাহ হিসাবে নাম দিয়েছে।