وجوب الإيمان باستواء الله على عرشه وعلوه على خلقه ومعيته لخلقه وأنه لاتنافي بينهما
এই বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, আল্লাহ তাআলা আরশের উপরে সমুন্নত, আরো বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, তিনি সমস্ত মাখলুকের উপরে এবং মাখলুকের সাথে। মাখলুকের উপরে হওয়া এবং তাদের সাথে থাকা পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়:
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,
وَقَدْ دَخَلَ فِيمَا ذَكَرْنَاهُ مِنَ الإِيمَانِ بِاللهِ الإِيمَانُ بِمَا أَخْبَرَ اللهُ بِهِ فِي كِتَابِهِ، وَتَوَاتَرَ عَن رَّسُولِهِ، وَأَجْمَعَ عَلَيْهِ سَلَفُ الأُمَّةِ؛ مِنْ أَنَّهُ سُبْحَانَهُ فَوْقَ سَمَاوَاتِهِ، عَلَى عَرْشِهِ، عَلِيٌّ عَلَى خَلْقِهِ، وَهُوَ سُبْحَانَهُ مَعَهُمْ أَيْنَمَا كَانُوا، يَعْلَمُ مَا هُمْ عَامِلُونَ؛ كَمَا جَمَعَ بَيْنَ ذَلِكَ في َقَوْلِهِ هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنْ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ? وَلَيْسَ مَعْنَى قَوْلِهِ: (وَهُوَ مَعَكُمْ) أَنَّهُ مُخْتَلِطٌ بِالْخَلْقِ؛ فَإِنَّ هَذَا لاَ تُوجِبُهُ، اللُّغَةُ، بَلِ الْقَمَرُ آيَةٌ مِنْ آيَاتِ اللهِ مِنْ أَصْغَرِ مَخْلُوقَاتِهِ، وَهُوَ مَوْضُوعٌ فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ مَعَ الْمُسَافِرِ وَغَيْرُ الْمُسَافِرِ أَيْنَمَا كَانَ. وَهُوَ سُبْحَانَهُ فَوْقَ عَرْشِهِ، رَقِيبٌ عَلَى خَلْقِهِ، مُهَيْمِنٌ عَلَيْهِمْ، مُطَّلِعٌ عَلَيْهِم... إِلَى غَيْرِ ذَلِكَ مِن مَّعَانِي رُبُوبِِيَّتِهِ.
ইতিপূর্বে আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের বিষয়টি উল্লেখ করেছি। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে যেসব বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন, রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে (প্রচুর সংখ্যক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে) যা বর্ণিত হয়েছে এবং এই উম্মতের সালাফগণ যেসব বিষয়ের উপর একমত হয়েছে, তাতে বিশ্বাস করাও আল্লাহর প্রতি ঈমানের মধ্যে শামিল। তার মধ্যে এও রয়েছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আসমানসমূহের উপরে অবস্থিত আরশের উপর এবং সকল মাখলুকের উপর। সেই সাথে তিনি মাখলুকের সাথেও। তারা যেখানেই থাকে না কেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের সাথেই। তারা যা আমল করে, আল্লাহ তাআলা তা জানেন। আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতে মাখলুকের উপরে থাকা এবং তাদের সাথে থাকাকে একসাথে একত্র করেছেন। আল্লাহ তাআলা সূরা হাদীদের ৪ নং আয়াতে বলেনঃ
﴿هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۚ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا ۖ وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴾
‘‘আল্লাহই আসমান-যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। যা কিছু মাটির মধ্যে প্রবেশ করে, যা কিছু তা থেকে বেরিয়ে আসে এবং যা কিছু আসমান থেকে অবতীর্ণ হয় আর যা কিছু আসমানে উঠে, তা তিনি জানেন৷ তোমরা যেখানেই থাকনা কেন তিনি তোমাদের সাথেই’’।
وَهُوَ مَعَكُمْ ‘তিনি তোমাদের সাথেই’ এ কথার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তাআলা মাখলুকের সাথে মিশে রয়েছেন। আরবী ভাষা এই অর্থকে আবশ্যক করেনা। আল্লাহ মাখলুকের সাথে মিশে আছেন, -এই ধারণা এই উম্মতের সালাফদের ইজমার পরিপন্থী এবং আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেই ফিতরাত (স্বভাব) দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তারও খেলাফ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অথচ আল্লাহর জন্যই সর্বোত্তম উদাহরণ, চন্দ্র আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন, আল্লাহর সৃষ্টিরাজির মধ্য হতে ক্ষুদ্র সৃষ্টিসমূহের অন্যতম। ইহাকে রাখা হয়েছে আসমানে। তারপরও চাঁদ ভ্রমণকারীর সাথেও থাকে এবং গৃহে অবস্থানকারীর সাথেও থাকে। ভ্রমণকারী যেখানে অবতরণ করে এবং যেখানেই চলে চাঁদ তার সাথেই থাকে।[1]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরশের উপরে থেকেও মাখলুকের নিকটে। তাদের রক্ষক, তাদের সম্পর্কে অবগত এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর রুবুবীয়াতের অন্যান্য সিফাতের মাধ্যমে তিনি মাখলুকের উপরে এবং তাদের অতি নিকটে।
ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বিশেষভাবে দু’টি মাসআলা বর্ণনা করেছেন। (১) আরশের উপর আল্লাহ তাআলার সমুন্নত হওয়া এবং (২) তাঁর মাখলুকের সাথে থাকা। শাইখুল ইসলাম একটি সন্দেহ দূর করার জন্য বিশেষভাবে এ দু’টি মাসআলার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। কেননা আল্লাহ তাআলা মাখলুকের উপরে থাকা এবং সৃষ্টির সাথে থাকার বিষয়টিকে কেউ কেউ পরস্পর সাংঘর্ষিক মনে করতে পারে। আবার কেউ এই ধারণাও করতে পারে যে, আল্লাহ তাআলা মাখলুকের সাথেই, -এর মানে হচ্ছে আল্লাহর সিফাতগুলো মাখলুকদের সিফাতের মতই[2] এবং তিনি আমাদের সাথে একদম মিশে আছেন। যেমন এক মাখলুক অন্য মাখলুকের সাথে মিশে থাকে। সুতরাং প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সমস্ত সৃষ্টির উপরে আরশের উপর সমুন্নত হয়ে আবার সৃষ্টির সাথে না মিশে তাদের অতি নিকটবর্তী হন কিভাবে?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এই সন্দেহের একাধিক জবাব দিয়েছেনঃ প্রথম জবাবঃ আরবদের যেই ভাষায় কুরআন নাযিল হয়েছে তা এই অর্থকে আবশ্যক করেনা। কেননা مع শব্দটি ভাষাগত দিক থেকে সাধারণ সান্নিধ্য ও নিকটত্ব অর্থ প্রদান করে; সহাবস্থান, সংমিশ্রণ, লাগালাগি এবং সংস্পর্শ ইত্যাদি অর্থ প্রদান করেনা। কেননা আপনি বলে থাকেন, زوجتي معي আমার স্ত্রী আমার সাথেই। অথচ এই কথা বলার সময় আপনি থাকেন একস্থানে, আপনার স্ত্রী থাকে অন্য স্থানে। আপনারা আরো বলে থাকেন,مازلنا نسير والقمر معنا আমরা পথ চলছিলাম, চাঁদ আমাদের সাথেই ছিল। অথচ চাঁদ থাকে আসমানে, থাকে মুসাফিরের সাথে এবং থাকে স্বদেশে অবস্থানকারীর সাথেও। সাধারণ একটি সৃষ্টি চাঁদের ব্যাপারে যদি এটি বলা সঠিক হয়, তাহলে যেই মহান স্রষ্টা সবচেয়ে বড় তাঁর শানে এটি বলা কেন জায়েয হবেনা যে, তিনি আসমানের উপরে আরশের উপর থেকেও আমাদের সাথে?[3]
দ্বিতীয় জবাবঃ আল্লাহ তাআলা মাখলুকের সাথে একদম মিশে আছেন, এই কথা উম্মতের সালাফে সালেহীন তথা সাহাবী, তাবেঈ এবং তাদের অনুসারীদের ইজমার পরিপন্থী। অথচ তারা সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ এবং উত্তম আদর্শ। তারা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা আরশের উপর সমুন্নত, সকল সৃষ্টির উপরে এবং তাদের থেকে আলাদা। তারা আরো একমত হয়েছেন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইলমের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সাথে রয়েছেন। তারা আল্লাহ তাআলার বাণীঃ وهو معكم এর ব্যাখ্যা এভাবেই করেছেন। অর্থাৎ জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মাখলুকের সাথেই।
তৃতীয় জবাবঃ আল্লাহ তাআলা মাখলুকের উপরে নন বরং তাদের সাথে মিশে আছেন, -এই কথা মানুষের ঐ স্বভাব-প্রকৃতির দাবীর পরিপন্থি, যা দিয়ে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে যেই স্বভাব স্থাপন করেছেন, এই বিশ্বাস তার বিপরীত। কেননা আল্লাহ তাআলা যে মাখলুকের উপরে, সৃষ্টিগত স্বভাব অনুযায়ী মাখলুক এই কথার স্বীকৃতি প্রদান করে। মানুষ বিপদাপদ ও সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হওয়ার সময় উপরের দিকে অন্তরকে ধাবিত করে। ডান দিকে কিংবা বাম দিকে দৃষ্টিপাত করেনা। এ বিষয়ে কারো দিকনির্দেশনার প্রয়োজন হয়না। এটি কেবল ঐ সৃষ্টিগত স্বভাবের দাবীতেই করে থাকে, যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।[4]
চতুর্থত জবাবঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে যে সংবাদ দিয়েছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুতাওয়াতির সূত্রে যা বর্ণিত হয়েছে, এই ধারণা তার বিপরীত। কুরআন ও হাদীছে রয়েছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সমস্ত সৃষ্টির উপরে এবং আরশেরও উপরে। সেই সাথে তিনি সৃষ্টির সাথেও তারা যেখানেই থাকুক না কেন।
মুতাওয়াতির হাদীছ হচ্ছে,هو ما رواه جماعة تحيل العادة تواطؤهم على الكذب عن مثلهم من الابتداء إلى الانتهاء যার সনদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন একদল রাবী তাদের অনুরূপ আরেক দল রাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, মিথ্যার উপর যাদের একমত হওয়া সাধারণত অসম্ভব হয়।
আল্লাহ তাআলা মাখলুকের উপরে এবং তাদের সাথে, -এ বিষয়ে অনেক আয়াত এবং অগণিত হাদীছ রয়েছে। সূরা হাদীদের ৪ নং আয়াত তার মধ্যে অন্যতম, যা শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) উপরে উল্লেখ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম বলেনঃ وَهُوَ سُبْحَانَهُ فَوْقَ عَرْشِهِ رَقِيبٌ عَلَى خَلْقِهِ، مُهَيْمِنٌ عَلَيْهِمْ مُطَّلِعٌ عَلَيْهِم আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরশের উপরে থেকেও মাখলুকের নিকটে। তাদের পর্যবেক্ষক এবং তাদের সম্পর্কে অবগতঃ এখানে তিনি পূর্বের কথাকেই পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন। এর পূর্বে তিনি বলেছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরশের উপরে এবং মাখলুকের সাথে। এখানেও তিনি আল্লাহ তাআলার অতি সুন্দর নাম সমূহের মধ্য হতে الرقيب (পর্যবেক্ষক) এবং المهيمن (সংরক্ষক) -এই নাম দু’টি উল্লেখ করে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মাখলুকের নিকটেই। আল্লাহ তাআলা সূরা নিসার ১ নং আয়াতে বলেনঃ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর কড়া নজর রাখেন’’। এখানে رقيب অর্থ হচ্ছে তিনি তাঁর বান্দাদের সকল অবস্থার পর্যবেক্ষণ করেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি তাঁর বান্দাদের নিকটে। আল্লাহ তাআলা সূরা হাশরের ২৩ নং আয়াতে আরো বলেনঃ
﴿هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
‘‘আল্লাহই সেই মহান সত্তা, যিনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই৷ তিনি বাদশাহ, অতীব পবিত্র, সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, হেফাযতকারী, পরাক্রমশালী, প্রবলশক্তিধর (শক্তির মাধ্যমে সবকিছুকে সংশোধনকারী) এবং অতীব মহিমান্বিত। আল্লাহ সেসব শির্ক থেকে পবিত্র, যা লোকেরা করে থাকে’’ ৷إِلَى غَيْرِ ذَلِكَ مِن مَّعَانِي رُبُوبِِيَّتِهِ. আল্লাহ তাআলা তাঁর রুবুবীয়াতের অন্যান্য সিফাতের মাধ্যমে তিনি মাখলুকের উপরে এবং তাদের অতি নিকটেঃ অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রুবুবীয়াতের দাবী হচ্ছে তিনি স্বীয় সত্তাসহ সব সৃষ্টির উপরে, তিনি বান্দাদের সকল কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবগত। সেই সাথে তিনি তাঁর ইলমের মাধ্যমে তাদের অতি নিকটে এবং তিনি তাদেরকে সকল দিক থেকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি তাদের সকল বিষয় পরিচালনা করেন, তাদের আমলসমূহ সংরক্ষণ করেন এবং তার বিনিময় প্রদান করেন।
[2] - অর্থাৎ এক মাখলুক যেমন অন্য মাখলুকের সাথে থাকে, আল্লাহ মাখলুকের সাথে থাকা ঠিক সেরকমই। (নাউযুবিল্লাহ)
[3] - শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উছাইমীন (রঃ) বলেনঃ এই চাঁদের অবস্থা যদি এ রকম হয়, অথচ উহা সাধারণ একটি সৃষ্টি। আমরা বলি চাঁদ আমাদের সাথে। অথচ উহা আকাশে। এই উভয় কথা পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক নয়। এখানে এটিও আবশ্যক হয়না যে, চাঁদ আমাদের সাথে সংমিশ্রিত ও মিলিত অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং যেসব আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা মাখলুকের সাথে রয়েছেন, সেসব আয়াতকে আমরা বাহ্যিক অর্থেই রেখে দেবো এবং আমরা বলবোঃ আল্লাহ তাআলা প্রকৃতপক্ষেই আমাদের সাথে। একই সাথে তিনি আসমানে এবং সকল সৃষ্টির উপরে।
সুতরাং আমাদের প্রভু প্রকৃতপক্ষেই আসমানে এবং প্রকৃতপক্ষেই আমাদের সাথে। এই উভয় কথার মধ্যে কোন পরস্পরিক বিরোধ নেই। আল্লাহ তাআলা অনেক উপরে থেকেও মাখলুকের অতি নিকটে।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) তাঁর কিতাবসমূহে এই কথাই সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেনঃ যেসব আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা মাখলুকের সাথে, সেসবের তাবীল (ব্যাখ্যা) করার দরকার নেই। বরং আয়াতের বাহ্যিক অর্থই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা আসমানের উপরে আরশের উপর সমুন্নত।
সুতরাং তিনি আমাদের সাথে। এই কথা সত্য। তিনি আরশের উপর এই কথাও সত্য। তিনি দুনিয়ার আসমানে নামেন। তাও সত্য। অথচ তিনি সবকিছুর উপরে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কেউ এই কথা কখনো অস্বীকার করেনা। তারা বলেঃ আল্লাহ তাআলা প্রকৃতপক্ষেই দুনিয়ার আসমানে নামেন, তারা সকলেই একমত যে, তিনি উপরে। কেননা আল্লাহর সুউচ্চ সিফাতগুলো মাখলুকের সিফাতের মত নয়।
এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ তাআলা কি স্বীয় সত্তাসহ আমাদের সাথে? উত্তরে বলবো যে, এই কথা বলা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। কেননা এতে আল্লাহর শানে বাতিল ধারণার উদ্রেক হতে পারে। এর মাধ্যমে ঐসব লোকেরা দলীল গ্রহণ করতে পারে, যারা হুলুলে (সর্বেশ্বরবাদে) বিশ্বাসী। অর্থাৎ যারা বিশ্বাস করে সবকিছুর সাথেই আল্লাহ মিশে আছেন এবং সব সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ বিরাজমান। (নাউযুবিল্লাহ)
আরো প্রশ্ন হলো আমরা কি এই কথা বলতে পারি যে, আল্লাহ কি স্বীয় সত্তাসহ নেমে আসেন? এর জবাবে বলবো যে, এই কথা বলার প্রয়োজন নেই। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর নেমে আসাকে আল্লাহর আদেশ বা রহমত আসার দ্বারা ব্যাখ্যা করতে চাইবে কেবল তার প্রতিবাদেই আমরা উহা বলবো। (আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন)
[4] - পূর্বেই বলা হয়েছে, আল্লাহর নিকট দুআ করার সময় উপরের দিকে হাত উঠানো এবং নিজের প্রয়োজন সৃষ্টিকর্তার কাছে পেশ করার সময় অন্তরকে উপরের দিকে ধাবিত করা শুধু মানুষের স্বভাব নয়; বরং অন্যান্য জীব-জন্তু এবং কীটপতঙ্গও প্রয়োজনের সময় উপরের দিকে হাত-পা ও অন্তর ধাবিত করে।
আল্লাহর নবী সুলায়মান বিন দাউদ (আঃ) একদা তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য বের হলেন। পথিমধ্যে তিনি দেখলেন একটি পীপড়া চিৎ হয়ে পিঠের উপর শয়ন করে আকাশের দিকে পাগুলো উঠিয়ে আল্লাহর কাছে এই বলে বৃষ্টি প্রার্থনা করছে, اَللَّهُمَّ إِنَّا خَلْقٌ مِنْ خَلْقِكَ, لَيْسَ بِنَا غِنًى عَنْ سُقْيَاكَ হে আল্লাহ! আমরা তোমার এক সৃষ্টি। তোমার বৃষ্টির (রহমতের) পানি ছাড়া আমাদের বেচে থাকা সম্ভব নয়। পীপড়ার এই কথা শুনে তিনি ফেরত আসছিলেন। অনুসারীরা তাকে ফেরত আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ তোমরা ফেরত যাও। কারণ অন্যদের দুআর বদৌলতেই তোমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হবে। তারা বললঃ আমরা তো কাউকে দুআ করতে দেখিনি। তখন তিনি তাদেরকে আকাশের দিকে পা উঠিয়ে একটি পীপড়ার আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে দুআ করার কথা জানালেন। (সুবুলুস সালাম, হাদীছ নং- ৪৮৬)
এই হাদীছের উপর ভিত্তি করে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ এই পীপড়াটি এবং তার দলের অন্যান্য পীপড়াগুলো আল্লাহর সিফাতে অবিশ্বাসী জাহমীয়া সম্প্রদায়ের লোকদের চেয়ে আল্লাহ সম্পর্কে অধিক অবগত। আল্লামা শাইখ ডঃ সালেহ ফাওযান বলেনঃ জাহমীয়াদের চেয়ে পীপড়াই অধিক উত্তম।