রাহে বেলায়াত তৃতীয় অধ্যায় - দৈনন্দিন যিকর ওযীফা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
সকালের যিকর: দ্বিতীয় পর্যায় - সালাতুল ফজরের পরের যিকর

উপরে আমরা সকালের যিকরের প্রথম পর্যায় আলোচনা করলাম। আগেই বলেছি এখানে উল্লেখিত যিকরগুলি মুলত সকল সময়ের জন্য। মুমিন ফজরের সালাতে এবং সকল সময় ওযু, গোসল, আযান, সালাত, মসজিদে গমন, ঘরে আগমন ইত্যাদি সময়ে এসকল মাসনূন যিকর ও অন্যান্য সুন্নাত পালন করার চেষ্টা করবেন।

সকালের যিকরের দ্বিতীয় পর্যায়: ফজরের ফরয সালাতের পর থেকে সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টা বা আরো পরে সালাতুদ দোহা বা চাশতের সালাত আদায় পর্যন্ত সময়। হাদীসের আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, এই সময় যিকরের অন্যতম সময়। এসময়ে প্রত্যেকেই সাধ্যমতো বেশি বেশি যিকর করার চেষ্টা করবেন। সম্ভব হলে এই ঘণ্টাখানেক সময় সবটুকু, না হলে যতক্ষণ সম্ভব যিকরে কাটাতে হবে।


আমরা ইতঃপূর্বে দেখেছি যে, সকল প্রকার ইবাদতই যিকর। তবে বিভিন্ন প্রকার যিকরের বিভিন্ন স্বাদ, উপকার ও আধ্যাত্মিক প্রভাব রয়েছে। কুরআন ও হাদীসের আলোকে তাসবীহ, তাহলীল ও ওয়ায জাতীয় যিকরের অন্যতম সময় সকাল ও বিকাল - ফজরের পরে ও আসরের পরে। কুরআন ও হাদীসে ফজর ও আসর সালাতের বিশেষ ফযীলত বলা হয়েছে এবং এই দুই সালাতের পরে যিকর আযকারের বিশেষ ফযীলত ও সাওয়াব বর্ণনা করা হয়েছে।

ফজরের পরে যিকরের দুটি পর্যায়। প্রথম পর্যায় - সালাতের পরে বসে, বিশেষত চারজানু হয়ে বসে সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত যিকর করা, যখন মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্যায়- মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হলে (সূর্যোদয়ের মোটামুটি আধাঘণ্টা পরে) অন্তত দুই রাক’আত ‘দোহা’ বা চাশতের সালাত আদায় করা।


রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ফজরের পরে চারজানু হয়ে সূর্য পুরোপুরি উঠা পর্যন্ত বসে থাকতেন। তিনি নিশ্চুপ বসে থাকতেন অথবা চুপে চুপে যিকর আযকার করতেন। সাহাবায়ে কেরাম অনেকে তার চারিপার্শে বসতেন। তারা কখনো প্রত্যেকে নিজে নিজে চুপে চুপে যিকর করতেন। কখনো কখনো তিনি ফজরের সালাম ফেরানোর পরে সাহাবীগণের সাথে কথাবার্তা বলতেন বা রাত্রে কে কী স্বপ্ন দেখেছে তা আলোচনা করতেন। অনেক সময় সাহাবীগণ বিভিন্ন গল্প, জাহেলী যুগের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করতেন। তারা অনেক সময় হাসতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু মুচকি হাসতেন। সাধারণত সূর্য ওঠার পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) উঠে তাঁর ঘরে আসতেন।

ফজরের সালাতের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই যিকরের সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের যুগে সমবেতভাবে বা শব্দ করে যিকরের প্রচলন ছিল না। কোনো হাদীসে কোথাও নেই যে কখনো কোনো দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ সকলে সমবেতভাবে সমস্বরে বা একত্রে জোরে জোরে যিকর করেছেন। এজন্য এ সময়ের যিকরের সুন্নাত- প্রত্যেকে বসে বসে নিজের মতো যিকর ও দু‘আর মধ্যে সময় কাটান। বিভিন্ন হাদীসে যিকর শেষে ‘দোহার সালাত’ পড়ে মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ‘দোহার সালাত’ মসজিদে নিয়মিত পড়তেন বলে জানা যায় না। এ বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।