কুরআনুল কারীম থেকে আল্লাহ তাআলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত করার দলীলের পদ্ধতি

الاستدلال على أسماء الله وصفاته من القرأن الكريم

কুরআনুল কারীম থেকে আল্লাহ তাআলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত করার দলীলের পদ্ধতি:

১- الجمع بين النفي والإثبات في وصفه تعالى

১- একই সাথে নেতিবাচক ও ইতিবাচক বক্তব্যের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সিফাত সাব্যস্ত করা অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার পবিত্র সত্তা হতে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি নাকোচ করা এবং তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য পূর্ণতার গুণাবলী সাব্যস্ত করণ:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

قَدْ دَخَلَ فِي هَذِهِ الْجُمْلَةِ مَا وَصَفَ اللَّهُ بِهِ نَفْسَهُ فِي سُورَةِ الْإِخْلَاصِ الَّتِي تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ حَيْثُ يَقُولُ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

নাবোধক ও হ্যাঁবাচক বক্তব্যের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নিজেকে যেসমস্ত সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার মধ্যে কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান সূরা ইখলাসে বর্ণিত গুণাবলী অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘‘বলোঃ তিনি আল্লাহ্ একক। আল্লাহ্ অমূখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’।


ব্যাখ্যা: এখানে শাইখুল ইসলাম পূর্বোক্ত বাক্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সেই বাক্যটি হচ্ছে,وَهُوَ سُبْحَانَهُ قَدْ جَمَعَ فِيمَا وَصَفَ وَسَمَّى بِهِ نَفْسَهُ بَيْنَ النَّفْيِ وَالْإِثْبَات অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন এবং তিনি নিজেকে যেসব নামে নামকরণ করেছেন, তাতে তিনি নফী এবং ইছবাতকে একত্রিত করেছেন। আর এখানে তিনি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে তার উপর দলীল পেশ করা শুরু করেছেন। সূরা ইখলাসের অনেক ফযীলত থাকার কারণে তিনি সর্বপ্রথম এই সূরাকেই উল্লেখ করেছেন। এই সূরাকে সূরা ইখলাস হিসাবে নামকরণ করার কারণ হলো এটিকে আল্লাহর সিফাতের জন্য খালেস (বাছাই ও নির্দিষ্ট) করা হয়েছে এবং যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস পাঠ করে, সূরা ইখলাস তাকে শির্ক থেকে মুক্ত করে। সে হিসাবে ইখলাস অর্থ মুক্ত করা।

الَّتِي تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান

الَّتِي تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান: সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। কারণ কুরআনে যেসব ইলমের সমাহার ঘটেছে, তা মূলতঃ তিন প্রকার। (১) তাওহীদের জ্ঞান (২) অতীতের জাতিসমূহের ঘটনাবলী ও ভবিষ্যতের খবরাদি এবং (৩) হালাল-হারামসহ বিভিন্ন হুকুম-আহকাম।

সূরা ইখলাসের মধ্যে শুধু আল্লাহ তাআলার সিফাতের বর্ণনা রয়েছে। তাই এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশে পরিণত হয়েছে। সুতরাং সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশ। তার দলীল হলো যেমন সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,

أَنَّ رَجُلاً سَمِعَ رَجُلاً يَقْرَأُ: ﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ﴾ يُرَدِّدُهَا. فَلَمَّا أَصْبَحَ جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، وَكَأَنَّ الرَّجُلَ يَتَقَالُّهَا، فَقََالَ رَسُولُ اللَّهِ :্রوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّهَا لَتَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ

‘‘এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ((قل هوالله أحد তথা সূরা ইখলাস বার বার পাঠ করতে শুনল। সকাল হলে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালো। লোকটি শুধু সূরা ইখলাস পাঠকে খুব অল্প মনে করছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই ইহা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান’’। [1]

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান হওয়ার হাদীছগুলো প্রায় মুতাওয়াতের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

সূরা ইখলাসে মহান আল্লাহ বলেনঃ قل অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! তুমি বলো। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কুরআন আল্লাহর কালাম। কেননা এটি যদি মুহাম্মাদের বা অন্যের কালাম হতো তাহলে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে قل শব্দটি প্রয়োগ করতেন না।

اللَّهُ أَحَدٌ আল্লাহ এককঃ অর্থাৎ আল্লাহ এক, তাঁর কোন সমকক্ষ, সহযোগী, সদৃশ এবং শরীক নেই।

الله الصمد আল্লাহ অমূখাপেক্ষীঃ অর্থাৎ আল্লাহ এমন মর্যাদাবান নেতা যিনি স্বীয় নেতৃত্বে, মর্যাদায় এবং মহত্ত্বে পরিপূর্ণ হয়েছেন। আল্লাহ তাআলার এই ‘সামাদ’[2] নামের মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী বিদ্যমান। কেউ কেউ বলেছেন, সামাদ বলা হয় এমন সত্তাকে যার প্রতি সমস্ত মাখলুখের প্রয়োজন হয় এবং তারা সকলেই নিজ নিজ প্রয়োজনে তাঁর দিকেই ধাবিত হয় ও তাঁকেই উদ্দেশ্য করে।

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নিঃ অর্থাৎ তাঁর কোন সন্তান নেই, পিতাও নেই। এতে ইহুদী, নাসারা এবং আরবের ঐসব মুশরিকদের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা আল্লাহর জন্য সন্তান নির্ধারণ করত। ইহুদীরা উযাইরকে এবং খৃষ্টানরা ঈসাকে আল্লাহর পুত্র বলে থাকে। আর আরবের মুশরিকরা বলতঃ ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা সন্তান। আল্লাহ তাআলা তাদের কথার অনেক উর্ধ্বে।

وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই: অর্থাৎ তাঁর সমান, সদৃশ ও সমকক্ষ নেই।

মোটকথা, সূরা ইখলাস থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, উহা আল্লাহ তাআলার সিফাতের ক্ষেত্রে নফী বা নাকোচ ও ইছবাত বা সাব্যস্ত করণকে একসাথে একত্রিত করেছে। আল্লাহ তাআলার বাণী:اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ ‘‘আল্লাহ্ একক। তিনি অমূখাপেক্ষী’’ এতে আল্লাহ তাআলার তাওহীদ সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর আল্লাহ তাআলার বাণী:لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ‘‘তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’-এতে মুশরিকদের শির্ক নাকোচ করা হয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ

وَمَا وَصَفَ بِهِ نَفْسَهُ فِي أَعْظَمِ آيَةٍ فِي كِتَابِهِ حَيْثُ يَقُولُ ﴿اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ﴾ ولهذا كان من قرأ هذه الآية في ليلة لم يزل عليه من الله حافظ حتى يصبح

আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবের সর্বাধিক মর্যাদাবান আয়াতে নিজেকে যেই সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ ‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি চিরজীবন্ত ও সবকিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনা। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। তাঁর জ্ঞান থেকে কোন কিছুই তারা পরিবেষ্টন করতে পারেনা। কিন্তু তিনি যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান, সেটুকুর কথা ভিন্ন। তার কুরসী আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। আর আসমান ও যমীনকে ধারণ করা তাঁর জন্য মোটেই কঠিন নয়। আর তিনি সমুন্নত, মহান’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৫)

এই আয়াতে আল্লাহর বড় বড় সিফাতের আলোচনা হয়েছে বলেই যে ব্যক্তি রাতে ইহা পাঠ করবে, সারা রাত আল্লাহর পক্ষ হতে তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তাঁর নিকট কোন শয়তান আসতেই পারবেনা।


ব্যাখ্যা: وَمَا وَصَفَ بِهِ نَفْسَهُ فِي أَعْظَمِ آيَةٍ فِي كِتَابِهআল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবের সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ আয়াতে নিজেকে সুমহান গুণে গুণান্বিত করেছেন: অর্থাৎ পূর্বোক্ত বাক্যে নফী ও ইছবাতের মাধ্যমে আল্লাহর জন্য সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি অতিক্রান্ত হয়েছে। কুরআনের সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ আয়াত তথা আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্মানিত সত্তাকে যেসব সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাও নফী ও ইছবাতের মাধ্যমেই করেছেন। অর্থাৎ তাতে যেমন আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য সু্উচ্চ ও সমুন্নত গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন, ঠিক তেমনি তাঁর পবিত্র সত্তা হতে সকল প্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি দূরিভূত করেছেন।

الأية -এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে চিহ্ন, নিদর্শন ইত্যাদি। কুরআনের একাধিক শব্দ দ্বারা গঠিত এমন বাক্যকে আয়াত বলা হয়, যাকে একটি فاصلة (বিরামচিহ্ন)এর মাধ্যমে পূর্বাপর বাক্য থেকে আলাদা করা হয়। তবে এখানে যেই আয়াতটির কথা চলছে, তাকে আয়াতুল কুরসী বলা হয়। কারণ এতে কুরসীর উল্লেখ রয়েছে।

আয়াতুল কুরসী কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাবান আয়াত হওয়ার বিষয়টি সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। সহীহ মুসলিমে ইমাম মুসলিম (রঃ) উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হাদীছটি হচ্ছে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবনে কা’বকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কুরআনে সবচেয়ে বড় আয়াত কোন্টি? জবাবে উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই এ বিষয়ে সর্বাধিক অবগত। উবাই কয়েকবার কথাটি পুনরাবৃত্তি করার পর বললেনঃ উহা হলো আয়াতুল কুরসী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁর জন্য দুআ করে বললেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার জন্য এই ইলম সুখকর ও তৃপ্তিদায়ক হোক![3]

মর্যাদার দিক দিয়ে আয়াতুল কুরসী কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত হওয়ার কারণ হলো উহাতে এমন বিষয় বর্ণিত হয়েছে, যা আল্লাহ তাআলার সুন্দরতম নাম ও সুমহান গুণাবলীকে সাব্যস্ত করেছে এবং আল্লাহর সত্তাকে এমনসব মন্দ বৈশিষ্ট থেকে পবিত্র করেছে, যা তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার শানে শোভনীয় নয়।

اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মাবুদ নেইঃ অর্থাৎ তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। সুতরাং তিনি ব্যতীত যেসব মাবুদের এবাদত করা হয়, তা একদম বাতিল। আল্লাহ তাআলার অন্যতম অতি সুন্দর নাম الحي (চিরজীবন্ত)। এর অর্থ আল্লাহ তাআলা এমন চিরবিদ্যমান সত্তা, যার জন্য রয়েছে পূর্ণতম জীবন। আল্লাহ তাআলার হায়াত যেহেতু পূর্ণাঙ্গ, তাই তাঁর হায়াত কখনো শেষ হবেনা। আল্লাহর আরেকটি নাম الْقَيُّومُ (সবকিছুর ধারক)। যিনি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত, স্বয়ং সম্পূর্ণ এবং অন্যকে প্রতিষ্ঠাকারী তিনিই হচ্ছেন আল কাইয়্যুম। সুতরাং কোন মাখলুকের প্রতিই আল্লাহ তাআলার কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ সমস্ত মাখলুকই তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী।

বর্ণিত হয়েছে যে, الْحَيُّ الْقَيُّومُ হচ্ছে ইসমে আযম, যা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তাআলা সেই দুআ কবুল করেন এবং এর উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন। الْحَيُّ الْقَيُّومُ ইসমে আযম হওয়ার কারণ হলো ‘আলহাই’ নামটি আল্লাহর সিফাতে যাতীয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। তথা এটি আল্লাহর ঐ সব সিফাতের অন্তর্ভূক্ত যা, কখনোই আল্লাহর পবিত্র সত্তা হতে আলাদা হয়না। আর ‘আলকাইয়্যুম’ নামটি আল্লাহর সিফাতে ফেলিয়া অর্থাৎ তাঁর কর্ম সম্পর্কীয় সিফাত থাকার প্রমাণ করে। সুতরাং আল্লাহর সকল সিফাতের মূলভীত্তি হচ্ছে এই দুইটি সম্মানিত ও মহান নাম।[4]

لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ তন্দ্রা ও নিদ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারেনাঃ তিনিই যেহেতু সকল সৃষ্টির সার্বক্ষণিক ধারক ও বাহক, তাই তন্দ্রা ও নিদ্রা তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনা। হালকা ঘুমকে ‘সিনাহ’ বলা হয়। এটি শুধু চোখের মধ্যেই হয়। আর ঘুম তন্দ্রা থেকে অধিক গভীর ও শক্তিশালী হয়। ঘুম মৃত্যুর ছোট ভাই। এই প্রকার ঘুম অন্তরে হয়।

لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সব তাঁরইঃ অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যত মাখলুক রয়েছে, তাদের সকলের স্রষ্টা একমাত্র তিনি, এগুলোর মালিকানাও একমাত্র তাঁর এবং সকলেই তার অনুগত। সুতরাং তিনি উর্ধ্ব জগৎ এবং নিম্ন জগতের সবকিছুরই মালিক।

مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করবে? অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে তাঁর নিকট সুপারিশ করার মত কেউ নেই। الشفاعة শব্দটি الشفع (যুক্ত করা) থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি الوتر (বেজোড়) এর বিপরীত। শাফাআতকারী যেহেতু স্বীয় প্রার্থনার সাথে অন্যের জন্য প্রার্থনা করাকেও যুক্ত করে নেয়, তাই সুপারিশকারীকে الشافع (সুপারিশকারী) বলা হয়। তাই যার জন্য সুপারিশ করা হয়, সেই লোক প্রথমে বেজোড় (একা) থাকার পর সুপারিশকারী তাকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিয়ে জোড়ে পরিণত করে দেয়। আর পারিভাষিক অর্থে শাফাআত অর্থ হচ্ছে سؤال الخير للغير অন্যের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করা। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি তাঁর রবের কাছে অন্যান্য মুমিনের জন্য এই দুআ করবে যে, তিনি যেন তাদের গুনাহ ও অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন। তবে শাফাআতের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহর অনুমতি ও আদেশ ব্যতীত শাফাআত হবেনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার কারণেই অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর নিকট কিয়ামতের দিন অন্য কারো জন্য সুপারিশ নিয়ে অগ্রসর হতে পারবেনা।

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ইলম অতীত ও ভবিষ্যতের সকল বিষয়কে পরিবেষ্টন করে আছে। অতীত ও ভবিষ্যতের কোন জিনিষই আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়।

وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ তার জ্ঞান থেকে কোন কিছুই তারা পরিবেষ্টন করতে পারেনা। কিন্তু তিনি নিজে যে জিনিষের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান, সেটুকুর কথা ভিন্নঃ অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর ইলম থেকে কিছুই জানতে পারেনা। তবে তারা শুধু সেটুকুই জানতে পারে, যা তিনি রাসূলদের মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়েছেন।

وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ তার কুরসী সমস্ত আসমান ও যমীন পরিব্যাপ্ত হয়ে আছেঃ আল্লাহর কুরসী সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে। কেউ বলেছেঃ উহা হচ্ছে আল্লাহর আরশ। অর্থাৎ আরশ ও কুরসী একই জিনিষ। কেউ বলেছেনঃ কুরসী আর আরশ এক নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস এবং অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, কুরসী হচ্ছে আল্লাহর দুই পা রাখার স্থান। সেটি এমন কুরসী, যার বিশালতা ও প্রশস্ততা সমস্ত আসমান-যমীন পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে।[5]


[1] - সহীহ বুখারীতে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, জনৈক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। যখনই তিনি সূরা ফাতিহার পর কোন সূরা দিয়ে কিরাত আরম্ভ করতেন তখন প্রথমে সূরা ইখলাস পড়ে নিতেন। তারপর অন্য কোন সূরা পড়তেন। আর এরূপ তিনি প্রতি রাকাআতেই করতেন। মুসল্লীগণ তাকে বললেনঃ আপনি প্রথমে এই সূরা দিয়ে কিরাত শুরু করছেন তারপর তা যথেষ্ট নয় ভেবে অন্য সূরা পাঠ করছেন। আপনি হয় শুধু এই সূরাটি পাঠ করুন অথবা এটা ছেড়ে অন্য কোন সূরা পাঠ করুন। তিনি বললেনঃ আমি উহা পরিত্যাগ করতে রাজি নই। তোমরা যদি চাও তাহলে এভাবেই তোমাদের ইমামতি করবো। আর যদি অপছন্দ কর তবে তোমাদের ইমামতি ছেড়ে দিবো। তারা মনে করতেন, তিনি তাদের মাঝে সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি এবং অন্য কেউ তাদের ইমামতি করুক এটাও অপছন্দ করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা তাদের নিকট আগমণ করলেন। তারা ব্যাপারটি তাঁর কাছে পেশ করলেন। তিনি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘‘হে অমুক! তোমার সাথীরা তোমাকে যে পরামর্শ দিচ্ছে, তা গ্রহণ করতে কিসে তোমাকে বাধা দিচ্ছে? আর কেনইবা তুমি উক্ত সূরাটি প্রতি রাকআতে পাঠ করছ? জবাবে তিনি বললেনঃ আমি উহাকে খুব ভালবাসি। তিনি বললেনঃ ‘‘এই ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’’

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে অপর বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা তাঁর সাহাবীদেরকে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি একরাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারে? সাহাবীদের কাছে বিষয়টি খুব কঠিন মনে হলো। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার এমন সাধ্য আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সূরা ইখলাস, যাতে রয়েছে আল্লাহ্ এক অদ্বিতীয় এবং অমূখাপেক্ষী- কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান

[2] - সামাদ শব্দের আরো অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ যার পেট নেই তাকে সামাদ বলা হয়। সুতরাং যার পেট নেই তাঁর খাদ্য গ্রহণ বা দুনিয়ার অন্য কোন বস্ত্তর প্রতি কোন প্রয়োজন নেই।

আবার কেউ কেউ বলেছেন الله الصمد এর ব্যাখ্যা হচ্ছে পরবর্তী আয়াত, الذي لم يلد ولم يولد। কুরআন দ্বারা কুরআনের ব্যাখ্যা করাই কুরআনের ব্যাখ্যা করার সর্বাধিক বিশুদ্ধ পদ্ধতি। সামাদ শব্দের ব্যাখ্যায় আরো যা বলা হয়েছে, তার মধ্যেঃ ১) এমন জমাট জিনিস, যার পেট নেই। ২) যে লক্ষ্যের দিকে যেতে মনস্থ করা হয়; যে সবল জিনিসের মধ্যে কোন দুর্বলতা নেই। ৩) এমন গৃহ, প্রয়োজন ও অভাব পূরণের জন্য যার আশ্রয় নিতে হয়। ৪) উঁচু ইমারত। ৫) আলী (রাঃ) ইকরামা ও কা'ব আহবার বলেছেন: সামাদ হচ্ছেন এমন এক সত্তা যাঁর উপরে আর কেউ নেই। ৬) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ও আবু ওয়ায়েল শাকীক ইবনে সালামাহ বলেছেন: তিনি এমন সরদার, নেতা ও সমাজপতি, যাঁর নেতৃত্ব পূর্ণতা লাভ করেছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। লোকেরা কোন বিপদে-আপদে যার দিকে সাহায্য লাভের জন্য এগিয়ে যায়, তিনিই হচ্ছেন সামাদ। ৭) যে সরদার তার নেতৃত্ব, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, ধৈর্য, সংযম, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় পূর্ণতার অধিকারী, তিনিই সামাদ। ৮) আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন: যিনি কারো উপর নির্ভরশীল নন, সবাই যার উপর নির্ভরশীল, তিনিই সামাদ। ৯) যার মধ্য থেকে কোনো জিনিষ কোনো দিন বের হয়নি এবং যে পানাহার করে না, সে-ই সামাদ। ১০) সুদ্দী বলেছেন: আকাংখিত বস্ত্ত লাভ করার জন্য লোকেরা যার কাছে যায় এবং বিপদে সাহায্য লাভের আশায় যার দিকে হাত বাড়ায়, তাকেই সামাদ বলা হয়। ১১) সাঈদ ইবনে জুবাইর বলেছেন: যিনি নিজের সকল গুণ ও কাজে পূর্ণতার অধিকারী হন, তিনিই সামাদ। ১২) রাবী ইবনে আনাস বলেছেন: যার উপর কখনো বিপদ-আপদ আসেনা, তিনিই সামাদ। ১৩) মুকাতেল ইবনে হাইয়ান বলেছেন: যিনি সকল প্রকার দোষ ত্রুটি মুক্ত। ১৪) ইবনে কাইসান বলেছেন: অন্য কেউ যার গুণাবলীর ধারক হয় না, তিনিই সামাদ। ১৫) হাসান বসরী ও কাতাদাহ বলেছেন: যে বিদ্যমান থাকে এবং যার বিনাশ নেই, তিনিই সামাদ। ১৬) ইবরাহীম নাখয়ী বলেছেন: যার দিকে লোকেরা নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য এগিয়ে যায়, তিনিই সামাদ। ১৭) আবু বকর আমবারী বলেছেন: সামাদ এমন এক সরদারকে বলা হয়, যার উপরে আর কোন সরদার নেই এবং লোকেরা নিজেদের বিভিন্ন বিষয়ে ও নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য যার শরণাপন্ন হয়, তিনিই হচ্ছেন সামাদ। ১৮) যার উপর এসে নেতৃত্ব খতম হয়ে গেছে এবং নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য প্রত্যেকে যার শরণাপন্ন হয়, তাকেই বলা হয় সামাদ। (আল্লাহই অধিক অবগত)

[3]- সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ২৫৮। আয়াতুল কুরসীর ফযীলতে যেসব হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে সহীহ বুখারীর এই হাদীছটিও অন্যতম। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে রামাযানের যাকাত পাহারা দেয়ার দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। এক আগন্তুক আমার নিকট এসে অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য দ্রব্য তুলে নিতে লাগল। আমি তাকে গ্রেফতার করে ফেললাম এবং বললামঃ আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নিয়ে যাব। সে বললঃ আমাকে ছেড়ে দাও। আমি অভাবগ্রস্ত, আমার উপর পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ন্যস্ত এবং আমার প্রয়োজন খুবই তীব্র। আবু হুরায়রা বলেনঃ তার প্রতি আমার দয়া হল। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হে আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দীর খবর কি? আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহ আনহু বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে তীব্র অভাবের ও পরিবারের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করার কারণে তার প্রতি আমার দয়া হল। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সে তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ‘‘সে আবার আসবে’’ এ থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। আমি তার অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকলাম। দ্বিতীয় দিনও সে এসে অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য দ্রব্য তুলে নিতে লাগল। আমি তাকে আবার গ্রেফতার করে ফেললাম এবং বললামঃ আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নিয়ে যাব। সে বললঃ আমাকে ছেড়ে দাও। আমি অভাবগ্রস্ত। আমার উপর পরিবারের ভরণ-পোষণের ভার ন্যস্ত। আমি আর আসবনা। আবু হুরায়রা বলেনঃ তার প্রতি আমার দয়া হল। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হে আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দীর খবর কী? তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে তীব্র অভাবের ও পরিবারের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করার কারণে তার প্রতি আমার দয়া হল। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সে তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তৃতীয়বারও আমি তার আগমণের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকলাম। এবারও সে এসে অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য দ্রব্য তুলে নিতে লাগল। আমি তাকে গ্রেফতার করে ফেললাম এবং বললামঃ আমি তোমাকে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নিয়ে যাব। এ নিয়ে তিনবার হল। প্রত্যেকবারই তুমি বল যে আর আসবেনা। কিন্তু তুমি আবার আস। সে বললঃ আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দেব, যদ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। আবু হুরায়রা বলেনঃ আমি বললামঃ সেগুলো কি? সে বললঃ যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে তখন আয়াতুল কুরসী তথা সূরা বাকারা ২৫৫ নং আয়াত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। (তুমি যখন তা পাঠ করবে) তখন সারা রাত আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবেন। সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটেই আসবেনা। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হে আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দীর খবর কী? আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে বলেছে যে, আমি তোমাকে এমন কতিপয় বাক্য শিক্ষা দিবো যদ্বারা আল্লাহ আমার উপকার সাধন করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সেটি কী? আমি বললামঃ সে আমাকে বললঃ যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে তখন আয়াতুল কুরসী তথা সূরা বাকারা ২৫৫ নং আয়াত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। (তুমি যখন তা পাঠ করবে) তখন থেকে সারা রাত আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবেন। সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটেই আসবে না। আর সাহাবীগণ ছিলেন কল্যাণ অর্জনের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ সে সত্য বলেছে অথচ সে মিথ্যুক। তুমি কি জান তিন রাত্রি যাবৎ তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ না। তিনি বললেনঃ সে হল শয়তান।

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ব্যতীত তার সামনে অন্য বাধা থাকবেনা।

[4] - الحي والقيوم আল্লাহ তাআলার এই পবিত্র নাম দু’টিতে আল্লাহর দু’টি সুমহান সিফাত রয়েছে। একটি হচ্ছে হায়াত তথা আল্লাহর জীবন। আল্লাহর হায়াত হচ্ছে এমন পরিপূর্ণ ও চূড়ান্ত হায়াত, যাতে কোনো প্রকার ত্রুটি নেই। আল্লাহর হায়াতের সাথে সৃষ্টির হায়াতের কোন তুলনাই হতে পারেনা। সৃষ্টির হায়াতের শুরু রয়েছে এবং তার পরিসমাপ্তিও রয়েছে। রোগ-ব্যাধি, তন্দ্রা-নিদ্রা ইত্যাদির কারণে মাখলুকের জীবিত থাকার মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি চলে আসে। মৃত্যুর মাধ্যমে সৃষ্টির দুনিয়ার হায়াত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ হায়াতের কোন শুরু নেই, শেষও নেই। তাঁর হায়াত ও জীবন এত চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ যে, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শই করতে পারেনা।

আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর বিষয়ে এ কথাটি বিশেষভাবে স্মরণ রাখা ও বুঝা আবশ্যক যে, হায়াত হচ্ছে আল্লাহর এমন একটি সিফাত, যার উপর বাকী সিফাতগুলো ভিত্তিশীল। এটি হচ্ছে আল্লাহর সত্তাগত সিফাত। তা কখনো আল্লাহর যাত থেকে আলাদা হয়না। আল্লাহর এই হায়াত বিশেষণ ছাড়া তাঁর বাকী সিফাতগুলো অকল্পনীয়।

আর আল্লাহর কাইয়্যুমিয়াত তথা সবকিছুকে ধারণ ও সংরক্ষণ করা তাঁর এমন একটি বিশেষণ, যার উপর আল্লাহর বাকীসব কর্মগত সিফাতের ভিত্তি। আল্লাহর এই সিফাতের ফলেই আসমান-যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যকার সকল সৃষ্টি টিকে আছে।

[5] - সুতরাং কেউ যেন এমন না ভাবে যে, কুরসী দ্বারা এখানে ঐরকম চেয়ার উদ্দেশ্য, যার উপর আমরা বসি। আল্লাহর কুরসীর ব্যাপারে এই রকম ধারণা করা ঠিক নয়। আল্লাহর কুরসী রয়েছে, এই কথা থেকে এমন ধারণা করা যাবেনা যে, তিনি চেয়ারে বসে আছেন। নাউযুবিল্লাহ। কুরসীর যেই বিবরণ কুরআন ও সুন্নায় এসেছে, উহাই বিশ্বাস করতে হবে। আরশের সাধারণ অর্থ রাজা-বাদশাহর সিংহাসন। কিন্তু আল্লাহর আরশ আল্লাহর সর্ববৃহৎ সৃষ্টি এবং তা সকল সৃষ্টির ছাদ। আরশের ব্যাপারেও এমন ধারণা ঠিক নয় যে, রাজা-বাদশাহগণ যেভাবে সিংহাসনে বসেন, আল্লাহ তাআলাও সেভাবে সিংহাসনে বসে আছেন। কুরআনের কিছু কিছু বাংলা অনুবাদে আল্লাহ আরশে সমাসীন বলে যেই অনুবাদ করা হয়েছে, তা ভুল। الرحمن على العرش استوى এই আয়াতের অনুবাদ কোন কোন অনুবাদ গ্রন্থে এভাবে করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা আরশে সমাসীন। এই অনুবাদ সঠিক নয়। সঠিক অনুবাদ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা আরশে উপর সমন্নত।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে