আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন :
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى الفجر لم يقم من مجلسه حتى يمكنه الصلاة، وقال من صلى الصبح ثم جلس في مجلسه حتى تمكنه الصلاة كان بمنزلة عمرة وحجة متقبلتين
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন, তখন (সূর্য পুরোপুরি উঠে মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হয়ে) সালাত জায়েয হওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁর বসার স্থান থেকে উঠতেন না। তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করার পরে সালাত জায়েয হওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁর বসার স্থানে বসে থাকবে সে একটি মাকবুল হজ্ব ও একটি মাকবূল উমরার সাওয়াব অর্জন করবে।” হাদীসটি গ্রহণযোগ্য।[1]
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) বলেন :
كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا صلَّى الفجر تربع في مجلسه (جلس في مُصلاَّه) حتى تطلع الشمس حسنا
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন তখন সূর্য ভালোভাবে উঠে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর বসার স্থানে চারজানু হয়ে বসে
থাকতেন।”[2]
অন্য বর্ণনায় সাম্মাক ইবনু হারব বলেন: আমি জাবির ইবনু সামুরাহকে (রাঃ) বললামঃ, ‘আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বসতেন?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ, অনেক,’
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا صلى الفجر جلس في مصلاه حتى تطلع الشمس (فإذا طلعت الشمس قام) فيتحدث أصحابه ويذكرون حديث الجاهلية وينشدون الشعر ويضحكون ويتبسم صلى الله عليه وسلم
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যে স্থানে ফজরের সালাত আদায় করতেন সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের পরে তিনি উঠতেন। তাঁর বসা অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম কথাবার্তা বলতেন, জাহেলী যুগের কথা আলোচনা করতেন, কবিতা পাঠ করতেন এবং হাসতেন। আর তিনি শুধু মুচকি হাসতেন।”[3]
উমার (রাঃ) বলেন :
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى الصبح جلس في مصلاه وجلس الناس حوله حتى تطلع الشمس ثم دخل على نسائه امرأة امرأة يسلم عليهن ويدعو لهن
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। মানুষেরা তাঁর চারিদিকে বসত। সূর্যোদয় পর্যন্ত তিনি এভাবে থাকতেন। এরপর তিনি একে একে তাঁর সকল স্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁদেরকে সালাম দিতেন ও তাঁদের জন্য দু‘আ করতেন।”
আল্লামা হাইসামীর বর্ণনা অনুযায়ী হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।[4]
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
لَأَنْ أَقْعُدَ مَعَ قَوْمٍ يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَعَالَى مِنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ : أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ أَرْبَعَةً مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ ، وَلَأَنْ أَقْعُدَ مَعَ قَوْمٍ يَذْكُرُونَ اللَّهَ مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ : أَحَبُّ إِلَيَّ مَنْ أَنْ أَعْتِقَ أَرْبَعَةً
“ফজরের সালাতের পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে রত কিছু মানুষের সাথে বসে থাকা আমার কাছে ইসমাঈল (আ.)-এর
বংশের চারজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করার চেয়ে বেশি প্রিয়। অনুরূপভাবে আসরের সালাতের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিক্রে রত কিছু মানুষের সাথে বসে থাকা আমার কাছে চারজন ক্রীতদাস মুক্ত করার চেয়েও বেশি প্রিয়। হাদীসটি হাসান।[5]
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরে সাহাবীগণও সুযোগমতো ফজরের সালাতের পরে মসজিদে বা ঘরে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে ব্যক্তিগতভাবে যিকর ওযীফায় রত থাকতে ভালবাসতেন। তাবেয়ী মুদরিক ইবনু আউফ বলেন, আমি চলার পথে দেখলাম বিলাল (রাঃ) ফজরের সালাত আদায় করে বসে রয়েছেন। আমি বললামঃ, “বসে রয়েছেন কেন?” তিনি বললেনঃ “সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।”[6]
তাবেয়ী আবু ওয়াইল বলেন,
سألت ابن مسعود ذات يوم بعدما انصرفنا من صلاة الغداة فاستأذنا عليه قال ادخلوا فقلنا ننتظر هنية لعل بعض أهل الدار له حاجة فأقبل يسبح فقال لقد ظننتم يا آل عبد الله غفلة ثم قال يا جارية انظري هل طلعت الشمس قالت لا ثم قال لها الثالثة انظري هل طلعت الشمس قالت نعم قال الحمد لله الذي وهب لنا هذا اليوم وأقالنا فيه عثراتنا أحسبه قال ولم يعذبنا بالنار
আমি একদিন ফজরের সালাতের পরে ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। আমরা তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি বললেন : “প্রবেশ কর”। আমরা বললামঃ “কিছু সময় আমরা অপেক্ষা করি, হয়ত বাড়ির কারো কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে।” তখন তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসে তাসবীহ করতে থাকলেন। তিনি বললেন, “হে আব্দুল্লাহর বাড়ির মানুষেরা, তোমরা গাফলতির চিন্তা করেছিলে!” এরপর তিনি তার দাসীকে বললেন: “দেখ তো সূর্য উঠেছে কিনা।” সে বলল: “না।” পরে তৃতীয়বার যখন তিনি তাকে বললেন: “সূর্য উঠেছে কিনা দেখ।” তখন সে বলল: “হাঁ, সূর্য উঠেছে।” তখন তিনি বললেন: “আল্লাহর সকল প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে এই দিনটিও উপহার দিলেন। তিনি এই দিনে আমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করেননি।” বর্ণনাটি সনদ সহীহ।[7]
অন্য একটি দুর্বল সনদের বর্ণনায় ইবরাহীম নাখয়ী বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদকে (রাঃ) দেখেছেন এমন একজন আমাকে বলেছেন, তিনি একবার তাকে দেখেছেন যে, তিনি ফজরের সালাত আদায় করে বসে থাকলেন। তিনি যোহর পর্যন্ত আর উঠলেন না
কোনো নফল সালাতও পড়লেন না। যোহরের আযান হলে তিনি উঠে (যোহরের সুন্নাত) চার রাক’আত আদায় করলেন।”[8]
[2] সহীহ মুসলিম ১/৪৬৪, নং ৬৭০।
[3] সহীহ মুসলিম ১/৪৬৩, নং ৬৭০, নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ১/৪০৪, ৬/৫১।
[4] তাবারানী, আল-মু’জামুল আউসাত ৮/৩২৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৮, ফাতহুল বারী ৯/৩৭৯।
[5] সুনানু আবী দাউদ ৩/৩২৪, নং ৩৬৬৭, সহীহুত তারগীব ১/২৬০।
[6] মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১০৭। সনদ সহীহ।
[7] তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৯/১৮২-১৮৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১১৮।
[8] তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৯/২৫৯, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১০৭।