সিয়ামের অন্যতম ওয়াজিব আদব হচ্ছে: আল্লাহ যে সকল কথা ও কাজ হারাম করেছেন সাওম পালনকারী তা থেকে বেঁচে থাকবে। যেমন:
মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকবে:
আর মিথ্যা হলো বাস্তবতার বিপরীত কথা বলা। সবচেয়ে নিকৃষ্টতম মিথ্যা হলো আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা বলা যেমন, কোনো হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বলার বিষয়টিকে আল্লাহর দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা।
* আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَلَا تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلۡسِنَتُكُمُ ٱلۡكَذِبَ هَٰذَا حَلَٰلٞ وَهَٰذَا حَرَامٞ لِّتَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفۡتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ لَا يُفۡلِحُونَ ١١٦ مَتَٰعٞ قَلِيلٞ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١١٧ ﴾ [النحل: ١١٦، ١١٧]
‘আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তোমাদের জিহ্বা যেন এ কথা না বলে এটা হালাল এবং এটা হারাম। যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে তারা সফলকাম হবে না। তাদের সুখ সম্ভোগ ক্ষণিকের জন্য। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১১৬-১১৭)
* সহীহ বুখারী ও মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে আবূ হুরাইরা ও অন্যান্য রাবী থেকে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ»
“যে ব্যক্তি আমার ওপর ইচ্ছা করে মিথ্যা বললো সে যেন তার স্থানকে জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।”[1]
* তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা থেকে সতর্ক করে বলেছেন:
«وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا»
‘তোমরা মিথ্যা পরিহার কর। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপাচার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। কোনো লোক সর্বদা মিথ্যা কথা বলতে থাকলে ও এতে প্রচেষ্টা চালাতে থাকলে তার নাম আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’[2]
গীবত থেকে বেঁচে থাকবে:
গীবত হচ্ছে, কোনো মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে তার ব্যাপারে এমন আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। চাই এটা তার শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতিই হোক না কেন। যেমন কাউকে নিন্দা ও দোষারোপ করার উদ্দেশ্যে ল্যাংড়া, ট্যারা বা অন্ধ বলা। তেমনি কারো চারিত্রিক ত্রুটি তুলে ধরা যা সে অপছন্দ করে, যেমন বোকা, নির্বোধ, ফাসেক ইত্যাদি। বাস্তবে ওই লোকের মধ্যে এ সকল দোষ-ত্রুটি বিদ্যমান থাকুক বা না থাকুক।
* কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গীবত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
«ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ»
‘এটা হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তুমি গীবত করলে, আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে।’[3]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে গীবত করতে নিষেধ করেছেন ও একে নিকৃষ্ট বস্তু তথা আপন মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ ﴾ [الحجرات: ١٢]
‘আর তোমরা কারো গীবত করো না, তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা এটাকে ঘৃণাই কর।’ (সূরা আল-হুজুরাত: ১২)
* অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে,
«أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ
‘তিনি মেরাজের রাত্রে কোনো এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যাদের পিতলের নখ রয়েছে তারা এগুলো দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষে আঘাত করছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে জিব্রাইল এরা কারা? জিব্রাঈল উত্তরে বললেন, এরা ওই সমস্ত লোক যারা পৃথিবীতে মানুষের মাংস খেতো এবং মানুষের সম্মানহানি ঘটাতো।’[4]
নামীমা বা চুগলখোরী থেকে বেঁচে থাকবে:
নামীমা বা চুগলখোরী হচ্ছে, পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ব্যাপারে কোনো কথা বললে অপর ব্যক্তির কাছে তা ফেরি করে বেড়ানো। এটি অন্যতম কবিরা গুনাহ।
* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন:
«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ»
‘চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’[5]
* সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَا يَسْتَنزه مِنْ الْبَوْلِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ»
‘নবী সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা দুটি কবরের পাশে দিয়ে অতিক্রম করলেন। তারপর বললেন, দুটো কবরবাসীকে আযাব দেয়া হচ্ছে। অবশ্য বিরাট কোনো কঠিন কাজের জন্য তাদের শাস্তি হচ্ছে না। (অর্থাৎ যা থেকে বেঁচে থাকা কোনো কঠিন বিষয় ছিল না) তাদের একজন প্রস্রাব করে পবিত্রতা অর্জন করতো না। অপরজন মানুষের মধ্যে চুগলখোরি করে বেড়াত।’[6]
বস্তুত: নামীমা বা চুগলখোরি ব্যক্তি, সমাজ ও মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যে শত্রুতার আগুন লাগিয়ে দেওয়া।
﴿ وَلَا تُطِعۡ كُلَّ حَلَّافٖ مَّهِينٍ ١٠ هَمَّازٖ مَّشَّآءِۢ بِنَمِيمٖ ١١ ﴾ [القلم: ١٠، ١١]
‘আর তুমি আনুগত্য করো না প্রত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছিত। পিছনে নিন্দাকারী ও যে চুগলখোরী করে বেড়ায়।’ (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ১০-১১)
সুতরাং যে আপনার কাছে অপরের নিন্দা ও চুগলখোরি করে সে আপনার ব্যাপারেও চুগলখোরি করে বেড়ায়। সুতরাং তার থেকে সতর্ক থাকুন।
সকল প্রকার প্রতারণা ও ধোঁকা প্রদান থেকে বেঁচে থাকতে হবে:
সিয়ামপালনকারী ক্রয়-বিক্রয়, ভাড়া, শিল্প, বন্ধক ও অন্যান্য যাবতীয় লেনদেনের মধ্যে প্রতারণা থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে সব ধরনের উপদেশ ও পরামর্শের ক্ষেত্রেও প্রতারণা পরিহার করবে। কেননা ‘প্রতারণা একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ।
* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا ».
‘যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’[7]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
« مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّى ».
‘যে প্রতারণা করে সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।’[8]
হাদীসে উল্লেখিত ‘আল-গিশ’ শব্দের অর্থ ধোঁকা দেয়া, খেয়ানত, আমানত বিনষ্ট করা, মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলা। আর প্রতারণার মাধ্যমে যা অর্জিত হয় তা নিকৃষ্ট, হারাম ও ঘৃণ্য। প্রতারণা দ্বারা প্রতারক ও আল্লাহর মাঝে কেবলমাত্র দূরত্বই বৃদ্ধি পায়।
সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র থেকে বেঁচে থাকা:
সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র থেকে দূরে থাকা উচিত। যেমন- বীণা, একতারা, বেহালা, হারমোনিয়াম, গিটার, পিয়ানো, ঢোল-তবলা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র। কেননা এসব হারাম। এগুলোর হারাম ও গুনাহ আরও বৃদ্ধি পায় যখন এর সাথে মিলিত হয় উত্তেজনামূলক গান ও মিষ্টি আওয়াজ।
* আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦ ﴾ [لقمان: ٦]
‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য গান বাদ্যের উপকরণ ক্রয়-বিক্রয় করে এবং আল্লাহ প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর কঠোর শাস্তি।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ৬)
* আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহুকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন,
«والله الذي لا إله غيرهُ هو الغناء»
‘যিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই সেই আল্লাহর শপথ করে বলছি, এটা হচ্ছে গান’[9]।
* অনুরূপভাবে ইবন আব্বাস, ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও এ তাফসীর সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া ‘আল্লামা ইবন কাসীর এ তাফসীরটি জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু, ইকরিমা, সা‘ঈদ ইবন জুবাইর ও মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ থেকেও উল্লেখ করেছেন[10]।
* হাসান বসরী রহ. বলেন, ‘এ আয়াতটি গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।’[11]
* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদ্যযন্ত্র থেকে সতর্ক করেছেন। তিনি এসবকে যেনা-ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন:
« لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِى أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ » .
‘আমার উম্মতে এমন একদল লোক হবে যারা যেনা-ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’[12]
হাদীসে বর্ণিত ‘الْحِرَ’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, লজ্জাস্থান, যার দ্বারা যেনা-ব্যভিচার বুঝানো হয়েছে। আর ‘يَسْتَحِلُّونَ’ এর অর্থ হচ্ছে এমনভাবে ভ্রূক্ষেপহীনভাবে করা যেমন হালাল মনে কেউ কোনো কাজ করে থাকে।
বর্তমান সময়ে এমন মানুষ রয়েছে যারা এসব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে থাকে অথবা সেগুলো এমনভাবে শ্রবণ করে থাকে যেন এগুলো হালাল জিনিস।
এটা এমন এক ষড়যন্ত্র যা দ্বারা ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদেরকে ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ করতে সফলতা লাভ করেছে। এতে করে তারা মুসলিমদেরকে আল্লাহ তা‘আলার যিকর-স্মরণ, তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মুসলিমদের অনেকেই কুরআন ও হাদীসের পাঠ, ধর্মবেত্তাগণের শরীয়ত ও হিকমত সমৃদ্ধ বয়ানের চেয়েও এগুলোর প্রতি বেশী এসব গান ও বাদ্যযন্ত্রে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
হে মুসলিমগণ! আপনারা সিয়াম বিনষ্টকারী ও তাতে ত্রুটি সৃষ্টিকারী বিষয় থেকে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী কাজ ত্যাগ করে সিয়ামের হক আদায় করুন।
* নবী সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والجهلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ»
‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যার মাধ্যমে আমল করা ও মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’[13]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«إِذَا صُمتَ فَلْيَصُمْ سَمْعُكَ وبصرك ولسانك عن الكذب والمحارم ودع عنك أذى الجار، وليكن عليك وقار وسكينة ولايكن يوم صومك ويوم فطرك سواء»
‘যখন তুমি সাওম রাখবে তোমার কর্ণ, চক্ষু, জিহ্বাও যেন মিথ্যা কথা ও সব হারাম বর্জনের মাধ্যমে সাওম পালন করে। তুমি প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকো। অবশ্যই তুমি আত্মসম্মান ও প্রশান্তভাব বজায় রাখবে। আর তোমার সাওমের দিন ও সাওমবিহীন দিন যেন সমান না হয়।’[14]হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য আমাদের দীন রক্ষা করুন, আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে আপনাকে অসন্তুষ্টকারী বিষয়াদি থেকে বিরত রাখুন, আমাদেরকে এবং আমাদের বাবা-মা ও সকল মুসলিমকে আপনার দয়ায় ক্ষমা করুন হে জগতের শ্রেষ্ঠ করুণাময়। আর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর।
[2] বুখারী: ৬০৯৪; মুসলিম: ২৬০৭।
[3] মুসলিম: ২৫৮৯।
[4] আবু দাউদ: ৪৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪।
[5] মুসলিম: ১০৫।
[6] বুখারী: ১৩৭৮; মুসলিম: ২৯২।
[7] মুসলিম: ১০১।
[8] মুসলিম: ১০২।
[9] ইবন জারীর তাবারী ২১/৬২; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪১১; হাসান সনদে।
[10] আব্দুল্লাহ ইউসুফ আল-জুদাই‘ এর ‘আহাদীস যাম্মিল গিনা ওয়াল মা‘আযিফ ফিল মীযান’ গ্রন্থখানিতে এ সব বাণী ও সেগুলোর উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পৃ. ১৪৮-১৫৪।
[11] এ আয়াতের উপর আরও ব্যাখ্যা দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘ইগাসাতুল লাহফান’ গ্রন্থে (১/৩৩৮-৩৪১)।
[12] বুখারী: ৫৫৯০।
[13] বুখারী: ১৯০৩।
[14] ইবন রজব, লাতায়েফুল মা‘আরিফ, পৃ. ২৯২।