রাহে বেলায়াত দ্বিতীয় অধ্যায় - বেলায়াতের পথে যিকরের সাথে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
ছ. যিকরের জন্য আদব - (৪) মনোযোগের উপকরণ: সুন্নাত বনাম বিদ‘আত

যিকর এবং অন্য সকল ইবাদতের প্রাণ মনোযোগ। মনোযোগ একটি মাসনূন ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণ মনোযোগ সহকারে যিকরের সাথে হৃদয়কে আলোড়িত করে ক্রন্দন ও আবেগসহ যিকর করতেন।

এই মনোযোগ ও আবেগ সৃষ্টির জন্য কোনো বিশেষ পদ্ধতি তাঁদের কর্ম থেকে আমরা দেখতে পাই না। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ সহকারে যিকর করতেন। পরবর্তী যুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলিম, আবিদ বা যাকির মনোযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এ সকল পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে যিকরের অংশে পরিণত হয়ে বিদ’আতে পর্যবসিত হয়।

যেমন, ইমাম নববী উল্লেখ করেছেন যে, “যাকিরের জন্য লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ একটু টেনে টেনে এর অর্থ মনের মধ্যে নেড়েচেড়ে চিন্তা করে যিকর করা উত্তম।[1] এই মদ্দ, অর্থাৎ টানা মূলত কোনো সুন্নাত ইবাদত নয়। টানার মধ্যে কোনো সাওয়াব নেই। ইবাদত এই যিকরটি মুখে উচ্চারণ করা ও মনে এর অর্থ অনুধাবন ও চিন্তা করা। উচ্চারণ বা চিন্তার প্রয়োজনে যাকির যদি ব্যক্তিগতভাবে একটু থেমে বা একটু টেনে যিকর করেন তাহলে এই থামা বা টানার মধ্যে কোনো ইবাদত বা সাওয়াব নেই। তবে অনুধাবন, চিন্তা ও বুঝা ইবাদত এবং এ জন্য তিনি সাওয়াব পাবেন। যদি কেউ এভাবে না টেনে সংক্ষেপে বিশুদ্ধ উচ্চারণের সাথে সাথে অনুরূপ অনুধাবন ও চিন্তা করতে পারেন তাহলে তিনিও একই সাওয়াব অর্জন করবেন। যদি কেউ সুন্নাতের অতিরিক্ত কোনো পদ্ধতি, প্রক্রিয়া বা নিয়মকে রীতি হিসাবে গ্রহণ করেন অথবা এরূপ কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত কোনো সাওয়াব বা ইবাদত হচ্ছে বলে মনে করেন তাহলে তা বিদ‘আতে পরিণত হবে।


তাহলে আমরা মনে করছি যে, যদি কেউ মনোযোগ অর্জনের জন্য একটু ধীরে লয়ে টেনে টেনে উচ্চারণ করে অথবা চোখ কন্ধ করে, বিশেষভাবে বসে বা উচ্চারণ করে যিকর করেন তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না। এগুলি জায়েয কর্ম। তিনি একটি জায়েয উপকরণ একটি মাসনূন ইবাদত অর্জনের জন্য ব্যবহার করছেন। কিন্তু সমস্যা ত্রিবিধ :


প্রথমত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণ এভাবে ধীর ধীরে বা টেনে টেনে উচ্চারণের রীতি অনুসরণ করতেন বলে কোথাও জানা যায় না। তাঁরা ঠোঁট নেড়ে স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করতেন, উপরের হাদীসে তা আমরা দেখেছি। কখনো কোনো রকম ব্যতিক্রম উচ্চারণ করলে তা সাহাবীগণ বর্ণনা করতেন। এখন আমরা কোন্ যুক্তিতে তাদের রীতির বাইরে যাব?

রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণ চোখ মেলে দৃষ্টিকে সাজদার স্থানে নিবদ্ধ করে সালাত আদায় করতেন। তাঁরা কখনো চোখ বুজে সালাত আদায় করেছেন বলে আমরা কোথাও বর্ণনা পাচ্ছি না। আমরা জানি যে, চক্ষু বন্ধ করে যিকর, সালাত, মুরাকাবা ইত্যাদিতে মনোযোগ বেশি আসে। কিন্তু মনোযোগ সৃষ্টির যুক্তিতে কি আমরা চোখ বুজে সালাত আদায় করতে পারব? রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ মনোযোগ অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা মনোযোগ সৃষ্টির জন্য এ সকল রীতি অনুসরণ করেননি। আমরা কিভাবে তাকে ভালো বলব?


দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনে ইবাদত পালনের জন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, দাঁড়িয়ে সালাত পড়া ইবাদত। কারো জন্য দাঁড়াতে কষ্টকর হলে তিনি একটি লাঠি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আমরা সবার জন্য লাঠি ব্যবহারের রীতি প্রচলন করতে পারি না। মনোযোগের জন্য দুই একবার চোখ বন্ধ করে সালাত আদায়ের অনুমতি কেউ কেউ দিয়েছেন। কিন্তু সর্বদা চোখ বন্ধ করে সালাতের রীতি চালু করা কখনোই সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে কোন যাকির মনোযোগের প্রয়োজনের এ সকল জায়েয উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।


তৃতীয়ত, এই ধরনের উপকরণের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক ইবাদত পালনকারী এক পর্যায়ে উপকরণকে ইবাদতের অংশ মনে করেন। তখন তা বিদ‘আতে পরিণত হয়। যেমন, যে ব্যক্তি টেনে টেনে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণ করছেন তিনি ভাবছেন - যে ব্যক্তি

স্বাভাবিকভাবে তা উচ্চারণ করছে তার ইবাদতটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। অথবা একটু টেনে উচ্চারণ করলে ইবাদতটি আরো ভালো হতো। এখানে তিনটি কর্ম আছে : যিকরটির উচ্চারণ, মনোযোগ ও ধীর লয়। তিনি তিনটি কাজকেই পৃথক ইবাদত মনে করছেন। প্রথম

দুটি অর্জিত হলেও তৃতীয়টির অভাব থাকলে ইবাদতকে অসম্পূর্ণ ভাবছেন। যে কাজটিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবাদত হিসাবে বলেননি বা করেননি তাকে তিনি ইবাদত মনে করছেন। অথবা তিনি ভাবছেন যে, এভাবে টেনে না পড়লে মনোযোগ আসতেই পারে না। অর্থাৎ, মনোযোগ অর্জনের একমাত্র উপকরণ এভাবে টেনে উচ্চারণ করা। এভাবে তিনি মনে করছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মতো স্বাভাবিক উচ্চারণের মনোযোগ আসতে পারে না। এ কথার অর্থ,- ‘পরিপূর্ণ সুন্নাত পদ্ধতিতে ইবাদত করলে ইবাদত পূর্ণ হবে না বা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের ইবাদত পূর্ণ ছিল না!’ এভাবে তিনি ক্রমান্বয়ে বিদ‘আতের গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করবেন।


আমরা জানি যে, মনোযোগ ও বিনয় সহকারে সালাত আদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদীস শরীফে প্রত্যেক সালাতকে জীবনের শেষ সালাত মনে করে ভয়ভীতি ও বিনয় সহকারে আদায় করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এখন একব্যক্তি সালাতের মধ্যে এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য কাফনের কাপড় পরিধান করে বা গলায় বেড়ি পরে সালাত আদায় করতে শুরু করলেন। এক্ষেত্রে তিনি এমন একটি উপকরণ ব্যবহার করছেন যা খেলাফে সুন্নাত বা সুন্নাত-সম্মত নয়। এই উপকরণ কখনো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণ ব্যবহার করেননি, যদিও সালাতের মনোযোগ সৃষ্টির আগ্রহ তাঁদের ছিল সবচেয়ে বেশি। এরপরেও যদি তিনি মাঝেমধ্যে এই উপকরণ ব্যবহার করেন তাহলে হয়ত কেউ কেউ তা মেনে নেবেন বা প্রতিবাদ করবেন না। কিন্তু তিনি যদি একে সালাতের অবিচ্ছেদ্য রীতি বানিয়ে নেন তাহলে তা নিঃসন্দেহে বিদ‘আতে পরিণত হবে। তৃতীয় পর্যায়ে যদি তিনি সালাতের জন্য কাফনের কাপড় বা বেড়ি পরিধানকে অতিরিক্ত একটি ইবাদত বলে মনে করেন অথবা এই পোশাক ছাড়া সালাতের মনোযোগ সম্ভব নয় বলে মনে করেন তাহলে তার বিদ‘আত আরো পরিপক্কতা লাভ করবে।

উপরের দীর্ঘ আলোচনার উদ্দেশ্য যিকর কেনিদ্রক কিছু বিভ্রান্তি সমাধানের চেষ্টা করা। যিকরের মনোযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবিদ বা যাকির বুজুর্গ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করেছেন। যেমন, ঘাড় বা শরীর নাড়ানো, শরীরের বিভিন্ন স্থানের দিকে লক্ষ্য করে যিকর করা, যিকরের শব্দ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কল্পনা করা, ইত্যাদি। এগুলি সবই খেলাফে সুন্নাত উপকরণ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাঝেমধ্যে এ সকল উপকরণের ব্যবহার অনেকটা চোখ বুজে সালাত আদায়ের মতো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এগুলিকে রীতি বানিয়ে ফেলা হয়েছে এবং এরপর সেগুলিকে ইবাদত বলে মনে করা হয়েছে। এভাবে বিদ‘আতের সৃষ্টি হয়েছে।


এখানে আমাদের কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজনঃ

প্রথমত, সকল ইবাদত, সাওয়াব ও কামালাতের ক্ষেত্রে একমাত্র পরিপূর্ণ আদর্শ রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি আমাদেরকে সকল ইবাদতের ও কামালাতের পরিপূর্ণ, পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত সুন্নাত বা রীতি ও পদ্ধতি শিখিয়ে গিয়েছেন। তাঁর সাহাবীগণ তাঁর সুন্নাত অনুসরণের পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। সুন্নাতের মধ্যেই নিরাপত্তা, মুক্তি ও কামালাত। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে ইবাদতে, উপকরণে, পদ্ধতিতে, প্রকরণে সবকিছুতে সুন্নাতের মধ্যে থাকা।


দ্বিতীয়ত, রাসূলুল্লাহ (সা.) যা করেননি বা শেখাননি তাই সুন্নাত বিরোধী বা খেলাফে সুন্নাত। এক্ষেত্রে বলতে পারব না যে, তিনি

তো নিষেধ করেননি। এ কথা বললে আর কোনো সুন্নাতই পালন করা যাবে না। সালাতুল ঈদের জন্য আযান দিতে তিনি নিষেধ করেন নি। রামাদান ছাড়া অন্য সময়ে সালাতুল বিতর জামাতে আদায় করতে নিষেধ করেন নি। খালি মাথায় সালাত আদায় করতে নিষেধ করেন নি। এরূপ অগণিত উদাহরণ রয়েছে। ইবাদতের পূর্ণতা অর্জনের আগ্রহ তাঁরই সবচেয়ে বেশি ছিল। ইবাদতের পূর্ণতার পথ শেখানোর দায়িত্বও তাঁরই ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি যা করেননি বা শেখাননি তা বর্জনীয়। ‘সুযোগ ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তিনি করেননি’ অর্থ - তিনি তা বর্জন করেছেন। এ বিষয়ে আমি “এহ্ইয়াউস সুনান” গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

অতএব, কোনো ইবাদত পালনের জন্য সুন্নাতে শেখনো হয়নি এমন কোনো উপকরণ ব্যবহার করা উচিত নয়, বিশেষত যে উপকরণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বা তাঁর সাহাবীগণ ব্যবহার করতে পারতেন, কিন্তু করেননি তা ব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়। একান্ত বাধ্য হলে, সুন্নাত পদ্ধতিতে ও সুন্নাত পর্যায়ের ইবাদত পালনের জন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করা যায়, তবে তাকে রীতিতে পরিণত করা উচিত নয়। সর্বাবস্থায় সুন্নাতের বাইরে না যাওয়াই আমাদের জন্য মঙ্গল।


তৃতীয়ত, যদি কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাঝে মধ্যে আবেগ, মনের প্রেরণা বা তৃপ্তির কারণে এ ধরনের কোনো উপকরণ ‘মনোযোগ’ অর্জনের জন্য ব্যবহার করেন তাহলে তা হয়ত আপত্তিজনক হবে না। তবে এগুলিকে রীতিতে পরিণত করা যাবে না।


চতুর্থত, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের মাকসূদ বা উদ্দেশ্য এই নয় যে, ইবাদত করে আল্লাহকে কৃতার্থ করে দেব বা তাকে জান্নাত বা বেলায়েত প্রদানে বাধ্য করব বা নির্দিষ্ট কোনো ফলাফল লাভ করব। আমাদের উদ্দেশ্য, আমরা তাঁর করুণা, রহমত ও ক্ষমা চাই এই আবেগটা প্রকাশ করব। সুন্নাতের অনুসরণই মূলত ইবাদত। সুন্নাতের মধ্যে থেকে আমরা যতটুক ইবাদত করব ততটুকুই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুন্নাতের মধ্যে থেকে যতটুকু করতে পারি তাতেই আমাদের চলবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে মনোযোগ সহকারে সালাত, যিকর ইত্যাদি ইবাদত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। মনোযোগ অর্জনের জন্য বিভিন্ন উপায় মানব সমাজে প্রচলিত। যেমন, বনে জঙ্গলে চলে যাওয়া, নির্জন প্রান্তরে যাওয়া, চক্ষু বন্ধ করা, আত্মসম্মোহন করা ইত্যাদি। এই ধরনের কোনো পদ্ধতি তিনি আমাদেরকে শিখিয়ে জাননি। চোখ মেলে, মসজিদে জামাতের সাথে স্বাভাবিক পোশাকে সালাত আদায়ের রীতি শিখিয়ে গিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব সুন্নাতের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব মনোযোগ অর্জন করা। এতে যতটুকু হবে তাতেই আমাদের চলবে। এর বেশি এগোতে যাওয়ার অর্থ তার সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা করা। তিনি করেননি বা শেখাননি এমন কোনো উপায় বা উপকরণ দিয়ে ইবাদতকে উচ্চমার্গে নিয়ে যাওয়ার অর্থ তাঁর শিক্ষাকে অপূর্ণ মনে করা। আমরা হয়ত দেখতে পাব যে, অনেক আবিদ বা যাকির চোখবুজে, কাফনের কাপড় পরিধান করে, সালাতের আগে আত্মসম্মোহন করে নিয়ে, মস্তিষ্ককে অটো সাজেশনের মাধ্যমে আলফা বা ডেলটা লেভেলে নিয়ে যেয়ে, গোরস্থানের কাছে যেয়ে, নির্জন প্রান্তরে যেয়ে, মাটির উপরে বা নিচে কবর তৈরি করে তার মধ্যে দাড়িয়ে বা এই ধরনের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে সালাত আদায় করে খুবই আনন্দ, তৃপ্তি, মনোযোগ ও আধ্যাত্মিক উন্নতি অনুভব করছেন। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? মনোযোগ অর্জনের জন্য এ সকল উপকরণ ব্যবহার করা বা এসকল উপকরণকে সালাত আদায়ের সাথে রীতিতে পরিণত করা? নাকি সুন্নাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা?

সম্মানিত পাঠক, এ সকল মজা, তৃপ্তি, আধ্যাত্মিক অনুভূতি ইত্যাদি কোনোটিই ইবাদত নয়। এগুলি একান্তই জাগতিক, পার্থিব ও মনোদৈহিক বিষয়। এগুলির জন্য কোনোপ্রকার সাওয়াব বা আল্লাহর নৈকট্য আপনি পাবেন না। সিয়াম রাখলে আমরা দৈহিক ও জাগতিকভাবে অনেক লাভবান হই। এই লাভগুলি ইবাদত নয়। এগুলি ইবাদতের অতিরিক্ত লাভ। এ সকল জাগতিক বিষয়ের জন্য ইবাদত করলে তা আর ইবাদত থাকে না। ইবাদত অর্থ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে ইবাদত করা। কাজেই, এ সকল উন্নতী ও বুজুর্গীর কথা যেন আপনাকে মোহিত না করে। হৃদয়কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দিয়ে মোহিত করে রাখুন, তাঁকে অনুসরণ করুণ। সেখানে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেবেন না। আমরা চোখ মেলে, জামাতে, সুন্নাতের শিক্ষার মধ্যে থেকেই সালাত আদায় করব। এভাবেই যতটুকু সম্ভব মনোযোগ অর্জনের চেষ্টা করব। এভাবেই যতটুকু তৃপ্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি অনুভব করতে পারি তাতেই আমাদের চলবে। এটুকু নিয়েই আমরা মহাবিচারের দিনে মহাপ্রভুর দরবারে হাজিরা দিতে চাই। এই সামান্য পুঁজি নিয়েই আমরা সেদিনে রাহমাতুলিলল আলামীন নবীয়ে মুসতাফা (সা.)-এর হাউযে হাযিরা দিতে চাই।


সম্মানিত পাঠক, উপরের বিষয়গুলি সামনে রেখে, যথাসম্ভব মনোযোগ অর্জন করে যিকর করার চেষ্টা করুন। সুন্নাতে স্পষ্ট ভাবে শেখানো হয়নি এমন কোনো বিষয়কে যিকরের সাথে জড়িয়ে ফেলবেন না বা রীতিতে পরিণত করবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাতে তৃপ্ত থাকার তাওফীক দিন এবং আমাদেরকে সুন্নাতের অনুসরণের মধ্যে থেকেই তাঁর সন্তুষ্টি, পরিপূর্ণ বেলায়েত ও কামালাত অর্জনের তাওফীক দান করুন।

[1] নবাবী, আল-আযকার, পৃ. ৩৪।