৫- إثبات النداء والصوت والكلام لله تعالى
৫- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আহবান, আওয়াজ এবং কালাম রয়েছে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«يَقُولُ تَعَالَى يَا آدَمُ! فَيَقُولُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ فَيُنَادِي بِصَوْتٍ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكَ أَنْ تُخْرِجَ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ بَعْثًا إِلَى النَّارِ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘‘আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেঃ আমি তোমার আহবানে সাড়া দিচ্ছি ও তোমার আনুগত্যের উপর সর্বদা সুদৃঢ় আছি এবং তোমার আনুগত্যের জন্য প্রস্ত্তত রয়েছি। আল্লাহ্ তাআলা তখন আওয়াজ উঁচু করে এই বলে ডাক দিবেন, আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমার বংশধর থেকে একদল লোককে বের করে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বুখারী ও মুসলিম।[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ»
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে অচিরেই তার প্রভু কথা বলবেন না। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা অচিরেই তোমাদের সকলের সাথেই কথা বলবেন। কথা বলার সময় বান্দার মাঝে এবং তার রবের মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না।[2]
ব্যাখ্যা: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ আমি তোমার আহবানে সাড়া দিচ্ছি ও তোমার আনুগত্যের উপর সর্বদা সুদৃঢ় আছি এবং তোমার আনুগত্যের জন্য প্রস্ত্তত রয়েছিঃ لبيك শব্দটি ألب بالمكان সে অমুক স্থানে অবস্থান করেছে, -এই বাক্য থেকে নেওয়া হয়েছে। যখন কেউ কোন স্থানে অবস্থান করে, তখন বলা হয়ঃ ألبَّ بالمكان। মাফউলে মুতলাক হিসাবে لبيك শব্দটি মানুসব হয়েছে। তাগিদ স্বরূপ এটিকে দ্বি-বচন ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমি তোমার আনুগত্য করার জন্য বারবার প্রস্ত্তত ও সুদৃঢ় রয়েছি।[3]
سعديك শব্দটি المساعدة থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আমি তোমার অনুগত আছি এবং আনুগত্য করার জন্য বারবার তোমার কাছে সাহায্য চাচ্ছি।
فَيُنَادِي অতঃপর ডাক দিবেনঃ এখানে দাল বর্ণে যের দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ডাক দিবেন।
بصوت আওয়াজ সহকারেঃ এই শব্দটি ينادي এর তাগিদ স্বরূপ এসেছে। কেননা ডাক দেয়া বা আহবান করা সাধারণতঃ আওয়াজের সাথেই হয়ে থাকে। এটি আল্লাহ তাআলার এই বাণীর মতই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃوَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا ‘‘আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়’’। (সূরা নিসাঃ ১৪৬)
بعثا إلى النار জাহান্নামের বাহিনীঃ এখানে بعث শব্দটি مبعوث অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আগুনের দিকে প্রেরিত বাহিনীকে বের করো। উহার অর্থ হলো জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করো।
উপরের হাদীছ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, আল্লাহর পক্ষ হতে এমন আওয়াজসহ কথা এবং আহবান হয়, যা শোনা যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ হতে আহবান আসবে। হাদীছে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা যখন ইচ্ছা এবং যেভাবে ইচ্ছা কথা বলেন এবং ডাক দেন।
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে অচিরেই তার প্রভু কথা বলবেন নাঃ এখানে সাহাবীদেরকে সম্বোধন করা হলেও সর্বকালের সকল মুমিন উদ্দেশ্য। আর আল্লাহ তাআলা বিনা মধ্যস্থতায় কথা বলবেন। আল্লাহর মাঝে এবং বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবেনা। যে ব্যক্তি এক ভাষার কথা অন্য ভাষার মাধ্যমে বর্ণনা করে, তাকে দোভাষী বলা হয়। অর্থাৎ এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদকারীর নাম তারজুমান।এই হাদীছ থেকেও দলীল পাওয়া যায় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর বান্দাদের সাথে কথা বলবেন। তিনি যখন ইচ্ছা কথা বলেন। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতে ফেলিয়ার অন্তর্ভূক্ত। এই কথাও প্রমাণিত হলো যে, তিনি কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মুমিনের সাথেই কথা বলবেন।
[2] - সহীহ বুখারী হাদীছ নং- ৬৫৩৯।
[3] - এই শব্দের অর্থ বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে, হে আল্লাহ! আমি তোমার আহবানে বারবার সাড়া দিচ্ছি। হাজীগণ যখন ইহরামের কাপড় পরিধান করে لبيك أللهم لبيك পাঠ করেন, তখন এই তালবীয়ার মর্মার্থ দাড়ায়, হে আল্লাহ! তুমি তোমার নবী খলীল ইবরাহীম (আঃ)এর জবানে যে আহবান জানিয়েছো, তাতে আমি সাড়া দিচ্ছি এবং তোমার অনুগত হয়ে এখানে হাযির হয়েছি।