রমযান মাসের ৩০ আসর একাদশ আসর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি প্রত্যাশাকারীকে প্রত্যাশার ওপরে পৌঁছান এবং প্রার্থনাকারীকে প্রার্থনার বেশি দেন। আমি তাঁর গুণকীর্তন করি হেদায়াত দান ও তা অর্জনের জন্য। আর আমি প্রমাণ ও মূলনীতিসহ জেনে তাঁর তাওহীদের স্বীকৃতি দেই।

সালাত ও সালাম বর্ষণ হতে থাক যতদিন পুব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণে বাতাসের প্রবাহ অব্যাহত থাকবে তাঁর বান্দা ও রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মদের ওপর; তাঁর সাথী আবূ বকরের ওপর যিনি সফর ও স্থায়ী সর্বাবস্থায় ছিলেন তাঁর পাশে; উমরের ওপর যিনি এমন নির্ভীকতার সঙ্গে ইসলামের সাহায্য করেছেন যে কোনো খানাখন্দ বা পতনকে ভয় পাননি; উসমানের ওপর যিনি ছিলেন বিপদে অনঢ় ধৈর্যশীল; আলী ইবন আবী তালিবের ওপর যিনি আপন বীরত্ব দিয়ে শত্রুদের সন্ত্রস্ত করেছেন হামলার আগেই এবং তাঁর সকল পরিবার-পরিজন ও সাহাবীর ওপর যারা দীনের মূল ও শাখাগত বিষয়াদিতে প্রতিযোগিতায় অন্যদের হাত থেকে বিজয়টোপর ছিনিয়ে নিয়েছেন।

প্রিয় ভাইয়েরা আমার! এ আসরটি সিয়ামের আদবের দ্বিতীয় প্রকার তথা মুস্তাহাব আদব প্রসঙ্গে। সিয়ামের মুস্তাহাব আদবসমূহের মধ্যে রয়েছে:


সাহরী খাওয়া:

সাহরী বলা হয়, রাতের শেষাংশের খাওয়াকে। একে সাহরী বলার কারণ হচ্ছে এ খাবারটি ‘সাহর’ তথা রাতের শেষাংশে অনুষ্ঠিত হয়।

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً»

‘তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত নিহিত রয়েছে।’[1]

* সহীহ মুসলিমে ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ، أَكْلَةُ السَّحَرِ»

‘আমাদের ও আহলে কিতাবদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া।’[2]

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর দিয়ে সাহরী গ্রহণের প্রশংসা করে বলেছেন:

«نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ»

‘মুমিনদের খেজুর দিয়ে সাহরী গ্রহণ কতই না উত্তম।’[3]

* রাসূল সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

«السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلَا تَدَعُوهُ وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ»

‘সাহরী খাওয়া বরকতপূর্ণ। সুতরাং সাহরী পরিত্যাগ করো না, যদিও এক ঢোক পানি পান করে হয়। কারণ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সাহরী ভক্ষণকারীর ওপর সালাত পেশ করেন।’[4]

* সাহরী ভক্ষণকারী ব্যক্তির উচিত, সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে নিয়ত করে যে, নবী সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পালন এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণে তা গ্রহণ করছে; যাতে তার সাহরী হয় ইবাদত। তাছাড়া আরও নিয়ত করবে যে, সাহরী খাওয়ার মাধ্যমে সে সাওম পালনে সামর্থ্য হবে; যাতে করে এর দ্বারা সাওয়াব অর্জিত হয়।

* সুন্নাত হচ্ছে সুবহে সাদিক উদয়ের আগ পর্যন্ত বিলম্ব করে সাহরী খাওয়া। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন।

* কাতাদা রহ. আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,

أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَزَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ: «تَسَحَّرَا فَلَمَّا فَرَغَا مِنْ سَحُورِهِمَا، قَامَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الصَّلاَةِ، فَصَلَّى»، قُلْنَا لِأَنَسٍ: كَمْ كَانَ بَيْنَ فَرَاغِهِمَا مِنْ سَحُورِهِمَا وَدُخُولِهِمَا فِي الصَّلاَةِ؟ قَالَ: «قَدْرُ مَا يَقْرَأُ الرَّجُلُ خَمْسِينَ آيَةً»

‘আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যায়েদ ইবন সাবেত সাহরী গ্রহণ করলেন। যখন সাহরী গ্রহণ করা শেষ করার পর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সালাতের দিকে’ (চল)। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। আমরা আনাসকে বললাম, তাঁদের সাহরী শেষ করা ও সালাতে প্রবেশ করার মধ্যে কত সময় ছিল? তিনি বললেন, ‘একজন লোক পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মত সময়’।[5]

* ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাত থাকতেই আযান দিতেন; তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«كُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَإِنَّهُ لاَ يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الفَجْرُ»

‘আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম আযান না দেয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা সে সুবহে সাদিক উদয়ের পরই আযান দেয়।’[6]

* বিলম্ব করে সাহরী খাওয়া সিয়াম পালনকারীর জন্য অধিক উপকারী ও ফজরের সালাত আদায় করার পূর্বে ঘুমিয়ে যাওয়া থেকে অধিক নিরাপদ। সাহরী খাওয়া ও সাওমের নিয়ত করার পরও দৃঢ়ভাবে সুবহে সাদিকের সময় প্রবেশ করা পর্যন্ত সাওম পালনকারীর জন্য পানাহার করার অধিকার রয়েছে।

* কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِ﴾ [البقرة: ١٨٧]

“আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা থেকে ঊষার সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশ না হয়”। [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৭]* আর সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত হবে: সরাসরি আকাশের প্রান্তদেশ প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে অথবা নির্ভরযোগ্য সংবাদের মাধ্যমে যেমন আযান ইত্যাদি দ্বারা। অতঃপর যখন সুবহে সাদিক উদিত হবে তখনই (পানাহার ইত্যাদি থেকে) বিরত থাকবে, আর মনে মনে নিয়ত করবে, তবে কোনোভাবেই মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা যাবে না; কারণ নিয়ত উচ্চারণ করা বিদ‘আত।

[1] বুখারী: ১৯২৩; মুসলিম: ১০৯৫।

[2] মুসলিম: ১০৯৬।

[3] আবু দাঊদ: ২৩৪৫।

[4] আহমদ: ৩/১২।

[5] বুখারী: ১৩৩৪।

[6] বুখারী: ১৯১৮।