রাহে বেলায়াত দ্বিতীয় অধ্যায় - বেলায়াতের পথে যিকরের সাথে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
ছ. যিকরের জন্য আদব - (১) যিকিরের ওযীফা তৈরি করা

আমরা দেখেছি যে, যিকর মুমিনের জীবনের সার্বক্ষণিক ইবাদত। মুমিন সর্বাবস্থায় যিকরে রত থাকবেন। যিকরের আদবের অর্থ যথাসম্ভব এগুলি পালন করা। তবে সবগুলি আদব পালন করতে না পারার অর্থ এই নয় যে, যিকর বন্ধ করতে হবে বা এ অবস্থায় যিকর করলে কোনো পাপ হবে। নিম্নে আমি কিছু আদব ও নিয়ম আলোচনা করব এবং কোন্ বিষয়টি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখ করার চেষ্টা করব। আল্লাহর দরবারে সকাতরে তাওফীক ও কবুলিয়ত প্রার্থনা করছি।


(১) যিকিরের ওযীফা তৈরি করা

“ওযীফা” অর্থ নিয়মিত বা নির্ধারিত কর্ম, নির্ধারিত কর্ম তালিকা, দৈনন্দিন কর্ম ইত্যাদি। মুমিন নিজের জন্য প্রতিদিনের যে সকল কর্ম পালনের নির্ধারিত তালিকা বা কর্মসূচী তৈরি করেন তাকেই ‘ওযীফা’ বলা হয়।

বিভিন্ন হাদীসে আমরা বিভিন্ন প্রকার যিকির ও ইবাদতের ফযীলতের কথা জানতে পারি। স্বভাবত অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সকল প্রকার নেক আমল সবসময় করা সম্ভব হয় না। তবে যিকির বা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো ফযীলতের বিষয়ে সহীহভাবে জানতে পারলে অন্তত একবার হলেও পালন করা মুমিনের কর্তব্য। এরপর যথাসম্ভব তা পালনের চেষ্টা করতে হবে।

এ ধরনের সাময়িক কর্ম মুমিনের জীবনের মূল নিয়ম হবে না। মূল নিয়ম হবে নিয়মিত কর্ম। মুমিনের দায়িত্ব হলো মাসনূন যিকির আযকারের মধ্য থেকে নিজের সময়, সুযোগ ও ক্বলবের হালতের দিকে লক্ষ্য রেখে একেবারে কম না হয় আবার সাধ্যের বাইরে চলে না যায় এমনভাবে নিজের জন্য সুনির্দিষ্ট ওযীফা বা নির্ধারিত যিকিরের তালিকা ও কর্মসূচি তৈরি করে নিতে হবে। মাঝে মাঝে অনেক যিকির বা ইবাদত করে আবার মাঝে মাঝে একেবারে ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে অল্প হলেও নির্ধারিত ওযীফা নিয়মিত পালন করা উত্তম।


আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ مِنْ الْأَعْمَالِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا وَإِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّ وَكَانَ آلُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا عَمِلُوا عَمَلًا أَثْبَتُوهُ


“হে মানুষেরা, তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো নফল আমল গ্রহণ কর; কারণ তোমরা ক্লান্ত না হলে আল্লাহ ক্লান্ত হবেন না। নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কর্ম হলো যে কর্ম নিয়মিত করা হয়, যদিও তা কম হয়। আর মুহাম্মাদের (সা.) বংশের (তিনি ও তাঁর পরিজনের) নিয়ম ছিল কোনো আমল শুরু করলে তা স্থায়ী রাখা।”[1]

অসংখ্য সাহাবী-তাবেয়ীর জীবন থেকে আমরা এই বিষয়টি দেখতে পাই। তাঁরা তাহাজ্জুদ, তিলাওয়াত, দোয়া, সালাত পাঠ, চাশত, তাসবীহ তাহলীল ও অন্যান্য যিকিরের একটি নির্দিষ্ট ওযীফা নিজেদের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন। এর বাইরে তাঁরা সর্বদা অনির্ধারিতভাবে আল্লাহর যিকিরে তাঁদের জিহ্বা আর্দ্র রাখতেন।[2] ইতঃপূর্বে আমি এ বিষয়ে উল্লেখ করেছি। আমাদেরও এভাবে কিছু যিকির নির্দিষ্ট করে নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত যিকির হবে অনির্ধারিত ও অগণিত।

[1] সহীহ বুখারী ৫/২২০১, নং ৫৫২৩, সহীহ মুসলিম ১/৫৪০, নং ৭৮২।

[2] ইবনু রাজাব, জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম, পৃ. ৫৪১-৫৫২।