শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত গুণাবলীতে বিশ্বাস করা আবশ্যক ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
৫- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আহবান, আওয়াজ এবং কালাম রয়েছে

৫- إثبات النداء والصوت والكلام لله تعالى

৫- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আহবান, আওয়াজ এবং কালাম রয়েছে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«يَقُولُ تَعَالَى يَا آدَمُ! فَيَقُولُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ فَيُنَادِي بِصَوْتٍ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكَ أَنْ تُخْرِجَ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ بَعْثًا إِلَى النَّارِ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

‘‘আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেঃ আমি তোমার আহবানে সাড়া দিচ্ছি ও তোমার আনুগত্যের উপর সর্বদা সুদৃঢ় আছি এবং তোমার আনুগত্যের জন্য প্রস্ত্তত রয়েছি। আল্লাহ্ তাআলা তখন আওয়াজ উঁচু করে এই বলে ডাক দিবেন, আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমার বংশধর থেকে একদল লোককে বের করে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বুখারী ও মুসলিম।[1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ»

‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে অচিরেই তার প্রভু কথা বলবেন না। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা অচিরেই তোমাদের সকলের সাথেই কথা বলবেন। কথা বলার সময় বান্দার মাঝে এবং তার রবের মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না।[2]


ব্যাখ্যা: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ আমি তোমার আহবানে সাড়া দিচ্ছি ও তোমার আনুগত্যের উপর সর্বদা সুদৃঢ় আছি এবং তোমার আনুগত্যের জন্য প্রস্ত্তত রয়েছিঃ لبيك শব্দটি ألب بالمكان সে অমুক স্থানে অবস্থান করেছে, -এই বাক্য থেকে নেওয়া হয়েছে। যখন কেউ কোন স্থানে অবস্থান করে, তখন বলা হয়ঃ ألبَّ بالمكان। মাফউলে মুতলাক হিসাবে لبيك শব্দটি মানুসব হয়েছে। তাগিদ স্বরূপ এটিকে দ্বি-বচন ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমি তোমার আনুগত্য করার জন্য বারবার প্রস্ত্তত ও সুদৃঢ় রয়েছি।[3]

سعديك শব্দটি المساعدة থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আমি তোমার অনুগত আছি এবং আনুগত্য করার জন্য বারবার তোমার কাছে সাহায্য চাচ্ছি।

فَيُنَادِي অতঃপর ডাক দিবেনঃ এখানে দাল বর্ণে যের দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ডাক দিবেন।

بصوت আওয়াজ সহকারেঃ এই শব্দটি ينادي এর তাগিদ স্বরূপ এসেছে। কেননা ডাক দেয়া বা আহবান করা সাধারণতঃ আওয়াজের সাথেই হয়ে থাকে। এটি আল্লাহ তাআলার এই বাণীর মতই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃوَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا ‘‘আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়’’। (সূরা নিসাঃ ১৪৬)

بعثا إلى النار জাহান্নামের বাহিনীঃ এখানে بعث শব্দটি مبعوث অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আগুনের দিকে প্রেরিত বাহিনীকে বের করো। উহার অর্থ হলো জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করো।

উপরের হাদীছ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, আল্লাহর পক্ষ হতে এমন আওয়াজসহ কথা এবং আহবান হয়, যা শোনা যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ হতে আহবান আসবে। হাদীছে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা যখন ইচ্ছা এবং যেভাবে ইচ্ছা কথা বলেন এবং ডাক দেন।

مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে অচিরেই তার প্রভু কথা বলবেন নাঃ এখানে সাহাবীদেরকে সম্বোধন করা হলেও সর্বকালের সকল মুমিন উদ্দেশ্য। আর আল্লাহ তাআলা বিনা মধ্যস্থতায় কথা বলবেন। আল্লাহর মাঝে এবং বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবেনা। যে ব্যক্তি এক ভাষার কথা অন্য ভাষার মাধ্যমে বর্ণনা করে, তাকে দোভাষী বলা হয়। অর্থাৎ এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদকারীর নাম তারজুমান।এই হাদীছ থেকেও দলীল পাওয়া যায় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর বান্দাদের সাথে কথা বলবেন। তিনি যখন ইচ্ছা কথা বলেন। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতে ফেলিয়ার অন্তর্ভূক্ত। এই কথাও প্রমাণিত হলো যে, তিনি কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মুমিনের সাথেই কথা বলবেন।

[1] - সহীহ বুখারীতে হাদীছটির পূর্ণ বিবরণ এভাবে এসেছে যে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি হাজির আছি, প্রস্ত্তত আছি। সব কল্যাণ আপনার হাতেই। আল্লাহ্ তাআলা নির্দেশ দিবেনঃ জাহান্নামী দলকে বের কর। আদম বলবেনঃ জাহান্নামী দলের সংখ্যা কত? আল্লাহ্ বলবেনঃ প্রতি হাজারে নয়শ নিরানববই জন। সে সময় (চরম ভয়াবহ অবস্থার কারণে) শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। তুমি মানুষকে মাতালের মত দেখতে পাবে। অথচ তারা মাতাল নয়। কিন্তু আল্লাহর আযাব অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! সেই একজন আমাদের মধ্যে কে হবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা আনন্দিত হও। তোমাদের মধ্য থেকে হবে একজন এবং ইয়াজুজ-মা’জুজ থেকে হবে বাকী নয়শত নিরানববই জন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! আমি আশা করি জান্নাতবাসীর চারভাগের একভাগ হবে তোমরা। একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ আমার আশা, তোমরাই হবে জান্নাতবাসীর তিনভাগের একভাগ। একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ আমার আশা, তোমরাই হবে জান্নাতবাসীর অর্ধেক। এবারও আমরা উঁচু আওয়াজে তাকবীর ধ্বনি দিলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা তো অন্যান্য লোকদের তুলনায় একটি সাদা বলদের চামড়ায় একটি কালো লোমের ন্যায় অথবা একটি কালো বলদের চামড়ায় একটি সাদা লোমের ন্যায়।

[2] - সহীহ বুখারী হাদীছ নং- ৬৫৩৯।

[3] - এই শব্দের অর্থ বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে, হে আল্লাহ! আমি তোমার আহবানে বারবার সাড়া দিচ্ছি। হাজীগণ যখন ইহরামের কাপড় পরিধান করে لبيك أللهم لبيك পাঠ করেন, তখন এই তালবীয়ার মর্মার্থ দাড়ায়, হে আল্লাহ! তুমি তোমার নবী খলীল ইবরাহীম (আঃ)এর জবানে যে আহবান জানিয়েছো, তাতে আমি সাড়া দিচ্ছি এবং তোমার অনুগত হয়ে এখানে হাযির হয়েছি।