কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলার জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করা হয়েছে

১১- إثبات اليدين لله تعالى في القرأن الكريم

১১- কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলার জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করা হয়েছে:[1]

আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿قَالَ يَاإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَاسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنْ الْعَالِينَ﴾

‘‘আল্লাহ বললেনঃ হে ইবলীস! যাকে আমি নিজের দুই হাতে সৃষ্টি করেছি তাঁর সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে? না তুমি তাঁর চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?’’ (সূরা সোয়াদঃ ৭৫) আল্লাহ আরো বলেনঃ

﴿وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ﴾

‘‘আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বাঁধা হয়ে গেছে। তাদের হাতই বাঁধা হয়ে গেছে। এ কথা বলার কারণে তাদের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে; বরং তাঁর উভয় হস্ত সদা উন্মুক্ত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় করেন’’। (সূরা মায়িদাঃ ৬৪)


ব্যাখ্যাঃ প্রথম আয়াতে ইবলীসকে সম্বোধন করে ধমক দেয়া হয়েছে। অভিশপ্ত ইবলীস যখন আদম (আঃ)কে সাজদা করা হতে বিরত রইল তখন আল্লাহ তাআলা তাকে স্বীয় রহমত থেকে বিতাড়িত করলেন এবং বললেনঃ আমি যাকে কোন কিছুর মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি নিজের দুই হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছি, তাকে সাজদা করা হতে কোন্ জিনিষ তোমাকে ফিরিয়ে রাখল? এ থেকে আদম (আঃ)এর জন্য সম্মান ও মর্যাদা সাব্যস্ত হয়।

وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ আর ইহুদীরা বলে আল্লাহর হাত বাঁধা হয়ে গেছেঃ ইহুদীদের কথা,هُدنا إليك﴾ ﴿ ‘‘আমরা তোমার নিকট ফিরে আসলাম বা তাওবা করলাম’’ থেকে ইয়াহুদ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। তখন তাদের জন্য এটি একটি সম্মান জনক নাম ছিল। তাদের শরীয়ত মানসুখ হয়ে যাওয়ার পর যদিও তাতে এখন সম্মানের কোন অর্থ নেই, তথাপি এই নামটি তাদের জন্য লাযেম হয়ে আছে।

আবার কেউ কেউ বলেছেনঃ ইয়াকুব (আঃ)এর অন্যতম পুত্র ইয়াহুদা বিন ইয়াকুবের দিকে নিসবত (সম্বন্ধ) করেই তাদেরকে ইহুদী বলা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা এখানে ইহুদীদের সম্পর্কে বলছেন, তারা আল্লাহকে কৃপণ বলে আখ্যায়িত করেছে। যেমন তারা আরো বলেছিল, আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন ফকীর এবং তারা হলো ধনী। আল্লাহর হাত বাঁধা হয়ে গেছে, তাদের এই কথা দ্বারা মূলতঃ তারা এটি উদ্দেশ্য করেনি যে, আল্লাহর হাতে বেড়ী লাগিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا তাদের হাতই বাঁধা হয়ে গেছে, তাদের এই কথা বলার কারণে তাদের উপর লা’নতঃ আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এই কথার মাধ্যমে তাদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং তারা যেই মিথ্যা রচনা করেছে, তার মোকাবেলায় উপরোক্ত কথা বলা হয়েছে। আসলে তাদের এরূপই হয়েছিল। তাদের মধ্যে রয়েছে প্রচুর কৃপণতা এবং মারাত্মক হিংসা। আপনি ইহুদীদেরকে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক কৃপণ হিসাবে দেখতে পাবেন।

وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا তাদের এই কথা বলার কারণে তাদের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে: এই বাক্যকে পূর্বের বাক্যের সাথে আতফ (যুক্ত) করা হয়েছে। এখানে با হরফে জারটি سببية কারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এই কথার কারণে তাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের প্রতিবাদে আরো বলেছেন,بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ বরং তাঁর উভয় হস্ত সদা উন্মুক্ত, তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেনঃ অর্থাৎ দান করার ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন। দানের মাধ্যমে তাঁর দুই হাত সদা প্রসারিত।

ِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ তিনি যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় করেনঃ এটি স্বতন্ত্র বাক্য। এই বাক্যটি আল্লাহর পূর্ণ বদান্যতার বিষয়টি জোরালোভাবে বর্ণনা করেছে। তাঁর ইচ্ছা অনুপাতেই তিনি ব্যয় করেন। তিনি যখন ইচ্ছা করেন, তখন ব্যয়ের হাত সম্প্রসারিত করেন এবং যখন ইচ্ছা করেন, তখন উহা সংকোচিত করেন। সুতরাং তাঁর হিকমতের দাবী অনুসারে তিনিই সম্প্রসারণকারী এবং তিনিই সংকোচনকারী।

উপরোক্ত দু’টি আয়াতে কারীমা হতে মহান আল্লাহর দু’টি হাত থাকার কথা প্রমাণিত হলো। প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য শোভনীয় তাঁর দু’টি হাত রয়েছে। এই হাত দু’টি কোন মাখলুকের দুই হাতের মত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ﴾ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ﴿ অর্থাৎ তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। (সূরা শুরাঃ ১১) যারা আল্লাহর প্রকৃত দুই হাতকে অস্বীকার করে, এখানে তাদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। সেই সাথে যারা ধারণা করে, হাত দ্বারা আল্লাহ তাআলার কুদরত অথবা নেয়ামত উদ্দেশ্য তাদেরও প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা হাত দ্বারা যদি কুদরতী হাত উদ্দেশ্য হতো, যেমন বাতিলপন্থীরা ধারণা করে থাকে, তাহলে আল্লাহর উভয় কুদরতী হাত দ্বারা আদমকে খাসভাবে সৃষ্টি করার মধ্যে কোন আলাদা বৈশিষ্ট থাকার কথা বাতিল বলে প্রমাণিত হতো। অর্থাৎ আদমের জন্য কোন আলাদা বৈশিষ্ট প্রমাণিত হতোনা। কেননা আল্লাহ তাআলা সমস্ত মাখলুককে এমনকি ইবলীসকেও স্বীয় কুদরতের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আদমকেও যদি আল্লাহ তাআলা স্বীয় কুদরত দ্বারাই সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ তাআলার এই বাণী:﴾ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ﴿ ‘‘যাকে আমি নিজের দুই হাতে সৃষ্টি করেছি’’ এর মধ্যে আদমের জন্য ইবলীসের উপর কী ফযীলত থাকতে পারে? হাত দ্বারা যদি কুদরত উদ্দেশ্য হতো, তাহলে ইবলীসের জন্যও এই কথা বলার সুযোগ থাকতো যে, আমাকেও তো তোমার দুই হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছো।

আরো বলা যেতে পারে যে, হাত দ্বারা যদি কুদরত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার কুদরত মাত্র দু’টি হওয়া আবশ্যক হয়। অথচ মুসলিমদের ঐক্যমতে এই কথা বাতিল বলে প্রমাণিত। কেননা আয়াতের মধ্যে আল্লাহর দুই হাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে আরো বলা যেতে পারে যে, হাত দ্বারা যদি নেয়ামত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহ তাআলা আদমকে মাত্র দু’টি নেয়ামত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এটি সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা আল্লাহর নেয়ামত অসংখ্য; মাত্র দু’টি নয়।[2]


[1] - পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহর হাতের কথা উল্লেখ হয়েছে। বাস্তবেই আল্লাহর হাত আছে। আমরা তাতে বিশ্বাস করি। তাঁর জন্যে যেমন হাত প্রযোজ্য তেমনই তাঁর হাত। মাখলুকের হাতের সাথে তাঁর হাতের কোন তুলনা নেই। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, তাহলে কি আল্লাহর হাতের আঙ্গুল আছে?

এর জবাবে আমরা বলবো যে, সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহর আঙ্গুল থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

«جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الأَحْبَارِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلمَ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ أَنَّ اللَّهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالأَرَضِينَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْمَاءَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ وَسَائِرَ الْخَلاَئِقِ عَلَى إِصْبَعٍ فَيَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ فَضَحِكَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيقًا لِقَوْلِ الْحَبْرِ ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ﴿وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾

‘‘একজন ইহুদী পন্ডিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­ামএর নিকট এসে বললঃ ‘হে মুহাম্মাদ! আমরা তাওরাত কিতাবে দেখতে পাই যে, আল্লাহ তাআলা আকাশ মন্ডলীকে এক আঙ্গুলে, সমস্ত যমীনকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, পানিকে এক আঙ্গুলে, কাদাঁকে (ভূ-তলের সমস্ত জিনিসকে) এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন, আমিই বাদশাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­াম ইহুদী পন্ডিতের এ কথা শুনে এমন ভাবে হাসলেন যে, তাঁর দন্ত মোবারক দেখা যাচ্ছিল। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেনঃ

﴿وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾

‘‘তারা আল্লাহর মর্যাদা ও ক্ষমতা মুতাবেক কদর করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৭) (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং- ৪৮১১)

এমনি আল্লাহর হাতের তালু থাকার কথাও বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ্র

ما السموات السبع والأرضون السبع في كف الرحمن إلا كحبة خردل في كف أحدكم

‘‘সাত আসমান ও সাত যমীন আল্লাহ তাআলার হাতের তালুতে এমনভাবে থাকবে ঠিক যেন তোমাদের কারো হাতে একটা সরিষার দানার মত’’। (তাফসীরে তাবারী, (৬/২০)

[2] - আল্লাহ তাআলার জন্য যে প্রকৃত পক্ষেই হাত রয়েছে, সে ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে আরো অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে তা থেকে কতিপয় দলীল বর্ণনা করা হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّ يَمِينَ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَنْقُصْ مَا فِي يَمِينِهِ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْفَيْضُ أَوِ الْقَبْضُ يَرْفَعُ وَيَخْفِضُ)

‘‘আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। রাতদিন খরচ করার পরও তাতে কমতি হয় না। তোমরা কি বলতে পারবে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার সময় হতে এ পর্যন্ত কত খরচ করেছেন? তাঁর ডান হাতে যা আছে, তা হতে কিছুই কমেনি। তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তাঁর অপর হাতে রয়েছে দাড়িপাল্লা। তিনি উহা উঠান এবং নামান’’।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

إن اللَّهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأرْضَ وَتَكُوْنُ َالسَّموَاتُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا المَلِكِ

‘‘কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশা’’।[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ بِيَدِهِ عَلَى نَفْسِهِ إِنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبِي)

‘‘আল্লাহ তা’আলা যখন সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করলেন তখন নিজ হাতে লিখে দিলেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’’।[2] আদম ও মুসা (আঃ)এর পরস্পর ঝগড়ার হাদীছে এসেছেঃ

(فَقَالَ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِكَلاَمِهِ وَخَطَّ لَكَ التَّوْرَاةَ بِيَدِهِ

‘‘আদম (আঃ) বললেনঃ তুমি মুসা। তোমাকে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে হতে মনোনিত করেছেন এবং নিজ হাতে তিনি আপনার জন্য তাওরাত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন’’।

এখানে আল্লাহর বাক্যালাপ ও তাঁর হাত- এটি সিফাতে জাতিয়া তথা সত্ত্বাগত গুণ। কথা বলা একই সাথে সিফাতে যাতিয়া তথা সত্ত্বাগত গুণ ও সিফাতে ফে’লীয়া তথা কর্মগত গুণ। তাওরাত লিখা এটি হচ্ছে আল্লাহর কর্মগত গুণ।

যারা আল্লাহর হাতকে কুদরতী হাত দ্বারা ব্যাখ্যা করে তাদের জবাব:

(১) যারা বলে আল্লাহর কোনো হাত নেই; বরং হাত বলতে আল্লাহর কুদরতকে বুঝানো হয়েছে, তাদের কথা বাতিল এবং কুরআনের আয়াত পরিবর্তনের শামিল। কারণ কুরআনের আয়াত থেকে যে অর্থ সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, কোনো রূপ পরিবর্তন ছাড়াই তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করা অপরিহার্য। এটাই সাহাবী, তাবেয়ী এবং পরবর্তী যুগের সমস্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদাহ।

(২) হাত দ্বারা যদি কুদরত তথা ক্ষমতা উদ্দেশ্য হতো তাহলে আদমকে বিশেষভাবে দুই হাত দিয়ে সৃষ্টি করার কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিলনা। কেননা আল্লাহ তা’আলা সমস্ত মাখলুককে এমনকি ইবলীসকেও কুদরতের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। যদি আদমকে নিজ হাতে সৃষ্টি না করে থাকেন তাহলে একথা বলার কোনো বৈশিষ্ট নেই যে, ‘‘আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি তাঁর সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল?’’

(৩) যদি হাত দ্বারা কুদরত উদ্দেশ্য হয় তাহলে আল্লাহর কুদরত তথা ক্ষমতা দু’টির মাঝে সীমিত হয়ে যাওয়া আবশ্যক হয়ে যায়। কারণ يد)) তথা হাত শব্দটি দ্বিবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যেহেতু আল্লাহর ক্ষমতা দু’টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় সেহেতু এখানে আল্লাহর প্রকৃত হাতকেই বুঝানো হয়েছে।

(৪) হাত বলতে ক্ষমতা কেবল তাঁর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে যার প্রকৃত পক্ষেই হাত রয়েছে। এ কথা তো কখনও বলা হয়না যে, এব্যাপারে বাতাসের হাত আছে। কারণ বাস্তবে বাতাসের কোন প্রকৃত হাত নেই। তাই রূপকার্থে বাতাসের জন্য হাত সাব্যস্ত করা শোভা পায়না।

(৫) যারা বলে হাত অর্থ আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতা উদ্দেশ্য, তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন হলো যে হাদীছে আল্লাহর আঙ্গুলের কথা বলা হয়েছে তারা সে হাদীছের কি উত্তর দিবেন? আমরা কি কখনো এরকম ব্যবহার করি যে, এ ব্যাপারে আমার আঙ্গুল আছে তথা ক্ষমতা আছে?! সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছেঃ

جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الْأَحْبَارِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ أَنَّ اللَّهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْأَرَضِينَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ وَسَائِرَ الْخَلَائِقِ عَلَى إِصْبَعٍ فَيَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيقًا لِقَوْلِ الْحَبْرِ ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘‘ইহুদীদের একজন পন্ডিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে এসে বললঃ ‘‘হে মুহাম্মাদ! আমরা তাওরাতে পেয়েছি যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন এক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত যমিনকে, এক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত গাছপালাকে, এক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত পানি ও কাদাঁকে এবং এক আঙ্গুলে রাখবেন অবশিষ্ট সমস্ত মাখলুককে। ইহুদীর এ কথা সমর্থন করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসলেন। এমন কি তাঁর দাঁতগুলো প্রকাশিত হলো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর এই বাণী তেলাওয়াত করলেনঃ

﴿وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾

‘‘তারা আল্লাহর যথাযোগ্য বড়ত্ব ও মর্যাদা উপলব্দি করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজকৃত অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর তারা যাকে শরীক করে তিনি তা থেকে অনেক উর্ধ্বে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৭)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে