৭- إثبات اتصافه بالرحمة والمغفرة سبحانه وتعالى
৭- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য রহমত ও মাগফিরাত বিশেষণ সাব্যস্ত:
আল্লাহর অন্যতম বিশেষণ হচ্ছে তিনি অত্যন্ত দয়াবান ও ক্ষমাশীল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ﴾ ‘‘পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্ তাআলার নামে শুরু করছি’’। (সূরা ফাতিহাঃ ১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا﴾ ‘‘হে আমাদের রব! তুমি তোমার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছো’’। (সূরা মুমিনঃ ৭) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا ﴿ ‘‘এবং তিনি মুমিনদের প্রতি খুবই দয়াবান’’। (সূরা আহযাবঃ ৪৩) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍّ﴾ ‘‘আর আমার রহমত প্রতিটি জিনিষকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে’’। (সূরা আরাফঃ ১৫৬) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّهُ مَنْ عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
‘‘তোমাদের প্রতিপালক রহমত করাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নিয়েছেন। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যদি অজ্ঞতা বশতঃ কোন খারাপ কাজ করে বসে, তারপর তাওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তাহলে তিনি তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি দয়া করেন’’। (সূরা আনআমঃ ৫৪) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴾ ﴿وَهُوَ الْغَفُورُالرَّحِيمُ ‘‘আর তিনি ক্ষমাকারী ও দয়ালু। (সূরা ইউনুস: ১০৭) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ﴾ ‘‘অবশ্যই আল্লাহ সবচেয়ে ভালো হেফাজতকারী এবং তিনি সবচেয়ে বেশী করুণাশীল’’। (সূরা ইউসুফঃ ৬৪)
ব্যাখ্যাঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর ব্যাখ্যা পূর্বে কিতাবের শুরুতেই অতিক্রান্ত হয়েছে। এখানে আবার উল্লেখ করার কারণ হলো তাতে আল্লাহ তাআলার অন্যতম সিফাত রহমত সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন পরের আয়াত গুলোতেও আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লামা ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলার الرحمن নামটি এমন একটি সিফাতের প্রমাণ করে, যা তাঁর পবিত্র সত্তার সাথে সদা প্রতিষ্ঠিত। আর الرحيم তাঁর নামটি এমন সিফাতের প্রমাণ করে, যার সম্পর্ক হয় রহমত প্রাপ্তদের সাথে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وكان بالمؤمنين رحيما ‘‘এবং তিনি মুমিনদের প্রতি খুবই দয়াবান’’। কুরআনের কোথাও رحمن بهم বলা হয়নি। এতে বুঝা যায়, প্রথমটি আল্লাহ তাআলার وصف (স্থায়ী বিশেষণ)এর জন্য এবং দ্বিতীয়টি তাঁর فعلবা ক্রিয়ার জন্য।[1] রাহমান নামটি প্রমাণ করছে যে, রহমত আল্লাহ তাআলার ওয়াস্ফ তথা স্থায়ী বিশেষণ। আর রাহীম নামটি প্রমাণ করছে যে, তিনি স্বীয় রহমত দ্বারা সৃষ্টির উপর দয়া করেন।
رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا হে আমাদের রব! তুমি তোমার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছোঃ এখানে ঐ সব ফেরেশতাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা দয়াময় আল্লাহর আরশ বহন করে আছেন এবং যারা আরশের চতুর্দিকে অবস্থান করছেন। তারা মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেনঃ হে আমাদের রব! তুমি তোমার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছো। তোমার রহমত ও ইলম প্রত্যেক বস্ত্তকে বেষ্টন করে আছে। رحمة وعلمًا শব্দদ্বয় ফায়েল হতে পরিবর্তিত হয়ে تمييز হিসাবে মানসুব হয়েছে। এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা ও প্রশস্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। দুনিয়াতে প্রত্যেক মুমিন ও কাফের আল্লাহর রহমত উপভোগ করছে। আর আখেরাতে শুধু মুমিনগণই আল্লাহর রহমত পাবে।
وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا এবং তিনি মুমিনদের প্রতি খুবই দয়াবানঃ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি মুমিনদের প্রতি দুনিয়া ও আখেরাতে অত্যন্ত দয়ালু। দুনিয়াতে তাদের উপর আল্লাহর রহমত এভাবে হয়েছে যে, তিনি তাদেরকে সেই সত্যের সন্ধান দিয়েছেন, যা অন্যরা পায়নি এবং তাদেরকে এমন পথ দেখিয়েছেন, যা থেকে অন্যরা গোমরাহ হয়েছে। আর আখেরাতে তাদের উপর এভাবে রহমত করবেন যে, তিনি তাদেরকে ভয়াবহ বিপদের দিন নিরাপদ রাখবেন এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও ক্ষমার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলিম-কাফির তথা প্রত্যেক সৃষ্টিই আল্লাহর রহমত উপভোগ করছে। কিন্তু আখেরাতে আল্লাহর রহমত শুধু মুমিনদের প্রতিই সীমিত হবে। সেদিন আল্লাহ তাআলা শুধু তাঁর মুমিন বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত নাযিল করবেন এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ তোমাদের প্রতিপালক রহমত করাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নিয়েছেনঃ অর্থাৎ তিনি তাঁর পবিত্র সত্তার উপর রহমত করাকে ওয়াজিব করে নিয়েছেন। এটি তাঁর পক্ষ হতে দয়া ও অনুগ্রহ স্বরূপ। এটি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি ও নির্ধারণগত লিখা, তাঁর উপর অন্য কেউ লিখে দেয়নি।
وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ আর তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়ঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এখানে তাঁর পবিত্র সত্তা সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি ক্ষমা ও দয়ার বিশেষণে বিশেষিত। ঐ ব্যক্তির জন্যই কেবল তাঁর ক্ষমা ও রহমত, যে তাঁর নিকট তাওবা করে এবং তাঁর উপরই ভরসা করে। যে কোন গুনাহ থেকেই তাওবা হোক না কেন। আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। যেমন শির্ক বা অন্যসব গুনাহ। আল্লাহ তাআলা শির্ককারীর তাওবা কবুল করেন, তাকে ক্ষমা করেন এবং তাঁর উপর রহম করেন।
فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ অবশ্যই আল্লাহ সবচেয়ে ভালো হেফাযতকারী এবং তিনি সবচেয়ে বেশী করুণাশীলঃ আল্লাহ তাআলা এখানে তাঁর নবী ইয়াকুব (আঃ)এর কথা বর্ণনা করেছেন। যখন তাঁর ছেলেরা তাঁর নিকট তাদের ভাই ইউসুফকে পাঠানোর আবেদন করল এবং ইউসুফকে হেফাযত করার অঙ্গীকার করলো, তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার হেফাযতই তোমাদের হেফাযতের চেয়ে অধিক উত্তম। ইয়াকুব (আঃ) স্বীয় পুত্রের হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহর নিকট সোপর্দ করে দিলেন।
আল্লাহ তাআলার অন্যতম নাম الحفيظ (হেফাযতকারী)। হেফাযত বিশেষণের মাধ্যমেই তিনি তাঁর সকল বান্দাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং তাদের আমলসমূহকে সংরক্ষণ করেন।
আর তিনি মুমিন বান্দাদেরকে ঐসব বিষয় থেকে বিশেষভাবে হেফাযত করেন, যা তাদের ঈমানকে নষ্ট করে দিতে পারে। সেই সাথে তিনি তাদেরকে ঐ বিষয় হতেও হেফাযত করেন, যা তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য ক্ষতিকর। উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের সিফাত (বিশেষণ) সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যান্য সিফাতের ন্যায় আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই উহা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত। তাতে জাহমীয়া, মুতাযেলা এবং তাদের অনুরূপ অন্যান্য বিদআতী সম্প্রদায়ের যেসব লোক সৃষ্টির সাথে আল্লাহর তাশবীহ (তুলনা) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাত বিশেষণকে অস্বীকার করে, এখানে তাদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। মুতাযেলা ও জাহমীয়ারা বলে, দয়া করা মাখলুকের বৈশিষ্ট। তারা এই আয়াতগুলোকে রূপকার্থে ব্যাখ্যা করেছে। এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য এই বিশেষণ সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দয়া মানুষের দয়ার মত নয় যে, তাতে তাশবীহ বা সাদৃশ্য আবশ্যক হবে। যেমনটি তারা ধারণা করে থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেনঃلَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْرُ অর্থাৎ তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শুরাঃ ১১) কোন বস্ত্তর নাম এক হলেই তার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট এক হওয়া জরুরী নয়। সৃষ্টিকর্তার জন্য রয়েছে এমনসব সিফাত, যা তাঁর জন্য শোভনীয় ও নির্দিষ্ট এবং মাখলুকের রয়েছে এমনসব সিফাত, যা তার জন্য শোভনীয় ও নির্দিষ্ট।