الواجب نحو أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم وذكر فضائلهم
সাহাবীদের প্রতি ভালো ধারণা রাখা এবং তাদের মর্যাদা বর্ণনা করা আবশ্যক
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,
وَمِنْ أُصُولِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ سَلَامَةُ قُلُوبِهِمْ وَأَلْسِنَتِهِمْ لِأَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا وَصَفَهُمُ اللَّهُ بِهِ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: ﴿وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ وَطَاعَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِهِ «لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আরো একটি মূলনীতি হলো, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের প্রতি তাদের অন্তর ও জবান পবিত্র রাখে। অন্তর দিয়ে তাদেরকে ভালবাসে, তাদের প্রতি কোন প্রকার ঘৃণা রাখেনা এবং জবান দিয়ে তাদের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করেনা। যেমন আল্লাহ তাআলা তাঁর এই বাণীতে সাহাবীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾
‘‘এবং যারা এসব অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে, তারা বলেঃ হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখোনা৷ হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু’’। (সূরা হাশরঃ ১০)[1]
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আরেকটি মূলনীতি হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীছের আনুগত্য করা। তিনি বলেন,
«لَا تَسُبُّوا أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِي فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَوْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
‘‘তোমরা আমার কোন সাহাবীকে গালি দিয়োনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণও খরচ করে তাদের একজনের এক মুদ বা অর্ধ মুদ[2] পরিমাণ দান করার সমান ছাওয়াবও পাবেনা’’।[3]
এই হাদীছের আনুগত্য করতে গিয়েই তারা তাদের অন্তর ও জবানকে সাহাবীদের জন্য পবিত্র রাখে।
ব্যাখ্যাঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের অন্যতম আকীদাহ হলো, তারা অন্তরকে সাহাবীদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ এবং ঘৃণাবোধ পোষণ করা থেকে পবিত্র রাখে। তারা তাদের জবানকেও সাহাবীদেরকে দোষারোপ করা, লানত করা এবং গালি দেয়া থেকে মুক্ত রাখে। কেননা তাদের রয়েছে অনেক ফযীলত। তারা সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবী হয়ে ধন্য হয়েছেন। তাদের রয়েছে উম্মতের সমস্ত মুসলিমের উপর বিশেষ ফযীলত। কেননা তারাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সরাসরি ইসলামী শরীয়ত গ্রহণ করেছেন এবং তাদের পরবর্তীদের জন্য পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে জেহাদ করেছেন এবং তারা তাকে সাহায্য করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) ঐ সমস্ত রাফেযী এবং খারেজীদের প্রতিবাদ করার জন্যই এই অধ্যায় রচনা করেছেন, যারা সাহাবীদেরকে গালি দেয়, তাদেরকে ঘৃণা করে এবং তাদের ফযীলতগুলোর স্বীকৃতি দেয়না। এই নিকৃষ্ট মাজহাবের সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণার বিষয়টিও শাইখুল ইসলাম অত্র অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা তাদের নবীর সাহাবীদের ব্যাপারে ঐরূপ ব্যবহারই করে, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ﴾
‘‘যারা এসব অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখোনা৷ হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু’’। (সূরা হাশরঃ ১০) অর্থাৎ যারা মুহাজির ও আনসারদের পরে আগমণ করেছে। তারা উম্মতে ইসলামীয়ার ঐসব লোক, যারা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত উত্তমভাবে সাহাবীদের অনুসরণ করবে। তারা কিয়ামত পর্যন্ত এই দু’আ করতে থাকবে যে, ﴿رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ﴾ ‘‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করো, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ তারা নিজেদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাদের পূর্বে আগমণকারী মুহাজির ও আনসারদের জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করে। এখানে ভাই বলতে দ্বীনি ভাই উদ্দেশ্য এবং غِلًّا দ্বারা খেয়ানত, বিদ্বেষ, ঘৃণা এবং হিংসা উদ্দেশ্য। তারা আরো দুআ করে যে, ﴿وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا﴾ ‘‘হে আমাদের রব! সেইসব মুমিনদের প্রতিও আমাদের অন্তরে কোন হিংসা ও ঘৃণাবোধ রেখোনা, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে’’। সর্বপ্রথম সাহাবীগণই এই শ্রেণীর মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা তারাই সর্বোত্তম মুমিন এবং এখানে তাদের ব্যাপারেই আলোচনা চলছে।
ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ যারা সকল সাহাবীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলোনা এবং তাদের জন্য আল্লাহর রেজামন্দি কামনা করলোনা তারা এই আয়াতে আল্লাহ তাআলার আদেশ অমান্য করলো। সেই সাথে যার অন্তরে সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পাওয়া যাবে, সে শয়তানের প্ররোচনার কবলে পড়েছে এবং সে আল্লাহর অলীদের ও আখেরী নবীর উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ লোকদের সাথে দুশমনী করে আল্লাহ তাআলার বিরাট নাফরমানীতে লিপ্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়; বরং সে তার নিজের জন্য লাঞ্ছনার এমন দ্বার উন্মুক্ত করেছে, যা তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। যদি না সে স্বীয় নফসকে সংশোধন করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে এবং তাঁর কাছেই ফরিয়াদ করে। আর সর্বোত্তম মানুষ এবং উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতি তার অন্তরের বিদ্বেষ টেনে বের না করে তা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। সাহাবীদের প্রতি কারো অন্তরের বিদ্বেষ যদি সীমা অতিক্রম করে তাদের কাউকে গালি দেয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে সে শয়তানের রশিতে নিজেকে বেঁধে দিল এবং আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টিতে পতিত হলো। এই কঠিন রোগে কেবল ঐ ব্যক্তিই আক্রান্ত হতে পারে, যে রাফেযীদের কোন উস্তাদ কিংবা উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তিদের দুশমনের প্ররোচনার শিকার হয়েছে। তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যাদের সাথে শয়তান খেলতামাশায় লিপ্ত হয়েছে, তাদের জন্য হরেক রকম মিথ্যা রচনা করেছে, বানোয়াট কিচ্ছা তৈরী করেছে, নানা কুসংস্কার এবং অলীক কাহিনী রচনা করেছে। এগুলোর মাধ্যমে শয়তান তাদেরকে আল্লাহর ঐ কিতাব থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, যার সামনের দিক থেকে কিংবা পিছন দিক থেকে বাতিল আসতেই পারেনা।
উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় সাহাবীদের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। কেননা তারা ঈমান আনয়নে অগ্রণী ছিলেন। আয়াতে কারীমায় ঐসব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে, যারা সাহাবীদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে। যারা সাহাবীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, তাদের নিন্দাও করা হয়েছে এখানে। আয়াতে কারীমায় সাহাবীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাদের জন্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনা করাও শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের প্রতি আহলে সুন্নাতের লোকদের অন্তর ও জবানসমূহ পবিত্র থাকার কথাও জানা যায়। তাদের কথাঃ﴿رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ﴾ ‘‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করো, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে’’, -এই কথার মধ্যে তাদের জবানের পরিশুদ্ধিতা পাওয়া যায়। তাদের কথাঃ﴿وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا﴾ ‘‘হে আমাদের রব! সেইসব মুমিনদের প্রতিও আমাদের অন্তরে কোন হিংসা ও ঘৃণাবোধ রেখোনা, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে’’, -এই কথার মধ্যে তাদের অন্তরের পরিশুদ্ধিতার এবং পবিত্রতারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
উপরোক্ত আয়াতে আরো দলীল পাওয়া যায় যে, সাহাবীদেরকে গালি দেয়া এবং তাদেরকে ঘৃণা করা হারাম। তাদেরকে গালি দেয়া কিংবা ঘৃণা করা মুসলিমদের কাজ হতে পারেনা। যারা এটি করবে, তারা ‘ফাই’[4]এর সম্পদ থেকে কিছুই পাবেনা।
وَطَاعَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِهِ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীছের আনুগত্য করাও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আরেকটি মূলনীতি, তা করতে গিয়েই তারা তাদের অন্তর ও জবানকে সাহাবীদের জন্য পবিত্র রাখেঃ অর্থাৎ আহলে সুন্নাতের লোকেরা সাহাবীদের প্রতি জবান এবং অন্তর পরিশুদ্ধ রেখে এবং তাদেরকে গালি দেয়া ও তাদের মর্যাদায় আঘাত করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করে থাকেন। কেননা তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي ‘‘তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিয়োনা’’। أصحاب শব্দটি صاحب -এর বহুবচন। যেই মুসলিম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছে, সেই সাহাবী। সুতরাং সাহাবী বলা হয়, ঐ মুসলিমকে, যে মুমিন অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছে এবং ঈমানের উপর মৃত্যু বরণ করেছে।
فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِه ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। তিনি এই কসমের দ্বারা পরের কথাটিকে শক্তিশালী করতে চেয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَانَصِيفَهُ ‘‘তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণও খরচ করে, তাদের একজনের এক মুদ বা অর্ধ মুদ পরিমাণ দান করার সমান ছাওয়াবও পাবেনা’’।
উহুদ মদীনার একটি সুপ্রসিদ্ধ পাহাড়ের নাম। অন্যান্য পাহাড় থেকে আলাদা থাকায় এটিকে উহুদ পাহাড় বলা হয়। ذهبا শব্দটি তামীয হিসাবে মানসুব হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ‘সা’এর এক চতুর্থাংশকে মুদ বলা হয়। মুদ একটি পরিমাপ যন্ত্রের নাম। نِصْف কে نصيف ও বলা হয়। যেমন ثمين শব্দটি ثمن অর্থে ব্যবহৃত হয়। نِصْف ও نصيف উভয়ের অর্থই অর্ধেক। এমনি ثمين এবং ثمن উভয়েরই অর্থ মূল্যবান ও মূল্য।
হাদীছের সংক্ষিপ্ত অর্থ হলো, আল্লাহর রাস্তায় সাহাবী ছাড়া অন্যদের প্রচুর দান সাহাবীদের সামান্য দানের সমপরিমাণ হতে পারেনা। এর কারণ হলো ইসলামের প্রথম যুগে যখন মুসলিমদের সংখ্যা অল্প ছিল, ইসলামের সামনে প্রতিবন্ধক ছিল প্রচুর এবং দাওয়াত ছিল দুর্বল তখন সাহাবীদের অন্তরের ঈমান যত বড় ছিল, পরবর্তীতে আগমণকারী কারো পক্ষে তত বড় ঈমান অর্জন করা সম্ভব হবেনা।
মোটকথা হাদীছ থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, তাতে সাহাবীদেরকে গালি দেয়া হারাম করা হয়েছে এবং অন্যদের উপরে তাদের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীছ থেকে আরো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, আমলকারীর নিয়ত এবং যেই সময়ে আমলটি করা হয়েছে, সেই অনুপাতে আমলের ফযীলত কমবেশী হয়। (আল্লাহই অধিক অবগত আছেন)
এই হাদীছ থেকে আরো প্রমাণ পাওয়া গেল, যে ব্যক্তি সাহাবীদেরকে ভালবাসলো এবং তাদের গুণাবলী বর্ণনা করলো, সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে গালি দিলো এবং ঘৃণা করলো, সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করলো।
[1] - আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মযীদে সাহাবীদের ফযীলত বর্ণনায় আরো বলেন,
﴿مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنْ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمْ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾
‘‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর। নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন। তাওরাতে তাদের অবস্থা এরূপই’’। (সূরা ফাতহঃ ২৯) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَنَصَرُوا أُوْلَئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ﴾
‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে তারা একে অপরের সহায়ক’’। (সূরা আনফালঃ ৭২)
[2] - আধুনিক ওজন অনুসারে এক মুদের পরিমাণ হলো ৬২৫ গ্রাম।
[3] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু ফাযায়েলে সাহাবাহ।
[4] - বিনা যুদ্ধে মুসলিমগণ কাফেরদের থেকে যেই সম্পদ হাসিল করে, তাকে ফাই বলা হয়। কাফেরদের সাথে সন্ধিচুক্তি করে যেই সম্পদ হাসিল করে তাকেও ফাই বলা হয়। এমনি টেক্স, খিরাজ এবং উশরকেও ফাই হিসাবে নামকরণ করা হয়।